Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদায় বেলায় তুষারের আক্ষেপ— বহু তরুণ ক্রিকেটার ঝরে পড়ছেন


২১ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৩

তুষার ইমরান বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক আক্ষেপের নাম। ২০০২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বাংলাদেশের টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন। অপ্রস্তুত, তরুণ তুষার তখন সফল হতে পারেননি। কিন্তু পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিপক্ক হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিসহ ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন তুষার। কিন্তু ছন্দে থাকার সময়ে একটিবারও ডাক আসেনি জাতীয় দল থেকে। সেই আক্ষেপ নিয়েই আজ সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন তুষার। বিদায় বেলায় ৩৮ বছর বয়সী ব্যাটারের আক্ষেপ, তাকে যেভাবে পরিনত হওয়ার আগেই টেস্ট খেলতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল এখনও কিছু তরুণের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হচ্ছে। তুষার বলছিলেন, কয়েক বছর পর খুঁজেই পাওয়া যাবে না এই তরুণদের।

আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) পর অবসরে যাবেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে। রোববার (২১ নভেম্বর) মাঠে গড়িয়েছে জাতীয় লিগের শেষ ম্যাচ। অর্থাৎ তুষারের ক্রিকেটীয় অধ্যায় এখন অতীত। পুরো ক্যারিয়ারর মতো শেষ বেলায়ও আক্ষেপ সঙ্গী হলো তার। মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না। ইনজুরির কারণে আজ মাঠে নামতে পারেননি ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার। বেঞ্চ থেকেই ক্রিকেটীয় অধ্যায় শেষ হলো তার।

বিদায় বেলায় স্বাভাবিকভাবেই তার কণ্ঠে ঝড়ল আরেকটা সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তুষার ইমরান বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমি অনেকবার দলে ঢুকেছি আবার বাদ পড়েছি। ২০০৭ সালের পর থেকে লম্বা একটা গ্যাপ। পরে অবশ্য জায়গা পাওয়ার জন্য পারফর্ম করেছি। যদিও দলে আসলে ফাঁকা জায়গাও ছিল না সেভাবে। আর ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যে সময়টাতে সুযোগ পেয়েছি তখন বিভিন্ন খেলা থাকত। ‘এ’ দলের খেলা থাক, জাতীয় লিগ থাকত। আমি আসলে আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করে গেছি (পারফর্ম করে দলে ঢোকার)। কিন্তু সুযোগটা আসলে পাইনি, এটাই আমার আক্ষেপ। দশ বছর পরে হলেও যদি সুযোগ একটা পেতাম তাহলে চেষ্টা করতাম কাজে লাগানোর।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিতে থাকা তুষার কেন আরেকবার জাতীয় দলে ডাক পেলেন না সেই প্রশ্ন অনেকেরই। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১ হাজার ২০০ এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০১৮, ২০১৯ সালেও ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। ২০১৯ সালে রেকর্ড ১ হাজার ৫০০ এর অধিক রান করেন তুষার। তবু ‘বয়স বেড়ে যাওয়া’ তুষারকে বারবার উপেক্ষা করে তরুণদের ওপর ভরসা রাখা হয়েছে। তুষার বলছেন, ভুলটা হচ্ছে এই জায়গাতেই।

পরিনত হওয়ার আগেই তরুণদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে টেস্ট খেলতে। যেমনটি ঘটেছিল তার ক্ষেত্রে। এই তরুণদের পরে খুঁজেই পাওয়া যাবে না বলছেন তুষার। তিনি বলেন, ‘এখন যে তরুণ ক্রিকেটারগুলো খেলছে, খুব অল্প বয়সে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলছে এবং খারাপ খেলছে। তো আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর পর দেখবেন তাদের খুঁজেই পাওয়া যাবে না। যে কাজটা আমার সাথে হয়েছে, সেই কাজটা হয়তো এদের সঙ্গে হবে। যে অল্প টেস্ট খেলানো সুযোগ দিয়ে যখন সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে না তখন বাদ। আবার যখন সে পরিনিত হবে তখন কিন্তু তাকে আর ডাকা হবে না। আমার এটাই ধারনা। বা বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটাই রীতি হয়ে আসছে।’

২০০২ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৫টি টেস্ট ও ৪১টি টি-টোয়েন্টি খেলে সফল হতে না পারলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ হাজার ৯৭২ রান করেছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণিতে ১০ হাজার রানও নেই কারও। ৩২টি সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরি সংখ্যাও সবার ওপরে তুষার।

তবু বলছিলেন, তার ক্যারিয়ারে সাফল্যের চেয়ে হতাশাই বেশি, ‘দেখেন লম্বার ক্যারিয়ারে সফলতা এবং আক্ষেপ দুটোই থাকে। আমার ক্ষেত্রে বলব সফলতার চেয়ে আক্ষেপটা বেশি। জাতীয় দলে সুযোগ যখন মিলেছিল কাজে লাগাতে পারিনি অবশ্য। তবে তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান করেছি আমি। আমি মনে করি ২০১৭, ২০১৮ সালে দলে সুযোগ পেতে পারতাম আমি। ওই সময় কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাব পারফর্ম করে আসছিলাম আমি। ওই সময়েও যখন সুযোগ পেলাম না তখন আসলে বলার আর কিছু থাকে না। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল যে যখন টেস্ট খেলার বয়স হয়নি তখন টেস্ট খেলে ফেলি। আর তখন গড় ভালো করতে পারিনি। পরে আর সুযোগ দেওয়া হয় না, আমার ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছি আসলে ‘

আজ থেকে সাবেক হয়ে যাওয়া তুষার জানালেন, এবার কোচিং পেশায় মনোনিবেশ করতে চান, ‘আমি অলরেডি কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছি। কোচিংয়েই মনোনিবেশ করতে চাই।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ডাকলে বোর্ডের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার কথাও ভাববেন বলেছেন তিনি।

টপ নিউজ তুষার ইমরান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর