বলতে গেলে ম্যাচ থেকে একেবারেই ছিটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে হাতে ৮ উইকেট রেখে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান। ইনজুরি ইস্যুতে ম্যাচে টাইগারদের সেরা পেসার তাসকিনকেও বোলিংয়ে পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত বোলিংয়ে এলেন ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ। এর আগে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বিপিএলে এরকম পরিস্থিতি থেকেও জন্ম দিয়েছিলেন রূপকথা। সেই রূপকথা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে এত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শেষ বলে গিয়ে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। তবে শেষ ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ প্রমাণ দিয়েছেন লড়াকু বাংলাদেশের। মিরপুরে সিরেজের শেষ এই ম্যাচে তাই স্কোরবোর্ডের হিসাবে পাকিস্তান জিতলেও হারেনি বাংলাদেশও। তারচেয়েও বড় কথা, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটেরই জয় হয়েছে শেষ এই ম্যাচে।
মিরপুরে তখন টানটান উত্তেজান। শেষ ওভারে বল হাতে এসে দ্বিতীয় বলেই সরফরাজকে মোহাম্মদ নাঈমের তালুবন্দি করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরের বলে একইভাবে রিয়াদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সেট ব্যাটার হায়দার আলী তালুবন্দি হয় নাজমুল হোসেন শান্তর। হ্যাটট্রিক বলটাই যেন গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য। সদ্যই উইকেটে আসা ইফতিখার আহমেদ লং অনের উপর দিয়ে রিয়াদকে ছক্কা হাঁকালেন। শেষ দুই বলে তখন পাকিস্তানের দরকার মাত্র ২ রানের। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ইফতিখার ক্যাচ তুলে দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা ইয়াসির আলীর হাতে। শেষ বলে দরকার ২ রানের। আর বাংলাদেশের একটি ডট বলের। বল হাতে এগিয়ে এসে উইকেটের পেছন থেকে বল ছুঁড়লেন রিয়াদ। তবে বল উইকেটে পড়ার পর ক্রিজ থেকে সরে গেলেন নাওয়াজ। আম্পায়ার জানিয়ে দিলেন ডেড বল ছিল এটি। অগত্যায় আবারও বল করতে হয় রিয়াদকে। শেষ বলে ডাউন দ্যা ট্র্যাকে এসে এক্সট্রা কাভার দিয়ে রিয়াদকে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া মাত্র ১২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জিততে ঘাম ছুটে গেছে পাকিস্তানের। অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত আর হারাতে হয়েছে পাঁচটি উইকেট। আবারও তাই বাংলাদেশের এমন হারের দায় বর্তেছে ব্যাটারদের রান তোলার অক্ষমতার ওপরই।
১২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান দেখে শুনেই খেলেছিলেন। রানের চাকা ধীর গতিতে চলছিল পাকিস্তানের। এর মধ্যে ৭ম ওভারের শেষ বলে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে মোহাম্মদ নাঈমের তালুবন্দি হন বাবর। দলীয় ৩২ রানে বাবর ফিরলেন ২৫ বলে ১৯ রান করে। এরপর তৃতীয় উইকেটে জয়ের বীজ রোপন করেন রিজওয়ান-হায়দার জুটি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে পাকিস্তান তোলে ৫১ রান। এরপর অভিষিক্ত পেসার শহিদুল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুটি চার ও একটি ছয়ে ৪৩ বলে ৪০ রান করেন রিজওয়ান। তিনি যখন ফিরলেন তখন স্কোরবোর্ডে পাকিস্তানের রান ১৫.১ ওভারে ৮৩।
হাতে তখন ৮টি উইকেট দরকার ২৯ বলে ৪২ রান। ১৬তম ওভারে রিজওয়ানের উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে হায়দার আলী হাতখুলে খেলা শুরু করেন। ওই ওভার থেকে দুটি ছক্কায় ১৬ রান তোলেন তিনি। এরপর ধীরে সুস্থে খেলে জয়ের দিকেই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। তবে শেষ ওভারের নাটকীয়তার পরেও আর জয় পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান পাঁচ উইকেট হাতে রেখে নোঙর করে জয়ের বন্দরে।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের শেষ ওভারে নাটকীয়তা শেষে ১০ রান দেন তিনি। আর তুলে নেন সরফরারজ, হায়দার এবং ইফতিখারের উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন শহিদুল ইসলাম। ৩.৫ ওভার বল করে তিনি দেন ৩৩ রান। আজই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলো এই পেসারের। এছাড়া ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে এক উইকেট নেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ৪৭ আর শামীম পাটোয়ারীর ২২ রানে ভর করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান তোলে। পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন উসমান কাদির এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন শাহনেওয়াজ দাহানি এবং হারিস রউফ।
এতেই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে হারল পাকিস্তানের কাছে। এরপর সিরিজের দুটি টেস্টের প্রথমটি আগামী ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে মাঠে গড়াবে।
আরও পড়ুন: শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৪