ক্রিকেট সমর্থকদের উন্মাদনায় মুখরিত সাগরিকা
২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৫:১৩
চট্টগ্রাম থেকে: বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি স্ট্রেট ড্রাইভ খেললেন সাইফ হাসান— চার। হর্ষধ্বনিতে কেঁপে উঠল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠলেও উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনের শব্দ অবশ্য এতটা দূর আসছে না। তবে সমুদ্র পাড়ের শীতল বাতাস ঠিকই শরীরকে হিম করে দিচ্ছিল সকাল থেকে। এর মধ্যেই গ্যালারির সেই হর্ষধ্বনি যেন ছড়িয়ে দিলো উষ্ণতার পরশ। দুই বছর দুই মাস পর যে স্টেডিয়ামে বসে ক্রিকেটানন্দ উপভোগের সুযোগ পেয়েছেন দর্শকরা!
হ্যাঁ, সেই ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে সবশেষ এই জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট উপভোগের সুযোগ পেয়েছিলেন দর্শকরা। এরপরই করোনাভাইরাসের থাবা। গোটা বিশ্বের মতো স্থবির ক্রিকেটাঙ্গনও। পরে অবশ্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে মাঠে ক্রিকেট ফিরলেও দর্শকদের কিছু যায় আসেনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে যে স্টেডিয়ামেই ঢুকতে পারেননি তারা!
এ কারণেই দুই বছর দুই মাস পর ফের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের গ্যালারি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে দর্শকদের উপস্থিতিতে। পুরো গ্যালারি না ভরলেও অর্ধেক গ্যালারির দর্শকরাই সকাল থেকে মাতিয়ে রেখেছেন স্টেডিয়াম। সাগরিকার পুরো স্টেডিয়াম পাড়াজুড়েই যেন বাড়তি উন্মাদনা।
আরও পড়ুন- মুশি-লিটনের ব্যাটে ২য় সেশনটা কেবলই বাংলাদেশের
আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি হবে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে। তবে মাঠে দর্শকরা থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বেশ পরে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মাঠে ৫০ শতাংশ দর্শক উপস্থিতির সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর মধ্যে আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে মাঠের হতাশাজনক পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরের বক্তব্য-বিবৃতি নিয়ে ছিল আলোচনা-সমালোচনা। পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইট ওয়াশও দর্শকদের মন ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও মাঠে ফেরার সুযোগ কোনোভাবেই মিস করেননি দর্শকরা। সিরিজের প্রথম টেস্টেই তাই গ্যালারি ছিল জমজমাট।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমেছে বাংলাদেশ। গত ১০-১২ ম্যাচের মতো আজও শুরুটা ভালো হয়নি। ৪৯ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬৯/৪। তবে দুর্দশার মধ্যেও যখনই বাংলাদেশি ব্যাটাররা চার হাঁকিয়েছেন, রান নিয়েছেন— গ্যালারিতে তখনই গর্জে উঠেছেন দর্শকরা।
লম্বা সময়ের খেলা বলে অন্য দুই ফরম্যাটের চেয়ে টেস্ট ক্রিকেট মাঠে বসে দেখার ক্ষেত্রে দর্শকদের আগ্রহ সচরাচর কমই দেখা যায়। কিন্তু টেস্ট ম্যাচ হলেও সাগরিকায় আজ দর্শকে সয়লাব। শুধু গ্যালারি নয়, দর্শক-সমর্থকদের এমন উন্মাদনা ও উৎসবের আমেজ দেখা গেছে পুরো স্টেডিয়াম পাড়াজুড়েই। স্টেডিয়ামের আশপাশের দোকানগুলো যেন আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। আশপাশের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এসেছেন, কেউ স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হয়েছেন টিম বাসে আসা ক্রিকেটারদের স্বাগত জানাবেন বলে।
নিরাপত্তা ইস্যুতে স্টেডিয়ামের আশপাশের রাস্তাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। তাতে অনেকটা হেঁটে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ইশরাত জাহান প্রিয়ার। সারাবাংলাকে বলছিলেন, ‘অনেকদিন পর এখানে বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে। মাঠে বসে খেলা দেখব— ভাবতেই অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। টেস্ট হোক ওয়ানডে হোক আর টি-টোয়েন্টি হোক— বাংলাদেশের খেলা দেখব, এটাই বড় কথা।’
দলের সাম্প্রতিক সময়ের বাজে ক্রিকেট খেলার নজির টেনে জানতে চাইলাম, এ কারণে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে কি না। প্রশ্নের প্রিয়া বলছিলেন, ‘মোটেও না। জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ।’
পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুর রহমান বলছিলেন, এই মাঠে বাংলাদেশের খেলা মানে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি উৎসবের উপলক্ষ। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, প্রসাশন, সাধারণ দর্শকসহ বিপুল মানুষের আগমন ঘটে। আমরা চাই এই মাঠে আরও বেশি বেশি বাংলাদেশের খেলা হোক।
সাগরপাড়ের মানুষদের এই উন্মাদনাকে কয়েক গুণে বাড়য়ে দিতে পারে বাংলাদেশের একটি জয়। অনেকদিন বাজে ক্রিকেট খেলতে থাকা বাংলাদেশও সেই লক্ষ্যেই মাঠে লড়ছে— তেমনটাই ম্যাচের আগের দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন টাইগার টেস্ট স্কোয়াডের দলপতি মুমিনুল হক।
সারাবাংলা/এসএইচএস/টিআর
গ্যালারিতে দর্শক জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ সাগরিকা