রোমাঞ্চ ছড়ানো টেস্টে ভারতকে জিততে দিলো না কিউইরা
২৯ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৪৫
দিনের তখন আর ১৩ ওভার বাকি নিউজিল্যান্ডের মাত্র ৩ উইকেট। কানপুর টেস্ট জিততে ভারতের প্রয়োজন এই ৩ উইকেট অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য কোনোভাবে এই ১৩টি ওভার পার করে ম্যাচ ড্র করে। শেষ পর্যন্ত সফল হলো কিউইরাই। দুটি উইকেট হারালেও শেষ উইকেটে এসে ৮.৪ ওভার খেলে ম্যাচ বাঁচালেন রাচিন রবিন্দ্র এবং এজাজ প্যাটেল।
নিউজিল্যান্ডের শেষ এই দুই ব্যাটারের নাম ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণ তাদের দুইজনই ভারতীয় বংশোভূত। এজাজ প্যাটেলের জন্মই হয়েছিল ভারতের মুম্বাইয়ে আর রাচিন রবিন্দ্রের জন্ম নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে হলেও তারা বাবা-মা ভারতীয়।
কানপুরে তখন স্থানীয় সময় ৪ টা বেজে ২২ মিনিট। আলোর স্বল্পতায় ব্যাটারদের বল দেখতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। মাঠের আম্পায়ার নিতিন মেনন তখন কথা বলছিলেন ভারতীয় ফিল্ডারদের সঙ্গে। তখন আম্পায়ার জানিয়ে দিয়েছেন আলোর স্বল্পতার কারণে খেলা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিউই দুই ব্যাটার ইতোমধ্যেই ড্রেসিংরুমের পথে হাটতে শুরু করেন আর ড্রেসিংরুম থেকে হ্যান্ডশেক করার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এতেই নির্ধারণ হয়ে যায় কানপুর টেস্টের।
ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ২৮৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে কেবলই ১৬৫ রান।
কানপুরে সকলকে ছাড়িয়ে আলো কেড়েছেন দুই দলের দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটার ভারতের শ্রেয়াস আইয়ার আর নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবিন্দ্র। শ্রেয়াস প্রথম ইনিংসে ১০৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে শেষ সেশনে এসে রাচিন রবিন্দ্রর দুর্দান্ত ইনিংসেই কিউইরা ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে। শেষ বিকেলে রাচিন ৯১ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভারতের হয়ে প্রথম ইনিংসে শুভমন গিলের ৫২ রানের সঙ্গে অভিষেক টেস্টে শ্রেয়াস আইয়ারের ১০৫ আর রবিন্দ্র জাদেজার ৫০ রানে ভর করে ৩৪৫ রানে অলআউট হয় ভারত। কিউইদের হয়ে ৫টি উইকে নেন টিম সাউদি, তিনটি উইকেট নেন কাইল জেমিসন আর দুটি উইকেট নেন এজাজ প্যাটেল।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে দুই কিউই ওপেনার। উদ্বোধনী জুটিতে টম লাথাম এবং উইল ইয়ং গড়েন ১৫১ রানের জুটি। ৮৯ রান করে উইল ইয়ং ফিরলে ভেঙে পড়ে কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে থামে কিউইরা। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতে থামেন লাথাম। ভারতের হয়ে ৫টি উইকেট নেন অক্ষাত প্যাটেল, তিনটি উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর একটি করে উইকেট নেন উমেশ যাদব এবং রবিন্দ্র জাদেজা।
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া ভারতের হাল ধরেন অভিষিক্ত শ্রেয়াস আইয়ার। মাত্র ৫১ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। এরপর ৬ষ্ঠ উইকেটে অশ্বিনকে সঙ্গে নিয়ে ৪৮ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস। এই জুটি ভাঙলে উইকেটে আসেন ঋদ্ধিমান সাহা। তার সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস। দলীয় ১৬৭ রানে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে ফেরেন শ্রেয়াস, এরপর ঋদ্ধিমান ৬১ রান আর অক্ষাত প্যাটেল ২৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এতেই নিউজিল্যান্ডের সামনে ২৮৪ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়ে কিউইরা। টম লাথামের ৫২ ছাড়া অর্ধশতকের দেখা পায়নি আর কোনো ব্যাটারই। উইলিয়াম সামারভিল করে দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তিনি করেন ৩৬ রান। এরপর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ২৪ কিউইদের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। রবিন্দ্র জাদেজা আর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঘূর্ণির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি কিউই ব্যাটাররা। তবে আটে ব্যাট করতে নামা রাচিন রবিন্দ্র একাই দাঁড়িয়ে থাকেন উইকেটের এক প্রান্তে। আর শেষ পর্যন্ত দলকে নিশ্চিত হারের হাত থেকে বাঁচিয়ে ম্যাচ ড্র করেন।
রবিন্দ্র জাদেজা নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন নেন তিন উইকেট। আর একটি করে উইকেট নেন অক্ষাত প্যাটেল এবং উমেশ যাদব।
সারাবাংলা/এসএস