ইনিংস পরাজয়ই সঙ্গী হলো টাইগারদের
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:০২
মিরপুর টেস্টের দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যায়, সব মিলিয়ে মাঠে খেলা গড়ায় তিনদিন। এরপরও ৩০০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করা পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ইনিংস ব্যাট করেও এড়াতে পারেনি ইনিংস পরাজয়। প্রথম ইনিংসে দেশের মাটিতে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর ৮৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এতেই ইনিংসসহ ৮ রানে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। দুই ম্যাচের এই সিরিজের প্রথমটিতে চট্টগ্রামে ৮ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়ায় মিরপুর শের-ই-বাংলায়।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) মিরপুরে গড়ানো টেস্টের প্রথম দিন মাত্র ৫৭ ওভা খেলা হয়। যেখানে দুই উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান তোলে পাকিস্তান। এরপর ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে দ্বিতীয় দিনে মাত্র ৩৮ বল খেলা হয় আর তৃতীয় দিন তো ভেসে যায় বৃষ্টিতে। চতুর্থ দিনেও খেলা শুরু হয় দেড় ঘণ্টা দেরিতে। এরপর বাবর আজমের ৭৬, আজহার আলীর ৫৬, ফাওয়াদ আলমের ৫০ এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৫৩ রানে ভর করে ৪ উইকেটে ৩০০ রান করেই ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। নাজমুল হোসেন শান্তর ৩০ আর সাকিব আল হাসানের ৩৩ ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি আর কেউই। অন্যদিকে পাকিস্তানের অফস্পিনার সাজিদ খান একাই ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ। একাই তুলে নেন ৮ উইকেট। বাকি দুই উইকেটের একটি রান আউট আর একটি উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বাংলাদেশ অলআউট হয় দেশের মাটিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৮৭ রানে।
ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পাঠান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। এবার আর সাজিদ খান শুরুটা করতে পারেননি। বাংলাদেশের ব্যাটারদের ওপর চড়াও হন পাকিস্তানের দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং হাসান আলী।
মাত্র ২৫ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। লড়াইটা ভালোই চালাচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে এই দুইজন মিলে গড়েছিলেন ৭৩ রানের জুটি। এই জুটিতে একটা সময় মনে হচ্ছিল ইনিংস হার এড়িয়ে ড্র হয়তো করেই ফেলবে বাংলাদেশ। তবে ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে ৮১ বলে ৪৫ রান করে সাজিদ খানের প্রথম শিকার হয়ে ফেরেন লিটন দাস।
লিটন ফিরলে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার তখন ক্রিজে। খেলছিলেন দুর্দান্তও। টাইগার ভক্তরা আশা দেখছিলেন ড্র’য়ের। কিন্তু একটি ভুল বোঝাবুঝিতে সে স্বপ্নও ভঙ্গ হলো। ৫৩তম ওভারের প্রথম বলে নুমান আলীকে মিড উইকেটে ঠেলে বল দিয়ে রানের জন্য ডাক দেন মুশফিককে। তিনিও দৌড়ে চলে যান স্ট্রাইক প্রান্তে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ শফিকের দারুণ থ্রো ধরে স্টাম্প ভাঙেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, মুশি ফেরেন রানআউট হয়ে। (৪৮)। এতেই বাংলাদেশের ড্র’র আশা নিভে আসতে শুরু করেন ১৪৭ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে টাইগারদের।
এরপর মেহেদি মিরাজকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা পার করতে চেয়েছিলেন সাকিব। ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে খেলছিলেন দুইজনই কিন্তু ৬৭ বল খেলা মিরাজের যেন আর ধৈর্য্য ধরে রাখার শক্তি ছিল না। তাই তো পার্টটাইম বোলার বাবর আজমকে সুইপ করতে গিয়ে এলবির ফাঁদে পড়ে ফেরেন ১৪ রানে। দলীয় ১৯৮ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন বাংলাদেশের। পরের ওভারে সাজিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে সাকিব ফিরলে ইনিংসসহ হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকদের জন্য। ১৩০ বলে ৬৩ রান করেন সাকিব। এরপর খালেদ আহমেদ (০) এবং তাইজুল ইসলাম (৫) ফিরলে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২০৫ রানে। আর পাকিস্তান জয় পায় ইনিংসসহ ৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
১ম ইনিংস (চতুর্থ দিন)
পাকিস্তান: ৩০০/৪; (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৫৬, বাবর ৭৬, ফাওয়াদ ৫০, রিজওয়ান ৫৩); (এবাদত ২৩-৩-৮৮-১, খালেদ ১৭.৩-৫-৪৯-১, তাইজুল ২৫-৬-৭৩-২, সাকিব ১৯-৭-৫২-০, মেহেদী মিরাজ ১৪-২-৩৭-০)।
বাংলাদেশ: ৮৭/১০; (মাহমুদুল জয় ০, সাদমান ১, মুমিনুল ১, শান্ত ৩০, মুশফিক ৫, লিটন ৬, মিরাজ ০, সাকিব ৩৩, তাইজুল ০, খালেদ ০, এবাদত ০*); (আফ্রিদি-৪-৩-৩-১, নুমান ১২-২-৩৩-০, সাজিদ ১৫-৪-৪২-৮, বাবর ১-০-১-০)।
দ্বিতীয় ইনিংস
বাংলাদেশ (ফলোঅন): ২০৫/১০; (সাদমান ২, মাহমুদুল ৬, শান্ত ৬, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৪৮, লিটন ৪৫, সাকিব ৬৩, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, খালেদ ০, এবাদত ০*); (আফ্রিদি ১৫-৫-৩১-২, হাসান ১১-৩-৩৭-২, নুমান ২০-৫-৪১-০, ফাহিম ৪-৪-০-০, সাজিদ ৩২.৪-৮-৮৬-৪, বাবর ২-১-১-১)
পাকিস্তান ইনিংসসহ ৮ রানে জয়ী।
সারাবাংলা/এসএস
ইনিংসসহ পরাজয় দ্বিতীয় টেস্ট পঞ্চম দিন ফলোঅন বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান