নতুন বছরে নতুন শুরুর প্রত্যাশায় বাংলাদেশ
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:২৩
ঘড়ির কাটা টিক টিক করে রাত ১২টার ঘর অতিক্রম করলেই এক নতুন বছরের আগমন। ২০২১ শেষ হয়ে শুরু হবে ২০২২ সাল। নতুন বছরের প্রথম দিনেই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। পুরনো বছরের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন শুরু হবে কি?
দুই টেস্ট খেলতে গত ৯ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যার প্রথম টেস্ট ম্যাচটি মাঠে গড়াচ্ছে কাল ভোর থেকে। আগামীকাল ১ জানুয়ারী বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি। প্রথম ম্যাচের ভেন্যু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভাল।
টেস্ট ক্রিকেটে এই ভেন্যু নতুন। বাংলাদেশ আগে টেস্ট খেলেনি এই মাঠে। বাংলাদেশ কেন, ২০২০ সালে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর মাত্র তিন টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ভেন্যুতে। নিউজিল্যান্ডের অন্য পিচগুলোর তুলনায় এই পিচে স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পান। ম্যাচের চতুর্থ দিন থেকে বল ঘুরতে দেখা যায়। ঐতিহ্যগতভাবে স্পিননির্ভর বাংলাদেশ দলের জন্য এটা নিশ্চয় ভালো খবর। তবে চিন্তারও আছে অনেক কিছুই।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বরাবরই ব্যর্থ বাংলাদেশ। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩৩ ম্যাচ খেললেও একটা জয়ও পায়নি বাংলাদেশ। সম্প্রতি ফর্মটাই বড় চিন্তা। টেস্টে চলতি বছর সাত টেস্ট খেলে শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা ম্যাচই জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার বিপক্ষে ড্র করেছে এক টেস্ট, বাকি পাঁচটিতে হার। পরিসংখ্যান বলছে সর্বশেষ ১৩ টেস্টে বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটি, দুটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একমাত্র ড্র শ্রীলংকার বিপক্ষে। বাকি দশ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ।
এদিকে, এই সিরিজে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন। ইনজুরির কারণে নেই তামিম ইকবাল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্ট থেকে অবসরই নিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন সুযোগ পাওয়া তরুণরা। সব মিলিয়ে নতুন বছরে পুরনো ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন শুরু করা বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না নিশ্চয়। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ অবশ্য আশার কথাই শোনালেন।
আজ শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, ‘অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে কোনো লাভ হবে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করাই ভালো। সব সময় আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক চিন্তা করা উচিত।নিউজিল্যান্ডে অবশ্যই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ থাকবে। আগে থেকেই যদি নেতিবাচক চিন্তা করেন, তাহলে ভালো ফলাফল আসবে না। যত চ্যালেঞ্জ থাকুক, আশাবাদী থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যতগুলো টেস্ট জিতেছি, তা দলগত পারফরম্যান্সের কারণে। সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে।’
ম্যাচে তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশি ব্যাটিং লাইনআপকে মোকাবিলা করতে হবে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নীল ওয়াগনার ও কাইল জেমিসনের মতো পেসারদের। অনেকে এই চারজনকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণালী যুগের পেস আক্রমণের সঙ্গেও তুলনা করছেন। এমন ভয়ঙ্কর বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, নাজমুল হাসান শান্ত, ইয়াছির আলীর মতো তরুণ বাংলাদেশি ব্যাটারদের যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে তা অনুমেয়ই। মুমিনুলের প্রত্যাশা সেই চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারবে বাংলাদেশ।
টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে খেলার সময় মানসিকতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট খুব চ্যালেঞ্জিং হবে—এ রকম চিন্তা করলে হবে না। আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিং করলে ব্যাটাররা উপভোগ করবে, বোলাররাও বল করে মজা পাবে। প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ হয়তো একটু বেশি থাকবে। নিউজিল্যান্ডে সব সময় প্রথম এক-দেড় ঘণ্টা চ্যালেঞ্জিং হয়। সেটা শুধু নিউজিল্যান্ড না, সব জায়গায়ই থাকে।’
সাকিব না থাকাতে একাদশ সজানো নিয়েও বেশি ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। সাকিবের অনুপস্থিতিতে একজন ব্যাটার নাকি একজন বোলার খেলানো হবে সেটা চিন্তার বিষয়। হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আভাস দিয়েছেন একজন স্পিনার নিয়েই মাঠে নামতে চায় বাংলাদেশ।
ম্যাচের আগের দিন হেড কোচ বলেন, ‘এখনো উইকেট দেখিনি। উইকেট দেখার পর একাদশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আশা করছি, ভালো উইকেটই পাব। তবে হয়তো পেস ও স্পিন দুটোকে গুরুত্ব দিয়েই একাদশ সাজাব। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে উইকেটে কিছুটা স্পিন ধরবে। বাংলাদেশ দল ঐতিহ্যগতভাবে স্পিননির্ভর। তবে আমাদের দলে ভালো পেসার আছে। হয়তো তিন পেসারের ওপর ভরসা রাখব। ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণই হবে। একাদশে তিন পেসার ও একজন স্পিনার থাকতে পারে।’
নিউজিল্যান্ড সফরে সাত দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন বেড়ে শেষ পর্যন্ত ১১ দিন হয়। যাতে পরিকল্পনা মতো অনুশীলনও করতে পারেনি বাংলাদেশ।
সব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে নতুন বছরে দারুণ শুরু করতে চান টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। আগের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের কথা জানালেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘নতুন বছর নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। আমরা শুরুটা ভালো প্রত্যাশা করছি। শুরুতেই যদি ভালো হয়, সামনের সময়টাতে ভালো যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি ভালো কিছু আশা করছি নতুন বছরে। বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। আগে যে ভুল করেছি সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করব।’