Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়

স্পোর্টস ডেস্ক
৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২২

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এর আগে কখনোই জয় পায়নি বাংলাদেশ। এমন পরিসংখ্যান নিয়ে কিউইদের দেশে পাড়ি জমায় টাইগাররা। ২০২২ সালের প্রথম দিনে নেমে পড়ে সাদা পোশাকের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। আর শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে কিউইদের ৮ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।

এর আগে শেষ ১৭ টেস্ট ম্যাচে নিজেদের মাটিতে অপরাজিত নিউজিল্যান্ড। ২০১৭ সালের পরে টেস্টে নেই কোনো হার। এবার সব রেকর্ড গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।

বিজ্ঞাপন

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। হাতে চোট পেয়ে এই ইনিংস থেকে ছিটকে গেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। তার বদলে সাদমান ইসলামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ব্যাট হাতে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ টিম সাউদির করা দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন সাদমান। দলীয় ৩ রানে বাংলাদেশের হারায় প্রথম উইকেট। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গ দিতে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সঙ্গে ৩১ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান টাইগার অধিনায়ক। এক সময় মনে হচ্ছিল ৯ উইকেটের জয় নিয়েই হয়তো মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ।

তবে ইনিংসের ১৫তম ওভারে কাইল জেমিসনের করা দ্বিতীয় বলে স্লিপে থাকা রস টেইলর দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন নাজমুল হোসেন শান্তর। আউট হওয়ার আগে তিন চারে ৪১ বলে ১৭ রান করেন শান্ত। তিনি যখন ফিরলেন তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের তখন দরকার মাত্র ৬ রান। এরপর আর জয়ের জন্য বেশি সময় নেয়নি টাইগাররা। ১৬তম ওভারের ৫ম বলে মুশফিকুর রহিম বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

মুমিনুল হক ৪৪ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন আর মুশফিকুর রহিম ৭ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। কিউইদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন টিম সাউদি এবং কাইল জেমিসন।

এর আগে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ডেভন কনওয়ের শতকে ভর করে ৩২৮ রানের পুঁজি দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে টাইগারদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন ইবাদত এবং মিরাজ। দুটি উইকেট নেন মুমিনুল আর একটি উইকেট নেন ইবাদত হোসেন।

কিউইদের ৩২৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৮, নাজমুল হোসেন শান্তর ৬৪, মুমিনুল হকের ৮৮ আর লিটন দাস করেন ৮৬ রান। শেষ দিকে মেহেদি মিরাজের ৪৭ রানে ভর করে বাংলাদেশ ৪৫৮ রান তোলে স্কোরবোর্ডে। আর লিড নেয় ১৩০ রানের। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট। তিনটি উইকেট নেন নিল ওয়াগনার। দুই উইকেট নেন সাউদি আর একটি উইকেট নেন কাইল জেমিসন।

তবে খেলার মোড় ঘুরে যায় চতুর্থ দিনে এসে। টাইগার পেসার ইবাদত হোসেনের আগুন ঝরা বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কিউই ব্যাটাররা। চতুর্থ দিনে কিউইদের পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারটিই নিয়েছিলেন তিনি, বাকি একটি ছিল তাসকিন আহমেদের নামের পাশে। বাংলাদেশের লিড কাটিয়ে চতুর্থ দিনে ১৭ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করা নিউজিল্যান্ডের ভরসা ছিল অপরাজিত থাকা রস টেইলর।

চতুর্থ দিন যেখানে শেষ করেছিলেন পঞ্চম দিনে এই জায়গা থেকেই শুরু করে টাইগার বোলাররা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে চতুর্থ দিনে চার উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। তার আগুন ঝরা বোলিংয়েই কিউইদের মাঠে প্রথম জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই রস টেইলরকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন টাইগার এই পেসার।

পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলটি করলেন গুড লেন্থে। রস টেইলরের ব্যাট এবং প্যাডের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা গলিয়ে স্টাম্প ভাঙলো বল। ১০৪ বলে ৪০ রান করে ফিরতে হলো রস টেইলরকে। ১৫৪ রানে নিউজিল্যান্ড হারালো ষষ্ঠ উইকেট। এরপর উইকেটে আসেন কাইল জেমিসন। তাকেও বেশি সময় টিকতে দেননি ইবাদত। ৬৭তম ওভারের শেষ বলে ফ্লিক করেছিলেন জেমিসন। আর বাতাসে ভাসতে থাকা বল ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন শরিফুল। এতেই ১৬০ রানে ৭ম উইকেট হারায় কিউইরা। এটি ইবাদতের ষষ্ঠ শিকার।

পরের ওভারে বল হাতে আসেন তাসকিন। ৬৮তম ওভারের শেষ বলে গলার কাঁটা হয়ে বেধে থাকা রাচিন রবিন্দ্রকে তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ১৬ রান করেন রবিন্দ্র। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি তাসকিনের দ্বিতীয় উইকেট। এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও বল করতে আসেন তাসকিন। এবার টিম সাউদিকে কোনো রান করার আগেই বোল্ড করেন এই পেসার। এটি ইনিংসে তার তৃতীয় শিকার। দলীয় ১৬১ রানে কিউইরা হারায় ৯ম উইকেট।

এরপর বেশকিছু সময় ধরে প্রতিরোধ গড়েন বোল্ট এবং ওয়াগনার। তবে ৭৪তম ওভারের ৩য় বলে মেহেদি হাসান মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে বল তুলে দেন বোল্ড। সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন তাইজুল ইসলাম। এতেই ১৬৯ রানে অলআউট হয় কিউইরা।

বাংলাদেশের হয়ে ২১ ওভারে ছয় উইকেট নেন ইবাদত, তিন উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ আর বাকি একটি উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

আর ৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হাতে রেখে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড

১ম ইনিংস

নিউজিল্যান্ড: ১০৮.১ ওভারে ৩২৮/১০ (লাথাম ১, ইয়াং ৫২, কনওয়ে ১২২, টেইলর ৩১, নিকোলস ৭৫, ব্লান্ডেল ১১, রবিন্দ্র ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়াগনার ০, বোল্ট ৯*) ; (তাসকিন ২৬-৭-৭৭-০, শরিফুল ২৫-৭-৬২-৩, ইবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, শান্ত ২-০-১০-০, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২)।

বাংলাদেশ: ১৭৬.২ ওভারে ৪৫৮/১০; (জয় ৭৮, সাদমান ২২, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮৮, মুশফিক ১২, লিটন ৮৬, ইয়াসির ২৬, মিরাজ ৪৭, তাসকিন ৫, শরিফুল ৭, ইবাদত ০*); (সাউদি ৩৮-৪-১১৪-২, বোল্ট ৩৫.২-১১-৮৫-৪, জেমিসন ৩৫-১১-৭৮-১, ওয়াগনার ৪০-৯-১০১-৩, রবিন্দ্র ২৮-৫-৬৭-০)।

২য় ইনিংস

নিউজিল্যান্ড: ৭৩.৪ ওভারে ১৫৯/১০; (লাথাম ১৪, ইয়ং ৬৯, কনওয়ে ১৩, টেইলর ৪০, নিকোলস ০, ব্লান্ডেল ০, রবিন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়াগনার ০*, বোল্ট ৮); ( তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, শরিফুল ১২-২-৩০-০, মিরাজ ২২.৪-৫-৪৩-০, ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মুমিনুল ৪-০-৭-০)।

বাংলাদেশ: ১৬.৫ ওভারে ৪২/২; (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিকুর ৩*); (বোল্ট ৫-৩-৪-০, সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১০-১, ওয়াগনার ৩-১-৪-০)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: ইবাদত হোসেন (প্রথম ইনিংস ইবাদত ১৮-৩-৭৫-১, দ্বিতীয় ইনিংস ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬)

সারাবাংলা/এসএস

নিউজিল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ পঞ্চম দিন প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ ব্যাটিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর