Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক
১৪ মার্চ ২০২২ ১১:১৭

বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের উল্লাস [ছবি- ক্রিকইনফো]

স্বপ্নের প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচেই জুটেছিল পরাজয়। তৃতীয় ম্যাচে লড়াকু সংগ্রহের পরও পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ক্যাচ মিস আর এলোমেলো ফিল্ডিং সেই সংগ্রহকে মামুলিই বানিয়ে দিচ্ছিল প্রায়। কিন্তু ম্যাচের ৪২ থেকে ৪৪ ওভার, বিশেষ করে ৪৪তম ওভারটি গোটা ম্যাচের চিত্রই বদলে দেয়। এই তিন ওভারে পাঁচ পাঁচটি উইকেট, এর মধ্যে ৪৪তম ওভারে তিন তিনটি উইকেট ফেলে দিয়ে জয় হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন টাইগ্রেস ক্রিকেটাররা।

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনার ম্যাচে ৯ রানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানকে হারিয়েই টাইগ্রেসরা পেল বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম জয়। ম্যাচের রঙ বদলে দেওয়া ওই ৪৪তম ওভারটির কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন ফাহিমা খাতুন।

নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ছিল গ্রুপ পর্বের চতুর্থ ম্যাচ। দুই দলই নেমেছিল টুর্নামেন্টে প্রথম জয়ের খোঁজে। টসে জয় পেয়ে বাংলাদেশকেই ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন বিসমাহ মারুফ। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নারী টাইগারদের শুরুটা খারাপ হয়নি। শারমিন আখতারের ৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটির গড়ার পর ১৭ রানে আউট হয়ে যান উইকেটকিপার-ব্যাটার শামীমা সুলতানা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৪২ জন। এরপর ৪৪ রান করে আরেক ওপেনার শারমিন আউট হয়ে গেলে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়ে বাংলাদেশ।

(বাঁয়ে) বাংলাদেশি ব্যাটিং ইনিংসের সেরা জুটি গড়ার পথে ফারজানা ও নিগার সুলতানা; (ডানে) ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফারজানার দৃষ্টিনন্দন একটি শট [ছবি- ক্রিকইনফো]

(বাঁয়ে) বাংলাদেশি ব্যাটিং ইনিংসের সেরা জুটি গড়ার পথে ফারজানা ও নিগার সুলতানা; (ডানে) ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফারজানার দৃষ্টিনন্দন একটি শট [ছবি- ক্রিকইনফো]

তৃতীয় উইকেট জুটিতে ফারজানা হক ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে শক্তিশালী ভিত্তি এনে দেন। ৪০তম ওভারে গিয়ে উইকেট হারান নিগার সুলতানা। মাত্র ৪ রানের জন্য অর্ধশতক থেকে বঞ্চিত হন তিনি। এরপর রুমানাও এসে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি ফারজানাকে। ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলার চেষ্টা করলেও ১৩ বলে ১৬ রান করেই আউট হয়ে যান রুমানা। ৪৭তম ওভারে গিয়ে ফারজানাও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ততক্ষণে তার নামের পাশে যুক্ত হয়েছে ৭১ রান। ১১৫ বলে খেলা এই ইনিংসে রয়েছে ৫টি চারের মার।

বিজ্ঞাপন

ফারজানা আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংস আর খুব বেশি এগোয়নি। রিতু মনির ১৩ বলে ১১ রান আর সালমা খাতুনের ১০ বলে ১১ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ থামে ৭ উইকেটে ২৩৪ রানে।

রানের বিচারে খুব বেশি মনে না হলেও এর মাধ্যমেই নতুন একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেন সালমা-ফারজানারা। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

ব্যাটিংয়ের শেষের অংশের মতো বোলিংয়ের শুরুটাও খুব একটা ভালো হয়নি। বাংলাদেশি বোলারদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি ব্যাটাররা রান খুব একটা না তুলতে পারলেও উইকেট নিতে পারছিল না বাংলাদেশ। ২৪তম ওভারে নাহিদা খানকে আউট করে বাংলাদেশকে রুমানা প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন রুমানা। দ্বিতীয় উইকেটে সিদরা আমিন ও বিসমাহ মারুফ আরও ৬৪ রান দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে নিগার সুলতানার কপালে। ৩৮তম ওভারে জাহানারার বলে বিসমাহ মারুফ আর ৪২তম ওভারে ফাহিমার বলে ওমাইমা সোহাইল আউট হলে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

(বাঁয়ে) পাকিস্তানের বড় ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙার পর রুমানার উল্লাস; (ডানে) পাকিস্তানি অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের উইকেট নেন জাহানারা [ছবি- ক্রিকইনফো]

(বাঁয়ে) পাকিস্তানের বড় ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙার পর রুমানার উল্লাস; (ডানে) পাকিস্তানি অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের উইকেট নেন জাহানারা [ছবি- ক্রিকইনফো]

তখনো পাকিস্তানি ব্যাটাররা স্বচ্ছন্দ্যে রান তুলতে পারছিলেন না। তবে হাতে ৭ উইকেট রেখে ৮ ওভারে ৫৩ রানের টার্গেট খুব একটা বেশি নয়। তাছাড়া ক্রিজে তখন ৯২ রানে অপরাজিত সিদরা আমিন শতকের প্রহর গুনছেন। সেট ব্যাটার হিসেবে একটু চালিয়ে খেললেই লক্ষ্যটা পাকিস্তানিদের নাগালের মধ্যেই থাকবে— এমন ভাবনাই নিশ্চয় ছিল পাকিস্তানি শিবিরে। বাংলাদেশ শিবিরও কয়েকটি ক্যাচ মিস আর দুর্বল ফিল্ডিংয়ের কারণে খুব বেশি আশাবাদী হয়তো হতে পারছিল না।

তবে পরিস্থিতি বদলে যায় মাত্র দুই ওভারেই। খেলা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডাররা। পরের ওভারেই প্রথম বলের মুখোমুখি নিদা দারকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রুমানা। আর এরপরই আসে ফাহিমার সেই ম্যাজিক ওভার। ৪৪তম সেই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফাহিদা এলবিডাব্লুউয়ের ফাঁদে ফেলেন আলিয়া রিয়াজকে। আলিয়া রিভিউ নিলেও বল ট্র্যাকারে ‘থ্রি রেড’ তার রিভিউটি নষ্ট করে। পরের বলেই আবার এলবিডাব্লিউয়ের আবেদন ফাতিমা সানার বিরুদ্ধে। ফাহিমার সে আবেদনও সফল। অল্পের জন্য হ্যাটট্রিক না হলেও পাকিস্তানি ব্যাটারদের তখন স্নায়ু চাপে পেয়ে বসেছে। ওভারটির শেষ বলেই তাই রান আউটের খরায় উইকেট যায় সিদরা নওয়াজের। ৬ ওভারে তখন পাকিস্তানের প্রয়োজন ৪৭ রান, হাতে ৩ উইকেট।

এই বিপর্যয়ের মধ্যেও পরের দুই ওভার বেশ ভালোই যায় পাকিস্তানি ব্যাটারদের। দুই ওভারে রান আসে ১৭। লক্ষ্যটা নেমে আসে ২৪ বলে ৩০ রানে। ততক্ষণে সিদরা আমিনের শতকও পূর্ণ। তবু হাল ছাড়েননি বাংলাদেশি বোলাররা। ৪৭তম ওভারে বল করতে এসে মাত্র ৫ রান দিয়ে ডায়না বেগের উইকেট তুলে নেন সালমা খাতুন। পাকিস্তানের জন্য লক্ষ্যটা আরেকটু কঠিন করে দেন তিনি। পরের ওভারেই শতক হাঁকানো সিদরা আমিন রান আউট হয়ে গেলে আর ভাবতে হয়নি বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে অলআউট না করতে পারলেও ৫০ ওভারে ২২৫ রানে বেঁধে ফেলে টাইগ্রেসরা। নিশ্চিত হয় বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম জয়।

সারাবাংলা/টিআর

টাইগ্রেস ক্রিকেটার নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ নারী ক্রিকেটার নারী বিশ্বকাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর