প্রিমিয়ার লিগে ১১ অধিনায়কের এক চাওয়া
১৪ মার্চ ২০২২ ২১:৫৯
রাত পোহালেই মাঠে গড়াচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল)। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নেই লিগের শুরুতে। তবুও মনে করা হচ্ছে শুরু থেকেই জমবে এবারের ডিপিএল। কারণ টুর্নামেন্টের জৌলুস বাড়াতে প্রতিটি দলকে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর অনুমতি দেওয়া হয়। সে হিসেবে দলগুলোও কয়েকজন বিদেশি বড় তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে এসেছে।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ, আফগানিস্তানের তরুণ তারকা ক্রিকেটার নাজিবুল্লাহ জাদরান, ভারতের হয়ে টেস্ট খেলা হানুমা বিহারীর মতো ক্রিকেটার খেলবেন এবারের প্রিমিয়ার লিগে। ৫০ ওভারের মাঠের লড়াই শুরুর আগে আজ সোমবার (১৪ মার্চ) ট্রফি উন্মোচন হয়ে গেল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
ট্রফি উন্মোচন আয়োজনে নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন এবারের প্রিমিয়ার লিগ খেলতে যাওয়া ১১টি দল। ১১ অধিনায়ক জানালেন লক্ষ্য একটিই, শিরোপা জয়।
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক মার্শাল আইয়ুব বলেন-
আমাদের আসলে নাসুম ছাড়া সবাই এভেইলেবল আছে। আমরা মূলত স্থানীয় পারফর্মারদের নিয়ে দল করেছি। আমাদের দলে যেমন ফজলে রাব্বি আছে, মিজান আছে, এনাম ভাই, আছে শরিফুল্লাহ আছে, আরিফুল হক আছে। তারা সবাই লোকাল পারফর্মার। কেবল নাসুম দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে। ওয়ানডে সিরিজের পর আশা করি যোগ দেবে। সেদিক তেকে আমরা একটু সুবিধাজনক জায়গায় আছি। কারণ আমাদের পুরো দলটাই পাচ্ছি। অনেক বড় দল কিন্তু অনেক খেলোয়াড় পাচ্ছে না শুরুতে। আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইট দেওয়া। তবে প্রথম টার্গেট সুপার লিগ খেলা। আমাদের দলে বিদেশি হিসেবে খেলবে ভারতীয় বাবা অপরাজিত। সে এরমধ্যে চলে এসেছে।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের আকবর আলী বলেন-
আমরা প্রথম দুই ম্যাচের সূচি পেয়েছি। প্রথম দুই প্রতিপক্ষের নাম জানি। আমরা প্রথম ম্যাচের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। এটা লম্বা একটা টুর্নামেন্ট, আমরা ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ এগোতে চাই।
(শিরোপা লড়াইয়ে থাকা) আমরা এখনই এতোটা প্রত্যাশা করছি না। প্রথম লক্ষ্য থাকবে যেন, ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে পারি এবং সুপার লিগে খেলতে পারি।
যে টুর্নামেন্টই খেলি কি না, চেষ্টা থাকে ভালো কিছু করার। এখানেও সেটাই থাকবে। নিজের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব। এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগের কোনো দলের নেতৃত্ব এসেছি। এটা আমার জন্য কোনো চাপ নয় বরং সুযোগ। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মতো একটা দলের নেতৃত্ব পাওয়া আমার জন্য বড় সুযোগ।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম বলেন-
এবারের প্রিমিয়ার লিগে আমাদেরে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ভালো দল হয়েছে। খুব ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল হয়েছে। প্রতিটা দলেরই প্রত্যাশা থাকে শিরোপা, আমাদেরও বিকল্প কোনো চাওয়া নেই। আমরাও শিরোপা জিততে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শিরোপা। তবে আমরা ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ যেতে চাই। প্রতিটা ম্যাচ ভালোভাবে খেলে, প্রতিটা ম্যাচ জিতে, ভালো ক্রিকেট খেলে আমরা এক ধাপ করে এগোতে চাই।
মাশরাফি ভাইয়ের মতো খেলোয়াড় যখন কোনো দলে থাকেন, সেটা সেই দলের জন্য অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট। উনি কি ধরনের পারফর্মার আপনারা সবাই জানেনই, নতুন করে বলার কিছু নেই। উনার দলে থাকা যে কোনো দলের জন্যই বড় প্লাস পয়েন্ট।
প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক অলক কাপালি বলেন-
আমাদের দলে প্রায় ২৭ জন খেলোয়াড় রয়েছে। আমাদের যে কম্বিনেশন আছে, কয়েক দিনের অনুশীলনে চেষ্টা করছি ঘাটতির জায়গাগুলো পূরণ করার। যেহেতু জাতীয় দলের জন্য খেলেতে গেছে, কিছু করার নাই। আমরা যেভাবে অনুশীলন করেছি, আশা করি, ম্যাচে আমরা ভালো করব, কোনো সমস্যা হবে না।
ব্রাদার্স ইউনিয়নের অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন-
দলটা ভালোই হয়েছে আশা করি। আর ব্রাদার্স ইউনিয়ন শেষ ১২-১৩ বছর হলো সুাপার লিগে খেলে না। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং দলের লক্ষ্য আমার কাছে মনে হয়, এবার সুপার লিগে খেলতে চাই। অবশ্যই সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। আমাদের প্রথম লক্ষ্য সেরা ছয় দলের একটা হতে চাই। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়ে সব মিলিয়ে আমি বলব আমাদের ভারাসাম্যপূর্ণ একটা দল হয়েছে। একটা ভালো দলই হয়েছে।
সবার জন্যই লিগ গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেহেতু এখনও খেলছি এবং স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ দলে খেলব। সেদিক থেকে এই লিগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য। যদি আরও দুই-তিন বছর আমার ক্যারিয়াররা ক্যারি করতে চাই, আমার মনে হয় এই লিগে আমার ভালো কিছু করা উচিত।
স্বপ্ন তো দেখি সব সংস্করণেই খেলার। কিন্তু এখন যেহেতু সামনে ঢাকা লিগ, ঢাকা লিগ নিয়েই আমি থাকতে চাই। এই জায়গায় ভালো খেলতে চাই, ব্রাদার্সের হয়ে ভালো খেলতে চাই। কিছু কিছু ভালো ইনিংস খেলতে চাই, ম্যান জেতানো ইনিংস খেলতে চাই।
খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরি বলেন-
দলটা আমি বলব, তরুণ ও সিনিয়র ক্রিকটারেদর সমন্বয়ে করা হয়েছে। কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে, যারা এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে ভালো করেছে। আমার মনে হয়, আমরা সব দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ দল। আমাদের চায়নাম্যান আছে, লেগ স্পিনার আছে, তরুণ কয়েকজন পেসার আছে। হয়তবা তেমন বড় নাম নেই। আমরা কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেললাম, বা এক সঙ্গে অনুশীলন করছি আমার কাছে দলটাকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ মনে হচ্ছে। ক্রিকেট খেলা তো মাঠে পারফর্মের খেলা। যারা মাঠে ভালো খেলবে ফল তাদের দিকেই যাবে। তবে আমি মনে করি, আমাদের দল ভালো একটা কিছু করবে।
রুবেল নামে একজন বাঁহাতি লেগ স্পিনার আছে, ওকে খুব ইম্প্রেসিভ মনে হয়েছে আমার কাছে। যদি ওর সুযোগ আসে, মনে হয় ভালোই খেলবে। ও অনেক দিন ধরেই আসে, মুশফিকও ওকে চেনে। নেটে বল করে অনেক দিন ধরেই। নাফিস ভাই ওকে যুক্ত করেছে দলে। হয়তবা প্রথমে সুযোগ নাও আসতে পারে কিন্তু আমার মনে হয় সুযোগ এলে ও ভালোই করবে। ও কোনো পর্যায়ে এখনও খেলেনি। হয়তবা প্রথমে সুযোগ আসবে না, ভবিষ্যতে আসতে পারে। অনুশীলনে দেখলাম, খুব ইম্প্রেসিভ মনে হলো আমার কাছে।
আবহানী লিমিটেডের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন-
শেষ তিন বছর যখন আমরা চ্যাম্পিয়ন তো এবারই সেভাবেই ভাবছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোব। আমাদের প্রস্তুতি ও আলোচনা হয়েছে দলের মধ্যে, আমরা ইতিবাচক আছি। তো এখন পর্যন্ত সেভাবেই এগোচ্ছি।
যখন সেরা একাদশের তিন-চার জন থাকবে না ওই সময় অবশ্যই একটু কঠিন দল সাজানো। তারপরও আমাদের যারা খেলবে তারাও জাতীয় দলের ক্রিকেটার। এবং তারাও বড় নাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। তো আমি আশা করছি, আমাদের সবাই ভালো খেলবে।
আমাদের প্রথম ম্যাচ রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে। একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে। ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। আমরাও ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি, ভালো একটা ম্যাচ হবে।
আপনি যদি জাতীয় দলের কথা চিন্তা করেন, আমাদের প্লাটফর্ম বিপিএল, ডিপিএল, বিসিএল, এনসিএল। যেখানেই ভালো খেলবেন (কাজে লাগবে(। (দল নির্বাচন) নির্বাচকদের কাজ, ম্যানজেমেন্ট আছে। এটা তাদের কাজ। আমাদের হাতে আছে পারফরম্যান্স করা, তো আমরা পারফরম্যান্স করার. দিকেই মনোযোগ দেব। আমি প্রিমিয়ার লিগটা তো অবশ্যই ভালো খেলতে চাই। ভালো খেলে আবারও দলে ফিরতে চাই।
মোহামেডানের অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরি বলেন-
একটা শক্তিশালী দল হয়েছে আমাদের। যারা আছে, অনেক দিন ধরেই খেলছে। অভিজ্ঞদের একটা দল। অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব একটা ভালো শুরু করে, টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে। প্রিমিয়ার লিগে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সমর্থকদের আছেন, চেষ্টা করব তাদের মনের আশা পূরণ করতে, এবার শিরোপা জিততে।
যারা জাতীয় দলে আছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তাদের মিস করব। হয়তবা আমার শেষের দিকে তাদের পাব কিন্তু তাদের ছাড়ারও এখন আমাদের যে দল আছে, সেটা ভালো একটা দল, ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল। শুরু থেকে আমরা চেষ্টা করব, ভালো ফল করতে। ওরা এলে যেন, আরও বেটার পারফরম্যান্স করতে পারি।
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন বলেন-
দল হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা তারুণ্য নির্ভর একটি দল। আমরা খুবই আশাবাদী যে, এই টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করব। এখনই সুপার লিগের চিন্তা না করে আমরা যদি ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ খেলি তাহলে হয়তবা আরও বেশি ভালো হবে।
শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের অধিনায়ক সৈকত আলি বলেন-
আমার দল অনেক ভালো হয়েছে। দলে তরুণ খেলোয়াড় আছে আবার অভিজ্ঞ ক্রিকটারও আছে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে একটা ভালো কম্বিনশেন আছে আমাদের। আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমাদের সব খেলোয়াড় সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। মাঠে গিয়ে যারা ভালো খেলতে পারবে, তারাই জিতবে তবে লক্ষ্য অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
সিটি ক্লাবের অধিনায়ক জাওয়াদ মোহাম্মদ রুয়েন বলেন-
১৩ বছর পর আবার প্রিমিয়ার লিগে খেলবে সিটি ক্লাব। দলটা আসলে তারুণ্য নির্ভর। পরিচিত মুখ কম, অপরিচিত মুখই বেশি। প্রথম বিভাগ ও প্রিমিয়ার লিগের কিছু তরুণ খেলোয়াড় নিয়ে এই দলটা গোছানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী, ভালো কিছু করব। সব খেলোয়াড়েরই ইচ্ছা থাকে, সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার। তাদের কাছ থেকে কিছু শেখার। তার অভিজ্ঞতাগুলো নেওয়ার। আমরা দলে যতগুলো খেলোয়াড় আছি, এটাই সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ যে, আমরা বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলব। তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারব। আমরাও চাইব, মাঠে আমাদের সেরা পারফরম্যান্সটা যেন দেখাতে পারি।
আমি ব্যাটিং অলরাউন্ডার। অবশ্যই চাইব, বড় বড় বোলারদের বল খেলতে। এক সময় টিভিতে দেখেছি খেলা, আর এখন মুখোমুখি হব, এ নিয়ে আমি খুব রোমাঞ্চিত। আমি যেহেতু মিডল অর্ডারে ব্যাট করি, বাংলাদেশের সেরা সেরা স্পিনাররা সে সময় বোলিং করবে। তো সবার বলই খেলতে হবে। আশা করি, আমার সেরা চেষ্টাটাই করব।