বিতর্কে ভরা ম্যাচে সেভিয়ার মাঠে রিয়ালের নাটকীয় জয়
১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৩:০৫
সেভিয়ার মাঠ রামোন সানচেজের ম্যাচজুড়ে বেশ বিতর্কই ছড়িয়েছে রেফারির নানান সিদ্ধান্ত। ম্যাচের শুরুতে সেভিয়ার খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি পায়নি রিয়াল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের হাতে বল না লাগলেও সেই অজুহাতে গোল বাতিল করেন রেফারি। তবে রিপ্লেতে দেখা মেলে কাঁধ দিয়ে বল রিসিভ করেছিলেন ভিনিসিয়াস। এরপর ম্যাচের শেষ সাত মিনিটে নাচো ফার্নান্দেজ এবং করিম বেনজেমার গোলে শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানে অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
এর আগে ম্যাচের ২১ মিনিটে রিয়ালের ডি-বক্সের ১৭ গজ দূর থেকে ফ্রিকিকে দুর্দান্ত এক গোল করে সেভিয়াকে লিড এনে দেন ইভান রাকিটিচ। আর এর মিনিট চারেক পরে রিয়ালের রক্ষণের ভুলের সুবিধা নিয়ে এরিক লামেলা গোল করলে ম্যাচের আধা ঘণ্টার আগেই ২-০ গোলের লিড নেয় সেভিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই ম্যাচের ৫০ মিনিটে রদ্রিগো গোল করে রিয়ালের ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেন। এরপর ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটের নাটকীয়তা! ৮৩ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা নাচো ফার্নান্দেজ গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরায়। আর নির্ধারিত সময়ের শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে করিম বেনজেমা গোল করে নিশ্চিত করে রিয়ালের জয়।
ম্যাচের তখন ১৯ মিনিটের খেলা চলছে, টনি ক্রুসের নেওয়া কর্নার কিক ঠেকাতে গোললাইন ছেড়ে আসা সেভিয়া গোলরক্ষক বুনোর হাত ফসকে বল বেরিয়ে যায়। আর বল গিয়ে সরাসরি লাগে সেভিয়ার ডিফেন্ডারের হাতে। ডি-বক্সের সামনেই থাকা রেফারির চোখ এড়িয়ে যায় আর রিয়ালের খেলোয়াড়দের আবেদনের পরেও ভিএআর দেখেননি রেফারি। ভিএআরের সাহায্য নিলে এই ঘটনার ফলাফল যেতে পারত রিয়ালের পক্ষেও।
এর মিনিট দুই পরে রিয়ালের ডি-বক্সের ১৭ গজ দূরে গোমেজকে ফাউল করেন লুকা মদ্রিচ আর এতেই ফ্রিকিক পায় সেভিয়া। সেখান থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে সেভিয়াকে লিড এনে দেন ইভান রাকিটিচ। এই গোলের রেশ কাটতে না কাটেতেই ২৫ মিনিটের মাথায় রিয়ালের রক্ষণের ভুলকে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন এরিক লামেলা। রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এডার মিলিতাওয়ের ভুলে ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান জেসুস করোনা। আর বল পেয়ে তা বাড়িয়ে দেন এরিক লামেলার কাছে। ভালো পজিশনে থাকা লামেলা বল পেয়ে দারুণ এক শটে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন।
এরপর প্রথমার্ধের ৪১ মিনিটের মাথায় সেভিয়ার ফরোয়ার্ড অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে পেছন থেকে ফাউল করেন রিয়ালের তরুণ মিডফিল্ডার এডুয়ার্ড কামাভিঙ্গা। অবৈধভাবে ফাউলের জন্য হলুদ কার্ড দেখার কথাই ছিল কামাভিঙ্গার তবে এবার রেফারি তাকে এড়িয়ে যান কোনো এক কারণে। এই সময়ে হলুদ কার্ড দেখলে দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখায় মাঠ ছাড়তে হতো কামাভিঙ্গাকে। আর রিয়ালকে ৪৫ মিনিটেরও বেশি সময় ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হত। তবে এ যাত্রায় রক্ষা পায় অল হোয়াইটসরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই কামাভিঙ্গার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রদ্রিগো। আর মাঠে নেমেই মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান রদ্রিগো। ৫০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে ভিনিয়াস জুনিয়র এবং দানি কার্ভাহালের যুগলবন্দিতে আক্রমণে ওঠে রিয়াল। কার্ভাহাল ডি-বক্সে দারুণ এক বল পাঠিয়ে খুঁজে নেন রদ্রিগোকে। আর কার্ভাহালের কাছ থেকে বল পেয়ে তা সরাসরি জালে পাঠিয়ে দেন এই ব্রাজিলিয়ান তরুণ।
খেলার ৬৩ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন করিম বেনজেমা। এরপর ৭৪ মিনিটে এসে ম্যাচে সমতায় ফেরে রিয়াল। ভিনিসিয়াস জুনিয়র কাঁধ দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জোরাল শটে বল জালে জড়িয়ে রিয়ালকে ২-২ গোলে সমতায় ফেরান। তবে রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বিরুদ্ধে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্ত জানান।
৮১ মিনিটে জোড়া খেলোয়াড় বদলি করেন কার্লো আনচেলোত্তি। লুকা মদ্রিচকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান মার্কো অ্যাসেন্সিওকে আর লুকাস ভাস্কেজের বদলি হিসেবে নামান নাচো ফার্নান্দেজকে। বদলি খেলোয়াড় নাচোই মাঠে নেমে স্বস্তি ফেরায় রিয়াল শিবিরে। মাঠ নামার পরের মিনিটেই ডান দিক থেকে কার্ভাহালের বাড়ানো বল ডি-বক্সের সামনে পেয়ে সেখান থেকে শট করে বল জালে জড়িয়ে রিয়ালকে ২-২ গোলে সমতায় ফেরান নাচো।
রামোন সানচেজে নাটকের তখনও বাকি। খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিট তখন শেষে। চলছে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের খেলা। ডান দিকে ভিনিসিয়াস এবং রদ্রিগোর দুর্দান্ত এক যুগলবন্দিতে আক্রমণ সাজায় রিয়াল। ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে বাই লাইন ধরে আক্রমণের যান রদ্রিগো আর সুযোগ বুঝে বেনজেমাকে খুঁজে নিয়ে কাট ব্যাক করেন বল। আর ডি-বক্সের ভেতর জায়গা করে নিয়ে সেভিয়ার ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন করিম বেনজেমা। আর এরপরেই বুনো উল্লাসে ভাসে গোটা রিয়াল শিবির। রিয়ালের নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটে। ম্যাচে ২-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
এই জয়ে লা লিগার শিরোপার আরও কাছে এগিয়ে গেল রিয়াল। ৩২ ম্যাচে ২৩ জয় ৬ ড্র আর ৩ হারে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষে অবস্থান করছে রিয়াল। ৩০ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা, সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় তিনে আছে সেভিয়া। আর ৩২ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে চারে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
সারাবাংলা/এসএস