বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতিতে সমস্যা দেখছেন ডমিঙ্গো
২৭ মে ২০২২ ১৯:৫৪
আরেকটা টেস্ট সিরিজ, বাংলাদেশের আরেকটা হার। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর এবার ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষেও সিরিজে হারল বাংলাদেশ। অথচ শ্রীলংকার এই দলটাকে শক্তি বিচারে ‘শক্ত প্রতিপক্ষ’ বলার কোনও সুযোগই নেই। দুই ইনিংসের শুরুতেই ব্যাটিং ধসের মুখে পড়া বাংলাদেশ মিরপুর টেস্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাজেভাবেই হেরেছে। কারণ হিসেবে বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতির দোষ দেখছেন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তবুও মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের দুর্দান্ত দুটি সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ৩৬৬ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে তারপর শ্রীলংকা তাদের প্রথম ইনিংসে তাক লাগিয়ে দেয়। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দিনেশ চান্ডিমালের সেঞ্চুরিতে ৫০৬ রান তোলেন সফরকারীরা।
বাংলাদেশ তাতেই চাপে ভেঙে পরল কিনা কে জানে! দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও ব্যাটিং ধস। এবার মাত্র ২৩ রানে চার উইকেট নেই। ৫৩ রানে পতন হয় পঞ্চম উইকেট। তারপর বিলম্ব হলেও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ মিরপুরের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য মোটেও কঠিন ছিল না। শ্রীলংকার ইনিংস বা মুশফিক-লিটনের ব্যাটিংয়েই যেটা বুঝা গেছে।
এ নিয়ে টানা তিনটি সিরিজ স্পোর্টিং উইকেটে খেলল বাংলাদেশ। হারতে হয়েছে তিনটিতেই। আগে দেশের মাটিতে সাধারণত স্পিনিং উইকেটে খেলত বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত টেস্টে বড় বড় জয়গুলো ওই স্পিনিং উইকেটে খেলেই এসেছে। ডমিঙ্গো বলছেন, তাতেই আসল ক্ষতিটা হয়েছে! আগে থেকে বাজে উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বলে ভালো উইকেটে মানিয়ে নিতে পরছেন না ক্রিকেটাররা- বলছেন তিনি। এটাও বলেছেন সাফল্য আসছে না বলে আবারও স্পিনিং উইকেটে ফিরে যেতে চান না।
শুক্রবার (২৭ মে) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো বলেন, ‘এই টেস্টের উইকেট ভালো ছিল। টেস্টের পঞ্চম দিন ফল এসেছে, ভালো উইকেট! চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট ছিল। কিন্তু সেখানেও ফল হতে পারত। ওরা বাজে উইকেটে খেলে অভ্যস্ত, তাই ভালো করতে পারছে না। আমি হতাশাটা বুঝতে পারছি। যত ভালো উইকেটে আমরা খেলব, ক্রিকেটারদের উন্নতিও তত ভালো হবে। আমি জানি, সবাই জিততে চাচ্ছে। আমি জানি চটজলদি ফলাফলের সুযোগ আছে। বাজে উইকেটে খেলে প্রতিপক্ষকে ১০০ রানে অলআউট করে ফেলে আমরা ১২০ রান করব। এভাবে খেললে দল উন্নতি করবে না। এভাবে খেলেও কিন্তু সিরিজ জিততে পারিনি।’
ডমিঙ্গো বলেন, ‘এটা হয়তো আমাদের একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য সাহায্য করবে। কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের জন্য টেস্ট দল গড়তে সাহায্য করবে না। আগের টেস্ট জয়গুলোর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ওই টেস্ট জয় আমাদের পরে হয়তো ক্ষতিই করেছে। কারণ, এরপর ভালো উইকেটে যখন খেলেছি, তখন ভালো করিনি। আমরা যদি স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে খেলি, এরপর ঘরের বাইরে ভালো উইকেটে খেলি, তাহলে আমাদের কোনো সুযোগই থাকবে না। আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি গড়তে হলে, ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে হলে ভালো উইকেটে খেলতে হবে।’
মিরপুর টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন শ্রীলংকার দুই পেসার কাসুন রাজিথা, আসিতা ফার্নান্দো। অথচ বাংলাদেশের দুই পেসার ইবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদের মতোই অনভিজ্ঞ দুজন। ডমিঙ্গোর মতে, শ্রীলংকার ঘরোয়া ক্রিকেটের সংস্কৃতিটা অন্য। রাজিথা, আসিতারা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এমন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে এসেছেন ইবাদত, খালেদরা হয়তো সেটা কখনোই পাননি। সমস্যাটা সেখানেই।
ডমিঙ্গো বলেন, ‘টেস্ট অভিজ্ঞতা হয়তো এক। কিন্তু ওদের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতা অনেক। এ ক্ষেত্রে টেস্ট সংস্কৃতির একটা পরিবর্তন আসতে হবে। তবে এই পরিবর্তনটা আসবে যখন আমরা আরও টেস্ট জিততে পারব। টেস্ট ক্রিকেট খেলার আগ্রহ, ইচ্ছা তখনই বাড়বে, যখন আমরা বড় একটা টেস্ট সিরিজ জিতব।’
তবে দল উন্নতি করছে বলছেন ডমিঙ্গো, ‘ছোট ছোট পার্থক্য। যেমন কীভাবে টেস্ট ক্রিকেটারদের ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয়, টেস্ট ক্রিকেটারদের কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, মাঠে কেমন দর্শক আসে। কোনো সন্দেহ নেই, সাদা বলের ক্রিকেট এখানে বেশি গুরুত্ব পায়। আমি মনে করি, আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হতে শুরু করেছি। আমরা প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের আরও এক ধাপ উন্নতি করতে হবে। আমি পার্থক্যটা কমে আসতে দেখছি।’
বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জিততে শিখলে বিষয়গুলো আরও সহজ হবে মনে করছেন বাংলাদেশ কোচ, ‘এই টেস্ট সিরিজের আগে আমি ছেলেদের একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। ওদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা এর আগে কখনো জিম্বাবুয়ে ছাড়া বড় কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছ কি না? উত্তর ছিল, না। ওরা কখনোই বড় কোনো দলকে টেস্ট সিরিজে হারায়নি। আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত বড় টেস্ট সিরিজ জেতা শুরু করব, আমরা পরবর্তী ধাপে যেতে পারব না। আমাদের বড় সিরিজ জিততে হবে।’
সারাবাংলা/এসএইচএস