রিয়ালের ১৪ নাকি লিভারপুলের ৭?
২৮ মে ২০২২ ১৩:০৪
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাকর টুর্নামেন্টের ফাইনালে শনিবার (২৮ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। টুর্নামেন্টটির সর্বোচ্চবার চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের আছে ১৩টি শিরোপা আর যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাধারী লিভারপুলের ৬টি। ফ্রান্সের প্যারিসে রিয়ালের সামনে থাকছে নিজেদের ছাড়িয়ে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ। অন্যদিকে লিভারপুলের সামনে হাতছানি এসি মিলানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাধারী হওয়ার।
শেষবার ১৯৮১ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় সেবার রিয়ালের প্রতিপক্ষ ছিল এই লিভারপুলই আবার কাকতালীয়ভাবে ফ্রান্সের প্যারিসেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেবারের ফাইনাল। অনেকটা সময় পেরিয়েছে সেই থেকে। রিয়াল মাদ্রিদ এরপর আরও ৭ বার এই শিরোপা ঘরে তুলেছে। অন্যদিকে সেবার রিয়ালকে হারানোর পর আরও তিনবার জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাই তো এবার রিয়ালের সামনে সেবারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকছে। যদিও ২০১৮ সালে লিভারপুলকে হারিয়ে রিয়াল জিতেছিল তাদের ১৩তম চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৮১ সালের সেই ফাইনাল হারের প্রতিশোধটা নিতে মুখিয়ে কি থাকবে না রিয়াল?
২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল রিয়াল। এবার সেই হারের বদলা নিতে মুখিয়ে আছে অল রেডরা। সে কথা নিজেদের মুখেই জানিয়েছেন লিভারপুলের তারকা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ।
বর্তমান সময়ে রিয়ালের চেয়ে ফর্মের দিক দিয়ে বেশ এগিয়েই আছে লিভারপুল। শেষবার মার্চ মাসে কোনো ম্যাচ হেরেছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। আর পুরো মৌসুমে মাত্র তিনটি ম্যাচে হারের মুখ দেখেছে তারা। ইতোমধ্যেই ইংলিশ লিগ কাপ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছে তারা। প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডে তাদের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে। এবার রিয়ালের বিপক্ষে হেরে গেলে সেই হতাশা দ্বিগুণ হয়ে যাবে তাদের।
অন্যদিকে ধুঁকতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ বদলে গেছে কার্লো আনচেলোত্তির পরশে। বার্সেলোনা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদেকে বেশ পেছনে ফেলে আগেই লা লিগার শিরোপা নিশ্চিত করে অল হোয়াইটসরা। আর এর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপাও জিতেছে তারা। এবার তাদের লক্ষ্যে ১৪তম বারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তোলা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল তাদের জন্য নতুন কেনো মঞ্চ নয়। তবে এবার ফাইনালে ওঠার পথে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য সব গল্প লিখে ইউরোপের ‘প্রত্যাবর্তনের রাজা’ হয়ে উঠেছে মাদ্রিদের দলটি। এবার ১১ ম্যাচে ১৫ গোল করে বেনজেমা আছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে। এই ১৫ গোলের ১০টিই আবার নকআউট পর্বে। তার এই পারফরম্যান্সই রিয়ালকে ৯ বছরে ৫ম বারের মতো ইউরোপের সেরার ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
ফাইনালে ওঠার পথে রিয়াল মাদ্রিদ এবার হারিয়েছে তিন হট ফেভারিটদের। রাউন্ড অব ১৬’তে পিএসজির বিপক্ষে প্রথম লেগে ১-০ গোলের ব্যবধানে হেরে দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠেও প্রথমার্ধে ১-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে করিম বেনজেমার অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকে পিএসজিকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে রিয়াল।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির মাঠে ওই বেনজেমার হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে ফেরে রিয়াল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যদিও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল রিয়াল। তবে অতিরিক্ত সময়ে বেনজেমা ও রদ্রিগোর দুই গোলে ৫-৪ গোলের ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে রিয়াল।
তবে আরও বেশি রোমাঞ্চ ছড়ায় সেমিফাইনালে রিয়াল ও ম্যানচেস্টার মধ্যকার ম্যাচটিতে। প্রথম লেগে সিটির মাঠে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল রিয়াল। আর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের ৮৯ মিনিট পর্যন্তও ১-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল রিয়াল আর দুই লেগ মিলিয়ে তখনও রিয়াল পিছিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে। অর্থাৎ ম্যাচে ফিরতে রিয়ালকে শেষ মিনিটে করতে হত দুটি গোল। অন্তিত মুহূর্তে দুই মিনিটে রদ্রিগোর দুই গোলে লড়াইয়ে সমতা টানার পর শেষ পর্যন্ত ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালে ওঠে রিয়াল। ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন সেই বেনজেমা, মৌসুম জুড়েই যিনি দলের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নাম।
অন্যদিকে লিভারপুলের ফাইনালে ওঠার রাস্তা ছিল তুলনামূলক সহজ। রাউন্ড অফ ১৬’তে ইন্টার মিলান, কোয়ার্টার ফাইনালে বেনফিকা আর সেমিফাইনালে অল রেডরা লড়েছিল ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েই ফাইনালের টিকিট কাটে সাদিও মানে, মোহাম্মদ সালাহরা। তাই প্যারিসের ফাইনালে হট ফেভারিট বলতে গেলে তারাই। ইংলিশ জায়ান্টদের লক্ষ্য এবার ২০১৮ ফাইনালের হারের বদলা।
মোহাম্মদ সালাহ বারবার সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের ‘সবচেয়ে বাজে’ মুহূর্তের বদলা নেবেন। ২০১৮ সালে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। কিন্তু ফাইনালে সার্জিও রামোসের চ্যালেঞ্জে তিনি কাঁধে চোট পান ৩০ মিনিটে। চোট নিয়ে কিছুক্ষণ চালিয়ে যান খেলা। তবে একটু পর মাঠ থেকে উঠে যান কান্নাভেজা চোখে। লিভারপুল হেরে যায় ৩-১ গোলে। সেটির প্রতিশোধ এবার তিনি নিতে চান রিয়ালকে হারিয়ে।
সারাবাংলা/এসএস
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল টপ নিউজ রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল