Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দলবদলের মৌসুমে রাজত্ব ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৩৩

টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়েই শেষ হলো ২০২২/২৩ মৌসুমের ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদল। ২০২১/২২ মৌসুমের খেলা শেষের পর থেকে শুরু হলেও মূলত আগস্টের শুরু থেকে জমে ওঠে ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুম।

গোটা দলবদলের মৌসুম জুড়েই ছিল উত্তেজনা। ইউরোপের বড়বড় ক্লাবগুলো দলে ভিড়িয়েছেন নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড়গুলোকে। তবে কেউ কেউ পারেনি পছন্দের তালিকার খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে। এর ভেতর কিলিয়ান এমবাপে এবং এর্লিং হালান্ড অন্যতম। দীর্ঘদিন রিয়াল মাদ্রিদের রাডারে থাকা কিলিয়ান এমবাপে এবং এর্লিং হালান্ডের কাউকেই দলে টানতে পারেনি। আবার আয়াক্স থেকে এবারের রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে অ্যান্তনিকে দলে ভিড়িয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

এক নজরে এবারের ইউরোপিয়ান দলবদল

কিংবদন্তি মার্সেলো। পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের হৃদয় ভেঙেছেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে এবারের দলবদলের মৌসুমটা কেবলই নিজেদের করে নিয়েছে এফসি বার্সেলোনা।

বরাবরের মতো দলবদলের মৌসুমে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল)। অর্থ করচের দিক দিয়েও প্রিমিয়ার লিগের ধারে কাছে নেই আর কোনো দলই। যেখানে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া বাকি চার লিগ মিলিয়ে খেলোয়াড় কেনার পেছনে খরচ করেছে মোট ২.৩ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি সেখানে কেবল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে মোট ২.২৫ বিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ ইউরোপের শীর্ষ লিগের সমান অর্থই খরচ করে বাকি শীর্ষ চার লিগ।

খেলোয়াড় কেনায় প্রিমিয়ার লিগে পর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে ইতালিয়ান সিরি আ। তারা খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে ৭৪৯.২৩ মিলিয়ন ইউরো। এরপর একে একে আছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ২০২২/২৩ মৌসুমে খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে ৫৫৭.৮৫ মিলিয়ন ইউরো। তালিকার চারে আছে স্প্যানিস লা লিগা তাদের খরচ ৫০৯.৬৯ মিলিয়ন আর শীর্ষ পাঁচ লিগে সবচেয়ে কম খরচ করেছে জার্মান বুন্দেস লিগা। তাদের খরচ ৪৮৪.৫৮ মিলিয়ন।

খেলোয়াড় কেনার পেছনে ইংলিশ লিগগুলো যেমন খরচ করেছে তেমনই খেলোয়াড় বিক্রি করেও ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনও করেছে প্রিমিয়ার লিগ।

এক নজরে খেলোয়াড় বিক্রি করে লিগগুলোর উপার্জনের তালিকা—

১. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ- ৮৮৮.৩১ মিলিয়ন

২. ইতালিয়ান সিরি- ৭৪৫.৮২ মিলিয়ন

৩. ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান- ৬০১.৫২ মিলিয়ন

৪. জার্মান বুন্দেস লিগা- ৫২৮.৭৪ মিলিয়ন

৫. স্প্যানিশ লা লিগা- ৪৫৩.২৫ মিলিয়ন

*আর্থিক হিসাব ইউরোতে

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল)

এদিকে বরাবরের ন্যয় দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল)। এবারের দলবদলের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো থেকে দলবদল করা খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২৬০। খেলোয়াড় বিক্রি করে ক্লাবগুলো অর্জন করেছে প্রায় ৮৮৮.৩১ মিলিয়ন ইউরো। আর খেলোয়াড় কিনে ক্লাবগুলো ব্যয় করেছে ২.২৫ বিলিয়ন ইউরো।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ভেতর এবার সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে নটিংহাম ফরেস্ট। ২০২২/২৩ মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগের পদোন্নয়ন হয়েছে ইংলিশ সেকেন্ড ডিভিশন থেকে। তারা মোট ১৮টি নতুন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে।

প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাবগুলো নিজেদের স্কোয়াড আরও বেশি শক্তিশালী করেছে। নিজেদের প্রয়োজনের জায়গাটা খেলোয়াড় দিয়ে পূর্ণ করেছে ক্লাবগুলো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা ছয় ক্লাবগুলোর দিকে একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক।

ম্যানচেস্টার সিটি:

২০২১/২২ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি তবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারেও ব্যর্থ। ২০২০/২১ মৌসুমে রানার্স আপ হলেও ২০২১/২২ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। আর এরপরেই সিটির দলে এসে বড় পরিবর্তন। বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বর্তমান সময়ের তরুণ সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম এর্লিং হালান্ডকে দলে ভিড়িয়েছে তারা।

হালান্ডকে দলে ভেড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে সিটিজেনদের। কেননা এই স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে ছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদও। তবে শেষ পর্যন্ত ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে হালান্ডকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে জয়ী হয় ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। এছাড়া লিডস ইউনাইটেড থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কেলভিন ফিলিপসকে ৪৯ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভেড়ায় সিটি। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে সেন্টার ব্যাক ম্যানুয়েল আকুঞ্জিকে ১৭.৫০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে, আরএসসি অ্যান্ডারলেখট থেকে লেফট ব্যাক সার্জি গোমেজকে ১৩ মিলিয়ন ইউরো আর এআরএম বিয়েলফিল্ড থেকে গোলরক্ষক স্টেফানকে অর্টেগাকে দলে ভেড়ায় ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। সাত খেলোয়াড় কিনে সিটির মোট খরচ ১৩৯.৫ মিলিয়ন ইউরো।

অবশ্য এবার দলবদলের মৌসুমে খেলোয়াড় কিনে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে তার চেয়ে বিক্রি করে উপার্যন করেছে বেশি। মোট ছয় খেলোয়াড়কে এবার বিক্রি করেছে সিটিজেনরা। যেখান থেকে উপার্জন ১৫৯.৯ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ এবারের দলবদলের মৌসুমে সিটির মোট উপার্জন দাঁড়িয়েছে ২০.৪ মিলিয়ন ইউরো।

লিভারপুল:

গেল মৌসুমটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে অল রেডদের। ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের পথে থেকেও শেষ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটির কাছে লিগ হাতছাড়া আর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদে কাছে হেরে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগেও। নতুন মৌসুমে নতুন করে শুরুর লক্ষ্যে তিনজন খেলোয়াড়কে স্থায়ীভাবে দলে ভিড়িয়েছে লিভারপুল। বেনফিকা থেকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজ, ফুলহাম থেকে ৫.৯ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ফ্যাবিও কার্ভালহো আর আবেরদিন এফসি থেকে ফুলব্যাক কেলভিন রামসিকে ৪.৯ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে লিভারপুল। থিয়াগো আলকান্ত্রার ইনজুরিতে দলের মধ্যমাঠ ভুগছে তা বুঝতে পেরেছেন অলরেড কোচ ইয়্যুর্গেন ক্লপ। তাই তো জুভেন্টাস থেকে আর্থার মেলোকে দলবদলের মৌসুমের শেষ দিনে এসে চমক দেয় লিভারপুল। এক মৌসুমের জন্য ধারে আর্থারকে দলে ভেড়ায় লিভারপুল।

খেলোয়াড় কেনার সঙ্গে বিক্রিও করেছে অলরেডরা। গেল মৌসুমের দলের সেরা খেলোয়াড় সাদিও মানেকে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৩২ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করেছে। এছাড়া নিকো উইলিয়ামসকে নটিংহাম ফরেস্টের কাছে ২০ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করেছে লিভারপুল। সব মিলিয়ে মোট ৯ খেলোয়াড়কে বিক্রি করে ৮০.৭ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন লিভারপুলের।

সবমিলিয়ে খেলোয়াড় কেনার পেছনে ৮৫.৮ মিলিয়ন এবং বিক্রি করে ৮০.৭ মিলিয়ন উপার্জন করেছে অল রেডরা। এতে লিভারপুলের খরচ দাঁড়িয়েছে ৫.১ মিলিয়ন ইউরো।

চেলসি:

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাধারী হিসেবে ২০২০/২১ মৌসুম শুরু করে চেলসি। তবে ধারবাহিকতার অভাবে গোটা দল বেশ ছন্নছাড়া হয়ে খেলতে থাকে। এরপর চেলসির ওপর নেমে আসে আরও বড় দুর্যোগ। দীর্ঘদিনের রাশিয়ান মালিক রোমান আব্রাহামোভিচকে চাপ দিয়ে ক্লাবের মালিকানা ছাড়তে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার। আর চেলসির মালিকানা চলে যায় আমেরিকান এক কোম্পানির হাতে। যেখানে প্রধান হিসেবে চেলসির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন টড বোহেলি।

চেলসির নতুন মালিক ক্ষমতা গ্রহণ করার পরেই অর্থের ঝনঝনানি শুনিয়েছেন। মোট সাত খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়ে চেলসি খরচ করেছে ২৭৮.৯৯ মিলিয়ন ইউরো। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০.৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে লেস্টার সিটি থেকে কেনা ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানার পেছনে। এরপর ব্রাইটন থেকে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেল্লাকে ৬৫.৩ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে, ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ৫৬.২ মিলিয়নে রহিম স্টার্লিং, নাপোলি থেকে ৩৮ মিলিয়নে কালিদু কুলিবালিকে, অ্যাস্টন ভিলা থেকে ১৮ মিলিয়নে মিডফিল্ডার ক্যারনি চুকুয়েমেকা, বার্সেলোনা থেকে স্ট্রাইকার অবামেয়ংকে ১২ মিলিয়নে আর আমেরিকার প্রতিভাবান গোলরক্ষক গ্যাব্রিয়েল স্লোনিয়াকে ৯.০৯ মিলিয়ন ইউরোয় দলে ভিড়িয়েছে চেলসি।

এদিকে চেলসির প্রধান দল থেকে মোট ৯ খেলোয়াড় দল ছেড়ে গেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রোমেলু লুকাকু, টিমো ভার্নার, এমারসন, গিলমোর, অ্যান্তোনিও রুডিগার, মার্কোস আলোন্সো এবং আন্দ্রেস ক্রিস্টিয়ানসেন। তবে সবমিলিয়ে খেলোয়াড় বিক্রি করে চেলসির উপার্জন মাত্র ৪৯.৩০ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ সব মিলিয়ে চেলসির খরচ ২২৯.৬৯ মিলিয়ন ইউরো।

টটেনহাম হটস্পার্স:

এবারের দল বদলের মৌসুম থেকে সাতজন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছে টটেনহাম। যদিও এর ভেতর গেল মৌসুমে ধারে আসা খেলোয়াড়ও রয়েছে। তবে এর ভেতর সবচেয়ে আলোচিত ছিল এভারটন থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনকে ৫৮ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভেড়ায় স্পার্স। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে মোট ১৬৯.৯ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে স্পার্স। আর তিন খেলোয়াড় ক্লাব ছাড়ে মোট ৩৮.২৫ মিলিয়নে। যেখানে স্পার্সের মোট খরচ দাড়া ১৩১.৬৫ মিলিয়ন ইউরো।

আর্সেনাল:

দুর্দান্ত এক দলবদলের মৌসুম কাটিয়েছে আর্সেনাল। মোট পাঁচ খেলোয়াড় দলে ভেড়ায় আর্সেনাল। যেখানে সবচেয়ে বড় চমক ছিল ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস। যাকে দলে ভেড়াতে আর্সেনালের গুনতে হয়েছে ৫২.২০ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়া পোর্তো থেকে ফ্যাবিও ভিয়েরা, ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কোকে ৩৫ মিলিয়নে দলে নিয়েছে আর্সেনাল। এছাড়া মোট খেলোয়াড় দল ছেড়েছে, যেখান থেকে উপার্জন ২৩.৮ মিলিয়ন ইউরো। ২০২২/২৩ মৌসুমে আর্সেনালের মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ১০৮.২৬ মিলিয়ন ইউরো।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড:

এবারেও দল বদলের মৌসুমে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রেডে ডেভিলরা। ২০২২/২৩ মৌসুমেও মোট পাঁচ খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। যার মধ্যে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে কার্লোস ক্যাসেমিরো ছিল সবচেয়ে বড় সাইনিং। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে আয়াক্স থেকে অ্যান্তনিকে দলে ভেড়াতে। এছাড়াও লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, টাইরেল ম্যালাসিয়া এবং ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে দলে টেনেছে তারা। অ্যান্তনির জন্য ৯৫, ক্যাসেমিরোর জন্য ৭০.৬৫, লিসান্দ্রো মার্টিনেজের জন্য ৫৭.৩৭ এবং ম্যালাসিয়ার জন্য ১৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে রেড ডেভিলরা। এই ছয় খেলোয়াড়ের পেছনে ইউনাইটেডের খরচ ২৩৮.০২ মিলিয়ন ইউরো।

এছাড়া ইউনাইটেড ছেড়েছেন আন্দ্রেস পেরেইরা এবং এডিনসন কাভানিরা। সব মিলিয়ে এবারের দলবদলের মৌসুম থেকে ইউনাইটেডের উপার্জন মাত্র ৯.৫ মিলিয়ন ইউরো। আর এবারের মৌসুমে তাদের খরচ দাঁড়িয়েছে মোট ২২৮.৫২ মিলিয়ন ইউরো।

স্প্যানিশ লা লিগা

২০২২/২৩ মৌসুমের দলবদলের সময়টা খুব একটা জমেনি স্প্যানিশ লা লিগায়। শীর্ষ ক্লাবগুলোর মধ্যে কেবলই বার্সেলোনায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। অন্যদিকে সাদামাটা সময় কাটিয়েছে স্প্যানিশ এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। এবারের দল বদলের মৌসুমে লা লিগায় মোট ২৮৭ খেলোয়াড় দল বদল করেছে। যেখানে ক্লাবগুলোর খরচ ৫০৯.৬৯ মিলিয়ন এবং উপার্জন ৪৫৩.২৫ মিলিয়ন ইউরো। লা লিগার উপার্জন আর খরচের হিসাব দাঁড়াচ্ছে -৫৬.৪৪ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লা লিগা উপার্জনের চেয়ে ৫৬.৪৪ মিলিয়ন ইউরো বেশি খরচ করেছে।

বার্সেলোনা:

এবারের দলবদলের মৌসুমে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে বার্সেলোনা। মোট ৯ খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানো বার্সেলোনা ছেড়েছে মোট ৭ খেলোয়াড়। বার্সেলোনায় নাম লেখানো নতুন ৯ খেলোয়াড় হলেন রাফিনহা, জুলেস কুন্দে, রবার্ট লেভন্ডোফস্কি, মার্কোস আলোন্সো, হেক্টর বেলেরিন, আন্দ্রেস ক্রিস্টিয়ানসেন, ফ্র্যাঙ্ক কেসি, অ্যালেক্স বালদে এবং এক আব্দে। আর ক্লাব ছেড়েছেন ফিলিপ কুতিনহো, অবামেয়ং, অস্কার মিঙ্গুয়েজা, মার্টিন ব্র্যাথওয়েট, নেতো, রিকি পুইগ, দানি আলভেজ।

আর্থিকভাবে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। ক্লাবের ঘাড়ে ঋণের বোঝা। তবে এবারের দলবদল মৌসুম জমিয়ে রেখেছিল ক্লাব প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা। ক্লাবের বিভিন্ন ইকোনমিক লেভার বিক্রি করে অর্থ যুগিয়েছেন লাপোর্তা আর তা দিয়েই দলে ভিড়িয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রবার্ট লেভান্ডোফস্কিকে, এছাড়াও তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে রাফিনহা এবং জুলেস কুন্দেকে ছিনিয়ে নিয়েছে চেলসির মুখ থেকে।

এবারের দল বদলের মৌসুমে বার্সেলোনার সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনহা। লিডস ইউনাইটেড থেকে ৫৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে টেনেছে বার্সা। সেভিয়া থেকে ফ্রেঞ্চ সেন্টার ব্যাক জুলেস কুন্দেকে কিনতে বার্সার খরচ ৫০ মিলিয়ন ইউরো আর রবার্ট লেভান্ডোফস্কিকে বায়ার্নের কাছ থেকে আনতে বার্সা গুনেছে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। কুতিনহোকে অ্যাস্টন ভিলার কাছে ২০ মিলিয়নে, অবামেয়ংকে চেলসিতে ১২ আর মিঙ্গুয়েজাকে সেল্টা ভিগোর কাছে ৩ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করে বার্সার মোট উপার্জন ৩৫ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ বার্সেলোনার মোট খরচ ১১৮ মিলিয়ন ইউরো।

রিয়াল মাদ্রিদ:

২০২১/২২ মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপের জন্য ২০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়েও পিএসজি থেকে তাকে দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয় রিয়াল মাদ্রিদ। আর অপেক্ষায় ছিল ২০২২/২৩ মৌসুমে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে এমবাপেকে দলে ভেড়ানোর। তবে শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন এমবাপে। এরপর মধ্যমাঠে অরিলিয়েন চুয়ামেনিকে মোনাকো থেকে ৮০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভেড়ায় তারা। আর চেলসি থেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে অ্যান্তোনিও রুডিগারকে দলে নেয় রিয়াল। তবে খেলোয়াড় দলে না ভেড়ালেও রিয়াল ছেড়ে এবার বিভিন্ন ক্লাবে নাম লিখিয়েছে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম কার্লোস ক্যাসেমিরো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় থেকে রিয়ালের আয় ৭০.৬৫ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়া বোর্হা মায়োরাল, তাকেফুসো কুবো, মিগুয়েল গুতিরাজ, ভিক্টর চাস্ট, গ্যারেথ বেল, লুকা জোভিচ, ইস্কো এবং মার্সেলো ক্লাব ছেড়েছেন। খেলোয়াড় বিক্রি করে রিয়ালের আয় ৯২.১৫ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ দলবদলের মৌসুমে এবার ১২.১৫ মিলিয়ন ইউরো লাভ করেছে রিয়াল।

এছাড়া বাকি ক্লাবগুলোতে তেমন বড় কোনো খেলোয়াড়ের দলবদল হয়নি স্প্যানিশ লিগে। খেলোয়াড় কেনাবেচা করে সেভিয়ার লাভ ৫৯ মিলিয়ন ইউরো।

ইতালিয়ান সিরি আ:

এবারের দলবদলের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পর খেলোয়াড় কিনতে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে ইতালিয়ান সিরি আ। ২০২২/২৩ মৌসুমে সিরি আ’র মোট খরচ ৭৪৯.২৩ মিলিয়ন ইউরো। যেখানে পুরো লিগ খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন করেছে মোট ৭৪৫.৮২ মিলিয়ন ইউরো। এবারে ৪৬৫ জন খেলোয়াড় সিরি আ’তে দলবদল করেছেন। সব মিলিয়ে এবার সিরি’র ব্যয় দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৪১ মিলিয়ন ইউরো।

ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান:

খেলোয়াড় কেনাবেচায় এবার বেশ লাভবান ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। মোট ২৫৩ খেলোয়াড় কেনাবেচা হয়েছে লিগ ওয়ানে। যেখানে খেলোয়াড় কিনতে লিগ ওয়ানের ক্লাবগুলো খরচ করেছে মোট ৫৫৭.৮৫ মিলিয়ন ইউরো আর খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন মোট ৬০১.৫২ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ খেলোয়াড় কিনে খরচের চেয়ে খেলোয়াড় বিক্রি করে লিগ ওয়ান উপার্জন করেছে বেশি। উপার্জনকৃত অর্থের পরিমাণ ৪৩.৬৭ মিলিয়ন ইউরো।

জার্মান বুন্দেস লিগা:

জার্মান বুন্দেস লিগার সবচেয়ে বড় তারকা রবার্ট লেভান্ডোফস্কি এবং এর্লিং হালান্ড এবার তাদের নিজ নিজ ক্লাব ছেড়েছেন। লেভা নাম লিখিয়েছে বার্সাতে আর হালান্ডের ঠিকানা সিটিতে। তবে সাদিও মানে এবং ম্যাথিউস ডি লিটের মতো বড় বড় তারকারাও এসেছেন বুন্দেস লিগায়। আবার দুই মৌসুম চেলসিতে কাটিয়ে আবারও লাইপজিগে ফিরেছেন টিমো ভার্নারও। এবারের মৌসুমে খেলোয়াড় কেনার চেয়ে বিক্রিতে বেশি অর্থ এসেছে বুন্দেস লিগায়। মোট ২০৬ খেলোয়াড় দলবদলেছেন বুন্দেস লিগায়। যেখানে খেলোয়াড় কিনে বুন্দেস লিগার খরচ ৪৮৪.৫৮ মিলিয়ন ইউরো আর খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন ৫২৮.৭৪ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ বুন্দেস লিগার ২০২২/২৩ মৌসুমে বুন্দেস লিগা উপার্জন করেছে মোট ৪৪.১৬ মিলিয়ন ইউরো। যা ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সর্বোচ্চ।

সারাবাংলা/এসএস

ইউরোপিয়ান দলবদল ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগ গ্রীষ্মকালীন দলবদল ২০২২ দলবদলের মৌসুম মৌসুম স্পোর্টস স্পেশাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর