আফগানিস্তানের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে ফাইনালে পাকিস্তান
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৪৬
শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ক্রিজে শেষ উইকেট জুটি। জয়ের পাল্লা তাই আফগানিস্তানের দিকেই হেলে ছিল। স্ট্রাইকপ্রান্তে ছিলেন পাকিস্তানের দশ নম্বর ব্যাটার নাসিম শাহ আর বোলিংয়ে আফগানিস্তানের তরুণ তারকা পেসার ফজল হক ফারুকী। ফারুকীর দুই ফুলটস ডেলিভারিতে দুই ছক্কা হাকিয়ে পাকিস্তানকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিয়েছেন নাসিম। তার আগে পুরো ম্যাচ জুড়েই চলল নাটকীয়তা।
শুধু নাটকীয়তাই নয়, মাঠে এবং মাঠের বাইরে রোমাঞ্চ, বাড়তি উত্তেজনার দেখা মিলল পরতে পরতে। মাঠে দুই দলের ক্রিকেটারদের ঠোকঠুকিও লাগল। উত্তেজনা, নাটকীয়তার চরম পর্যায় শেষে ১ উইকেটের জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ১২৯ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। পরে ১৯.২ ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৩১ রান তুলেছে পাকিস্তান। এই জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল বাবর আজমের দলের।
আগেই টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে শ্রীলংকা। এতে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ভারত ও আফগানিস্তানের।
শারজাহর উইকেট ব্যাটারদের জন্য সহজ নয়। তবে ১২৯ রানের পুঁজি আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যেকোন উইকেটেই যথেষ্ট সংগ্রহ নয়। আফগানিস্তান সেই সংগ্রহটাকে নিয়েই যে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিবে সেটা হয়তো আন্দাজ করেনি কেউই।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাবর আজমকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দেওয়া ফজল হক ফারুকী করেছিলেন শুরুটা। দলীয় পঞ্চাশের আগে তিনে নামা ফজর জামান ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও হারিয়ে বড্ড চাপে পরে পাকিস্তান। চার নম্বরে পাঠিয়ে শাদাব খানকে সেই চাপ কাটিয়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছিল পাকিস্তান। ব্যাটিং অর্ডার উন্নতি হওয়া শাদাব সেই দায়িত্ব পালনও করেছেন দুর্দান্তভাবে।
মিডল ওভারে ইফতিখার আহমেদ ও শাদাব খান পাকিস্তানকে চাপ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। চার উইকেটে ৯৭ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। মনে হচ্ছিল সহজেই জিততে যাচ্ছেন পাকিস্তানিরা। কিন্তু তারপরই আফগানিস্তানের বিস্ময় উপহার।
মাত্র ২১ রানের ব্যবধানে চার উইকেট তুলে নেয় আফগানরা। ম্যাচ হেলে পরে আফগানিস্তানের দিকেই। কিন্তু শেষ ওভারে দুই ছক্কা হাকিয়ে আফগানদের জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ করেছেন নাসিম শাহ।
শাদাব ২৬ বলে ৩টি ছয় ১টি চারের সাহায্যে ৩৬ রান করেছেন। ইফতেখার ৩৩ বলে ৩০ রান করেন। আসিফ আলি ৮ বলে ১৬ ও নাসিম শাহ ৪ বলে ১৪ রান করেন।
আফগানিস্তানের পক্ষে ফজল হক ফারুকী ও ফরিদ আহমেদ ৩১ রানে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। রশিদ খান ২৫ রানে দুই উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১২৯ রানে আটকে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। প্রায় প্রতি ম্যাচেই আফগানিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেওয়া হযরতউল্লাহ জাজাই ও রহমতউল্লাহ গুলবাজের ওপেনিং জুটি আজও বেশ ভালোই এগুচ্ছিল। তবে তাদের বেশিদূর যেতে দেননি মোহাম্মদ হাসনাইন, নাসিম শাহ, হারিস রউফরা। পাকিস্তানের পুরো বোলিং ডিপার্টমেন্টই আজ দারুণ বোলিং করেছেন।
দলীয় ৩৬ রানের মাথায় রহমতউল্লাহ গুলবাজকে (১১ বলে ১৭) ফেরান হারিস রউফ। অপর ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাইকে খানিক বাদে ফেরান (২১) মোহাম্মদ হাসনাইন। তারপর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান কম দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে উইকেটও তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানি বোলাররা।
তিন নম্বরে নামা ইব্রাহিম জাদরান ৩৭ বলে ৩৫ রান করেছেন, সেটাই আফগানিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর। ১৯ বলে ১৫ রান করেছেন করিম জানাত। শেষ দিকে রশিদ খানের ১৫ বলে ১৮ রানের ইনিংসটি আফগানিস্তানকে বলার মতো একটা সংগ্রহ গড়তে সাহায্য করেছে।
২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান তোলে আফগানিস্তান। পাকিস্তানের হয়ে ২৬ রানে দুই উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ। তরুণ নাসিম শাহ ১৯ রানে ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ২৩ রানে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সারাবাংলা/এসএইচএস