নাটকীয়তায় ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ
৩০ অক্টোবর ২০২২ ১৮:১৫
কী এক কাণ্ডই না ঘটে গেল। ব্রিসবানে এক ম্যাচে বাংলাদেশের দুবার জয় উৎযাপন! ৪ রানের জয়ের আনন্দ করতে করতে মাঠ ছাড়লেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। কিন্তু পরে জানা গেল শেষ ডেলিভারিটি ছিল ‘নো বল’। দুই দলের ক্রিকেটারদের আবার নামতে হলো মাঠে। জিম্বাবুয়ের ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানি ফ্রি-হিটেও রান তুলতে পারেননি বলে শেষ পর্যন্ত জিতেছে অবশ্য বাংলাদেশই। তবে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টা গতিপথ পাল্টা ম্যাচের শেষটা হলো অকল্পনীয় নাটকীয়তায়। ম্যাচ শেষে সাকিব আল হাসান বললেন, এসবে নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
শেষ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। বোলিং প্রান্তে ছিলেন বাংলাদেশি স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন, ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের দশ নম্বর ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানি। মোসাদ্দেকের অফসাইডে থাকা বলটি ক্রিজ ছেড়ে খেলতে এসে মিস করেন মুজারাবানি। বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন সোহান।
৪ রানের জয় ভেবে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা তখন উল্লাস করছেন, একে অন্যের সঙ্গে করমর্দন করছেন। গ্যালারীতে বসা দর্শকদেরও দেখা গেল বিজয় উল্লাসে মাততে। মাঠে থাকা জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটারও ৪ রানের হার ভেবে করমর্দন করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। একে একে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররাও মাঠ ছাড়ছিলেন।
টেলিভিশন আম্পায়ার মুজারাবানির স্টাম্পিং চেক করছিলেন, যেটাকে মনে হচ্ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু চমকে উঠতে হলো যখন দেখা গেল মোসাদ্দেকের সেই ডেলিভারিটি ধরার আগে উইকেটরক্ষক সোহানের গ্লাফস স্ট্যাম্পের সামনে চলে এসেছিল!
এমসিসিতে ক্রিকেট আইনের ২৭.৩.১ ধারায় বলা আছে, ‘স্ট্রাইক প্রান্তে স্ট্রাইকারের ব্যাট বা গায়ে লাগা, স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেট অতিক্রম করা বা স্ট্রাইক রান নেওয়ার চেষ্টা করার আগপর্যন্ত উইকেটকিপারকে স্টাম্পের পেছনে থাকতে হবে।’ সোহানের হাত স্ট্যাম্পের সামনে চলে আসা মানে এই নিয়ম ভঙ্গ। অর্থাৎ নো বল!
দুই দলের ক্রিকেটারদের তখন আবারও নামতে হলো মাঠে। আম্পায়ারদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথাও বলতে দেখা গেল বাংলাদেশি অধিনায়ক সাকিবকে। তবে তাতে লাভ হয়নি, সাকিবের যুক্তি শোনেননি আম্পায়ার।
তখন সমীকরণ ছিল ফ্রি-হিটে জিম্বাবুয়ের লাগবে ৪ রান। মোসাদ্দেকের করা ফ্রি-হিট ডেলিভারিও ব্যাটে লাগাতে পারেননি মুজারাবানি। বল চলে যায় সোহানের গ্লাফসে। এই দফায় অবশ্য নিজের জায়গাতই ছিলেন সোহান। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার বিজয় উল্লাস করেছে ৩ রানের জয়ের।
ম্যাচ শেষে সাকিব বলছিলেন, সোহানের গ্লাভস স্ট্যাম্পের কাছাকাছি যাচ্ছিল বলে আগেও তাকে সাবধান করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও তার গ্লাভস চলে যায় স্ট্যাম্পের সামনে। নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন জানিয়েছেন সাকিব, ‘আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না! আমি সোহানকে বল ধরার সময় স্টাম্পের কাছাকাছি আসতে দেখেছিলাম। আমি তাকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম, কিন্তু তাই হয়েছিল শেষে। হ্যাঁ, আমরা জানতাম তাদের সাতজন ব্যাটার আছে। তাই সেই পর্যায়ে আমাদের উইকেট নেওয়া দরকার ছিল। এবং পেসাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। একইসঙ্গে শন উইলিয়ামসের রান আউট ম্যাচের একটি টার্নিং পয়েন্ট।’
সাকিব বলেন, ‘আমি সত্যি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। আমি মোসাদ্দেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে, “উদ্বেগের কিছু নেই। আমি ঠিক আছি এবং সবকিছু সামলে নেব।” তার কথায় আমি শান্ত হয়েছি, স্বস্তি পেয়েছি।’
ম্যাচ শেষে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন বলেন, ‘প্রথমে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ঘুরে দাঁড়ানোটা সহজ ছিল না। সেখান থেকে উইলিয়ামস খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। রায়ানের সঙ্গে ওর জুটিটা আমাদের জয়ের আশাও জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু শেষ দিকে সাকিবের দারুণ ফিল্ডিং খেলাটা ঘুরিয়ে দিল।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সব ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। এছাড়া খেলা এবার একসঙ্গে দেখা যাবে দেশের জনপ্রিয় ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলে।
সারাবাংলা/এসএইচএস