Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বকাপের দল পরিচিত: যুক্তরাষ্ট্র

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
১০ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৪৮

কাতার বিশ্বকাপে থাকা ‘গ্রুপ-বি’ নিয়ে এবারের আলোচনা। এই গ্রুপে আছে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েলস এবং ইরান।‌‌ ফিফা র‍্যাংকিংয়ে দলগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ৫, ১৬, ১৯ এবং ২০। শক্তির বিচারে ইংল্যান্ড অনেকটা এগিয়ে থাকলেও বাকি তিন দল মোটামুটি সমপর্যায়ে। ফলে হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

বিশ্বকাপের দল পরিচিতিতে আজকের আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে। ‘গ্রুপ-বি’তে থাকা ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই দেখার জন্য নিশ্চয়ই আমরা মুখিয়ে আছি। দুই রাজনৈতিক শত্রুর বিশ্বকাপে এবার হবে দ্বিতীয়বারের মতো লড়াই, যে লড়াইয়ে প্রথমবার ইরান ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও এরপরে ১৯৫০ সাল থেকে ৪০ বছর বিশ্বকাপে অনুপস্থিত ছিল। তবে ১৯৯০ থেকে এই পর্যন্ত ৯টি বিশ্বকাপের ৮টিতেই যুক্তরাষ্ট্র খেলেছে। ১৯৯৩ সাল থেকে মেজর লীগ সকার শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, হয়তোবা সেই ধারাবাহিকতায় তারা এতগুলো বিশ্বকাপ খেলতে পেরেছে।

১৯৯০ থেকে বিগত বিশ্বকাপগুলোর মধ্যে তারা ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।‌‌ তাছাড়া ১৯৯৪, ২০১০ এবং ২০১৪ সালে দ্বিতীয় রাউন্ড‌ পর্যন্ত গিয়েছিল। অর্থাৎ গড় হিসেব করলে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার মত একটি দল। নিচের আলোচনায় আমরা দেখার চেষ্টা করব আসলেই কি তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারবে?

বিগত বিশ্বকাপের পারফরমেন্স:‌‌

আগেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল আর ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এই দুটি বিশ্বকাপের প্রতিটিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ২টি করে ম্যাচ জিতেছিল। ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপ মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলতে হয়েছিল আর ২০০২ সালে খেলেছিল ৫টি ম্যাচ। এ পর্যন্ত খেলা ১০টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র সর্বমোট ৩৩টি ম্যাচ খেলেছে, যেখানে ৮টিতে জয়, ৬টিতে ড্র এবং ১৯টিতে পরাজিত হয়েছে। আর গোল হজম করেছে ৬১টি যেখানে তারা গোল করতে পেরেছিল মাত্র ৩৭টি।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১২টি ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ৫টি গোল করেছেন ল্যান্ডন ডোনোভান।‌ যিনি ২০০২, ২০০৬ এবং ২০১০-এ পরপর তিনটি বিশ্বকাপ খেলে এ দুটি রেকর্ড তার নিজের করে নিয়েছেন।‌

কোচ গ্রেগ বেরহল্টার:

যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহল্টার একজন প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ফুটবলার। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ৪৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে এবং ক্লাব পর্যায়ে জার্মানিতে ১৮৪টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হওয়া দলের সদস্য ছিলেন। ৪৯ বছর বয়সী এই কোচের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এই পর্যন্ত ৫৬টি ম্যাচের ভেতরে ৩৬টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে, ১০টিতে ড্র এবং ১০টি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে।

তিনি তার দলে পুরনো এবং ছন্দহীন খেলোয়াড়দেরকে বাদ দিয়েছেন যারা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষ দিকে তেমন ভালো করতে পারেননি। অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে পছন্দ করছেন বেশি। ফলে দলে গতিশীল প্রেসিং স্টাইল প্রয়োগ করতে পারছেন বেশি করে, যা যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের ঐতিহ্যের একটি অংশ। তবে বর্তমান দলে বল ধরে রেখে পরিশীলিত ফুটবল খেলার উপরেও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বকাপের গ্রুপ সঙ্গী ও সময়সূচী:

যুক্তরাষ্ট্র তাদের গ্রুপে প্রথম ম্যাচটি খেলবে ওয়েলসের বিরুদ্ধে ২১শে নভেম্বর ৪৪,৭৪০ দর্শক আসন বিশিষ্ট আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে, যা আল-রায়ান স্টেডিয়াম নামে পরিচিত।‌‌ ২৫ শে নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর খেলবে আল-বায়াত স্টেডিয়াম, যেখানে খেলা দেখতে পারবে ৬০ হাজার দর্শক। ইরানের বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচটি হবে ৩০শে নভেম্বর ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আল-থুমামা স্টেডিয়ামে।

দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা:

তাদের দলে বেশ কয়েকজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আছেন যারা ইউরোপে নিয়মিত খেলছেন এবং এদের বাইরে কিছু ভালো উইঙ্গারও রয়েছেন যারা গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। প্রতি আক্রমণ থেকে গোল করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম রয়েছে।

কিন্তু তাদের বিশ্বমানের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এবং একজন ভালো মানের স্কোরারের অভাব রয়েছে। একসময় গোলরক্ষক পজিশনে দুই-তিনজন গোলরক্ষকদের মধ্যে লড়াই হত। কিন্তু সেদিন আর তাদের নেই! তাদের দলের প্রধান গোলরক্ষক ম্যাট টার্নারের এখনো পর্যন্ত আর্সেনাল দলের হয়ে খেলার সুযোগ হয়নি এবং আরো ২ জন গোলরক্ষকে ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লীগ থেকে প্রথম ডিভিশনে চলে যেতে হয়েছে।‌‌

ঘরের বাইরের ম্যাচগুলোতে তাদের মান খুব সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসে এবং গোল করা খুব দুরুহ হয়ে পড়ে। তাছাড়া তাদের খেলোয়ারদের বড় বড় দল গুলোর বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা খুবই কম বললেই চলে। ‌

বিশ্বকাপে তাদের সম্ভাবনা:

২০১৮ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র আবার বিশ্বকাপে ফিরে এসেছে। তথাপি দলটির এবারের বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বের ম্যাচগুলোতে তেমন আহামরি খেলেনি। কানাডা এবং মেক্সিকোর পিছনে থেকে বাছাই পর্বে তারা তৃতীয় হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ সময় তারা বিগত বিশ্বকাপের বাছাই-পর্বে প্রথম স্থানে থাকতো। কানাডা ১৯৮৬ সালের পর এবারে আবার বিশ্বকাপের সুযোগ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাছাই-পর্বে ভাগ্যক্রমে তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। গোল ব্যবধানে কোস্টারিকাকে পেছনে ফেলে তারা তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। তারা বাছাই-পর্বের ১৪টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৭টি ম্যাচে জয় লাভে সমর্থ হয়েছে।

কিন্তু তাদের দলটি এমন শক্তিশালী নয় যে এবার কোন চমক দেখাতে পারে। দলটিতে তরুণ খেলোয়াড়দের সমাহার দেখা যেতে পারে কিন্তু যেহেতু তাদের অভিজ্ঞতা কম তাই বহু দূরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই দলে‌ মাত্র ১জন থাকবেন যিনি পূর্বে বিশ্বকাপ খেলেছেন, আর তিনি হচ্ছেন রাইট-ব্যাক, ডিএন্ড্রে ইয়েডলিন। তারা বিশ্বকাপের অন্যতম তরুণ দল যাদের গড় বয়স হতে পারে মাত্র ২৩.৮২ বছর, যেখানে ঘানা দ্বিতীয় দল হিসেবে তাদের খেলোয়াড়দের গড় বয়স হবে‌ ২৫.৬৭ বছর। বিশ্বকাপে দলগুলোর গড় বয়স হতে পারে ২৭.৫ বছর।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার মাইলস রবিনসনের একিলিস ট্যান্ডন‌ ছিঁড়ে গেছে গত মে মাসে। মেজর লীগ ভিত্তিক আরো দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, ওয়াকার জিমারম্যান এবং অ্যারন লং অক্টোবর মাসে মেজর লীগ ফুটবলের প্লে অফ থেকে বাদ পড়েছেন এবং সেই থেকে গত ১ মাস প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবল থেকে দূরে আছেন। উইংগার, জিওভানি রেইনা পায়ের আঘাতের কারণে বাহিরে আছেন এবং গত এপ্রিল থেকে তার ক্লাব দলে মাত্র ১টি ম্যাচে ৯০ মিনিট খেলতে পেরেছেন। লাইব্রেরিয়ার বিখ্যাত জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তিনিও পায়ের অসুস্থতার কারণে মৌসুমের প্রথম দুই মাস মিস করেছিলেন। ‌ মিডফিল্ডের মূল ভরসা টাইলার‌ এডামস, ওয়েস্টন ম্যাকেনি এবং ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক ইনজুরি এবং সাসপেনশন জনিত সমস্যার কারণে ২০১৯ সাল থেকে মাত্র ৫টি ম্যাচে তারা এই তিনজন একসাথে খেলতে পেরেছিলেন।‌

প্রাক্তন গোলরক্ষক ক্যাসি কেলার, যিনি এখন টেলিভিশন বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করছেন, বলেছেন “আমি অবশ্যই চিন্তিত। গত দুটি‌ প্রীতি ম্যাচে এমন কিছু ছিল না যা আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে। তাছাড়া আমাদের কয়েকজন প্রধান খেলোয়াড় ইউরোপের ক্লাব গুলিতে মূল দলে জায়গা পেতে লড়াই করছে আর কিছু খেলোয়াড় এখনো ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে অপেক্ষা করছে। তাই সামগ্রিকভাবে বলা যায়, আমাদের প্রস্তুতিতে এমন কিছু ছিল না যা আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে”। প্রীতি ম্যাচে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ৭টি দলের সঙ্গে খেলে তাদের জয় ছিল মাত্র ১টি ম্যাচে, ৩টিতে ড্র আর বাকি ৩টিতে পরাজয় জুটেছে।

এখন দেখার বিষয় যে তাদের তরুণরা প্রতিভানুযায়ী খেলতে পারে কিনা। ‌যদি তাদের সমকক্ষ ওয়েলসের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ভয়ডরহীন ভাবে খেলে জয় আদায় করে নিতে পারে তাহলে কে জানে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব! ভাগ্যক্রমে যদি দ্বিতীয় রাউন্ডেও তারা উত্তীর্ণ হতে পারে তবে এর চেয়ে বেশি দূরে যাওয়া এই দলের পক্ষে সম্ভব নয়।

যাদের দিকে চোখ রাখতে হবে:

মূল তারকা: ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক, চেলসিতে খেলা ২৪ বছরের এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তারকা। তরুণ বয়স থেকে তিনি তার গতি, তীক্ষ্ণতা, শক্তি, দুর্দান্ত ফিটনেস এবং পরিণত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। প্রথমটা টাচেই বল নিয়ে মাঠের ভেতর অনেক খানি জায়গা করে নিতে পারেন। তার খেলার কৌশলের কারণে প্রায়শই প্রতিপক্ষের দ্বারা কঠিন ফাউলের শিকার হন। তিনি প্রতিপক্ষের সীমানায় দুরন্ত গতিতে ছোটাছুটি করতে পারেন যা বিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারদেরকে বিভ্রান্ত করে এবং এটা আধুনিক খেলার একটি দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য। বেলজিয়ামের ইডেন হ্যাজার্ডের সাথে তাকে তুলনা করা হয়। বিশ্বকাপে তিনি প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়েন কিনা সেটাই দেখার বিষয়, কারণ তাদের দলে সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার এবং মূল স্ট্রাইকারের অভাব থাকায় তাকে প্রায়শই মিডফিল্ডে নেমে যেতে হয় এবং স্ট্রাইকারের ভূমিকাও পালন করতে হয়।

অন্যান্য তারকা: জুভেন্টাসের ২৪ বছর বয়সী, ওয়েস্টন ম্যাকেনি একজন বহুমুখী খেলোয়াড় যিনি মিডফিল্ডের অনেক পজিশনে খেলতে সক্ষম – প্রধানত বক্স টু বক্স বা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ডিফেন্ডারের সামনে থেকে খেলা শুরু করেন। জার্মানির শালকেতে খেলার সময় তিনি ফুল-ব্যাক, সেন্টার-ব্যাক এমনকি স্ট্রাইকার হিসেবেও খেলেছেন।‌‌ জুভেন্টাসে এসে তিনি আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে ইতিমধ্যে ৫টি গোল করেছেন। অর্থাৎ তাকেই দলের নিচ থেকে খেলা তৈরি করে দিতে হবে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে হবে যুগৎপত ভাবে। আর এটা পারেন বিধায় তাকে নেদারল্যান্ডসের এডগার ডেভিডসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।

সার্জিনো ডেস্ট, ২১ বছরের এই রাইট উইং-ব্যাক এ বছর বার্সেলোনা থেকে এসি মিলানে ধারে খেলার জন্য এসেছেন। বল দখলে রাখা, ডিফেন্ড করা এবং আক্রমণ শানানোর ক্ষেত্রে তিনি অতুলনীয়। তার মানের রাইট উইং-ব্যাক যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটি দেখা যায় না। তার গতির কারণে, তিনি রক্ষণ ঠিক রেখে আক্রমণ ভাগে সমানভাবে অবদান রাখতে পারেন। ‌

তরুণ তারকা: ১৯ বছরের ইউনুস মুসাহ খেলছেন স্পেনের ভ্যালেন্সিয়াতে।‌‌ ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অভিষেকের আগে তার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ড ইতালি বা ঘানার হয়ে খেলার। তরুণ উদ্যমী এ মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে পারেন এবং চাপের মধ্যে যথেষ্ট শান্ত থাকেন। যদি তিনি তার সেরা খেলাটা বিশ্বকাপে খেলতে পারেন, তাহলে ওয়েস্টন ম্যাকেনি (আরেকজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার) কিছুটা নির্ভর হয়ে আক্রমণে যোগ দিতে পারবেন। জিওভানি রেইনা, ১৯ বছরের এই উইঙ্গারটি খেলছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। তার বাবা, ক্লাউদিও রেইনাও খেলতেন মিডফিল্ডে, যিনি কিনা আছেন আমার করা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের সেরা ১৪ জন খেলোয়াড়ের তালিকাতে। অনেকেই বলছেন জিওভানি রেইনা যদি ইনজুরিতে না থাকতেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা তরুণ প্রতিভা হিসাবে এই মুহূর্তে গণ্য করা হত। ইনজুরির কারণে ২০২১-২২ মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় সাইড লাইনে ছিলেন। তবে ইনজুরি থেকে ফিরে, এই বছরের সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার দলকে কোপেনহেগেনের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয় পাওয়া ম্যাচে ২টি গোলে এসিস্ট করেন। তিনি এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ১৪টি ম্যাচে ৪টি গোল করেছেন।

খেলার ফর্মেশন:

৪-৩-৩ ফর্মেশন প্রয়োগ করতে পারে তারা। এই পদ্ধতিতে মিডফিল্ডে ৩ জন খেলোয়াড়দের সবাই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হতে পারেন! কারণ অ্যাটাকিং-এ যে ৩ জন থাকবেন, তার মধ্যে ২ জন হবেন উইঙ্গার আর ১ জন হবেন মুল স্ট্রাইকার।

বিশ্বকাপের সম্ভাব্য লাইন-আপ (সেরা-একাদশ):

গোল-রক্ষক: ম্যাট টার্নার (আর্সেনাল);

রাইট ফুল-ব্যাক: সার্জিনো ডেস্ট (এসি মিলান);

সেন্ট্রাল-ডিফেন্ডার: ক্যামেরন কার্টার ভিকার্স (সেল্টিক), অ্যারন লং (নিউ ইয়র্ক রেড বুলস);

লেফট ফুল-ব্যাক: অ্যান্টনি রবিনসন (ফুলহাম);

ডিফেন্সিভ-মিডফিল্ডার: ইউনুস মুসাহ (ভ্যালেন্সিয়া), ওয়েস্টন ম্যাকেনি (জুভেন্টাস);

অ্যাটাকিং-মিডফিল্ডার: ব্রেন্ডেন অ্যারনসন (লিডস), জিওভানি রেইনা (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড);

স্ট্রাইকার: জর্ডান মরিস (সিয়াটেল সাউন্ডার্স) এবং‌ ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক (চেলসি)।

আমার দেখা যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ১৪ খেলোয়াড় (নতুন ও পুরাতনের সংমিশ্রণে):

যুক্তরাষ্ট্র দলে উইং-ব্যাকদের সমাহার খুব একটা দেখা যায় না, তাই তাদের সেরা উইং-ব্যাক বাছাই করতে আমার জানটা বেরিয়ে গেছে।

কিন্তু তাদের দেশের গোলরক্ষকরা সত্যিই দুর্দান্ত। তাই একাদশ-বাছাইয়ের শুরুতে আমি সেরা একাদশে থাকা গোলরক্ষক ছাড়াও আরো ২জন গোলরক্ষককে স্মরণ করছি যারা ছিলেন সত্যিই অবিস্মরণীয়। তারা হলেন: ক্যাসি কেলার (ম্যাচ: ১০২; ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৬০৯টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ২০১টি খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে), ব্র্যাডলি ফ্রিডেল (ম্যাচ: ৮২; ৫৪৭টি ক্লাব ম্যাচের ৪৫৪টি খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে – ২৯০টি ব্ল্যাকবার্ন রোভারসে এবং ১১৪টি খেলেছেন অ্যাস্টন ভিলার হয়ে)।

যাই হোক ৪-৪-২ পদ্ধতিতে এবার তাদের সেরা ১৪ খেলোয়াড় দেখে নেয়া যাক (যাদের খেলা জীবদ্দশায় দেখেছি), যেখানে মাত্র একজন খেলোয়াড় বর্তমান দল থেকে সুযোগ পেয়েছে আর বাকিরা সবাই পুরনো বিশ্বকাপ দল থেকে জায়গা করে নিয়েছে:

১) গোল-রক্ষক:-

টিম হাওয়ার্ড (ম্যাচ: ১২১; ক্যারিয়ারে ৬০০টি ম্যাচের মধ্যে ৩৫৪টি খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এভারটন ক্লাবে। তিনি ২০১৪ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ১৫টি সেভ করে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন!)।

২) রক্ষণ-ভাগ:-

রাইট ফুল-ব্যাক: স্টিভ চেরুন্ডলো (ম্যাচ: ৮৭ ও গোল: ২; ক্যারিয়ারে মাত্র একটি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন আর সেটি হচ্ছে জার্মানির হ্যানোভার, যেখানে ৩৭০টি ম্যাচ খেলেছেন)।

সেন্ট্রাল-ডিফেন্ডার: অ্যালেক্সি লালাস (ম্যাচ: ৯৬ ও গোল:‌ ১০। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই ১০০-এর উপরে ম্যাচ খেললেও লালাস মাত্র ২৮ বছর বয়সে অবসর নেওয়ায় শততম ম্যাচ খেলা হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ডিফেন্ডার যিনি ইতালিয়ান লীগে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন)।

কার্লোস বোকানেগ্রা (ম্যাচ: ১১০ ও গোল:‌ ১৪। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ২৭০টি ম্যাচ খেলেছিলেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন এবং স্কটিশ লীগে)।

লেফট ফুল-ব্যাক: ডামার্কাস বিসলে (ম্যাচ: ১২৬ ও গোল: ১৭। তিনি ইউরোপে ১০২টি লীগ ম্যাচ খেলেন)।

৩) মধ্য-মাঠ:-

ডিফেন্সিভ-মিডফিল্ডার: টমাস ডুলি (ম্যাচ: ৮১ ও গোল:৭। তিনি জার্মান লীগে ১৭৭টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ১২৮টি খেলেছেন কাইজারস্লটার্নে)।

অ্যাটাকিং-মিডফিল্ডার: ক্লাউদিও রেইনা (ম্যাচ: ১১২ ও গোল: ৮। জার্মান, স্কটিশ এবং ইংলিশ লীগের ২৫৩টি ম্যাচর মধ্যে ম্যানচেষ্টার সিটিতে‌ খেলেন ৮৭টি ম্যাচ)।

আর্নি স্টুয়ার্ট (ম্যাচ: ১০১ ও গোল: ১৭। এনএসি ব্রেদা সহ ডাচ লীগে খেলেন ৩৫৯টি ম্যাচ, যেখানে তিনি ৯৯টি গোল করেন)।

ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক (ম্যাচ: ৫২ ও গোল: ২১। বয়স: ২৪‌ বছর এবং বর্তমান জাতীয় দলে তিনি সংযুক্ত আছেন। এখন ইংল্যান্ডের চেলসিতে খেলছেন এবং ক্লাব পর্যায়ে এ পর্যন্ত জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ড সহ ১৭১টি ম্যাচ খেলেছেন)।

৪) স্ট্রাইকার:-

ল্যান্ডন ডোনোভান (ম্যাচ: ১৫৭ ও গোল: ৫৭। জার্মানির বেয়ার লেভারকুসেনে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রেই থিতু হন)।

ক্লিন্ট ডেম্পসি (ম্যাচ: ১৪১ ও গোল: ৫৭। ইংল্যান্ডে ফুলহাম এবং টটেনহ্যামের হয়ে ২২৩টা ম্যাচ খেলেন, আর ফুলহামে করেন ৫০ গোল)।

৫) অতিরিক্ত:-

মিডফিল্ডার, কোবি জোন্স (ম্যাচ সংখ্যা: ১৬৪ ও গোল: ১৫। ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি সিটিতে খেললেও তিনি পরবর্তীতে লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সির হয়ে ৩০৬টি লীগ ম্যাচ খেলেন)।

মিডফিল্ডার, মাইকেল ব্র্যাডলি (ম্যাচ: ১৫১ ও গোল: ১৭। ইউরোপে ২১৫টি ক্লাব ম্যাচ খেলেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলগুলো ছিল বরুশিয়া মনচেনগ্লাদবাখ, এ.এস রোমা ইত্যাদি)।

স্ট্রাইকার, ব্রায়ান ম্যাকব্রাইড (ম্যাচ: ৯৫ ও গোল: ৩০। ইংল্যান্ডে ফুলহামের হয়ে ৩৩টি গোল করেন ১৪০ ম্যাচে)।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান ফুটবল জনপ্রিয়তা ও ব্যবস্থাপনা:

১৯৯০ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রফেশনাল ফুটবল লীগ ছিল না। যেটা পরবর্তীতে মেজর লীগ নামে ১৯৯৩ সালে শুরু করা হয়। যদিও এই লীগের একটি দুর্নাম রয়েছে, এখানে ইউরোপ থেকে অবসরের পরেই কেবল তারা খেলতে আসেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে মিশিগানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যেকার খেলা ১,০৯,০০০ দর্শক দেখেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক দর্শকের সমাগম হবার রেকর্ড গড়েছে।

মেজর লীগ সকারে বিভিন্ন দলের বয়স ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলোতে যোগ্যতা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলিতে অনেক বেশি কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। যেমন সপ্তাহে ৩ দিনের ব্যবধানে ২টি করে ম্যাচ খেলতে বাধ্য করা হয়, যাতে করে তারা মৌসুমের প্রথম ৬ মাসের ভেতর চূড়ান্ত ফিটনেস অর্জন করতে পারেন। কিন্তু এই সমস্ত তরুণ অল্প বয়সে কঠিন পরিশ্রম এবং চাপের মুখে পড়ে যাওয়ার কারণে তাদের ন্যাচারাল ট্যালেন্ট প্রকাশ ঘটতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ সময়ই কোচদেরকে দেখা যায় অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দেরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।‌‌

তবে এরই মাঝে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা ইউরোপের বড় বড় ক্লাব কেনার ক্ষেত্রে বর্তমানে এগিয়ে আসছে। ম্যালকম গ্লেজার যেমন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কিনে নিয়েছেন ঠিক তেমনি লিভারপুলের মালিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ’।

যুক্তরাষ্ট্রের কোচদের মধ্যে জেসে মার্শকে অগ্রপথিক ভাবা হচ্ছে যিনি ইতিমধ্যে রেড বুল সালজবার্গ, আর.বি লিপজিগ এবং লিডসের মতো দলগুলোকে কোচিং করানোর যোগ্যতা অর্জন করেছেন।‌ তার ৪-২-৩-১ পদ্ধতির ফর্মেশন ইউরোপে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ, তাই এবার বিশ্বকাপে যদি ভালো নাও করতে পারে তাদের উদ্দেশ্য থাকবে তরুণ এই দলটিকে আগামী বিশ্বকাপে একটি সমীহকারী দল হিসেবে গড়ে তোলা।

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএইচএস

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ যু্ক্তরাষ্ট্র ফুটবল দল

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর