বড় ধাক্কায় শুরু আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ
২২ নভেম্বর ২০২২ ১৮:০৭
শেষবার ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর প্রায় আড়াই বছর ধরে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে বিশ্বকাপে আলবেসিলেস্তেরা। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনার রেকর্ডের ইতি টেনে অঘটন ঘটালো সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রার শুরতেই ২-১ গোলের ব্যবধানে সৌদি আরবের কাছে হার।
কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে গ্রুপ ‘সি’র ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপ মিশনে নামে আর্জেন্টিনা। তবে প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনাকে থমকে দিয়েছে সৌদি আরব। লিওনেল মেসির করা গোলে ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে এগিয়ে যায় সৌদি। সালেহ আল সেহরি সমতায় ফেরায় সৌদিকে আর সালেম আল দাওসারি গোল করে এগিয়ে নেন দলকে।
ম্যাচের তখন ৮ মিনিটের খেলা চলছে। লিওনেল মেসির সেটপিস থেকে মাথা ছোঁয়াতে ডি বক্সের ভেতর অপেক্ষায় লিওনাদ্রো পারদেস। তবে তাকে হাত দিয়ে আটকে ধরে মাটিতে ফেলে দিলেন আল বুলাইয়াহি। সঙ্গে সঙ্গে ভিএআর থেকে রেফারিকে সম্ভাব্য পেনাল্টির কথা জানালেন। এরপরেই রেফারি ছুটে গেলেন টিভি স্ক্রিন দেখতে। সেখানে পারদেসকে ফাউল করায় পেনাল্টি পেল আর্জেন্টিনা। স্পটকিক থেকে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখালেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আর আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন ১-০ গোলের লিড।
প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে চার ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়লেন। এরপরেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণ সাজাতে শুরু করল আর্জেন্টিনা। দারুণ আক্রমণে সৌদির রক্ষণের পরীক্ষা নিচ্ছিল মেসি-ডি মারিয়া-মার্টিনেজরা। ফলাফল আসে ২২তম মিনিটেই। দারুণ এক ফিনিশিংয়ে দ্বিতীয় গোল করেন মেসি। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।
এরপর মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই আরও দুটি গোল করে আর্জেন্টিনা তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় সবগুলো গোলই। ২৮তম মিনিটে লটারো মার্টিনেজের দুর্দান্ত গোলটি তার নিজের কারণেই অফসাইডে বাতিল হয় আর ৩৪তম মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে আসা পাসের সময় অফসাইডে ছিলেন লিওনেল মেসি, মার্টিনেজ বলটি ধরে গোল করলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
প্রথমার্ধে মোট চারবার বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় মেসিদের তিনটি গোল। আর প্রথমার্ধের ইতি ঘটে মেসির একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে।
খেলার চিত্র পাল্টে যায় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে থমকে দিয়ে আকাশে উড়তে শুরু করে সবুজ বাজপাখিরা। ৪৯তম মিনিটে ফাইরাস আল বুরাইকান দারুণ এক পাস দেন ডি বক্সে। আর সেখানে বল পেয়ে এমি মার্টিনেজকে পরাস্ত করে সৌদিকে সমতায় ফেরান সালেহ আল সেহরি।
এরপর আর্জেন্টিনাকে গুছিয়ে ওঠারও সময় দেয়নি সৌদি। ৫৩তম মিনিটে সালেম আল দাওসারি দুর্দান্ত এক গোলে লিড এনে দেন সৌদিকে। গোটা আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগকে ডি বক্সের ভেতর একাই নাচিয়ে ছিলেন দাওসারি। ডি বক্সের বাঁ দিকের কোনা থেকে ডান পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। এমি মার্টিনেজ লাফিয়ে হাত ছোঁয়ালে রুখতে পারেননি বল। তাতেই ২-১ গোলের লিড পেয়ে যায় সৌদি আরব।
পিছিয়ে পড়ার পর কিছুটা অগোছালো খেলতে শুরু করে আর্জেন্টিনা। তবে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেন লিওনেল মেসিরা। ডি মারিয়া লটারো মার্টিনেজের দুর্দান্ত সব আক্রমণ একা হাতেই রুখতে থাকেন সৌদি গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াসিস। গোটা ম্যাচে দিয়েছেন মোট পাঁচটি সেভ। ডি বক্সের ভেতরেই রুখেছেন পাঁচটি সেভ।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৯ মিনিটেই তিন পরিবর্তন আনেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর পরিবর্তে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, আলেহান্দ্রো গোমেজের পরিবর্তে হুলিয়ান আলভারেজ আর লিওনাদ্রো পারদেসের পরিবর্তে মাঠে নামান এনজো ফার্নান্দেজকে। আক্রমণভাগের খেলোয়াড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের ধারও বাড়ে আর্জেন্টিনার। তবে সৌদির রক্ষণ দূর্গ আর ভাঙতে পারেনি।
ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে সৌদির রক্ষণ দূর্গে ফাটল ধরালেও ভাঙতে পারেননি আলভারেজ। তার দারুণ এক শট সৌদি গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার আল আমরি। তাতেই আর ম্যাচে ফেরা হয়নি আর্জেন্টিনার।
অতিরিক্ত সময় ৮ মিনিট দেওয়া হলেও সৌদির ডিফেন্ডারের সঙ্গে গোলরক্ষকের ধাক্কায় ইনজুরিতে পড়েন আল শাহরানি। তার চিকিৎসার জন্য কিছু সময় লাগে। এরপরে খেলা চলে আরও অতিরিক্ত ৬ মিনিট। তবে সেই সময়েও আর সমতা সূচক গোল খুঁজে পায়নি আর্জেন্টিনা। আর তাতেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনাকে হারানোর স্বাদ পায় ‘দ্য গ্রিন ফ্যালকন’রা।
সারাবাংলা/এসএস
আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরব কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ লিওনেল মেসি