Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফুটবলে সৌদি আররের উত্থানের গল্প

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১৫:১৭
বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনেই আর্জেন্টিনার মতো দলকে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। তারপর পোল্যান্ডের বিপক্ষেও দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে দলটি। তবে সৌদি আরব এই বিশ্বকাপে কি করেছে সেই আলোচনা না বরঞ্চ তুলে ধরা যাক বীরের মত লড়াই করার এই দীক্ষা তারা কিভাবে পেল!
গত মঙ্গলবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলার জন্য ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৯ জন ছিলেন সৌদি চ্যাম্পিয়ন আল হিলাল ক্লাবের, যা আধুনিক যুগের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য একটি বিরল ঘটনা।
তবুও এই বিশ্বকাপে আমরা দেখলাম একটি দল থেকে অনেকগুলো খেলোয়াড় থাকায় সৌদি আরব কি ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে এই বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাধারণত খেলোয়াড়রা নিজ নিজ ক্লাবের প্রতি নানান ভাবে ব্যস্ত ও দায়বদ্ধ থাকে। ফলে অধিকাংশ সময় দেখা যায় জাতীয় দলের সহ-খেলোয়াড় সাথে প্রশিক্ষণের জন্য এবং মাঠে একে অপরের গতিবিধি সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে বোঝার জন্য খুব কমই সময় পান।
এই আল হিলাল ক্লাবের বর্তমান কোচ কিন্তু আর্জেন্টিনিয়ান। তিনি হচ্ছেন রেমন দিয়াজ, যিনি বিভিন্ন ক্লাবের পাশাপাশি প্যারাগুয়ে জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন।
আল হিলাল কারা?
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রিয়াদ ভিত্তিক আল হিলাল সৌদি আরবের এবং এশিয়ার সবচেয়ে সফল দল।‌‌ ‘ব্লু ওয়েভস’ ডাকনামে পরিচিত দলটি গত জুন মাসে ১৮তম বারের জন্য সৌদি প্রো লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
সৌদি শীর্ষ লীগ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে আল হিলাল প্রতি মৌসুমে অংশগ্রহণকারী মাত্র ৪টি দলের একটি।‌‌ রাজ্যের সবচেয়ে পুরনো ঘরোয়া ফুটবল প্রতিযোগিতা ক্রাউন প্রিন্স কাপও জিতেছে রেকর্ড ১৩ বার।
গত বছর, আল হিলাল প্রথম ক্লাব হিসেবে ৪টি এশিয়া ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতেছে। তারা এশিয়া কাপ উইনার্স কাপ এবং এশিয়ান সুপার কাপও ২ বার করে জিতেছে।
সৌদি আরব বর্তমান দলের মূল কারিগর: 
৫৪ বছরের ফরাসী কোচ হার্ভে রেনার্ড সৌদিদের কোচ হিসেবে যোগদান করেন ২০১৯ সালে। ২০১২‌ সালে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ফোরিত হন যখন তিনি জাম্বিয়াকে প্রথমবারের মতো আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস শিরোপা জিতেছিলেন। ফাইনালে আইভরি কোস্টের মত শক্তিশালী একটি দলকে পরাজিত করেছিলেন যেখানে খেলেছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কিংবদন্তিতুল্য দিদিয়ের দ্রগবা এবং তৎকালীন আর্সেনালে‌ খেলা কোলো তোরে।
তারপর আইভরি কোস্টে চলে যান‌ এবং তাদেরকে ২০১৫ সালে আফ্রিকান নেশনস কাপ জেতান।‌‌ পরবর্তীতে মরক্কোকে ২০ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালের পরে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করেন। যেই টুর্নামেন্টে মরক্কো স্পেনের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে।
আমরা দেখেছি বিগত শেষ দশকে সৌদি আরব তাদের স্ট্রাইকারদের নিয়ে বেশ ভুগেছে। আর এখানেই তাদেরকে কোচ রেনার্ড বাজিমাত করেছেন। তিনি সবসময়ই দলের স্ট্রাইকার সালেহ আল-শেহরি এবং ফিরাস আল-বুরাইকানের ওপর ভরসা রেখে দলে নিয়মিত খেলিয়ে গিয়েছেন। এই দুই খেলোয়াড় তার দেয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন এবং বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছেন। একসঙ্গে তারা বাছাই পর্বের গ্রুপ ম্যাচে ১১টি সৌদি গোলের মধ্যে ৭টি গোল করেছেন। সেই সাথে সালেম আল-দাওসারি এবং সালমান আল-ফারাজের প্রায়শই শিরোনামে থেকেছেন।‌‌
রেনার্ড আগের সৌদি দলের তুলনায় এই সৌদি দলকে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে গড়ে তুলেছেন। যাদের গতি, টেকনিক, স্কিল, ফিটনেস এবং চিত্তাকর্ষক ফুটবল খেলার দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শুধু তাই নয় দলটি দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করবার শিক্ষাও পেয়েছে এই কোচের হাত ধরেই। গত বছরের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বৃষ্টি ভেজা রাতে ০-০ গোলে ড্র করা ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ানরা সর্বস্ব দিয়ে আক্রমণ করা সত্ত্বেও তাদের ডিফেন্স স্বাগতিকদেরকে রুখে দিয়েছিল।
আরেকটি লক্ষণীয় গুণ এই কোচের পরিলক্ষিত হয়েছে সেটা হল তিনি যখনই কোন খেলোয়াড় সাথে সময় কাটিয়েছেন সেই খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সে উন্নয়ন ঘটেছে। দলে কোনো কারণে পরিবর্তন বা ইনজুরির সমস্যায় ফর্মেশন পরিবর্তন করতে হলেও দলের পারফরমেন্স সব সময় একই স্তরে থেকেছে। ‌‌‌‌
তরুণদের উন্নয়নে তারা কি করছে?
তবে এর সাথে কথা থাকে যে একজন কোচই কেবল পুরো দলের পরিবর্তন এনে দিয়েছেন ব্যাপারটি আসলে তেমন নয়। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশজুড়ে বিভিন্ন একাডেমীগুলোতে তরুণ খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ‌‌সরকার নিজ থেকে এগিয়ে এসেছে। কারণ ২০৩০ সালে সৌদি আরব আরো কয়েকটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবার দৌড়ে অংশগ্রহণ করবে বলে শোনা যাচ্ছে।
‘ভিশন ২০৩০’ হল একটি কৌশলগত ব্লুপ্রিন্ট যা সৌদি আরবকে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলি হিসেবে সামনে রাখবে৷ সৌদি আরবের অর্থনীতি প্রধানত তেলের উপর নির্ভর করে তবে এই ২০৩০ রূপান্তরের একটি অংশ হল অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা৷ তবে ফুটবলে তারা একটি পৃথক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, ২০৩৪ বিশ্বকাপের মধ্যে তারা বিশ্বের সেরা ২০টি দলের মধ্যে অন্তর্গত হতে চায়।
গত জানুয়ারিতে তারা ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রিয়াদ, দাম্মাম সহ পাঁচটি শহরে ৫০০ জন তরুণকে প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করেছে ফ্রেঞ্চ একাডেমীর সাহায্যে। এটা অনেকটা ভারতে ফাস্ট বোলার তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে যেভাবে ভারত সাহায্য নিয়েছে অনেকটা সেরকম মডেলে আগামী দিনে কাজ চালিয়ে যাবে।
আরো কিছু পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ফুটবলকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বৃহৎ শহর গুলোর বাইরেও বিকেন্দ্রীকরণ করা যেখানে প্রত্যেকটি ক্লাব দলের জন্য অভিন্ন কোচিং পাঠ্যক্রম ও যুব কাঠামো থাকবে। ফুটবল ফেডারেশনের অধীনে ১৩টি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো সৌদি আরব জুড়ে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
এছাড়া, সারা দেশে ৪৮.২% মানুষ এখন সপ্তাহে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম অনুশীলন করছে যা সৌদি ভিশন ২০৩০-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৫০ মিনিট শারীরিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম অনুশীলন করছে ২৯.৭% জনগণ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচএস

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ সৌদি আরব বিশ্বকাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর