ক্যামেরুনের কাছে হেরেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউটে ব্রাজিল
৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:০৭
বিশ্বকাপের শেষ ষোলো আগেই নির্ধারণ হওয়ায় গোটা প্রথম একাদশই বিশ্রামে পাঠিয়ে দল ক্যামেরুনের বিপক্ষে দল সাজান ব্রাজিল কোচ তিতে। গোলরক্ষক থেকে শুরু করে আক্রমণভাগ পর্যন্ত সবাইকেই পাল্টেছেন তিতে। আর তাতেই ক্যামেরুনের কাছে অঘটন ব্রাজিলের। শেষ মুহূর্তে ক্যামেরুনের কাছে গোল হজম করে হেরেছে সেলেকাওরা। ম্যাচের ৯২তম মিনিটে ভিন্সেন্ট আবুবকরের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্যামেরুন।
তবে শঙ্কা জেগেছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের জায়গাটা হাতছাড়ার। গ্রুপের অপর ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ড। এই ম্যাচে আর একটি গোল করতে পারলে সুইসরা গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো। তবে শেষ পর্যন্ত আর গোল করতে পারেনি সুইসরা। আর তাতেই ব্রাজিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আর সুইজারল্যান্ড রানার্সআপ হয়ে নকআউট নিশ্চিত করে।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে মাঠে নেমেই দানি আলভেসের রেকর্ড
নেইমার ভিনিসিয়াসদের অনুপস্থিতিতে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের দায়িত্ব তিতে দিয়েছেন রদ্রিগো, মার্টিনেল্লিদের কাঁধে। ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রথমার্ধের শুরু থেকেই বলের দখলে রেখে আক্রমণ সাজায় ব্রাজিল। গোটা প্রথমার্ধে ৬৮ শতাংশ বল দখলে রেখে মোট ১০টি শট নেয় ব্রাজিল। যার মধ্যে তিনটিই ছিল লক্ষ্যে। তবে লক্ষ্যে শট রাখলেও বল জালে জড়াতে পারেনি সেলেকাওরা।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রথমার্ধে গোলশূন্য থেকে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচের একটিতেও প্রথমার্ধে গোল করতে পারল না সেলেকাওরা। তবে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত আক্রমণ করতে থাকে রদ্রিগো, অ্যান্থনিরা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই দারুণ গতিতে আক্রমণে ওঠেন অ্যান্থনি। সেখান থেকে বল বাড়ান রদ্রিগোর দিকে আর রদ্রিগো বল পাস দেন ডি বক্সের দিকে বল দেন। তবে বল পেয়ে শট নিলেও তা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ফ্রেড।
১৪তম মিনিটে এসে ফ্রেডের ভাসানো ক্রস ক্যামেরুনের ডি বক্সে লাফিয়ে উঠে হেড করেন মারটিনেল্লি। কিন্তু তার শট দারুণ এক সেভ করে গোলপোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে ঠেলে দেন ক্যামেরুন গোলরক্ষক এপাসসি। মিনিট ছয় পরে পাল্টা আক্রমণ করে ক্যামেরুন। এরিক ম্যাক্সিম চুপো মোটিং দারুণ এক আক্রমণ করলেও শট নেওয়ার আগে বল ক্লিয়ার করেন এডার মিলিতাও। ক্লিয়ার করা বল আবারও পেয়ে যায় ক্যামেরুন। সেখান থেকে আক্রমণ করে ডি বক্সের ভেতর ক্রস করেন টোলো। তবে সেই ক্রস ঝাপিয়ে পড়ে ফেরান ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসন।
মিনিট দুই পরে বাঁ দিক থেকে অ্যালেক্স তেয়াসের দারুণ এক ক্রস ডি বক্সে আসলেও সেখানে বল নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ২৫তম মিনিটে এসে বাঁ দিক থেকে মার্টিনেল্লি দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটে গিয়ে কাট ব্যাক করে ডি বক্সে জেসুসকে বল দেন। বল পেয়ে জেসুস শট নিলেও তা রুখে দেন ক্যামেরুন গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৩৮তম মিনিটে এসে মধ্যমাঠে মার্টিনেল্লিকে ফাউল করলেও সেখান থেকে বল নিয়ে আক্রমণে ওঠে ফ্রেড। ডি বক্সের ঠিক সামনে থেকে শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ফ্রেডের। নির্ধারিত ৪৫ মিনিট শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে ডি বক্সের সামনে থেকে বুলেট শট নেন মার্টিনেল্লি। তবে তার শট লাফিয়ে উঠে আঙুলের ছোঁয়ায় গোলপোস্টের ওপর দিয়ে ঠেলে দেন এপাসসি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে সে দারুণ এক আক্রমণ করে ক্যামেরুন। তবে ডি বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া হেডার লাফিয়ে ঠেকান ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসন। এতেই প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যতে।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করে ক্যামেরুনও। ব্রাজিলের আক্রমণ রুখে পাল্টা আক্রমণেও তাদের রক্ষণের বেশ পরীক্ষা নিতে শুরু করে ক্যামেরুন। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামা এভারটন রিবেইরোর দারুণ এক হেডার ক্যামেরুন গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপর একের পর এক আক্রমণ করতে শুরু করে।
দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ২১টি শট নেয় ব্রাজিল যার মধ্যে ক্যামেরুনের গোল বরাবরই ছিল ৭টি। তবে তার মধ্যে একটিও জড়ায়নি জালে।
৬৭তম মিনিটে ব্রাজিল আক্রমণে গেলেও তা অসাধারণ ট্যাকেলে ক্লিয়ার করে দেন এঞ্জো এবোসি। ম্যাচের ৭১ মিনিটে আবারও আক্রমণে গেলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলের দেখা পায় না ব্রাজিল। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইর থেকে শট করেন ক্যামেরুনের অলিভিয়ার এনটিচ্যাম। তবে তা রুখে দেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডারসন। ম্যাচের ৮০ মিনিটে কর্নার পায় ক্যামেরুন। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৮১ মিনিটে প্রতি আক্রমণে মার্টিনেল্লি ছুটে গেলেও তাকে ফাউল করে কার্ড দেখেন ভিন্সেন্ট আবুবকর। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস করেন বদলি নামা রাফিনহা। তবে সেখান থেকে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয় পেদ্রো।
ব্রাজিল গোলের সহজ সুযোগ মিসের মহড়া দিলেও দারুণ এক আক্রমণে ব্রাজিলকে থমকে দেয় ক্যামেরুন। ম্যাচের তখন নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে জেরোমি এম্বেকেলির দূর থেকে বাড়ানো বলে হেড করে বল জালে জড়ান ভিন্সেন্ট আবুবকর। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ক্যামেররুন। ব্রাজিলকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারালেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আফ্রিকান দলটিকে।
সারাবাংলা/এসএস