Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ফ্রান্স

স্পোর্টস ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:৫৫

ইতিহাস গড়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় মরক্কো। যাত্রা পথে ক্রোয়শিয়া, বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে পেছনে ফেলে মরক্কো। তবে সেমিফাইনালে এসে আর নতুন করে ইতিহাস লেখা হলো না মরক্কোর। তাদের দুর্দান্ত বিশ্বকাপ যাত্রা ভঙ্গ করলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। প্রথমার্ধে থিও হার্নান্দেজের গোলে লিড নেয় এরপর ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে র‍্যানডাল কোলো মুয়ানির করা গোলে ২-০ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয় ফ্রান্সের। আর তাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট কাটে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

বিজ্ঞাপন

শেষবার ২০০২ সালে ব্রাজিল টানা দুইবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল। সেলেকাওরা ১৯৯৪, ১৯৯৮ এবং ২০০২ এর বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল। যার মধ্যে ১৯৯৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা। এরপর দীর্ঘ ২০ বছর পর ফ্রান্স টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০১৮ সালে ২০ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। আর ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে ফ্রেঞ্চরা। আর ২০২২ সালে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে লড়াই করে তারা। আর সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মরক্কোকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের তখন মাত্র ৬ মিনিট। ডান দিক থেকে আক্রমণে উঠে ডি বক্সে বল বাড়ান অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। তবে ডি বক্সের ভেতর অলিভিয়ের জিরুড এবং কিলিয়ান এমবাপে মরক্কোর রক্ষণের বাধা ভেঙে শট নিতে পারেননি। এমবাপে কোনো রকমে শট নিলে তা মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাঁ দিকে থাকা থিও হার্নান্দেজের কাছে যায়। আর দারুণ এক অ্যাক্রোব্যাটিক শটে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন তিনি। আর এতেই প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ করে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপে মাত্র একটি গোল হজম করেছিল মরক্কো। অবশ্য সেটা কোনো প্রতিপক্ষের শট থেকে আসেনি। যে একটি গোল মরক্কোর জালে জড়িয়েছিল সেটি ছিল তাদেরই আত্মঘাতি গোল। তবে অবশেষে ফ্রান্স ভাঙল মরক্কো ডেডলক। থিও হার্নান্দেজের দুর্দান্ত গোলে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টুর্নামেন্টে প্রথম গোল হজম করলো আফ্রিকান দেশটি।

আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। তবে ম্যাচে গোল হজমের পর থেকে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে দারুণ খেলতে থাকে মরক্কো। ১০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ওনাহি। তবে তা অসাধারণ সেভে দলকে রক্ষা করেন হুগো লরিস। এরপর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু’দল। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। তবে সেখান থেকে বিপদ ঘটাতে পারেনি মরক্কো।

পরের মিনিটেই বাউফলের কাছ থেকে ডি বক্সের ভেতর দারুণ এক বল পান হাকিম জিয়েচ কিন্তু সেখান থেকে ফ্রান্সের ডিফেন্স থাকে শট নিতে দেয়নি। ডি বক্সের ভেতরের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে প্রতি আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। আর সেখান থেকে দারুণ এক আক্রমণে বল পেয়ে মরক্কোর ডি বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন অলিভিয়ের জিরুড। কিন্তু তার শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে লিড বাড়ানো হয়নি ফ্রেঞ্চদের।

প্রথমার্ধের সময় যত গড়াচ্ছিল ততই আক্রমণের গতি বাড়ছিল মরক্কোর। একের পর এক দারুণ সব সুযোগ তৈরি করছিল আফ্রিকান দলটি। এদিকে ছেড়ে কথা বলছিল না ফ্রান্সও। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে কর্নার পায় ফ্রান্স। কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে শট করেন ইউসুফ ফোফানা। তবে তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জিরুড। ডি বক্সের ভেতর বল পেয়েও জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন তিনি।

৪০তম মিনিটে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন কিন্তু কর্নারের বিনিময়ে আক্রমণ থামায় মরক্কোর ডিফেন্স। এরপর কর্নার থেকে নিচু করে বাড়ানো বল পেয়ে যান ভারান কিন্তু তার লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে লিড বাড়েনি ফ্রান্সের। পরের সময়টুকু মরক্কো একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। ৪৪ মিনিটে কর্নার পায় মরক্কো। কর্নার থেকে বল পেয়ে বাইসাইকেল কিক করেন জাওয়াদ এল ইয়ামিক। তবে তা পোস্টে লেগে প্রতিহিত হয়। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে এক গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ফ্রান্স।

বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই অন্য এক মরক্কোর দেখা মেলে। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে এক বিন্দু দম ফেলারও সুযোগ দিচ্ছিল না আফ্রিকান সিংহরা। তবে কিছুতেই ফ্রেঞ্চ রক্ষণদূর্গ টলাতে পারেনি। একের পর এক সব আক্রমণে রুখেছে কুন্দে-ভারান-কোনাতে-হার্নান্দেজকে নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ। তবে প্রতি আক্রমণে মরক্কোর ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছিল এমবাপেরা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ক্রস করেন এমবাপে। তবে তাতে কেউ মাথা ছোঁয়াতে না পারায় ব্যবধান বাড়ানো হয় না ফ্রান্সের। ম্যাচের ৫১ মিনিটে বল নিয়ে এমবাপে এগিয়ে যায়। তবে দারুণ ট্যাকেলে তা বিপদ মুক্ত করেন সোফিয়ানে আমরাবাত।

এরপর ঘুরে যায় আক্রমণের পাল্লা। ৫৩তম মিনিটে ডান দিক থেকে পর পর দুটি আক্রমণ করে মরক্কো। তবে দুটি আক্রমণই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় মরক্কো। তবে ব্যর্থ হলেও থেমে থাকেনি মরক্কো। একের পর এক আক্রমণ করেই গেছে তারা। গোটা ম্যাচে ১৩টি শট নেওয়া মরক্কোর ৫টি শটই ছিল লক্ষ্যে। তবে একটিও লক্ষ্যভেদ করতে পারনেই তারা।

৬৭তম মিনিটে এসে হাকিম জিয়েচ দারুণ এক আক্রমণে ওঠেন তবে তার শট রুখে দেন হুগো লরিস। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। ফ্রি কিক থেকে বল বাড়িয়ে দেন গ্রিজম্যান। সেখানে ইব্রাহিম কোনাটে হেড করলেও তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর বল পেয়ে শট করেন ইউসুফ ফোফানা। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে।

এরপর ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে মধ্যমাঠে দারুণ এক বল জেতেন অরেলিয়েন চুয়ামেনি। সেখান থেকে বল দেন গ্রিজম্যানকে, যিনি বল নিয়ে ডি বক্সের সামনে ঢুকে আবার বাঁ দিকে এমবাপের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান। এমবাপে বল নিয়ে বাঁ দিকে সামনের দিকে বল দেন থুরামের কাছে আর তিনি বল ব্যাক দেন এমবাপেকে। এবার বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে চার-পাঁচজন মরক্কোর ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান দিকে থাকা মুয়ানির উদ্দেশ্যে বল বাড়ান। সেখান থেকে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ফ্রান্সের ব্যবধান ২-০ করেন র‍্যানডাল কোলো মুয়ানি।

এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি মরক্কো। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। আর নিশ্চিত করে বিশ্বকাপের ফাইনাল।

সারাবাংলা/এসএস

কাতার বিশ্বকাপ ফাইনাল ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ মরক্কো বনাম ফ্রান্স সেমিফাইনাল

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর