থামল মরক্কোর ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ যাত্রা
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:২২
কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর আগে মরক্কোর বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল ০.০০১ শতাংশ। তবে বিশ্বকাপ শুরু হতেই গাণিতিক সেসব সমীকরণকে বুড়ো আঙুল দেখাতে শুরু করে আফিকান লায়ন্সরা। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়ার বাধা টপকে শেষ ষোলোতে। এরপর স্পেনকে শেষ ষোলোতে আর পর্তুগালকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে মরক্কো। আর তাতেই গড়া হয়ে যায় ইতিহাস। ০.০০১ শতাংশ থেকে বিশ্বকাপে থেকে মাত্র দুই ধাপ দূরে থেকে বিদায় মরক্কোর। ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে বিদায়ে থামল মরক্কোর ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ যাত্রা।
ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপে মাত্র একটি গোল হজম করেছিল মরক্কো। অবশ্য সেটা কোনো প্রতিপক্ষের শট থেকে আসেনি। যে একটি গোল মরক্কোর জালে জড়িয়েছিল সেটি ছিল তাদেরই আত্মঘাতি গোল। তবে অবশেষে ফ্রান্স ভাঙল মরক্কো ডেডলক। থিও হার্নান্দেজের দুর্দান্ত গোলে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টুর্নামেন্টে প্রথম গোল হজম করে আফ্রিকান দেশটি।
ম্যাচের তখন মাত্র ৬ মিনিট। ডান দিক থেকে আক্রমণে উঠে ডি বক্সে বল বাড়ান অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। তবে ডি বক্সের ভেতর অলিভিয়ের জিরুড এবং কিলিয়ান এমবাপে মরক্কোর রক্ষণের বাধা ভেঙে শট নিতে পারেননি। এমবাপে কোনো রকমে শট নিলে তা মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাঁ দিকে থাকা থিও হার্নান্দেজের কাছে যায়। আর দারুণ এক অ্যাক্রোব্যাটিক শটে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন তিনি। আর এতেই প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ করে ফ্রান্স।
বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই অন্য এক মরক্কোর দেখা মেলে। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে এক বিন্দু দম ফেলারও সুযোগ দিচ্ছিল না আফ্রিকান সিংহরা। তবে কিছুতেই ফ্রেঞ্চ রক্ষণদূর্গ টলাতে পারেনি। একের পর এক সব আক্রমণে রুখেছে কুন্দে-ভারান-কোনাতে-হার্নান্দেজকে নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ। তবে প্রতি আক্রমণে মরক্কোর ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছিল এমবাপেরা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ক্রস করেন এমবাপে। তবে তাতে কেউ মাথা ছোঁয়াতে না পারায় ব্যবধান বাড়ানো হয় না ফ্রান্সের। ম্যাচের ৫১ মিনিটে বল নিয়ে এমবাপে এগিয়ে যায়। তবে দারুণ ট্যাকেলে তা বিপদ মুক্ত করেন সোফিয়ানে আমরাবাত।
এরপর ঘুরে যায় আক্রমণের পাল্লা। ৫৩তম মিনিটে ডান দিক থেকে পর পর দুটি আক্রমণ করে মরক্কো। তবে দুটি আক্রমণই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় মরক্কো। তবে ব্যর্থ হলেও থেমে থাকেনি মরক্কো। একের পর এক আক্রমণ করেই গেছে তারা। গোটা ম্যাচে ১৩টি শট নেওয়া মরক্কোর ৫টি শটই ছিল লক্ষ্যে। তবে একটিও লক্ষ্যভেদ করতে পারনেই তারা।
ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে মধ্যমাঠে দারুণ এক বল জেতেন অরেলিয়েন চুয়ামেনি। সেখান থেকে বল দেন গ্রিজম্যানকে, যিনি বল নিয়ে ডি বক্সের সামনে ঢুকে আবার বাঁ দিকে এমবাপের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান। এমবাপে বল নিয়ে বাঁ দিকে সামনের দিকে বল দেন থুরামের কাছে আর তিনি বল ব্যাক দেন এমবাপেকে। এবার বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে চার-পাঁচজন মরক্কোর ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান দিকে থাকা মুয়ানির উদ্দেশ্যে বল বাড়ান। সেখান থেকে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ফ্রান্সের ব্যবধান ২-০ করেন র্যানডাল কোলো মুয়ানি। এতেই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় মরক্কোর।
অন্যদিকে শেষবার ২০০২ সালে ব্রাজিল টানা দুইবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল। সেলেকাওরা ১৯৯৪, ১৯৯৮ এবং ২০০২ এর বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল। যার মধ্যে ১৯৯৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা। এরপর দীর্ঘ ২০ বছর পর ফ্রান্স টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০১৮ সালে ২০ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। আর ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে ফ্রেঞ্চরা। আর ২০২২ সালে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে লড়াই করে তারা। আর সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মরক্কোকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।
সারাবাংলা/এসএস
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ ফ্রান্স বনাম মরক্কো মরক্কোর ইতিহাস মরক্কোর বিদায় সেমিফাইনাল