টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম জয়
৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:১৪
ইংল্যান্ডের ১৫৬ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতে দাপুটে রান তুললেন রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় রানের গতি বাড়িয়েছেন। তারপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটা প্রথম জয়। আগে ব্যাটিং করে ১৫৬ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। পরে শান্ত, সাকিবদের ব্যাটে ১৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে তিন দিনের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে দু’বার হারাল বাংলাদেশ। তিন দিন আগে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয়টিতে ইংলিশদের হারিয়েছিল স্বাগতিকরা। আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও এলো দাপুটে জয়।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের ১৫৬ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সাড়ে আট বছর পর দলে ফেরা রনি তালুকদার ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
বিপিএলে পারফর্ম করে অনেকদিন পর দলে ফেরা রনি তালুকদার শুরু থেকেই শট খেলেছেন। আদিল রশিদের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ইনিংসটা লম্বা করতে না পারলেও তার ব্যাটে ভালো সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। দলীয় ৩৩ রানের মাথায় ১৪ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ২১ রান করে ফিরেছেন রনি। খানিক বাদে অপর ওপেনার লিটন দাসও ফিরেছেন জোফরা আর্চারের বাউন্সারে। ১০ বলে ১২ রান করে ফিরেছেন লিটন।
তবে পরপর দুই উইকেট হারানোর ধাক্কাটা পরে দারুণভাবে কাটিয়ে তোলেন দুই তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে এবার বিপিএলে আলো ছড়িয়েছেন দুই তরুণ। দুজনেই ব্যাটিং করতেন টপ অর্ডারে। সেই খেলাটা যেন আজ খেললেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও! ২২ বছর বয়সী অভিষিক্ত হৃদয়কে একটুও স্নায়ূচাপে ভুগতে দেখা যায়নি। ইনিংসের ১২তম ওভারে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার আদিল রশিদকে হাঁটু গেড়ে যে ছক্কাটা হাঁকালেন সেটা অনেকদিন মনে রাখার মতো।
আদিল রশিদকেই আরেকটা ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফিরেছেন অবশ্য পরের বলেই। ফেরার আগে ১৭ বলে ২টি চার ১টি ছয়ে ২৪ রান করে আগামীর বার্তা দিয়ে গেছেন হৃদয়। দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরেছেন পরের ওভারেই। ক্রিস ওকসের এক নির্বিষ ডেলিভারি টেনে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৩০ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৫১ রান করা শান্ত।
পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে আরও আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই সময় স্বাগতিকরা আরও উইকেট হারিয়ে ফেললে বড় চাপে পরতও। তবে সাকিব আল হাসান সেই সুযোগ দেননি সফরকারীদের। তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে বাকি কাজটা দুর্দান্তভাবে সারেন সাকিব।
১৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৫৮ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। সাকিব তখন ২৪ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৩৪ রানে অপরাজিত। ১৩ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন আফিফ।
এর আগে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনী দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের ইনিংসটি দেড়শ পার হয়ে মূলত জস বাটলারের ব্যাটে। শুরুটা অবশ্য দারুণ ছিল সফরকারীদের। এক্ষেত্রে বাংলাদেদেশি ফিল্ডারদের দায়ও আছে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে দুই ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিল সল্টের ক্যাচ ছেড়েছেন বোলার নাসুম নিজেই। ওভারের চতুর্থ বলে জস বাটলারের সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন সাকিব আল হাসান।
এই বাটলারই পরে ঝড় তুলেছিলেন। ইংল্যান্ডের দলীয় ৮০ রানের মাথায় নাসুম ৩৫ বলে ৩৮ রান করা সল্টকে ফেরানোর পর অপরপ্রান্ত থেকেও নিয়মিতই উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু একপ্রান্তে বাটলার ঝড় অব্যাহত ছিল অনেকক্ষণ। ১৫তম ওভারে হাসান মাহমুদকে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন বাটলার। ১৭তম ওভারে হাসানকে আবারও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পেরেছেন সীমানায়।
বাটলার ফেরার পর ইংল্যান্ড আর মাথা তুলে দেয়নি বাংলাদেশি বোলিং আক্রমণ। শেষ দিকে হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা দারুণ বোলিং করেছেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়েছে এবং রানের গতিও কমিয়ে রেখেছেন তারা।
২০ ওভারে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৫৬ রানে থেমেছে ইংল্যান্ড। বাটলার ৪২ বলে ৪টি করে চার, ছয়ে ৬৭ রান করেন। বেন ডাকেট তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান করেন।
বাংলাদেশের হয়ে হাসান মাহমুদ ২৬ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
সারাবাংলা/এসএইচএস