ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে কি পেল বাংলাদেশ
১৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৩২
ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে কি পেল বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের সহজ উত্তরটা সকলেরই জানা। দেশের মাটিতে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এবার ইংলিশদের বিপক্ষে ছয় ম্যাচ খেলে চারটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ হারলেও তৃতীয় ও শেষটিতে জিতেছে টাইগাররা। পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইংলিশদের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের প্রথম স্বাদ পায় বাংলাদেশ। আর সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের ১৬ রানে হারিয়ে ধবলধোলাই নিশ্চিত করে টাইগাররা। এসব তো ম্যাচ পরিসংখ্যানের কথা। এর বাইরেও এই সিরিজ থেকে অনেক কিছুই পেয়েছে বাংলাদেশ।
তার মধ্যে অন্যতম সেরা তারুণ্যের জয়গান শোনা গিয়েছে জোরেশোরে। পেস ডিপার্টমেন্টের দাপট দেখা গেছে, ভিন্ন কন্ডিশনেও পারফর্ম করার সামর্থ্যের প্রমাণ মিলেছে, নতুন এক নাজমুল হোসেন শান্তর আবিষ্কার।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের পুরোটা জুড়েই ছিল তরুণদের দাপট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কখনোই ভালো দল ছিল না। যখন থেকে টি-টোয়েন্টি খেলছে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতার অভাব ছিল তখন থেকেই। এই দলটা এই মুহূর্তে একটা পালাবদলের মধ্য দিয়েও যাচ্ছে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল দুই ব্যাটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবসর নেননি, তবে গত বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি মাহমুদউল্লাহর। তারপর থেকেই এই সংস্করণে দলের বাইরে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তিন সিনিয়রের অনুপস্থিতিতে তরুণরা খেলছে বাংলাদেশ দলে। তরুণ দলটা বেশ ভালোও করছে। গত বিশ্বকাপে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাসটাই হয়তো কাজে লাগল ইংল্যান্ড সিরিজে।
সিরিজ শুরুর আগে অনেকেই বলেছেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগাররা টি-টোয়েন্টি জিততে পারবে এমনটা হয়তো কেউই মনে করেননি। ইংল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং এই সংস্করণে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতার অভাবই এমন ভাবনার কারণ। কিন্তু অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে তরুণরা বাজিমাত করলেন এই ফরম্যাটেই।
গত বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্সের পুরস্কার স্বরূপ ইংল্যান্ড সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়েছিলেন তৌহিদ হৃদয়, রনি তালুকদার, শামীম হোসেন পাটোয়ারীরা। পারফর্ম করলে এখন দলে ঢুকতে বয়স যে কোনো বাঁধা নয় ৩২ বছর বয়সী রনির ডাক পাওয়াটা সেটাই প্রমাণ করল। হৃদয়-রনি দারুণ ক্রিকেট খেলেছেন। ওপেনিংয়ে নেমে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন রনি। হৃদয় মিডল অর্ডারে ১৭ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৪ রান করেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুজন সব ম্যাচেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছেন। রনি-হৃদয়রা সুযোগ পেয়েই পারফর্ম করলেন ওদিকে সুযোগ পেতে অপেক্ষায় আছেন অপর তরুণ নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলী রাব্বি, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকির হাসানের মতো ক্রিকেটাররা। অর্থাৎ তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ যে তৈরি হচ্ছে তার একটা বার্তাও মিলল এই সিরিজে।
কন্ডিশনের বাঁধাও যে বাংলাদেশ এখন জয় করতে জানে তার একটা বার্তাও মিলেছে এই সিরিজে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটা প্রথম সিরিজ জয় হলেও এর আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অতিরিক্ত স্পিনবান্ধব পিচ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে স্পিন বিষে নীল করে ওই দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পোর্টিং পিচ বানিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে স্পিনারদের জন্য খুব বাড়তি সুবিধা ছিল না এবং ব্যাটিংয়ের জন্যও ছিল বেশ ভালো। এমন পিচেও যে বাংলাদেশ এখন ভালো করতে পারে তার প্রমাণ মিলল এই সিরিজেই।
পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টের সামর্থ্যের দুর্দান্ত প্রমাণও মিলেছে। অনেক আগে থেকেই অবশ্য বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে স্পিন নির্ভরতা কমেছে। ভালো উইকেট পেলে পেস ডিপার্টমেন্ট যে ভালো করতে প্রস্তুত ইংল্যান্ড সিরিজে সেটা দেখিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমানরা। ইংল্যান্ড সিরিজে বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্ট।
নাজমুল হোসেন শান্ত এই সিরিজে নিজেকে চিনিয়েছেন নতুনভাবে। তরুণ এই ব্যাটারের সামর্থ্য ও প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনোই। কিন্তু কম বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া শান্ত ছিলেন চরম অধারাবাহিক। সুযোগ পেয়ে বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণে সমালোচনায় জর্জরিত হতে হয়েছে তাকে। তবে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়েই শান্তর ঘুরে দাঁড়ানো। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করার সঙ্গে সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ছিল এই তরুণ ক্রিকেটার।
শান্ত অবশ্য অনেক আগ থেকেই রান পাচ্ছেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। গত বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন। সেই আত্মবিশ্বাসটাই কাজে লাগালেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষের সিরিজে।
ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন শান্ত। নামের পাশে আসে দুটি অর্ধশতক। এই সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন তিনিই। তিন ম্যাচ মিলিয়ে মোট ১১১ রান করেন শান্ত। তবে তার ব্যাটিং জাদু জমিয়ে রেখেছিলেন যেন টি-টোয়েন্টির জন্যই। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়ার মূল কারিগর বলা চলে নাজমুল হোসেন শান্তকেই।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টির প্রথমটিতে ৫১ রান করে দলের জয়ের ভীত গড়ে দেন। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৬ আর তৃতীয় ম্যাচে ৪৭ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দিয়েই মাঠ ছাড়েন শান্ত। সিরিজ শেষে নামের পাশে তিন ম্যাচে ১২৭.৪৩ স্ট্রাইকরেটে ১৪৪ গড়ে রান ১৪৪। এতেই সিরিজ সেরা নাজমুল হোসেন শান্ত।
আর বাংলাদেশে ইংল্যান্ডের এই সফরে তাই টাইগারদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সই।
সারাবাংলা/এসএইচএস/এসএস