রিয়ালের ভাবনায় কেবল হালান্ড নয়, সিটির ভাবনায় নেই প্রতিশোধ
৯ মে ২০২৩ ১৩:৪৬
ঠিক এক মৌসুম আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দুই লেগেই রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে দ্বিতীয় লেগে এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ ১০ মিনিটের জাদুকরি পারফরম্যান্স দেখায় রিয়াল। আর তাতেই ফাইনালের টিকিট কাটে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। এবার কি তবে সিটির সামনে প্রতিশোধ নেওয়ার বড় সুযোগ? দলটির কোচ পেপ গার্দিওলা অবশ্য সেরকম ভাবছেন না মোটেও। অন্যদিকে স্বপ্নের মতো এক মৌসুম কাটানো এর্লিং হালান্ড দুর্দান্ত পারফর্ম করে রিয়ালের দুঃশ্চিন্তার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রিয়াল কোচ আনচেলোত্তির ভাবনায় কেবল হালান্ডকে আটকানো নয়, আটকানোর ভাবনা গোটা সিটি দলকেই।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে স্মরণীয় এক ম্যাচের জন্ম দেওয়া ম্যানচেস্টার সিটি ও রিয়াল মাদ্রিদ এবারও মুখোমুখি হচ্ছে একই মঞ্চে। গতবার প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ৪-৩ গোলে জেতে সিটি। দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের মাঠে তারা ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ৮৯ মিনিট পর্যন্ত।
যখন কেবল শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা, দুই গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেওয়া মনে হচ্ছিল অসম্ভব, তখনই অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের রূপকথা রচনা করে রিয়াল। ৯০ ও ৯১ মিনিটে দুটি গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান রদ্রিগো। ৯৫তম মিনিটে করিম বেনজেমার পেনাল্টি গোলে সিটিকে স্তুম্ভিত ও হতভম্ব করে তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে। টুর্নামেন্টের সফলতম দলটি পরে শিরোপাও জিতে নেয়।
সেবার ম্যাচের শেষে এসে নিজেদের মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলে সিটি। আর তার সুযোগই কাজে লাগায় লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। এবার অবশ্য সেদিকটা নিয়ে বেশ সাবধান সিটিজেনরা। এমন ম্যাচ তো শুধু কৌশল আর মাঠের ফুটবলের স্কিলের লড়াই নয়, স্নায়ুরও বড় পরীক্ষা। পেপ গার্দিওলা তাই হয়তো ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে চেষ্টা করলেন গত আসরের বোঝা সরিয়ে দলের চাপ কমাতে।
‘এটা হবে অনেক বড় একটি ভুল। আমরা এখানে প্রতিশোধ নিতে আসিনি। যা হওয়ার, হয়ে গেছে। ফুটবলে সবসময়ই সেটাই হয়, যা প্রাপ্য। ফাইনালে পৌঁছাতে যা কিছু করা সম্ভব, সবকিছুর বেশি করেও তা যথেষ্ট হয়নি আমাদের জন্য। যে শিক্ষাটা আমরা পেয়েছি তা হলো, এবার ভালো পারফর্ম করে ভালো ফল নিশ্চিত করে আমরা যেন ম্যানচেস্টার দ্বিতীয় লেগে যেতে পারি।’
‘এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ, আরেকটি সুযোগ। একদিন নিশ্চয়ই আমরা ফাইনালে খেলব এবং ট্রফি জিতব। গত মৌসুমে হয়নি, কারণ তারা (রিয়াল মাদ্রিদ) খুব ভালো করেই জানে, এই টুর্নামেন্টে তাদের কী করতে হবে।’—যোগ করেন গার্দিওলা।
এদিকে দুই দলে তারকার অভাব নেই। তবে এই মুহূর্তে উজ্জ্বলতম এবং বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত সম্ভবত এর্লিং হালান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিতে প্রথম মৌসুমেই অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটছেন তিনি। রেকর্ডের পর রেকর্ড লুটিয়ে পড়ছে তার পায়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মহারণের আগেও আলোচনার কেন্দ্রে তিনিই। তবে কার্লো আনচেলত্তি ভালো করেই জানেন, ব্যবধান গড়ে দেওয়ার মতো ফুটবলারের অভাব নেই সিটিতে। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ তাই সাফ জানিয়ে দিলেন, শুধু একজনকে ভাবনায় রেখে মাঠে নামবে না তার দল।
আনচেলোত্তি বলেন, ‘শুধু একজন ফুটবলারকে থামাতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি না, আমরা প্রস্তুত হচ্ছি গোটা দলকে থামাতে, যাদেরকে এই মুহূর্তে অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছে। হলান্ডকে জায়গা করে দিতে ম্যানচেস্টার সিটি তাদের খেলার ধরন পাল্টায়নি। বরং তাকে লম্বা বল খেলিয়ে এবং আরও ‘ডিরেক্ট অ্যাপ্রোচ’ নিয়ে উর্ধ্বাধভাবে তাদের বিকল্প এখন আরও বেশি। এসবের পরও তারা এমন একটি দল, বল পায়ে তারা দুর্দান্ত ও খুবই ভালো খেলে।’
সিটির তারকায় ঠাসা দল এবার আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে হলান্ডকে পেয়ে। অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপার দেখা পেতে সিটির ভরসা তিনিই। এবার এখনও পর্যন্ত ১২ গোল করে ইউরোপ সেরার মঞ্চেও সর্বোচ্চ গোল স্কোরার ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। আপাতত তার ধারেকাছে কেউ নেই এখানে। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মঙ্গলবার তিনিই হবে সিটির মূল অস্ত্র আর রিয়ালের বড় হুমকি।
বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ঘরের মাঠ এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যানচেস্টার সিটিকে আতিথ্য দেবে রিয়াল মাদ্রিদ।
সারাবাংলা/এসএস
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ কার্লো আনচেলোত্তি পেপ গার্দিওলা রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার সিটি সেমিফাইনাল