অ্যাশেজে রাজসিক প্রত্যাবর্তনে ব্রডকে ইংল্যান্ডের বিদায়
৩১ জুলাই ২০২৩ ২৩:৫৩
ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজের প্রথম দুটি ম্যাচ হারে ইংল্যান্ড। এরপর দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো ইংলিশরা। চতুর্থ টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে হয়তো রোমাঞ্চটা আরও বেশি জমে উঠতো। তবে ২-০’তে পিছিয়ে থাকা অ্যাশেজে ইংল্যান্ড শেষমেশ ২-২’তে ড্র করে ট্রফি ভাগাভাগি করে নিল। আর সেই সঙ্গে কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট ব্রডকে বিদায় দিল রাজসিকভাবেই।
ওভাল টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যালেক্স ক্যারিকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করালেন স্টুয়ার্ড ব্রড। আর তাতেই থামলো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। আর সেই সঙ্গে থামলো স্টুয়ার্ট ব্রডের রাজসিক ক্রিকেটীয় অধ্যায়ও। টেস্টে ৬০৪তম উইকেট নিয়ে বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে। আর সেই সঙ্গে এনে দিলেন দলকে পঞ্চম টেস্টে জয়ও।
পঞ্চম টেস্টের মাঝখানেই ঘোষণা দেন এই টেস্ট শেষেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন স্টুয়ার্ট ব্রড। আর এই টেস্ট জিতেই ইংল্যান্ড ব্রডকে উপহার দিল।
ওভাল টেস্টে দুই দলের হিসাব কি ছিল? জিতলে অন্তত সিরিজ ড্রয়ের সান্ত্বনা পাবে ইংল্যান্ড, আর অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২০০১ সালের পর প্রথমবার ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ের হাতছানি। অ্যাশেজ সিরিজের ভাগ্য এসে ঠেকেছিল শেষ দিন, শেষ সেশনে। সেখানে ভালোভাবেই ছিল রোমাঞ্চের রসদ। আর সেই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতেছে।
ওভালে জয়ের জন্য ৩৮৪ রানের লক্ষ্যে কাল ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া আজ মোট ৩৩৪ রানেই অলআউট হয়েছে। ৪৯ রানের জয়ে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করল ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টির কারণে চতুর্থ টেস্ট ড্র হয়ে যাওয়ার পরই অবশ্য অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ১৩৫ রান তোলে। এরপর বৃষ্টিতে শেষ সেশনের খেলা বাঞ্চাল। তবে খেলার মোড় ঘুরে যায় পঞ্চম দিনে এসে। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হতেই ভাঙে এই জুটি। ডেভিড ওয়ার্নারকে উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোর ক্যাচে পরিণত করে শুরুটা করেন ওকস। ১০৬ বলে ৬০ রান করেন ওয়ার্নার। পরের ওভারে ফিরে আরেক অপরাজিত ব্যাটার উসমান খাজাকেও ফেরান এই পেসার। তাকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। ১৪৫ বলে খাজা খেলেন ৭২ রানের ইনিংস।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া অজিদের হাল ধরেন মার্নাস লাবুশেন এবং স্টিভ স্মিথ। লাবুশেন গোটা সিরিজের মতো শেষ ম্যাচের শেষ ইনিংসেও ব্যর্থ। ব্যক্তিগত ১৩ রানে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন জ্যাক ক্রলির হাতে। এরপর ট্রাভিস হেডকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন স্মিথ। তৃতীয় উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাতে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল অজিরা।
তবে এরপরেই ওভাল টেস্টে হানা দেয় বৃষ্টি। খেলা বেশকিছু সময় বন্ধ থাকার পর যখন মাঠে গড়াল তখন কেবল ইংলিশদের দাপট। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে হেডকে স্লিপে রুটের ক্যাচে পরিণত করে ভাঙেন এ জুটি। আর এ জুটি ভেঙেই তেতে ওঠে দলটি। পরের ওভারে স্মিথকেও তুলে নেয় তারা। অফস্টাম্পের বাইরে রাখা বলে ডিফেন্স করতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো ক্রলির হাতে। ৯৪ বলে ৫৪ রান করেন স্মিথ। এরপর ১ রানের ব্যবধানে আরও দুটি উইকেট তুলে নেয় ইংলিশরা। মিচেল মার্শকে (৬) উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টোর ক্যাচে পরিণত করেন মঈন। আর মিচেল স্টার্ককে খালি হাতে বিদায় করেন ওকস। এরপর উইকেটে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। তার ব্যাটেই প্রথম টেস্টে অসাধারণ এক জয় পেয়েছিল অজিরা। ব্যক্তিগত ৯ রানে তাকে স্টোকসের ক্যাচে পরিণত করেন মঈন।
এরপর টড মার্ফিকে অজিদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন আলেক্স ক্যারি। ৩৮ রানের জুটিও গড়েন তারা। কিন্তু এরপরও ব্রডের জাদু। এ দুই ব্যাটারকেই উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টোর ক্যাচে পরিণত করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ব্রড। ২৮ রান করেন ক্যারি। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৫০ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন ওকস। ৭৬ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট পান মঈন। ব্রডের শিকার দুইটি।
সারাবাংলা/এসএস