Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়ানডে ক্রিকেটের মহারণ শুরু আজ

স্পোর্টস ডেস্ক
৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৫

অবসান ঘটেছে সব জল্পনা-কল্পনার। অপেক্ষার পালাও শেষ। ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর পর্দা উঠছে অবশেষে। গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার-আপ নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়েই ভারতে মাঠে গড়াচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম এই আসর।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। ভারতের ১০টি ভেন্যুতে প্রায় দেড় মাস ধরে চলবে ওয়ানডে ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ। ১৯ নভেম্বর ফাইনাল দিয়ে নামবে পর্দা।

বিজ্ঞাপন

১০ দল, লিগ পদ্ধতিতে খেলা

ওয়ানডে বিশ্বকাপের এবারের আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১০টি দল। ২০২১ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ওয়ানডে সুপার লিগের শীর্ষ আটটি দল সরাসরি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে। পরে বাছাই পর্ব খেলে মূল আসরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে আরও আটটি দল।

আরও পড়ুন- সাকিবকে পাকিস্তানের অধিনায়ক বানিয়ে দিল আইসিসি!

এবারের আসরের দলগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডস। এদের মধ্যে শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসকে বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে হয়েছে মূল বিশ্বকাপে। বাছাই পর্বের বাধা উৎরাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের মতো দল। ফলে এবারই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া হতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।

এদিকে বিশ্বকাপের দলগুলো খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ১০টি দলের প্রতিটি দলই একে অন্যের মুখোমুখি হবে গ্রুপ পর্বে। সে হিসাবে একেকটি দলকে বাধ্যতামূলকভাবে খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ। গ্রুপ পর্ব শেষ করে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারটি দল উত্তীর্ণ হবে সেমিফাইনালে। দুই সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ দল মুখোমুখি হবে ১৯ নভেম্বরের ফাইনালে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপের আগে টালমাটাল টাইগার শিবির

এবারের বিশ্বকাপ ঘিরে টাইগারভক্তরা বেশ আশায় বুক বাঁধছিলেন। সুপার লিগে ভালো করায় সেই আশার পালে হাওয়া লাগে। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে এসে সেই হাওয়া পরিণত হয় ঝোড়ো হাওয়ায়। ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল অবসর নেন, একদিনের মাথায় অবসর ভেঙে ফিরেও আসেন। তবে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেন। তামিম দলে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তার জায়গা হয়নি।

তামিম ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়ার পর লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা সময়ে সময়ে অধিনায়কত্ব করেছে। তবে বিশ্বকাপের মতো গ্র্যান্ড আসর বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাঁধেই দেওয়া হয় এর গুরুভার। এ নিয়ে একসময় ধারণা ছড়িয়ে পড়ে, সাকিব আর তামিমের দ্বন্দ্বের জের ধরেই হয়তো তামিমের জায়গা হয়নি বিশ্বকাপে। এ ঘটনা নিয়ে তামিমের ভিডিওবার্তার পর টিভি চ্যানেলে সাকিবের দুই পর্বের ইন্টারভিউ টানা কয়েকদিন ধরেই ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি।

আরও পড়ুন- র‌্যাবিটহোলে ৬০ টাকায় দেখা যাবে পুরো বিশ্বকাপ

এদিকে তামিমের জায়গা না হলেও আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জায়গা পেয়েছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। এর বাইরে অভিজ্ঞদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত রয়েছেন স্কোয়াডে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত হয়ে ওঠা তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহেদিও রয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন নবাগত তানজিদ হাসান তামিম আর তানজিম হাসান সাকিব।

সুপার লিগে ভালো করলেও সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের পারফরম্যান্স খুব একটা আশা জাগানিয়া নয়। সর্বশেষ এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচটি ভারতের সঙ্গে জিতলেও গোটা টুর্নামেন্ট কেটেছে বাজে। এরপর দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তিন ম্যাচের একটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও বাকি দুটিতে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে।

বিশেষ করে ব্যাটিং ইউনিটের ভালো করার নজির খুব কমই দেখা গেছে গত এক বছরে। ওপেনিং জুটি ভুগছে বরাবরই। টপ-মিডল অর্ডারে শান্তই কেবল ধারাবাহিকভাবে রান পেয়েছেন। সাকিব, মুশফিক থেকে শুরু করে তরুণ তাওহীদ হৃদয়ও খুব ধারাবাহিক ছিলেন না। লোয়ার অর্ডার আর টেলএন্ডারদের পারফরম্যান্সও তথৈবচ। এর মধ্যে অবশ্য আশা জাগানিয়া ছিলেন মিরাজ, যিনি ৭/৮ নম্বর থেকে শুরু করে ওপেনিংয়ে নেমেও ভালো করেছেন।

আরও পড়ুন-  সাকিবদের জন্য তামিমের শুভকামনা

টাইগার দলের বোলিং ইউনিট অবশ্য যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করেছে। বিশেষ করে পেস ইউনিটের তেজ বেড়েছে বহু গুণ। ইনজুরির কারণে এবাদত হোসেনকে মিস করলেও স্কোয়াডে রয়েছেন পাঁচ পেসার। মুস্তাফিজ আর তাসকিনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যোগ হয়েছে শরিফুল আর হাসানের তারুণ্যদীপ্ত গতি আর আগ্রাসন। একদম আনকোরা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তানজিম সাকিব। পরীক্ষিত স্পিন ইউনিট তো রয়েছেই।

ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সাবেক ক্রিকেটাররা বলছেন, বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে ব্যাট-বল দুই ইউনিটকেই একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে। গত বছরখানেক ধরে দলের যে পারফরম্যান্স, তা অব্যাহত থাকলে এবারের বিশ্বকাপেও হতাশ হয়ে ফিরতে হবে। ভারতের ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া তো বলেই দিয়েছেন, বাংলাদেশ দুয়েকটি অঘটন ঘটানোর সামর্থ্য রাখলেও সেমিফাইনালে যাওয়ার মতো দল নয়। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে রাখেননি অন্য কেউও।

চ্যাম্পিয়নের সন্ধানে

ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ছয়টি দল। প্রথম দুটি বিশ্বকাপই যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরে। এরপর তৃতীয় বিশ্বকাপের পাশাপাশি ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান আর ১৯৯৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলংকা।

এর বাইরে ১৯৮৭ বিশ্বকাপ, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে ২০০৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টানা তিন আসর এবং এক আসর বিরতি দিয়ে ফের ২০১৫ সালের বিশ্বকাপসহ মোট পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। আর গত আসরের ফাইনাল জিতে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এই খেলারই জনক ইংল্যান্ড।

২০১৯ সালের ফাইনাল ম্যাচটি নানা দিক থেকেই আলাদা। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মহাকাব্যিক সেই ফাইনাল ম্যাচে ৫০ ওভারের খেলা হয় টাই। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। তবে মীসাংসা হয়নি সেখানেও। সুপার ওভারেও দুই দলের রান হয় সমান। শেষ পর্যন্ত বাইলজ অনুযায়ী বাউন্ডারি হাঁকানোর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন- চোটে পড়ে উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে শঙ্কায় স্টোকস

এবারও বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার ইংল্যান্ড। গত আসরের রানার-আপ নিউজিল্যান্ড টিমও ব্যাটিং-বোলিংয়ে পিছিয়ে নেই। স্বাগতিক ভারতের কথা বলাই বাহুল্য। সাবেক ক্রিকেটারদের বড় একটি অংশই ভারতের হাতে এবার শিরোপা দেখছেন। শিরোপার দৌড়ে শক্তভাবে রয়েছে অস্ট্রেলিায়াও। চিরকালের আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানকেও কেউ হেলাফেলা করছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও কেউ কেউ সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে দেখছেন। বাকি দলগুলোকে শিরোপার দৌড়ে খুব বেশি একটা দেখছেন না ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।

১৯৮৩ সালের পর প্রথম এক দেশে বিশ্বকাপ

১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম এককভাবে কোনো দেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজক। ১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে টানা তিন আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপের একক আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। এরপর ১৯৮৭ সালে চলে ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন হয় ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। ১৯৯৬ সালে আবারও বিশ্বকাপ ফেরে উপমহাদেশে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল শ্রীলংকা।

১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ফেরে ইউরোপে। অবশ্য সেবার ইংলিশরা এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে আয়োজকের তালিকায় ছিল স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া— এই তিন দেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের সপ্তম আসর।

আরও পড়ুন- বিশ্বকাপের টিকিট না চাইতে অনুরোধ কোহলি ও অনুস্কার

বিশ্বকাপের ২০০৭ সালের অষ্টম আসর চলে যায় উত্তর আমেরিকায়— ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। ২০১১ সালে আবারও ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফেরে উপমহাদেশে। এবার ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশও। তবে শেষ মুহূর্তে জঙ্গি হামলার কারণে আয়োজক দেশ থেকে পাকিস্তান বাদ পড়লে ওই আসরের আয়োজক ছিল তিন দেশ— ভারত, শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশ।

উপমহাদেশ ঘুরে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের সর্বশেষ দ্বাদশ আসর বসে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে। এবারে ভারত একাই আয়োজন করেছে ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ।

প্রসঙ্গ ভারত-পাকিস্তান বিরোধ

১৯৮৩ সালের পর এবারই প্রথম এককভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছে ভারত। এই ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে পাকিস্তান জানায়, ভারত বিশ্বকাপে খেলতে যাবে না তারা!

পাকিস্তানের ওই বক্তব্য অবশ্য নিঃশর্ত ছিল না। একটি শর্তও তারা জুড়ে দিয়েছিল তারা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানায়, ভারত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে গেলে তবেই তারা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে।

আরও পড়ুন- শতভাগ ফিট সাকিব, খেলবেন আফগান ম্যাচে— শান্ত

দফায় দফায় বৈঠক করে শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যায়নি ভারত। তবে ভারতে বিশ্বকাপ ঠিকই অংশ নিচ্ছে পাকিস্তান।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বিশ্বকাপ চলাকালে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে অনেক ম্যাচেই। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচও বেশ কয়েকটি বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হয়েছে, কয়েকটি ম্যাচ ভেসেও গেছে। বৃষ্টি-বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ১০ দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জমে উঠবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর— প্রত্যাশা এমনটিই।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এসএস

উদ্বোধনী ম্যাচ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ বিশ্বকাপের ১৩তম আসর ভারত বিশ্বকাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর