Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৩ বারের দেশসেরা এখন বেলম্যান!


১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:৪৭ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ২২:১৫

জাহিদ হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

১৯৮৬ থেকে ২০০৯। প্রায় দুই যুগ দেশসেরার আসনে ছিলেন তিনি। হাতে র‌্যাকেট ঘুরত তরবারির ক্ষীপ্রতায়। দেশের পতাকা হাতে অংশ নিয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক আয়োজনেও। চ্যাম্পিয়নের ট্রফি, আর শত অর্জনের ক্রেস্ট এসে ভরে গেছে ঘরের আলমারি, দেয়ালে টাঙানো হতো সেই সব অর্জনের ছবি। এই মানুষটিরতো হওয়ার কথা ছিল সবার চেনা। তাকে নিয়ে থাকার কথা অনেক আলোচনা। তাও যদি না থাকে অন্তত একটি সুন্দর জীবনতো তার প্রাপ্য ছিলোই।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কী হয়েছে ভোলালাল চৌহানের জীবনে। এক সময় স্কোয়াশের কোট দাপানো মানুষটি আজ নিভু নিভু প্রদীপের মতো। স্বপ্নের আকাশে বিশ্বসেরা হওয়ার অদম্য ইচ্ছাটা আজ বিপর্যস্ত দারিদ্র্যের কাছে! দেশসেরার মুকুট পরা মানুষটি এখন হোটেলের বেলম্যান। রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আসা অতিথিদের ব্যাগেজ পৌঁছে কিংবা নামিয়ে দেওয়াই তার কাজ।

কাজ তো কাজই। সেটা যে পর্যায়ের হোক সম্মানের। তবে দেশের স্কোয়াশ সম্রাটের এমন করুণ পরিণতি হয়তো কোনও খেলাপ্রেমীই দেখতে চাইবেন না।

সাক্ষাতেই মুচকি হেসে জানান দিলেন জীবনের এই ব্যবস্থাকে তিনি মেনেই নিয়েছেন। কথায় কথায় ফুঁটে ওঠে তার সারল্য। মিশুক প্রকৃতির। তবে তার ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি থেকে বোঝার উপার নেই একসময় দেশের অলিখিত স্কোয়াশ সম্রাট ছিলেন তিনি।

হোটেলেই প্রথম দেখা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। খানিক পর বাংলামোটরে তার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে গেলেন। ভেতর থেকে নিয়ে এলেন একটি ফাইল। পাতা উল্টে দেখা গেল খবরের পাতাভরে ছিল তার সাফল্যগাঁথা। তার কাটিংগুলো সযতনে তুলে রেখেছেন। তাতে ভোলালালের ছবি ও খবর। স্মৃতিকাতর মানুষটি কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন।

বিজ্ঞাপন

অতীতের সুখস্মৃতির সঙ্গে বর্তমানটি বেমানান বলেই এই কাতরতা? সে প্রশ্নে শোনালেন স্কোয়াশে দেশসেরা হয়ে ওঠার গল্পটি।

বললেন, ‘তখন আমার বয়স ১৩ কি ১৪ হবে, লেখাপড়া হচ্ছে না দেখে পিসতুতো দাদা জ্যোতিষ লাল চৌহান ১৯৭৯ সালে আমাকে ঢাকা ক্লাবে টেনিসের বল-বয়ের চাকরিতে ঢুকিয়ে দিলেন। তখন স্কোয়াশ খেলায় মার্কার হিসেবে কাজ করতে বাদল চৌহান, তিনি ’৮৪ সালে অন্য জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে গেলে আমাকে স্কোয়াশে চলে যেতে হয়। তারপর খেলা দেখতে দেখতে এবং ক্লাবের সদস্যদের খেলার ফাঁকে ফাঁকে খেলতে খেলতে নিজেও শিখে নিলাম।’

এমনই শিখে নিলেন যে, তার এক বছর পরই জুনিয়র স্কোয়াশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেন। তারপরের বছরই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ছোট্ট বয়সেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন। সেই থেকে শুরু বিজয় যাত্রা। এরপর আর তাকে থামতে হয়নি। থেমেছেন একুশ শতাব্দীর ২০০৯ সালে। ততক্ষণে সেই তরুণের রক্তে বয়স্কের ছাপ পড়ে গেছে। বয়স যে দাঁড়িয়েছিল ৪১-এ!

তবে এই খেলার সুবাদেই হোটেলে বেলম্যানের কাজটি মিলেছিল তার। দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় কোনরকম বেঁচে থাকতেই কাজটি করতে হচ্ছে তাকে। তবে আগে কোচিং করানোর ইচ্ছা থাকলেও অনিশ্চিত জীবনে নিজের পরিবারকে ঠেলে দিতে চান না ভাবলেশ এই মানুষটি।

চাকরি হারানোর শঙ্কায় বলতে চাননি অবহেলায় আর অযত্নে ডুবতে থাকা স্কোয়াশ ফেডারেশন নিয়েও। তারপরেও আশা ছাড়েননি তিনি। মনে মনে ভাবেন, একদিন নতুন প্রজন্ম এসে অস্ত যাওয়া সূর্যকে টেনে তুলবে। ভাবেন, একসময় ঠিকই ফিরবে, আলোর ছটায় উজ্জ্বল হবে স্কোয়াশ।

সারাবাংলা/জেএইচ/এমআরপি/১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর