ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লজ্জার হার
২৮ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০৫
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ! বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হেরে আজ নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। দলীয় শক্তি, ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য বা সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সব জায়গাতেই যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও আজ হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে বোলিং করে নেদারল্যান্ডসকে ২২৯ রানে আটকে রেখেছিল বোলিং ডিপার্টমেন্ট। যদিও ৬৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলা নেদারল্যান্ডসকে আরও আগেই আটকে ফেলা উচিত ছিল। পরে ব্যাটিংটা হলো রীতিমতো ভূতুড়ে!
আগের ম্যাচে তবু সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আজ পুরো ব্যাটিং লাইনআপ ব্যর্থ। নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। যাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৭ রানের লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশের জন্য সমীকরণটা মোটেও কঠিন ছিল না। ২২৯ রান আধুনিক ক্রিকেটে তেমন কিছুই না। এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ যে দেড়শর আগেই গুটিয়ে যাবে সেটা কজনই বা ভেবেছিলেন! বারবার বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে সেই অভাবনীয় কাজটাই করেছেন বাংলাদেশি ব্যাটাররা।
দলীয় দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (১৫) ও লিটন দাস (৩) ফিরেছেন। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত (৯) আজও ব্যর্থ। তারপর মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান (৫), মুশফিকুর রহিম (১) ও মেহেদি হাসান মিরাজও (৩৫) ফিরলে ৭০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের জন্য দিনটা যে লজ্জার সেটা তখনই অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায়। এরপর শেখ মাহেদিকে নিয়ে দলকে টানার চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ আজ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তার ভুল কলেই রান আউট হয়েছেন ৩৮ বলে ১৭ রান করা শেখ মাহেদি। পরে মাহমুদউল্লাহও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন ৪১ বলে ২০ রান করে।
এরপরও বাংলাদেশ যে দেড়শর কাছাকাছি গেল মূলত দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিরোধে। নবম উইকেটে ৫৭ বল খেলে ২৯ রান তোলেন দুজন। এটাই আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি! মোস্তাফিজ ৩৫ বলে দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান করে আউট হয়েছেন। তাসকিন করেছেন ১১ রান। মেহেদি হাসান মিরাজের ৩৫ রানই আজ বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে পল ভ্যান ম্যাকেরেন ২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন।
এর আগে বোলিংটা ভালো করেছে বাংলাদেশ। টসে জিতে ইডেনে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডাচ অধিনায়ক। দলের ওপেনাররা যদিও এটাকে কাজে লাগাতে পারেনি। মাত্র ৩ রানেই ওপেনার বিক্রমাজিতকে হারায় তারা। প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। পরের ওভারেই আঘাত হানেন শরিফুল, ফেরান ম্যাক্স ওদুদকে। এরপর ৬৩ রানের মাথায় বারেসিকে ফেরান মুস্তাফিজ। ৪১ রান করে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ঠিক তার পরের ওভারেই ফেরেন অন্য প্রান্তে থাকা অ্যাকারম্যান, তার রান ছিল ১৫ রান।
৬৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ডাচরা। এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ ব্যাটিং করা অধিনায়ক এডওয়ার্ডস ও ডি লিড। দুই জন যোগ করেন ৪৪ রান। বোলিংয়ে ফিরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ডি লিডকে ফেরান তাসকিন, ১৭ রান করে ফেরেন ডি লিড।
ডি লিড ফিরলেও ক্রিজে টিকে ছিলে এডওয়ার্ডস। সাইব্র্যান্ডকে গিয়ে গড়ে তোলেন আরেকটি দারুণ জুটি। এর মাঝে নিজের হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন ডাচ অধিনায়ক। এই জুটি দলকে ভালো একটি সংগ্রহ এনে দিবে বলেই মনে হচ্ছিল।
৪৫ তম ওভারে এডওয়ার্ডকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মুস্তাফিজ। ৮৯ বলে ৬৮ রানের দারুণ এক লড়াকু ইনিংস শেষে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। পরের ওভারেই মেহেদির বলে আউট হয়ে ফেরেন তার সঙ্গী সাইব্র্যান্ডও। আউট হওয়ার সময় সাইব্র্যন্ডের রান ছিল ৬১ বলে ৩৫। ভ্যান বিকের শেষ ওভারের ১৬ বলে ২৩ রানের ঝড়ো ক্যামিওর কল্যাণে ২২৯ রানে শেষ হয় নেদারল্যান্ডসের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট পেয়েছেন মুস্তাফিজ, মেহেদী, শরিফুল ও তাসকিন। সাকিব তুলে নিয়েছেন একটি উইকেট।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/এসএইচএস