চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অনিশ্চিত বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:০৬
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে পাকিস্তানে বসছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চতুর্থ আসর। টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের অংশগ্রহণও তাই নিশ্চিত। বাকি সাতটি দল কীভাবে নির্বাচিত হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা ছিল না। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষের দিকে এসে জানা গেল সেই যোগ্যতা— পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে শীর্ষ সাত অবস্থানে যারা থাকবে, তাদের নিয়েই হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এখন পর্যন্ত যে পয়েন্ট টেবিল, তাতে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের জন্য এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণই মনে হচ্ছে।
আট বছরের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সূচি চূড়ান্ত করার সময়ই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্থা আইসিটি জানিয়েছিল ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কথা। জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালে আইসিসির এক বোর্ড মিটিংয়েই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি এসে স্পষ্ট হলো গত দুয়েক দিনে।
আইসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলমান বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব শেষে নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেওয়া দলগুলোর তালিকা। এই পর্বে পাকিস্তান যদি পয়েন্ট টেবিবলের শীর্ষ আটটি দলের মধ্যে থাকে, তাহলে সেই আটটি দলই সুযোগ পাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
অন্যদিকে পাকিস্তান যদি শীর্ষ আট দলের মধ্যে স্থান না-ও পায়, তবু স্বাগতিক হিসেবে তাদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে কোনো বাধা নেই। সেক্ষেত্রে বাকি সাতটি দল হবে এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পয়েন্ট টেবিলে থাকা শীর্ষ সাতটি দল।
গতকাল রোববারের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের পর ছয় ম্যাচের সবগুলোতে জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ভারত। শীর্ষ চার দলের বাকি তিনটি দল হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এর পরের চারটি দল, অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে শ্রীলংকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস। তালিকার তলানিতে নবম ও দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড।
এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে যে পারফরম্যান্স, তাতে তলানির এই দুটি দল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের জন্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোয়ালিফাই করার আশা দুরাশায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তার মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থা বেশি নাজুক। কারণ বাকি তিন ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তান। ইংল্যান্ড টুর্নামেন্টজুড়ে খারাপ খেললেও অন্তত নেদারল্যান্ডস মাচে জয়ের পাল্লা হয়তো তাদের দিকে ভারী থাকতে পারে। অন্তত সেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ালে পরের ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গেও হয়তো লড়াই করতে পারবে ইংল্যান্ড। তাতে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট বাড়তেই পারে।
অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড ছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তান ও ভারত। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস যদি ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায়, তাদের পয়েন্ট বাড়ানোটা কঠিন। ভারত যেভাবে খেলছে, তাতে সেই ম্যাচে তাদের সুযোগ নেই বললেই চলে। আফগানিস্তানের সঙ্গে জিতলেই তখন কেবল তাদের পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বাকি তিন ম্যাচের অন্তত দুটি জিততেই হবে। তারপর আসবে রানরেটের হিসাব।
এদিকে বাংলাদেশের পরের তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশ এবং বাকিরা যে মানের ক্রিকেট খেলছে, সেই তুলনা করলে এই তিন ম্যাচের কোনোটিতেই বাংলাদেশের পক্ষে জয় ছিনিয়ে আনাটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে। তারপরও যদি টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে হয়তো রানরেটের হিসাবে ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা বলছে, সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশা এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড দুই দলের জন্যই কার্যত শেষ। এখন বাকি তিনটি ম্যাচ নিয়ে তাদের ভাবনায় যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, সেটি দুই দলের অধিনায়কের কথাতেই স্পষ্ট। টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান এবং ইংলিশ ক্যাপ্টেন জস বাটলার দুজনেই বলেছেন, সেমির আশা শেষ হলেও এখনো খেলা বাকি।
জস বাটলার বলেন, আমি জানি এটার (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) কথা। আর সে কারণেই আমরা হারলেও আমাদের খেলার জন্য অনেক কিছুই এখনো অবশিষ্ট আছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে (চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার)।
টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দিকেই আপাতত মনোযোগ রাখতে চাইছেন। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সেমিফাইনালে খেলার জন্য আর সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে আমরা আরও একটু ভালো খেলতে পারি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রুপ পর্বের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ আটটি দল খেলবে। ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে হলে প্রথম আটটি দলের মধ্যে থাকতে হবে। যে তিনটি ম্যাচ বাকি আছে, সেগুলোতে আমাদের এই বিয়ষটিও মাথায় রাখতে হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের মতো আইসিসির টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর জন্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেই। এখন বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের জন্যও সে পথ বন্ধুর। শেষ তিন ম্যাচে কি বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নিতে পারবে? উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।
সারাবাংলা/টিআর
আইসিসি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল