সারাবাংলা ডেস্ক ।।
‘টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ’ অথবা ‘টসে হেরে ব্যাট করতে নেমেছে টাইগাররা’ ক্রিকেট ম্যাচ শুরুর আগে এমন তথ্য পাঠকদের জানানোটা অনলাইন সাংবাদিকতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টসের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হয় ব্যাটিং-বোলিং কে কখন করবে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে যদি টসই না থাকে! সেই আদিকাল থেকে চলে আসা রীতির ব্যতিক্রম কেন হবে? টস না হলে এর বিকল্প উপায় কি? স্বাগতিক দল যাতে নিজেদের পছন্দমতো বানানো উইকেটের সুবিধা না নিতে পারে? হ্যাঁ, অনেকটা তাই।
টেস্ট ম্যাচে নিজেদের মাটিতে হোম অ্যাটভান্টেজ নিতে নিজেদের মতোই উইকেট বানিয়ে থাকে স্বাগতিক দেশ। হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিতে স্বাগতিকদের এই প্রথা এবার কমে আসতে পারে। ম্যাচের আগে যে টস করা হয়, টেস্টে হয়তো সেটা আর থাকবে না। তাতে, প্রতিপক্ষ দল অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে গিয়ে বিপাকে পড়বে কম। মাঠ ও কন্ডিশন এর কারণে মাঝে মধ্যেই টস গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায় উইকেটের চরিত্রের কারণে টসের জয়-পরাজয়ই খেলার ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয়।
টেস্টে টস থাকবে কি না, তা নিয়ে মুম্বাইয়ে চলতি মাসের শেষ দিকে আলোচনায় বসবে আইসিসির ক্রিকেট কমিটি। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে সাদা পোশাকের ম্যাচে টস প্রথা তুলে দেওয়ার। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া দলের ইংল্যান্ড সফর (অ্যাশেজ) থেকে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
টস জিতে অধিনায়ক কী নেন সেটার দিকে নজর থাকে সবার। কিন্তু আইসিসি মনে করে বিষয়টি এখন আর অতটা প্রাসঙ্গিক নয়। ক্রিকেটের সময় বদলেছে। টেস্ট ক্রিকেটের স্বার্থ এখন ক্ষীয়মান। রীতিমতো বৈপ্লবিক প্রস্তাবকে সামনে রেখে স্বাগতিক আর অতিথি দলগুলোর মাঝে বৈষম্য কমাতেই টস করার প্রকৃয়া তুলে দেওয়ার চিন্তা করছে আইসিসি। এর বিকল্পও ভেবে রাখা হয়েছে। স্বাগতিক দেশ তাদের মাটিতে আতিথ্য জানানো দেশের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তার মানে অতিথি দল আগে ব্যাট করতে চাইলে, ব্যাট করবে। ফিল্ডিং নিতে চাইলে ফিল্ডিং করবে।
অ্যাশেজে সফল হলে আগামী বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে টস করার নিয়ম উঠে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফো। মুম্বাইয়ে (২৮ ও ২৯ মে) টস নিয়ে আইসিসির কমিটিতে যে আলোচনা হবে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণী পেয়েছে ক্রিকইনফো। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘টেস্টে এখন স্বাগতিক দলগুলো উইকেট যেভাবে বানায়, তা উদ্বেগজনক। কমিটির একাধিক সদস্য বিশ্বাস করেন, প্রতিটি টেস্টেই টসের সিদ্ধান্ত সহজাতভাবেই সফরকারী দলকে উপহার দেওয়া উচিত; যদিও কমিটিতে এর দ্বিমত পোষণকারীরাও রয়েছেন।’
আইসিসির এই কমিটিতে থাকবেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, দলপতি এবং কোচ অনিল কুম্বলে, সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়, ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, শ্রীলঙ্কান গ্রেট মাহেলা জয়াবর্ধনে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক শন পোলক, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট, আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটেলবোরো, আইসিসির ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালে, টিম মে আর ক্লারে কোনোর।
টস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক তারকা মাইকেল হোল্ডিং এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিংদের মতো তারকারা। তাদের মতে, টস প্রথা তুলে দিলে সেটা ক্রিকেটের ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দেওয়া হবে না। তাতে স্বাগতিক দেশগুলোকে নিজেদের ক্রিকেটারদের সম্ভাব্য শক্তির বিচার করে উইকেট বানাতেও নিরুৎসাহিত করবে। টস তুলে দিলেও খেলাটাতে দুই দলের ভারসাম্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
টস না করার সিদ্ধান্ত এলে এটিতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। খেলার শুরুতে টস নিয়েই মানুষের আগ্রহ থাকে। সবার মাঝেই বাড়তি একটু উত্তেজনা থাকে, কে টস জিতল সেটি নিয়ে। কিন্তু, আইসিসির কমিটির এমন সিদ্ধান্তে টেস্ট থেকে টস উঠে গেলে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা সময়ই বলে দেবে। ক্রিকেটে টস নামক ভাগ্য পরীক্ষার ভাগ্যে কি আছে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সারাবাংলা/এমআরপি