বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরেকটা বড় পরাজয়
৩১ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২৩
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ২০৪ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আধুনিক ক্রিকেটে ওয়ানডেতে এই রান নিয়ে জিততে হলে বোলিংয়ে অতীমানবিয় কিছুই করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং হলো ঠিক তার উল্টোটা। ফখর জামান ও আবদুল্লাহ শফিকি দুই ওপেনারই বড় রান পেয়েছেন। ওপেনিং জুটিতেই ১২৮ রান তুলেছে পাকিস্তান। পরের কাজটা দারুণভাবে শেষ করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
৩২.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়েই জয়ের জন্য ২০৫ রান তুলে ফেলেছে পাকিস্তান। এই হারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সম্ভবনা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো বাংলাদেশের। সাথে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিয়েও বড় শঙ্কা তৈরি হলো। আজ বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচ খেলতে নেমে ষষ্ঠবার হারল বাংলাদেশ।
এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলের নয় নম্বরে বাংলাদেশ। চলতি বিশ্বকাপের সেরা আট দল খেলবে আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তারপর আজকের ম্যাচসহ টানা ছয় ম্যাচ হারল সাকিব আল হাসানের দল। দুদিন আগে হেরেছে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। সবগুলো ম্যাচই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২০৮ রানের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই দাপুটে ব্যাটিং করেছেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। প্রত্যাশামতো রান করতে না পারা ইমাম উল-হকের জায়গায় আজ ওপেনিংয়ে ফখর জামানকে নামিয়েছে পাকিস্তান। পরিবর্তনটা কাজে লেগেছে দারুণভাবে।
তাসকিন আহমেদকে ছক্কা হাঁকিয়ে ঠিক ৫০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ফখর। তার আগের বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন অপর ওপেনার আবদুল্লাহ শফিকিও। মেহেদি হাসান মিরাজকে সুইপ খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৬৯ বলে ৬৮ রান করেছেন আবদুল্লাহ শফিকি। তার ইনিংসে চার ৯টি, ছক্কা ২টি।
কাগজে-কলমে পাকিস্তানের সেমিফাইনালের সম্ভবনা এখনো টিকে আছে। ফলে রান রেট বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত রান তুলতে চেয়েছে পাকিস্তান। তাতে বাংলাদেশ তিনটা উইকেট পেয়েছে।
ফখর জামান এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। সেই মেহেদি হাসান মিরাজকে হাঁকাতে গিয়েই ধরা পড়েছেন সীমানায়। ফেরার আগে ৭৪ বল খেলে ৮১ রান করেছেন ফখর। অভিজ্ঞ ওপেনার চার মেরেছেন ৩টি, আর ছক্কা ৭টি। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় খানিক বাদি বাবর আজমও ৯ রান করে ফিরেছেন মিরাজের বলে।
তবে এরপর আর বিপদ হতে দেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। ২৬ রান করে অপরাজিত থাকা রিজওয়ান ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটা সেরেছেন। মিরাজ ৯ ওভারে ৬০ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট।
এর আগে মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে কোনো মতো দুইশ পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা টাইগারদের। রানের খাতা খোলার আগেই ইনিংসের পঞ্চম বলে ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলেন তানজিদ হাসান। এক ওভার পরে বল হাতে এসে তুলে নিলেন তিনে ব্যাট করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেটও। এতেই বাংলাদেশ মাত্র ৬ রানে হারায় টপ অর্ডারের দুই ব্যাটারকে।
শাহিন শাহ আফ্রিদির হালকা ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারেননি তানজিদ। বল প্যাডে আঘাত করতেই জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। কিছুক্ষণ ভেবে রিভিউ নেন বাঁহাতি ওপেনার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলের পিচিং ও ইমপ্যাক্ট ঠিক থাকলেও হিটিংয়ে ক্ষেত্রে ছিল আম্পায়ার্স কল। ফলে রিভিউ বাঁচলেও ফিরতে হয় তানজিদকে।
তানজিদকে ফিরিতে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন পাকিস্তানি এই পেসার। মাত্র ৫১ ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে ওয়ানডেতে তার চেয়ে দ্রুত উইকেটের সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কোনো বোলার। সাকলাইন মুশতাক একশ উইকেট পূর্ণ করেন ৫৩ ম্যাচ খেলে।
সব মিলিয়ে দ্রুততম একশ উইকেটের রেকর্ড সন্দীপ লামিছানের। গত এপ্রিলে নিজের ৪২তম ম্যাচে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন নেপালি লেগ স্পিনার। পেসারদের মধ্যে আফ্রিদিই দ্রুততম। আগের রেকর্ড মিচেল স্টার্কের, ৫২ ম্যাচে।
তৃতীয় ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন আফ্রিদি।। শরীর থেকে বেশ দূরে থেকে ঘুরিয়ে খেলেছিলেন নাজমুল। শর্ট মিডউইকেটে উসামা মির ডানদিকে ঝুঁকে নিয়েছেন ভালো ক্যাচ। শান্ত ফেরেন ৪ রান করে। চারে ব্যাট হাতে আসেন মুশফিকুর রহিম। তবে দ্রুতই ফিরে যান মুশফিকও। দলীয় ২৩ রানে ৮ বলে ৫ রান করে আউট হন তিনি। এরপর আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
২৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমত ধুঁকছে বাংলাদেশ। দলের হাল তখন ধরেছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার লিটন-মাহমুদউল্লাহ। পাকিস্তানের বোলারদের অনায়াসেই খেলেছেন দুইজন। দুজনে বেশ মারমুখিও হয়েছে সময়ে সময়ে। এতে রানের গতিও বেশ বেশ।
লিটন-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ। এই জুটি যখন আরও বড় হওয়ার আশা জাগাচ্ছিল, ঠিক তখনই বাজে শট খেলে আউট হন লিটন। ৬৪ বলে ৪৫ রান করে ইফতিখারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাকে। লিটন ফিরলেও ৫৮ বলে ফিফটি পূরণ করেন রিয়াদ। ফিফটির পরেই দলীয় ১৩০ রানে ৭০ বলে ৫৬ রান করে সাজঘরে ফিরে যান রিয়াদ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই ফিরে যান তাওহিদ হৃদয়। ৩ বলে ৭ রান করেন তিনি।
শেষ দিকে মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। ৪৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে দলীয় ১৮৫ রানে ৬৪ বলে ৪৩ রান করে আউট হন সাকিব। এরপর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মিরাজ। দলীয় ২০০ রানে ৩০ বলে ২৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। এরপর দ্রুতই আরও দুই উইকেট হারিয়ে ৪৫ ওভার ১ বলে ২০৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/এসএইচএস