বিশ্বকাপে আলো ছড়ালেন যে পাঁচ তরুণ
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৬
বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার পা রেখে স্নায়ুচাপ হয়ত একটু বেশিই কাজ করে তরুণ ক্রিকেটারদের। তবে সেই চাপকে সামলে দারুণ পারফর্ম করে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার ইতিহাস বরাবরই দেখা গিয়েছে তরুণদের মাঝে। এবারের টুর্নামেন্টেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। বেশ কিছু তরুণ তুর্কি আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে। চলুন দেখেন নেওয়া যাক তেমনই কিছু তরুণ ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ যাত্রার গল্প।
রাচিন রবিন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ২৩ বছর বয়সী ওপেনার রাচিন রবিন্দ্র। ভারতের দুই কিংবদন্তি শচীন ও রাহুল দ্রাবিড়ের নামে নামকরণ করা এই অলরাউন্ডারের এটিই প্রথম বড় টুর্নামেন্ট। নিজের নামের প্রতি দারুণ সুবিচার করা রাচিন একদম প্রথম ম্যাচ থেকেই ব্যাটে বলে কিউইদের মূল অস্ত্র।
নিজের প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দলকে বড় জয় এনে দেন রাচিন। সেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও। ৯ ইনিংসে ৭০.৯২ গড়ে রাচিনের রান ৫৬৫, স্ট্রাইক রেট ১০৮.৪৪। দলের টপ অর্ডারের ভরসা হিসেবে প্রায় প্রতি ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডকে দারুণ সূচনা এনে দিচ্ছেন তিনি।
ব্যাটিংয়ের মতো বল হাতেও সফল রাচিন। বাম হাতের দারুণ স্পিন ভারতের কন্ডিশনে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে কিউইদের। ৯ ম্যাচে তিনি তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
দিলশান মাদুশাঙ্কা ( শ্রীলংকা)
বিশ্বকাপে খেলার তেমন কোন সম্ভাবনা ছিল না তার। পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কার কপাল খুলেছে একদম শেষ মুহূর্তে, জায়গা করে নিয়েছেন শ্রীলংকার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। এই সুযোগেই বাজিমাত করেছেন ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসার।
দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা তেমন ভালো কিছু না করতে পারলেও মাদুশাঙ্কা ছিলেন দুর্দান্ত। ৯ ইনিংসে উইকেট পেয়েছেন ২১টি, গড় ২৫। নতুন বলে পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। গ্রুপ পর্ব চলার সময় বারবারই সেরা উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। লংকানরা গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ায় শেষ পর্যন্ত সেরা বোলার হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন, তার চেয়ে এক উইকেট বেশি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা আছেন সবার উপরে।
মুম্বাইতে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে একাই লড়াই করেছেন মাদুশাঙ্কা। ৩ উইকেট পেয়েছেন দুইবার, নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
মার্কো ইয়ানসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
উচ্চতার কারণে অন্য সবার মাঝেই আলাদাভাবে নজর কাড়েন তিনি। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির দীর্ঘদেহী দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার মার্কো ইয়ানসেন মাঠেও তার পারফরম্যান্স দিয়ে সবার নজরে এসেছেন। নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ব্যাটে বলে দারুণ সাড়া জাগিয়ে প্রোটিয়াদের অন্যতম ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন এই ২৩ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
বাঁহাতি এই মিডিয়াম পেস বোলার ৮ ম্যাচে বল করে পেয়েছেন ১৭ উইকেট। পাওয়ারপ্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্যের অন্যতম মূল কারণ তার উইকেট পাওয়া। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া প্রতি ম্যাচেই ২ কিংবা এর বেশি উইকেটের দেখা পেয়েছেন ইয়ানসেন। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
বোলিংয়ের সাথে ব্যাট হাতেও সফল ইয়ানসের। টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের দাপটে খুব একটা সুযোগ পাননি যদিও। তবে যখনই সুযোগ এসেছে তখনই দলের প্রয়োজনে দারুণ ইনিংস খেলেছেন ইয়ানসেন। ৭ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ইয়ানসেনের রান ১৫৭। সেরা ইনিংসটি খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ৪২ বলে ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তিনি।
ইব্রাহিম জাদরান (আফগানিস্তান)
এবারের বিশ্বকাপে দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানের রূপকথার যাত্রা। চার ম্যাচ জিতে সেমির খুব কাছে গিয়েও হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে আফগানরা। আফগানদের এই যাত্রায় অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। ২১ বছর বয়সী জাদরান নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই বাজিমাত করেছেন তিনি।
৯ ম্যাচে জাদরানের মোট রান ৩৭৬, গড় ৪৭। প্রথম আফগান ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের সেরা। নিজের আরেকটি সেরা ইনিংস খেলেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে জাদরান খেলেছেন ৮৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
জেরাল্ড কোয়েটজে (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এবার আলো ছড়িয়েছেন ২৩ বছর বয়সী পেসার জেরার্ড কোয়েটজে। লুঙ্গি এনগিদি, কাগিসো রাবাদাদের ভিড়েও নিজেকে আলাভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী কোয়েটজে খেলেছেন ৭ ম্যাচ। ১৯.৩৮ গড়ে নিয়েছেন ১৮টি উইকেট।
নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা কোয়েটজে শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে কোয়েটযে করেছেন নিজের সেরা বোলিং। ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে একাই ধসিয়ে নিয়েছেন আফগান ব্যাটিং লাইনআপ। কন্ডিশন ও টিম কম্বিনেশনের কারণে দুই ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে তাকে। নাহলে সেরা উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় আরও উপরের দিকেই থাকতেন তিনি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/এফএম/এসএস