নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত
১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৫
আগে ব্যাটিং করে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ারের সেঞ্চুরিতে ৩৯৭ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়েছিল ভারত। পরে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল দারুণ ব্যাটিং করলেও মোহাম্মদ শামির পেস আগুন ছাপিয়ে জিততে পারেনি নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে রোহিত শর্মার ভারত।
৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে গুটিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ভারতের পক্ষে বোলিংয়ে একাই ৭ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। এর আগের রেকর্ডটি ছিল গ্যারি গিলমোরের। ১৯৭৫ সালে ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন গিলমোর।
ভারত এ নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল। ১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিল কপিল দেবের ভারত। ২০০৩ সালে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। ২০১১ সালে ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। এবার রোহিত শর্মার নেতৃত্বে আর একবার ফাইনালে উঠল ভারত।
আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে ফাইনাল খেলতে নামবে রোহিত শর্মার দল। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত টানা দশ ম্যাচ জিতল ভারত। স্বপ্নের শিরোপা থেকে রোহিত শর্মার দল আর মাত্র এক জয় বাকি।
সেমির লড়াইয়ে ভারত বড় জয় পেলেও মাঝখানে বেশ ভালোই চাপে পড়েছিল। মোহাম্মদ শামি শুরুতেই পরপর দুই উইকেট এনে দিলেও পরে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল ১৪৯ বল খেলে ১৮১ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ভড়কে দিয়েছিলেন। তারপর সেই শামিতেই উদ্ধার হয়েছে ভারত। ভারতের অভিজ্ঞ পেসার এই জুটি ভেঙেছেন, পরে টপাটপ উইকেটও নিয়েছেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৩৯৭ রানের সংগ্রহ নিয়ে বোলিং করতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে শুরুতেই বড় ধাক্কা দেন শামি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় ১৫ বলে ১৩ রান করা ডেভন কনওয়েকে ফেরান। তার খানিক পর দিয়েছেন আরও বড় ধাক্কা।
টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাচিন রবীন্দ্রকে ফেরান ব্যক্তিগত ১৩ রানের মাথায়। এরপর একেবারে হিসেব কষে নিউজিল্যান্ডকে টানছিলেন ইনজুরি ফেরত কেন উইলিয়ামন ও ড্যারিল মিচেল। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পরা দলের হয়ে প্রথমে কোন ঝুঁকি নেননি।
তবে সেট হওয়ার পর রান তুলেছেন হিসেব কষে। বিশেষ করে ড্যারিল মিচেলের বিপক্ষে তেমন কিছুই করতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। দুজন যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে ভারত রানের পাহাড় নিয়েও চিন্তায় পরে গিয়েছিল। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৯ বল খেলে ১৮১ রান তোলেন দুজন।
ভারতের দুশ্চিন্তা যখন ধীরে ধীরে বাড়ছিল তখন আবারও শামিকে বোলিংয়ে ডাকেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তারপর কী অসাধারণ ভাবেই না ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামকে উল্লাসে ভাসালেন শামি।
তার লেগ স্ট্যাম্পের বলটি ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু বলটা হালকা টেনে দিয়েছিলেন শামি। উইলিয়ামসনের শট সীমানা পার হয়নি। সীমানায় বল জমা পরে সূর্যকুমার যাদবের হাতে। ৭৩ বলে ৮টি চার ১টি ছয়ে ৬৯ রান করে ফেরেন উইলিয়ামসন। এক বল পর নতুন ব্যাটার টম লাথামকে দুর্দান্ত এক বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শামি।
২ উইকেটে ২২০ নিউজিল্যান্ড মুহূর্তেই ৪ উইকেটে ২২০ হয়ে পড়ে। তারপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে টানছিলেন মিচেল। পঞ্চম উইকেটে ৬১ বলে ৭৫ রান তোলেন দুজন। জাসপ্রিত বুমরাহ ৩৩ বলে ৪১ রান করা ফিলিপসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন। পরে মিচেলকে ফেরান শামি নিজেই। ১১৯ বল খেলে ৯টি চার ৭টি ছয়ে ১৩৪ রান করা মিচেল মোহাম্মদ শামির লেগ সাইটের বল ফ্লিক করতে গিয় টাইমিং করতে পারেননি। ক্যাচ দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজার হাতে।
এরপর আর দাঁড়াতে পারেননি বাকিরা। ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে গুটিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। মোহাম্মদ শামি ৯.৫ ওভারে ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও কূলদ্বীপ যাদব।
এর আগে রানের পাহাড় গড়ে ভারত। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে স্বাগতিকদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা। ৪টি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৪৭ রান করেন রোহিত। অপর ওপেনার শুভমান গিল এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৬৬ বলে ৮০ রান করা গিল ব্যথা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন বলে সেঞ্চুরি পাননি।
বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ার সেই আক্ষেপ আর রাখেননি। দুজনেই সেঞ্চুরি করেছেন। এই সেঞ্চুরির মাধ্যমে শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫০ সেঞ্চুরির মালিক বনেছেন বিরাট কোহলি। ১১৩ বলে ৯টি চার ২টি ছক্কায় ১১৭ রান করেছেন কোহলি।
শ্রেয়ায় আয়ার আউট হয়েছেন ৭০ বলে ৪টি চার ৮টি ছয়ে ১০৫ রান করে। শেষ দিকে ২০ বলে ৪৯ রান করেছেন লোকেশ রাহুল। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ১০ ওভারে ১০০ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/এসএইচএস