Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাসের পাতায় ভারতের তিন বিশ্বকাপ ফাইনাল

স্পোর্টস ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৮

এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র দল হিসেবে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছে ভারত। ঘরের মাটিতে অজেয় ভারত সব প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে উঠে গেছে ফাইনালেও। আগামীকাল আহমেদাবাদের স্বপ্নের ফাইনালে রোহিত শর্মাদের প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের ইতিহাসের চতুর্থ ফাইনাল খেলতে নামবে ভারত। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের ফাইনালে আগে কেমন করেছে তারা।

১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিল দেবের জাদু

বিজ্ঞাপন

টুর্নামেন্টের শুরুতে দুর্বল ভারতকে অনুমেয়ভাবে কেউ গোনাতেই ধরেনি। তবে অনেক চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে কপিল দেবের ভারত। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসের ফাইনালে কাগজে কলমে ও পারফরম্যান্সের হিসেবে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল ক্যারিবিয়রাই।

টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের গতির তোপে বেশিরভাগ ব্যাটারই ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২০ এর উপরে রান পেয়েছেন মাত্র তিন ভারতীয় ব্যাটার। ক্রিস শ্রীকান্ত করেন সর্বোচ্চ ৩৮ রান, মহিন্দর অমরনাথ করেন ২৬ রান, সন্দীপ পাটিল করেন ২৭ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন অ্যান্ডি রবার্টস, দুটি করে উইকেট পান ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং ও ল্যারি গোমেজ। ৬০ ওভারের ম্যাচে ৫৫ তম ওভারেই মাত্র ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস।

১৮৪ রানের লক্ষ্য সহজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতা তখন সময়ের ব্যাপার। তবে তখনও ভারতের রুপকথার গল্পটা বাকি। ৫ রানের মাঝে ওপেনার গ্রিনিজকে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কা দেন সাধু। ভিভ রিচার্ডসকে সাথে নিয়ে বেশ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার হেইনস। ৫০ রানের মাথায় হেইনসকে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান মদন লাল। এর পরেই আসে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ৩৩ রান করে ম্যাচের নায়ক হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া ভিভ রিচার্ডস মদন লালকে উড়িয়ে মারতে যান। পেছনের দিকে দৌড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ভিভকে ফেরান কপিল। এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বিজ্ঞাপন

ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ক্যারিবিয় ব্যাটিং লাইনআপ। জেফ ডুজন কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাইকেল হোল্ডিংকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ১৪০ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে ইতিহাস গড়ে ভারত। এই আউটের পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের ডাগআউটের দিয়ে জয়ীর বেশে দৌড়ে আসার দৃশ্যটা ভারতীয় সমর্থকদের জন্য এখনো আইকনিক মুহূর্ত। ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন মহিন্দর অমরনাথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপা ওঠে ভারতের কপিল দেবের হাতে।

২০০৩ বিশ্বকাপ ও শচীন-সৌরভদের স্বপ্নভঙ্গ

২০ বছর অপেক্ষার পর ২০০৩ বিশ্বকাপে আবারও ফাইনালে ওঠে ভারত। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই শচীন-সৌরভদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভারতকে অন্যতম ফেভারিট মানা হচ্ছিল সেই ফাইনালে। জোহানেসবার্গের সেই ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ও পুরো বিশ্বকাপজুড়ে অপরাজিত থাকা অস্ট্রেলিয়া।

টসে জিতেছিল ভারত, তবে কিছুটা অবাক করে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক সৌরভ। হয়ত ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়া সিদ্ধান্ত ছিল এটিই। ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি গিলক্রিস্ট-হেইডেন গড়েন শতরানের জুটি। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া গিল ক্রিস্টকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত আনেন হরভজন সিং। তিনিই ফেরান আরেক ওপেনার হেইডেনকে, পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার আশায় ভারত।

তবে সেই আশায় গুড়েবালি। অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং ও ডেমিয়েন মারটিনের স্মরণীয় ব্যাটিং ভারতকে আর পাত্তাই দেয়নি। ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত এক সেঞ্চুরি তুলে নেন পন্টিং, মারটিনও ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫০ ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ দাড়ায় ৩৫৯ রান।
৩৬০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই শচীনকে হারায় ভারত। ম্যাকগ্রার বলে শচীন ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন শেহওয়াগ। তবে তাকে যোগ্য সহায়তা দিতে পারেননি কোন ব্যাটারই। মাঝে বৃষ্টি নামায় খেলা পন্ড হওয়ার জোগাড় হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ম্যাকগ্রা, লিদের বোলিং তোপে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় ভারত, ৮৪ রান তুলে একাই লড়ে গেছেন শেহওয়াগ। ভারতকে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।

২০১১ বিশ্বকাপ ও শচীনের স্বপ্নপূরণ

২০১১ বিশ্বকাপটাই ছিল শচীনের শেষ বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারে সব পূর্ণতার মাঝে বিশ্বকাপ না পাওয়াই ছিল একমাত্র আক্ষেপ। সেই আক্ষেপ মেটানোর লক্ষ্যে ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলংকা।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলংকা। শুরুটা তেমন ভালো না হলেও মাহেলা জয়াবর্ধনের দারুণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ২৭৪ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় লংকানরা। ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন জহির খান ও যুবরাজ সিং।

রান তাড়া করতে নেমে শূন্য রানেই ফেরেন শেহওয়াগ। ১৮ রান করে যখন শচীন প্যাভিলিয়নে ফেরেন, মুম্বাইতে তখন পিন পতন নিস্তব্ধতা। ওপেনিং জুটি ফিরলেও ভারতের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলি জুটি। সেঞ্চুরি না পেলেও ৯৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন গম্ভীর।

ভারতকে দ্বিতীয় শিরোপা এনে দেওয়ার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন অধিনায়ক ধোনি। যুবরাজকে নিয়ে তার জুটিই ভারতকে এনে দেয় ঐতিহাসিক জয়। ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। ঐতিহাসিক এক ছক্কা মেরেই শচীনের হাতে সেই অধরা শিরোপা তুলে দেন তিনি, ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ভারত।

য়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এফএম

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর