এক নজরে বিশ্বকাপের ১২ ফাইনাল
১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৪
গ্রুপ পর্ব ও সেমির দীর্ঘ লড়াই শেষে পর্দা নামতে যাচ্ছে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের। আগামীকালের ফাইনালে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ভারতের লক্ষ্য নিজেদের তৃতীয় শিরোপা, অজিদের স্বপ্ন রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপার। ফাইনালের এই মহারণের আগে দেখে নেওয়া যাক আগের বিশ্বকাপ ফাইনালগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
১৯৭৫ বিশ্বকাপ ও ক্লাইভ লয়েডে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্নভঙ্গ
ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা ভালো না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ২৯১ রানের বড় স্কোর দাড় করায় তারা। লয়েডকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন রোহান। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন গ্যারি গিলমোর।
বিশাল লক্ষ্য তারা করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে কখনোই থিতু হতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কেইথ বয়েস, নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়াও ভিভ রিচার্ডসের করা তিনটি রান আউটসহ মোট পাঁচটি রানআউট অজিদের শিরোপা স্বপ্নকে ভেঙ্গে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৭ রানের জয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৭৯ বিশ্বকাপ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টানা দুই
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালেও ওঠে প্রথম চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের প্রতিপক্ষ এবার স্বাগতিক ইংল্যান্ড। টসে জিতে ইংল্যান্ড বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতে বিপাকে পড়লেও ভিভের অনবদ্য ১৩৮ রানের ইনিংস ও কলিস কিংয়ের ৮৬ রানের সুবাদে ২৮৬ রানের বড় লক্ষ্য দাড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
রান তাড়া করতে নেমে দারুণ সূচনা করে ইংল্যান্ড। ১২৯ রানের ওপেনিং জুটির কল্যাণে জয় সহজেই পেয়ে যাবে ইংলিশরা, ধারণা করা হচ্ছিল এমনটাই। তবে জোয়েল গার্নার ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় সব। গার্নারের ৫ উইকেট ও মাইকেল হোল্ডিংয়ের ৩ উইকেটের সুবাদে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৬৫ রানেই ১০ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ৯২ রানের সহজ জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন ক্লাইভ।
১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিল দেবের জাদু
টুর্নামেন্টের শুরুতে দুর্বল ভারতকে অনুমেয়ভাবে কেউ গোনাতেই ধরেনি। তবে অনেক চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে কপিল দেবের ভারত। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসের ফাইনালে কাগজে কলমে ও পারফরম্যান্সের হিসেবে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল ক্যারিবিয়রাই। টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের গতির তোপে বেশিরভাগ ব্যাটারই ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২০ এর উপরে রান পেয়েছেন মাত্র তিন ভারতীয় ব্যাটার। ক্রিস শ্রীকান্ত করেন সর্বোচ্চ ৩৮ রান, মহিন্দর অমরনাথ করেন ২৬ রান, সন্দীপ পাটিল করেন ২৭ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন অ্যান্ডি রবার্টস, দুটি করে উইকেট পান ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং ও ল্যারি গোমেজ। ৬০ ওভারের ম্যাচে ৫৫ তম ওভারেই মাত্র ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস।
১৮৪ রানের লক্ষ্য সহজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতা তখন সময়ের ব্যাপার। তবে তখনও ভারতের রুপকথার গল্পটা বাকি। ৫ রানের মাঝে ওপেনার গ্রিনিজকে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কা দেন সাধু। ভিভ রিচার্ডসকে সাথে নিয়ে বেশ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার হেইনস। ৫০ রানের মাথায় হেইনসকে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান মদন লাল। এর পরেই আসে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ৩৩ রান করে ম্যাচের নায়ক হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া ভিভ রিচার্ডস মদন লালকে উড়িয়ে মারতে যান। পেছনের দিকে দৌড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ভিভকে ফেরান কপিল। এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ক্যারিবিয় ব্যাটিং লাইনআপ। জেফ ডুজন কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাইকেল হোল্ডিংকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ১৪০ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে ইতিহাস গড়ে ভারত। এই আউটের পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের ডাগআউটের দিয়ে জয়ীর বেশে দৌড়ে আসার দৃশ্যটা ভারতীয় সমর্থকদের জন্য এখনো আইকনিক মুহূর্ত। ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন মহিন্দর অমরনাথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপা ওঠে ভারতের কপিল দেবের হাতে।
১৯৮৭ বিশ্বকাপ ও অজিদের প্রথমের স্বাদ
ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথমবার আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ফাইনাল। ভারতের ইডেন গার্ডেনসের সেই ফাইনালে মুখোমুখি ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ডেভিড বুনের ৭৫ ও মাইক ভেলেটার ৪৫ রানের সুবাদে ২৫৩ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় অজিরা। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন হেমিংস।
রান তাড়া করতে নেমে শূন্য রানে ওপেনার টিম রবিনসনকে হারালেও গ্রাহাম গুচ- বিল অ্যাথির জুটি ভালোভাবেই জয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিল ইংলিশদের। এরপর অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংয়ের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছিল ইংলিশদের।
ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় গ্যাটিংয়ের সেই রিভার্স সুইপ। অ্যালান বোর্ডারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন গ্যাটিং। এরপরই ইংলিশদের চেপে ধরে অজিরা। শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ৭ রানের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপার দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯২ বিশ্বকাপ ও ইমরান খানের বিশ্বজয়
প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। মেলবোর্নের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল দুইবারের রানার্সআপ ইংল্যান্ড। টসে জিতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামে। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও অধিনায়ক ইমরান খানের দৃঢ়তায় ও জাভেদ মিয়াদাদ-ইনজামামের সহযোগিতায় ২৪৯ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় পাকিস্তান। ইমরান করেন ৭২ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট নেন ড্যারেক প্রিঙ্গেল।
রান তাড়া করতে নেমে ওয়াসিম আকরামের সুইংয়ে কুপুকাত ইংলিশ ব্যাটাররা। সাথে মুশতাক আহেমেদের স্পিনে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। নেইল ফেইরব্রাদার একা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন, তবে তেমন কোন সঙ্গ পাননি। শেষ পর্যন্ত ২২৭ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ইতিহাস গড়ে ২২ রানের জয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন ইমরান খান।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ ও ডি সিলভার বীরত্বে পরাস্ত অজিরা
উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপেও ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। লাহোরের ফাইনালে এবার তাদের প্রতিপক্ষ চমক দেখিয়ে ফাইনালে ওঠা শ্রীলংকা। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় লংকানরা। অরবিন্দ ডি সিলভার ঘূর্ণিজাদুতে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে অজিরা। স্রোতের বিপরীতে ছিলেন শুধু ওপেনার মার্ক টেইলর, তিনি করেন ৭৪ রান। ডি সিল্ভা নিয়েছেন ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাড়ায় ২৪১ রান।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও সেই ডি সিল্ভাই হাল ধরেন লংকানদের। অজিদের হতাশায় ডুবিয়ে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ১০৭ রানের এই ইনিংসের সুবাদেই চার ওভার বাকি থাকতেই জয় পায় শ্রীলংকা। অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম শিরোপার দেখা পায় শ্রীলংকা, হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার ‘অজেয়’ হওয়ার সূচনা
১৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় ইংল্যান্ডে। লর্ডসের ফাইনালে একবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল অজিদের। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, এটাই হয়ত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছ। অজি বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি কোন পাকিস্তান ব্যাটার। শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিজাদুতে মাত্র ১৩২ রানেই থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ওয়ার্ন নিয়েছেন ৪টি উইকেট।
সামান্য লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই অজি ওপেনারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। ৩৬ বলে গিলক্রিস্টের ৫৪ রানের ইনিংসের সুবাদে মাত্র ২০ ওভারের মাঝেই পাকিস্তানের দেওয়া লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ৮ উইকেটের বড় জয় নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পায় অজিরা।
২০০৩ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড তৃতীয় শিরোপা
২০০৩ বিশ্বকাপে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। জোহানেসবার্গের সেই ফাইনালে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল দারুণ ফর্মে থাকা ভারত। টসে জিতেছিল ভারত, তবে কিছুটা অবাক করে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক সৌরভ। হয়ত ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়া সিদ্ধান্ত ছিল এটিই। ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি গিলক্রিস্ট-হেইডেন গড়েন শতরানের জুটি। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া গিল ক্রিস্টকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত আনেন হরভজন সিং। তিনিই ফেরান আরেক ওপেনার হেইডেনকে, পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার আশায় ভারত। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং ও ডেমিয়েন মারটিনের স্মরণীয় ব্যাটিং ভারতকে আর পাত্তাই দেয়নি। ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত এক সেঞ্চুরি তুলে নেন পন্টিং, মারটিনও ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫০ ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ দাড়ায় ৩৫৯ রান।
৩৬০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই শচীনকে হারায় ভারত। ম্যাকগ্রার বলে শচীন ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন শেহওয়াগ। তবে তাকে যোগ্য সহায়তা দিতে পারেননি কোন ব্যাটারই। মাঝে বৃষ্টি নামায় খেলা পন্ড হওয়ার জোগাড় হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ম্যাকগ্রা, লিদের বোলিং তোপে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় ভারত, ৮৪ রান তুলে একাই লড়ে গেছেন শেহওয়াগ। ভারতকে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।
২০০৭ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা
২০০৩ বিশ্বকাপের মতো এবারও অপরাজিত থেকেই ফাইনালে ওঠে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলংকা। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নেন রিকি পন্টিং। ওপেনার গিলক্রিস্টের অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে ম্যাচ অনেকটাই লংকানদের হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে যায় অজিরা। ১৪৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন অজি কিপার। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩৮ ওভারে ২৮১ রান করে অজিরা।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই সুবিধা করতে পারেননি লংকান ব্যাটাররা। জয়াসুরিয়া ও সাঙ্গাকারা কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তবে অজিদের বোলিং ও দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের সামনে হার মানতে বাধ্য হয় শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে ৫৩ রানের জয় নিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ে অজিরা।
২০১১ বিশ্বকাপ ও শচীনের স্বপ্নপূরণ
২০১১ বিশ্বকাপটাই ছিল শচীনের শেষ বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারে সব পূর্ণতার মাঝে বিশ্বকাপ না পাওয়াই ছিল একমাত্র আক্ষেপ। সেই আক্ষেপ মেটানোর লক্ষ্যে ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলংকা। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলংকা। শুরুটা তেমন ভালো না হলেও মাহেলা জয়াবর্ধনের দারুণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ২৭৪ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় লংকানরা। ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন জহির খান ও যুবরাজ সিং।
রান তাড়া করতে নেমে শূন্য রানেই ফেরেন শেহওয়াগ। ১৮ রান করে যখন শচীন প্যাভিলিয়নে ফেরেন, মুম্বাইতে তখন পিন পতন নিস্তব্ধতা। ওপেনিং জুটি ফিরলেও ভারতের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলি জুটি। সেঞ্চুরি না পেলেও ৯৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন গম্ভীর। ভারতকে দ্বিতীয় শিরোপা এনে দেওয়ার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন অধিনায়ক ধোনি। যুবরাজকে নিয়ে তার জুটিই ভারতকে এনে দেয় ঐতিহাসিক জয়। ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। ঐতিহাসিক এক ছক্কা মেরেই শচীনের হাতে সেই অধরা শিরোপা তুলে দেন তিনি, ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ভারত।
২০১৫ বিশ্বকাপ ও অজিদের পাঁচ
ঘরের মাঠে ষষ্ঠবারের মতো ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল প্রথমবার ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কিউইরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। অজি পেসাররা ধসিয়ে দিয়েছেন তাদের টপ ও মিডল অর্ডার। স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই করেছেন গ্র্যান্ট এলিয়ট। তার ৮৩ রানের ইনিংসের সুবাদে ১৮৩ রানের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। জনসন ও ফকনার নেন ৩টি করে উইকেট।
অল্প রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খেলেও সামলে নিয়েছে অজিরা। স্টিভ স্মিথ ও মাইকেল ক্লার্কের দৃঢ়তায় ১৭ ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ক্লার্ক করেন ৭৪, ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেম স্মিথ। এই জয়ে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৯ বিশ্বকাপ ও ইংল্যান্ডের অপেক্ষার অবসান
ক্রিকেটের জনক হলেও বারবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আশা ভঙ্গ হয়েছে ইংল্যান্ডের। ঘরের মাঠে ২০১৯ সালে সেই দুঃখ ঘোচাতে আবার ফাইনালে পৌঁছে যায় মরগানের দল। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা, হেনরি নিকলসই শুধু হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২৪১ রানের সংগ্রহ দাড় করায় কিউইরা। ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট পেয়েছেন ৩টি করে উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে ঘটনাবহুল এক ইনিংসে খেই হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। তবে দলের হাল ধরেন বেন স্টোকস। তার অপরাজিত ৮৪ রানের কল্যাণেই নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছুঁয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হয় টাই।
ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারের ফাইনালে রোমাঞ্চ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সুপার ওভারও দুই দলকে আলাদা করতে পারেনি। শেষ বলে রান নিতে গিয়ে রান আউট হন কিউই ব্যাটার। বাউন্ডারির হিসেবে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। ১২ তম আসরে এসে প্রথম শিরোপা ছুঁয়ে দেখে ইংলিশরা। আবারও ফাইনাল হারার হতাশায় পুড়তে হয় কিউইদের।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/এফএম/এসএস
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল