আহমেদাবাদকে স্তব্ধ করেই ছাড়লেন কামিন্স
২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৩
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। হাইভোল্টেজ ম্যাচে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই উড়তে থাকা অপ্রতিরোধ্য ভারত। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে সেই মহারণ। সেখানে নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় একাদশের সঙ্গে ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’ হিসেবে সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লক্ষাধিক দর্শক। সেই ফাইনালের আগে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স জানালেন, দর্শকসারিতে স্তব্ধ করে দিয়ে ম্যাচ জেতার সন্তুষ্টির সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না!
ফাইনালের আগে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন কামিন্স। সেখানেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন, আহমেদাবাদের লক্ষাধিক দর্শকের সমর্থন থাকবে শুধুই ভারতের পক্ষে। তবে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বলেন, ‘খেলার মাঠে এরকম বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীকে স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখার চেয়ে সন্তুষ্টির আর কিছুই হতে পারে না এবং সেটিই ফাইনালে আমাদের লক্ষ্য।’
কেবল কথায় নয়, আহমেদাবাদের লক্ষাধিক দর্শককে সত্যি সত্যিই স্তব্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে বোলিং নিয়ে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের অসাধারণ যুগলবন্দিতে ভারতকে মাত্র ২৪০ রানে বেঁধে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা আর কোহলি বাদে ভারতের বাকি ৯ ব্যাটার মিলে বাউন্ডারি মারতে পারলেন মাত্র ৫টি। গ্যালারিতে নিরবতা নেমে আসতে থাকে তো তখন থেকেই।
আহমেদাবাদের দেড় লাখ দর্শককে স্তব্ধ করে দিতে চান কামিন্স
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতেই অবশ্য জেগে উঠেছিল সেই দর্শকসারি। দ্বিতীয় ওভারে ডেভিড ওয়ার্নার, পঞ্চম ওভারে মিচেল মার্শ আর সপ্তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রজন্মের সেরা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ যখন প্যাভিলিয়নের পথে, গ্যালারি তখন জয়ের গন্ধে উন্মাতাল। তবে এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ট্রাভিস হেড আর মারনাস লাবুশেনের জুটি ততই পোক্ত হয়েছে। এই দুজনের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিসহ যতই রান হয়েছে, ততই আরও বেশি নিরবতা ভর করতে থেকেছে গ্যালারিতে। অস্ট্রেলিয়া জয় থেকে দুই রান বাকি থাকতে ট্রাভিস হেড যখন আউট হয়ে গেলেন, তখনো গ্যালারিতে নেই তেমন কোনো উচ্ছ্বাস। আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নেমে প্রথম বলেই ২ রান নিয়ে যখন চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করলেন, গ্যালারিতে তখন যেন শোকের নিরবতা— ঠিক কামিন্স যেমনটি বলেছিলেন।
দলগতভাবেই ক্লিনিক্যাল এক পারফরম্যান্সে ভারতকে বড় ব্যবধানেই হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া জিতে নিয়েছে নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। ফাইনালের আগে কামিন্স যেভাবে বলেছিলেন, তার দল সেরা পারফরম্যান্সটি ফাইনালের জন্য তুলে রেখেছে, সেটিরই বাস্তবায়ন ঘটাল অস্ট্রেলিয়া। তবে দর্শকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার যে প্রত্যয়ের কথা কামিন্স বলেছিলেন, সেটির নেতৃত্বও তিনিই দিয়েছেন।
কামিন্স অসাধারণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন ফাইনালে। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দারুন এক খাটো লেন্থের বলে শ্রেয়াসকে বাধ্য করেছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে। তবে দলের ২৯তম ওভারে যখন ফিরলেন, তৃতীয় বলটিই করলেন স্টাম্পের উচ্চতায়। সেটিও ছিল কিছুটা খাটো লেন্থের বল। কোহলি ব্যাটে ঠিকমতো খেলতে পারেননি, ইনসাইড এজ হয়ে বল আছড়ে পড়ে স্টাম্পে।
কোহলির উইকেটই সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের ওপর। কোহলি ব্যাট হাতে যে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচের পর ম্যাচ, তার উইকেটটিই ম্যাচের মোড় অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয় অনেকাংশে। মাত্রই ৫০তম শতক হাঁকিয়ে শচিন টেন্ডুলকারের ৪৯টি শতকের রেকর্ড ভেঙেছেন। ভারতের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় তারকার ওপর তাই ভরসা ছিল বেশিই। তাকেই প্যাভিলিয়নে ফেরালেন অজি ক্যাপ্টেন কামিন্স, দর্শকদের স্তব্ধ করে দেওয়া সবচেয়ে বড় মুহূর্তটিই উপহার দিলেন তিনি।
অথচ রোববারের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত ছিল স্পষ্ট ফেভারিট। তাদের ব্যাটিং-বোলিংয়ে ক্ষুরধার পারফরম্যান্সের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়াকেই বরং কিছুটা ম্লান মনে হচ্ছিল। সেই দলের ক্যাপ্টেনের ফাইনালে লক্ষাধিক দর্শককে স্তব্ধ করে দেওয়ার ‘হুঁশিয়ারি’কে ভারতীয় দর্শকরা বাগাড়ম্বরই মনে করেছিলেন। কিন্তু কামিন্স সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন— বাগাড়ম্বর নয়, ‘সেরা খেলা’ ফাইনালের জন্য জমিয়ে রাখার আত্মবিশ্বাসটিই সংবাদ সম্মেলনে ধারণ করেছিলেন তিনি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।
সারাবাংলা/টিআর/এসএস
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ প্যাট কামিন্স বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া