তামিমের বরিশালকে ১ উইকেটে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে সাকিবের রংপুর
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৬
সহজ সমীকরণের ম্যাচটা পরে নখকামড়ানো উত্তেজনার জন্ম দিল। শেষ দিকে মনে হচ্ছিল, ফরচুন বরিশাল বনাম রংপুর রাইডার্মের মধ্যকার হাইভোল্টেজ ম্যাচটা জিততে পারে যেকোনো দলই। উত্তেজনা শেষে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১ উইকেটের জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স।
তামিম-সাকিবের দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে সাকিবের। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২ রান দরকার ছিল রংপুরের। ক্রিজে শেষ উইকেট জুটি ছিল বলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। সাইফউদ্দিনের চতুর্থ ডেলিভারিটা পয়েন্ট দিয়ে ঠেলে চার আদার করে নিয়ে রংপুরকে ১ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছেন পেসার হাসান মাহমুদ।
এই জয়ে প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত হলো আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করা রংপুরের। অপর দিকে আজ জিতলে বরিশালের প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে যেত। জয়ের প্রত্যাশা পূরণ হলো না বলে পরবর্তী ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বরিশালকে। নিজেদের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে খেলতে হবে বরিশালকে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই দলই ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেছিল উড়ন্ত। কিন্তু শেষ দিকে তালগোল পাকিয়েছে। বরিশালও আগে ব্যাটিং করতে নেমে দুইশ পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১৫১ রানেই।
রংপুরও তেমনই। ১৫১ রানের জবাব দিতে নেমে রংপুরের ওপেনার মুমিনুল হক রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রংপুরকে জয়ের রাস্তা দেখান ব্রেন্ডন কিং ও সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২৩ বলে ৫৩ রান তোলেন দুজন।
তখন মনে হচ্ছিল সহজ জয় পেতে যাচ্ছে রংপুর। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে রংপুরকে দারুণভাবে চেপে ধরে বরিশাল। সাকিব আল হাসান ও ব্রেন্ডন কিং ফিরেছেন এক ওভারের ব্যবধানে। ২২ বলে ৩টি চার ৪টি ছয়ে ৪৫ রানে ফিরেছেন কিং। সাকিব ১৫ বলে ৪টি চার ১টি ছয়ে ২৯ রান করে ফিরেছেন।
মিডল অর্ডারে মাহেদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, টম মরিচরা সুবিধা করতে পারেননি। ফলে বেশ বড় বিপদেই পরেছিল রংপুর। তবে একবার জীবন পেয়ে জেমি নিশামের ১৭ বলে ২৮ রানের ইনিংসটা বরিশালকে শেষের হিসেবটা মিলাতে দেয়নি। ৩ বল হাতে রেখে ১ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে রংপুর।
এর আগে তামিম ইকবাল ও কাইল মায়ার্সের ব্যাটে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা ফরচুন বরিশালকে মাঝের ওভারে তছনছ করে দিয়েছেন রংপুরের পেসার আবু হায়দার রনি। ১২তম ওভারে আক্রমণে এসে সেই ওভারেই মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার ও কাইল মায়ার্সকে ফেরানো আবু হায়দার রনি পরে মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজকেও ফিরিয়েছেন। ম্যাচে সেখানেই পিছিয়ে পরে বরিশাল।
তামিম ইকবালের ব্যাটে বরিশালের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নিজেই শুরুতে ঝড় তুলেছিলেন। আহমেদ শেহজাদকে বসিয়ে বরিশালের দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে একাদশে জায়গা পাওয়া ইংলিশ ক্রিকেটার টম ব্যান্টন চেয়ে চেয়ে শুধু দেখেছেনই।
পেস-স্পিন দুই ধরনের বোলারকেই তুলোধুনু করছিলেন তামিম। ইনিংসটা লম্বা হয়নি। সাকিব আল হাসানের বলে টপঅ্যাজ হয়ে ফেরার আগে ২০ বলে ৩টি চার ২টি ছয়ে ৩৩ রান করেছেন তামিম। কাইল মায়ার্স তিনে নেমে তামিমের বিদায়টা বুঝতেই দেননি!
শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। টম ব্যান্টন আজ রানের জন্য সংগ্রাম করেছেন। দ্রুত রান তুলতে পারছিলেন না। তবে অপরপ্রান্তে কাইল মায়ার্স বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন। ১০তম ওভারে দলীয় রান ১০০ পেরিয়ে যায় বরিশালের। মনে হচ্ছিল সহজেই দুইশ পেরিয়ে যাচ্ছে বরিশাল! কারণ তারপর সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ, সাইফউদ্দিনের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটাররা ব্যাট করতে আসার অপেক্ষা করছিলেন।
কিন্তু কে জানত আবু হায়দার রনি বোলিংয়ে আসতেই সব হিসেব পাল্টে যাবে! রনি নিজের প্রথম বলেই মুশফিকুর রহিমকে ফেরান। সেই ওভারে সৌম্য সরকার ও কাইল মায়ার্সকেও ফেরান তিনি। দাপুটে ব্যাটিং করতে থাকা বরিশালের কোমড় ভেঙে গেছে তাতেই।
লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ বলে তাও হয়তো বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছিলেন বরিশালের ভক্তরা। কিন্তু আবু হায়দার রনি কাউকে দাঁড়াতেই দেননি। সব মিলিয়ে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১২ রান খরচায় আজ ৫ উইকেট নিয়েছেন রনি। রংপুরের বিপক্ষে এছাড়া হাসান মাহমুদ দুটি উইকেট নিয়েছেন। ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানে থেমেছে বরিশাল।
সারাবাংলা/এসএইচএস