রিশাদ ঝড়ে লংকানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৯
শ্রীলংকার ২৩৫ রানের জবাব দিতে নেমে ১৭৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তখন স্বীকৃতি ব্যাটার হিসেবে অপরাজিত ছিলেন কেবল মুশফিকুর রহিম। সেই মুশফিককে একপাশে রেখে অপরপ্রান্তে ঝড় তুলে নায়ক বনে গেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণ লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। মাত্র ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিয়েছেন রিশাদ।
চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয়টিতে আজ শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে লংকানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের একটি করে জিতেছিল বাংলাদেশ, শ্রীলংকা দুই দল।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রতিপক্ষের একজন ব্যাটার সেঞ্চুরি করলেও আগে বোলিং করতে নেমে শ্রীলংকাকে অল্পতেই আটকে রাখে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনের বোলিংয়ে লংকানদের ২৩৫ রানেই আটকে দেয় বাংলাদেশ। পরে স্বাগতিকদের ব্যাটিং ইনিংসটা ঠিকভাবে এগুয়নি। অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়া ওপেনার এনামুল হক বিজয় রান পাননি। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা। তবে শুরুতে বদলি তানজিদ হাসান তামিমের দারুণ ব্যাটিংয়ের পর শেষ দিকে রিশাদ ঝড়ে ঠিকই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বদলি ওপেনার নিয়ে লংকানদের ২৩৫ রানের জবাব দিতে নেমেছিল বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তার বদলে কনকাশন সাব হয়ে এনামুল বিজয়ের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন তানজিদ হাসান তামিম।
এনামুল সুযোগটা কাজে লাগতে পারেননি। ফিরেছেন ২২ বলে ১২ রান করে। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও রান পাননি, আউট হয়েছেন ১ রান করে। তবে সৌম্যর ইনজুরিতে সুযোগ পাওয়া তানজিদ তামিম আজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। শুরু থেকেই আক্রমাণাত্মক ব্যাটিং করে গেছেন তানজিদ।
এনামুল, শান্ত দ্রুত ফিরলেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়েন তানজিদ। দলীয় ১০৩ রানের মাথায় ২২ রান করে ফিরেন হৃদয়। তখনই বড় বিপদে পরে বাংলাদেশ। ২৭ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে ১৩০/৫ হয়ে পরে বাংলাদেশ। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুশফিকুর রহিম।
মিরাজ খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি। ফিরেছেন ৪০ বলে ২৫ রান করে। এরপরই রিশাদ ঝড়! আট নম্বরে ক্রিজে নেমেই পাল্টা আক্রমণ করেন তরুণ লেগস্পিনার। শ্রীলংকার সেরা বোলার ওয়নিন্দু হাসারাঙ্গাকেই যেন টার্গেট করলেন রিশাদ। হাসারাঙ্গার এক ওভারে দুই চার দুই ছক্কা হাঁকানো রিশাদ শেষের দিকে লংকানদের পাত্তাই দেননি।
হঠাৎ বিপদে পরা বাংলাদেশ বিপদ কাটিয়ে ৪০.২ ওভারে যখন ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করল রিশাদ তখন মাত্র ১৮ বল খেলে ৪৮ রানে অপরাজিত! চার মেরেছেন ৫টি, ছক্কা ৪টি। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৩৬ বলে ৩৭ রান করে। এর আগে তানজিদ হাসান তামিম ৮১ বলে ৯টি চার ৪টি ছয়ে ৮৪ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেন।
এর আগে টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। বোলিংয়ে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পান তাসকিন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পাথুম নিশানকাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১ রানে ফেরা নিশানকা অবশ্য রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন। রিভিউতে দেখা গেছে বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে গেছে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবারও তাসকিনের আঘাত। ৪ রান করা আভিশকা ফার্নান্দো মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ১৫ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় শ্রীলংকা।
এরপর কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা কিছুটা প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন। ১১ তম ওভারে বোলিং এসে এই জুটি ভাঙ্গেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৪ রান করা সামারাবিক্রমাকে ফেরান তিনি, তিনিও ফিরেছেন মুশফিকের হাতে তালুবন্দি হয়ে। ৭৪ রানের মাথায় ফিরতে হয় কুশল মেন্ডিসকেও। দলে ঢুকে প্রথম বলেই তাকে ফিরিয়েছেন রিশাদ।
আসালাংকা এক প্রান্ত ধরে রেখে কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৪৬ বলে ৩৭ রান করা আসালাংকা প্যাভিলিয়নে ফেরেন মোস্তাফিজের বলে। ওয়াল্লালাগে ও হাসারাঙ্গাও দলের হয়ে ভালো কিছু করতে পারেনি। ৩৪ ওভারের মাঝেই ১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে শ্রীলংকা তখন অল্পতেই অলআউট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
তবে এক প্রান্তে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে অবিচল ছিলেন লিয়ানাগে। ঠাণ্ডা মাথায় পুরোটা সময় ব্যাটিং করেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ব্যাটিং করা যেখানে অন্যদের জন্য কঠিনই মনে হচ্ছিল, সেখানে তিনি ক্রিজে দাত কামড়ে টিকে থেকেছেন। শুধু টিকেই থাকেননি, রানও তুলেছেন বলের সাথে পাল্লা দিয়েই। ১১ চার ও ২ ছয়ে অপরাজিত ছিলেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। নিজের ৯ম ওয়ানডে খেলতে নেমে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১০২ বলের ১০১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার পথে ৮ম উইকেটে থিকসানার সাথে গড়েছেন ৬০ রানের দারুণ এক জুটি। এই জুটিতেই ২০০ পেরোয় লংকানদের ইনিংস। লিয়ানাগেকে সঙ্গ দিয়ে থিকসানা করেছেন মহামূল্যবান ১৫ রান।
শেষ পর্যন্ত ২৩৫ রানে থামে শ্রীলংকার ইনিংস। সিরিজ জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ২৩৬। ৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ও মোস্তাফিজ, সৌম্য ও রিশাদ পেয়েছেন একটি করে উইকেট। তবে ইনিংসের শেষভাগে ইনজুরির কারণে মাঠ ছেড়েছেন মোস্তাফিজ, সৌম্য; মাঠ ছাড়তে হয়েছে বদলি হিসাবে নামা জাকেরকেও। সৌম্য ঠিক সময়ে ওপেনিংয়ে নামতে পারবেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার সিরিজের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি।
সারাবাংলা/এসএইচএস