Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সৌদি আরব কীভাবে একটি ক্রীড়াপ্রেমী দেশ হওয়ার চেষ্টা করছে

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
১৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৮

তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরবের জিডিপি ২০২২ সালে ৭.৬ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর নিওম সিটিতে তারা ব্যয় করতে যাচ্ছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সৌদি সরকার তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য ভিশন-২০৩০ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জিডিপির ৫০ শতাংশ তেল বহির্ভূত পণ্য রফতানির পরিকল্পনা করেছে।

তার আগে জেনে নেই বিশ্ব ফুটবলে সৌদি আরবের কী রকম প্রভাব রয়েছে। ১৯৯০ সালের দিকে সৌদি আরব ‘কিং ফাহাদ কাপ’ নামে ছয়টি মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করত। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ফিফা টুর্নামেন্টটির টেকওভার সম্পন্ন করে এবং নাম পরিবর্তন করে ‘ফিফা কনফেডারেশন কাপ’ রাখে। আর বর্তমান সৌদি শাসক সালমানের সঙ্গে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর রয়েছে মধুর সম্পর্ক। সালমান প্রতি দুই বছর পর পর বিশ্বকাপ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, আর ইনফান্তিনো চেয়েছিলেন বিশ্বকাপ তিন বছর পর পর আয়োজন করতে।

বিজ্ঞাপন

২০২২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সাড়া ফেলা সৌদিদের চোখ কি তাহলে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ২০২২ বিশ্বকাপে মরক্কোর মতো সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোর যোগ্যতা অর্জন করা? সে ক্ষেত্রে সৌদিরা বর্তমানে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নেবে সে ব্যাপারে কিছুটা ধারণা দেয়া হলো—

∗ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন-২০৩০ এর অংশ হিসেবে, সৌদি আরব ২০১৬ সালে খেলাধুলাকে তিনটি প্রধান লক্ষ্যের দিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। স্থানীয়দের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার হার ৪০ শতাংশে উন্নীত করা, সৌদি ক্রীড়াবিদদের বিদেশি এক্সপোজার বাড়ানো এবং ক্রীড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।

বিজ্ঞাপন

∗ সৌদি আরবে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও ফুটবল ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বিভিন্ন পটভূমি এবং সংস্কৃতির লোকদের মিলিত করতে সক্ষম হয়েছে। সেইসঙ্গে তরুণদের বিনোদনের নানা এক্সেস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ২০১৮ সাল থেকে তাদের দেশে বক্সিং, টেনিস, রেসলিং, মোটরস্পোর্টস, গলফ, হ্যান্ডবল, ভারোত্তোলন প্রভৃতি খেলার নানা আয়োজন করে আসছে নিয়মিতভাবে। এই বর্ধিত আগ্রহ পর্যটকদের আগমনে অবদান রাখবে যার ফলে টিকিট বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে, পণ্যদ্রব্য বিক্রি, আতিথেয়তা এবং ব্যবসা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করছে।

∗ বিশ্বের বৃহত্তম তেল রফতানিকারক কোম্পানি আরামকো মোটরস্পোর্টস, গলফ, টেনিসের পাশাপাশি ক্রিকেটেও বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে এসেছে। তারা ইতোমধ্যে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে পুরুষ ও নারীদের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোতেও অর্থায়ন করতে চায়।

∗ সৌদি আরব ২০১৮ এবং ২০১৯ সাল থেকে ইতালিয়ান সুপার কাপ এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ আয়োজন করে আসছে। স্প্যানিশ সুপার কাপের বর্তমান চুক্তির নবায়ন করা হয়েছে ২০২৯ সাল পর্যন্ত যার মূল্য বছরে ৩৪ মিলিয়ন ডলার।

∗ ক্রীড়া প্রচারে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নারীদের কম অংশগ্রহণ। ২০১৮ সালে নারীদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তার পর থেকে অ্যাথলেটিকস ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ১৫২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

∗ নারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য ২০১৭ সালে মেয়েদের স্কুলে খেলাধুলার ক্লাস বাস্তবায়নের জন্য একটি সিদ্ধান্ত জারি করে। ফলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলাধুলায় মহিলাদের অংশগ্রহণ ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিল। বর্তমানে ২৭টি মহিলা ক্রীড়া দলে ছয় হাজারেরও বেশি মহিলা ক্রীড়াবিদ রয়েছেন।

∗ সৌদি নারী জাতীয় দলের যাত্রা ২০২১ সালে শুরু হলেও ২০১৯ সাল থেকে চলছে তাদের প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ এবং স্কুল লিগ। প্রায় ৫০ হাজার মেয়ে নিবন্ধন করেছে এই লিগগুলোতে। মাত্র  তিন বছরে নিবন্ধিত খেলোয়াড়, ক্লাব, রেফারি এবং কর্মীদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ এবং কোচের সংখ্যা ৮০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই বছরে মহিলা কোচ ১১৯ জন থেকে বেড়ে ১০০০ জনের বেশি হয়েছে। আনোদ আল আসমারি ফিফা নারী ফুটবল রেফারির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

∗ নতুন নতুন খেলা আয়োজনের মাধ্যমে স্পোর্টস ক্লাবে চাকরি গত তিন বছরে ১২৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রশাসনিক চাকরি ১৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে খেলাধুলায় কর্মজীবনের সুযোগ ১১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

∗ সালমানের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) এবং আরেকটি বিনিয়োগকারী ২০২১ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড কেনার পেছনে ৩৮২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার পর ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগে ২০২২-২৩ মৌসুমে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। অথচ তাদের অবস্থান আগের পাঁচটি মৌসুমে শীর্ষ দশের মধ্যে ছিল না। ।

∗ সৌদি ক্রীড়া বিপণন সংস্থা, ‘সেলা’ এক বছরের জন্য নিউক্যাসলের জার্সি স্পন্সর করছে, যার মূল্য ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেলা ইভেন্ট, আতিথেয়তা এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ও জড়িত আছে।

∗ সৌদি আরব ৬ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে এবং বর্তমানে পেশাদার ফুটবল খেলা ক্লাবের সংখ্যা ১০০ টিরও বেশি। পেশাদার লীগে ১৬টি ক্লাব খেলে যা রোশন বা প্রো-লীগ হিসেবে পরিচিত। প্রথম বিভাগে রয়েছে ২০টি, দ্বিতীয় বিভাগে ২৮টি এবং তৃতীয় বিভাগে ৩২টি ক্লাব।

∗ রোশন বা প্রো-লিগকে বিশ্বের শীর্ষ দশটি লিগের একটি করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

∗ পিআইএফ (যার ব্যবস্থাপনায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে) ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে সৌদি ঘরোয়া ফুটবল প্রতিযোগিতায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি স্পনসরশিপ চুক্তি করেছে।

∗ আল-আহলি এবং আল-হিলাল ক্লাবের ৭৫ শতাংশের মালিক পিআইএফ। তেল কোম্পানি আরামকো আল-কাদসিয়ার মালিক। এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে অন্য সব ক্রীড়া ক্লাব বেসরকারিকরণের লক্ষ্য রয়েছে। বেসরকারিকরণ ঘোষণার তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে: ১) বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি, ২) পেশাদারিত্ব, সুশাসন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত এবং ৩) প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা।

∗  ২০২২ বিশ্বকাপের পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আল নাসের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে দুই বছরের চুক্তিতে কিনে নিয়েছে। যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, আল হিলাল ২০২৩ সালে নেইমারের সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি করেছিল এবং বাণিজ্যিক চুক্তির ভিত্তিতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। কিন্তু নেইমারের ইনজুরির জন্য আল হিলালকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করতে হবে না।

∗ খেলোয়াড়দের প্রতি সৌদি বিনিয়োগ যদি অনেক বেশি হয়ে যায়, তাহলে ইউরোপের খেলোয়াড়দের বেতন বৃদ্ধি করতে হতে পারে। কিন্তু উয়েফা ২০২৩ সালে নিয়ম চালু করেছে যে, কোনো ক্লাব তার বার্ষিক আয়ের ৯০ শতাংশের বেশি মজুরি, স্থানান্তর এবং এজেন্ট ফিতে ব্যয় করতে পারবে না। যেটা ২০২৫ সালে আরও কমিয়ে ৭০ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সারা বিশ্বজুড়ে এখন মুদ্রাস্ফীতির ভয়াল আতঙ্ক। ইউরোপের ক্লাবগুলোর যদি রাজস্ব বাড়তে না পারে, তাহলে তাদের বেতন বোনাস সীমিত হয়ে যাবে, ফলে খেলোয়াড়রা মধ্য বয়সে এমএলএস (টরেন্টো এফসিতে খেলা ৩১ বছর বয়সি লরেঞ্জো ইনসিগন পাচ্ছেন ১৪ মিলিয়ন ডলার) বা চাইনিজ লিগের (২০১৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে চেলসির অস্কার পাড়ি জমান সাংহাই পোর্ট ক্লাবে, যেখানে এখন পাচ্ছেন ২৫ মিলিয়ন ডলার) মতো সৌদি লিগে ভিড় করা শুরু করবে। রোনালদোর পর সৌদি প্রো-লিগে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন আর্জেন্টিনার এভার বানেগা, যিনি খেলছেন আল-শাহাব ক্লাবে এবং তার বেতন হচ্ছে ১০.৬ মিলিয়ন ডলার।

∗ সৌদি প্রো-লিগের শীর্ষ এবং নিচের দলগুলোর মধ্যে একটি বিশাল ব্যবধান রয়েছে। কারণ বর্তমান লীগের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব আল হিলাল কয়েক মাস আগে তাদের লিগের নিচের দিকের দুটি ক্লাবকে যথাক্রমে ০-৭ এবং ০-৯ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। তবে এমএলএস অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক, তাই সবচেয়ে খারাপ দলও কিছুটা ভালো হয়ে থাকে। সাধারণত লিগের মান স্থানীয় প্রতিভার গুণমান দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিভার ৫০ শতাংশ একটি ক্লাবে খেলে থাকে। এমনকি প্রিমিয়ার লিগেও প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ খেলোয়াড় স্থানীয় ইংরেজ। তবে সৌদি লিগের মান বাড়াতে স্থানীয় খেলোয়াড়দের একটি ভালো ট্যালেন্টপুল থাকা দরকার। যেমন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ভালো স্থানীয় তরুণ ট্যালেন্ট পুল থাকায় এশিয়ার সেরা লিগ হিসেবে রেট করা হয়ে থাকে।

∗ তাদের প্রতিটি ক্লাব ৮ জন বিদেশী খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারে যার মধ্যে ১ জন থাকবেন এশিয়ান। সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের বরফ গলার সুযোগ ইরানি খেলোয়াড়ের পাশাপাশি অন্যান্য এশিয়ান খেলোয়াড় সৌদি লীগের অংশ হতে পারবেন।

∗ আল নাসর হলো বিশ্বের ৩০৮তম সেরা দল এবং তাদের মানের দল হচ্ছে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপ দল লুটন এবং সান্ডারল্যান্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিশ্বের ১৭তম সেরা দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সৌদি প্রো-লিগকে গড় দলের শক্তি অনুসারে বিশ্বের ৫৮তম সর্বোচ্চ মানের লিগ হিসেবে রেটিং দেওয়া হয়েছে, যা স্কটিশ প্রিমিয়ারশিপের মানের নিচে (৪৯তম) রয়েছে। এমএলএসকে বিশ্বের ২৭তম সেরা লিগ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

∗ ভারত পুরুষদের ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ আয়োজনের বিড প্রত্যাহার করায়, সেটা আয়োজন করার সুযোগ পেয়েছে সৌদি আরব। তাছাড়া নারীদের ২০২৬ এফসি এশিয়ান কাপও অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে। আর রিয়াদে ২০৩৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান গেমস। ক্রীড়ামন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন তুর্কি আল-ফয়সাল বলেছেন, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা।

∗ মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করা সত্ত্বেও ২০২৯ এশিয়ান শীতকালীন গেমস আয়োজিত হবে নিওম সিটিতে। মেগা-সিটি নিওমে এমন একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে যেখানে সারা বছর ঠাণ্ডা এবং তুষারময় থাকবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এবারই প্রথম শীতকালীন গেমস এমন একটি শহরে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে শহর এখনো দৃশ্যমান নয়!

সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো বিশ্বব্যাপী ক্রীড়া উদ্যোগের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সমালোচকরা এটিকে স্পোর্টসওয়াশিং বলে অভিহিত করেন। তাদের মতে, এই ধরনের বিনিয়োগ একটি দেশের সুনাম উন্নত করতে এবং আন্তর্জাতিক নিন্দাকে এড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রোশন লিগ কিভাবে এগোচ্ছে

রোশন (প্রো) সৌদি লিগ স্পনসরশিপ আয়ের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে লাভজনক লিগ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সৌদিরা। স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলোর উল্লেখযোগ্য আগ্রহ থাকায় এই মৌসুমে প্রায় ৭৫ শতাংশ স্পনসর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সালমান সৌদি প্রো লীগকে দশকের শেষ নাগাদ ২.১ বিলিয়ন ডলারের শক্তিতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।

বর্তমান মৌসুমে এ পর্যন্ত ৪৭টি বিভিন্ন দেশের ১৫২ জন খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, যা বিদেশি খেলোয়াড়দের অনুপাত মোট খেলোয়াড় সংখ্যা বিচারে ২৯ শতাংশে উন্নীত করেছে। বিদেশিদের মধ্যে ৯৪ জনই এসেছেন ইউরোপ থেকে। এই মৌসুমে দল সংখ্যা ১৬ থেকে ১৮তে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রতি দলে ৮জন করে বিদেশে খেলোয়াড় খেলতে পারবে।

ডেলয়েট স্পোর্টস বিজনেস গ্রুপ অনুসারে, দল বদলে এ যাবত ৯৫৭ মিলিয়ন ডলার (নিট খরচ ৯০৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে এবং নিট খরচের দিক থেকে এটা ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (নিট খরচ ১.৩৮ বিলিয়ন ডলার) পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ট্রান্সফার ফির প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৬৯৮ মিলিয়ন ডলার সৌদি লিগের ক্লাবগুলো থেকে পেয়েছে।

বিশ্বের নামীদামী খেলোয়াড়রা এই লিগে ভিড় করার পরেও স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শক সংখ্যা গত মৌসুমের তুলনায় এ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। এর অর্থ সৌদিরা অনেক আগে থেকেই ফুটবলের দারুণ ভক্ত। তাদের দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি ফুটবল খেলে, অংশগ্রহণ অথবা অনুসরণ করে।

বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যে ৩৮টি সম্প্রচারকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় ১৪০টি অঞ্চল জুড়ে প্রো লিগের খেলা দেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, গ্ৰীস, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা প্রভৃতি দেশের একাধিক বাজারে সরাসরি খেলা দেখা যাচ্ছে। ফলে লিগের আয় ইতোমধ্যে ৬৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের বড় বড় সম্প্রচারকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্যানাল প্লাস, স্পোর্ট টিভি, লা সেভেন, মার্কা ডট কম, কসমোট ইত্যাদি।

অর্থাৎ, সৌদি প্রো লিগ তার নতুন যুগের শুরুতেই সম্প্রচার রাজস্ব, ডিজিটাল চ্যানেল সম্প্রসারণ এবং বিশ্বব্যাপী ফ্যানদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে।

২০২৪-২৫ মৌসুমের জন্য সৌদি রোশন লিগে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে

গত ৯ মার্চ সৌদি ফুটবল ফেডারেশন তাদের লিগের জন্য নতুন কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যে পরিবর্তনগুলো আনা হবে সেগুলো বলবৎ থাকবে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত।

দলগুলোর খেলোয়াড় সংখ্যা ৩০ থেকে নামিয়ে ২৫ জনে নিয়ে আসা হবে। তবে প্রতি দলে বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৮ জন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ জন করা হবে।

সৌদি আরবে রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিয়ে আরেকটি পৃথক লিগ হয়, যেটা আগামী মৌসুম থেকে বাদ দেওয়া হবে। কারণ আগামী মৌসুমগুলোতে প্রতি দলে খেলোয়াড় সংখ্যা ৩০ থেকে ২৫-এ নামিয়ে আনার উদ্দেশ্য হলো ওই ২৫ জন খেলোয়াড়দের রোশন লিগে নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার পথ তৈরি করে দেওয়া।

আর বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১০ জনে উন্নতি করার পেছনে যে কারণ রয়েছে সেটি হলো, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তরুণ বিদেশি প্রতিভাদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ চালু করা। ক্লাবগুলো এখন ২০০৩ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী দুই জন বিদেশি খেলোয়াড়কে সুযোগ দেবে। তাছাড়া প্রতি দলে ১৯৯৮ সালের পরে সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেছে এমন একজন খেলোয়াড়কেও রাখতে হবে।

যদিও ১০ জন বিদেশি খেলোয়াড় দলভুক্ত করা যাবে, তবে লিগ ম্যাচগুলোতে বিদেশি খেলোয়াড় নামাতে পারবে মাত্র আট জন। তবে কিংস কাপ বা সৌদি সুপার কাপে আট জন বিদেশি খেলোয়াড় নামানোর বাধ্যবাধকতা থাকবে না। অর্থাৎ, কাপ প্রতিযোগিতাগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে ১০ জন বিদেশি খেলোয়াড়দের সদ্ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে।

সারাবাংলা/আইই

সৌদি আরব সৌদি প্রো লিগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর