Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউরো ২০২৪: ক্রুসকে ফিরিয়ে নতুন-পুরাতনের জার্মানি

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
৬ জুন ২০২৪ ২৩:২৮

আগামী ১৪ই জুন থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত এক মাস ব্যাপী ‘ইউরো-২০২৪’ অনুষ্ঠিত হবে জার্মানিতে। এই টুর্নামেন্টটি আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে পরিচিত ছিল। আর ট্রফিটি দেয়া হয় ‘অঁরি দুলেনে’র নামে। ভদ্রলোক ১৯২৭ সালে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল থাকা অবস্থায় এরকম একটি টুর্নামেন্ট করার চিন্তা ভাবনা করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর তিন বছর পরে ১৯৫৮ সালে এই টুর্নামেন্টটির পথচলা শুরুর অনুমোদন লাভ করে এবং ১৯৬০ সাল থেকে এই টুর্নামেন্টটি শুরু হয়।‌ জার্মানির ১০টি শহরে চলবে এবারকার ১৭তম আসর।

বিজ্ঞাপন

১৯৬০ সালে মাত্র চারটি দল প্রথম আসরে খেলে। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বেড়ে আটটিতে দাঁড়ায় ১৯৮০ সালে। ১৬টি দল খেলা শুরু করে ১৯৯৬ সাল থেকে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড ফুটবল এসোসিয়েশনের অনুরোধ অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বেড়ে অবশেষে ২৪টিতে‌ দাঁড়ায় ২০১৬ সালে। এই সময় এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল ইংল্যান্ড এবং জার্মানি। এবারের আসরেও দল সংখ্যা থাকবে ২৪টি।

বিজ্ঞাপন

স্বাগতিক দেশ হিসেবে আজ আমরা আলোচনা করব জার্মানিকে নিয়ে:

জার্মানি রয়েছে গ্রুপে ‘এ’তে। আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো হচ্ছে স্কটল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং সুইডেন। চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানি ইউরোপ সেরা হয়েছে তিনবার। সর্বশেষ তারা ইউরোপের সেরা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ফাইনাল খেলেছে সর্বমোট ছয়বার। আর গ্রুপ পর্যায় থেকে বাদ পড়েছিল তিনবার। ১৯৬০ সাল থেকে টুর্নামেন্টেটি শুরু হলেও তারা খেলার সুযোগ পায় ১৯৭২ সাল থেকে এবং প্রথম বছরেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজিমাত করে। এযাবৎ খেলা ১৩টি আসরে তারা ৫৩টি ম্যাচ খেলে ২৭টিতে জয় পেয়েছে আর সমান সংখ্যক ১৩টি খেলায় ড্র এবং পরাজিত হয়েছে। ৭৮টি গোল করার বিপরীতে তারা ৫৫টি গোল হজম করেছে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার। সর্বোচ্চ গোলদাতা হচ্ছেন যুগ্মভাবে মারিও গোমেজ এবং‌ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, দুজনেই গোল করেছেন পাঁচটি করে।

৩৬ বছর বয়সী কোচ জুলিয়ান নাগেলসম্যান:

জোয়াকিম লো ২০২১ সালে বিদায় নেবার পর থেকেই জার্মান দল কোচ সমস্যায় ভুগছে। হ্যান্সি ফ্লিক ১৬ বছর জার্মান দলের সহকারীর কোচ থাকা সত্বেও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির প্রথম কোচ হিসেবে বরখাস্ত হন। তার অধীনে জার্মানি তখন টানা তিনটি প্রীতি ম্যাচে পরাজিত হয় পোল্যান্ড, কলম্বিয়া ও জাপানের কাছে। এরপরই দায়িত্ব নেন ৩৬ বছর বয়সি জুলিয়ান নাগেলসম্যান।

তবে নাগেলসম্যানর যাত্রাও শুভ হয়নি। প্রীতি ম্যাচ ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে পরাজিত করলেও তুরস্ক এবং অস্ট্রিয়ার কাছে হেরেছে আর ড্র করেছে মেক্সিকোর সাথে। তার অধীনে খেলা এ পর্যন্ত ছয়টি প্রীতি ম্যাচের তিনটিতে হয় হেরেছে বা ড্র করেছে।

কিন্তু নাগেলসম্যান জার্মানিতে একজন প্রথম সারির কোচ হিসেবে বিবেচিত। ৬-৭ মাসের ভেতর দলকে কাঙ্খিত ফলাফল এনে দেওয়া সম্ভব নয় আর সব ম্যাচই ছিল প্রীতি ম্যাচ। তিনি ট্যাকটিক্যাল দক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা অনুযায়ী দলকে নানান রকম ফর্মেশনে খেলাতে পারেন।‌ দলের প্রয়োজনে তিনি প্রতি ম্যাচেই ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল ও ফর্মেশন বদলাতে সিদ্ধহস্ত। পজেশন নির্ভর আলট্রা অফেন্সিভ খেলা, কাউন্টার অ্যাটাক ও গেগেনপ্রেসিং করতে তার জুড়ি নেই। তরুণ খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করা এবং ম্যান-ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে তার সুনাম রয়েছে। এই দলে ৪ জন অত্যন্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে যাদের বয়স ২০-২১ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে কমপক্ষে ৯ জন খেলোয়াড় রয়েছে যাদের বয়স ২৪-২৭ বছর। এই সব তাকে দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সাফল্যের দিকে পরিচালিত করতে সহজ হবে।

তার দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ট্যাকটিকস নির্ভর খেলা এবং সময় সময়ে দলের ফর্মেশন পরিবর্তন। ফলে খেলোয়াড়দের এই দ্রুত পরিবর্তন মানিয়ে নিতে অনেক সময় সমস্যা হয়। বয়সে তরুণ, আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিজ্ঞতা কম। অতিরিক্ত প্রত্যাশার ভারে তিনি নুয়ে পড়েন কিনা এটাও দেখার বিষয়। তবে নিঃসন্দেহে তিনি ভাল ফল দিতে পারবেন যদি জার্মান দল তাকে জোয়াকিম লোর মত দীর্ঘ সময়ের জন্য বিবেচনা করে।

জার্মানি স্কোয়াড:

গোলরক্ষক: মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা), ম্যানুয়েল নিউয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ), আলেকজান্ডার নুবেল (স্টুটগার্ট) এবং অলিভার বাউম্যান (হফেনহেইম)।

রাইট ব্যাক: জশুয়া কিমিচ (বায়ার্ন মিউনিখ), বেঞ্জামিন হেনরিকস (আরবি লিপজিগ) এবং ওয়াল্ডেমার অ্যান্টন (ভিএফবি স্টুটগার্ট)।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: আন্তোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ), জোনাথন তাহ (বেয়ার লেভারকুসেন), নিকো স্লোটারবেক (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড) এবং রবিন কোচ (ইনট্রাক্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট)।

লেফট ব্যাক: ম্যাক্সিমিলিয়ান মিটলস্ট্যাড (স্টুটগার্ট) এবং ডেভিড রাউম (আরবি লিপজিগ)।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: রবার্ট আন্দ্রিচ (বেয়ার লেভারকুসেন), প্যাসকেল গ্রস (ব্রাইটন) এবং আলেকসান্ডার পাভলোভিক (বায়ার্ন মিউনিখ)।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ) এবং ইল্কে গুন্দোগান (বার্সেলোনা)

উইঙ্গার: জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ), ফ্লোরিয়ান উইর্টজ (বায়ার লেভারকুসেন), লেরয় সানে (বায়ার্ন মিউনিখ), ক্রিস ফুহরিচ (স্টুটগার্ট) এবং ম্যাক্সিমিলিয়ান বেয়ার (হফেনহেইম)

ফরোয়ার্ড: নিকলাস ফুলক্রুগ (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), কাই হাভার্টজ (আর্সেনাল), টমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ) এবং ডেনিজ উন্দাভ (স্টুটগার্ট)

জার্মানরা কেমন কৌশল অবলম্বন করতে পারে:

  • ৪-২-৩-১ ফর্মেশন: রক্ষণ দৃঢ়তা বাড়াতে দুইজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার মূল ডিফেন্সের সামনে শক্ত ব্লক তৈরি করতে পারে। উইর্টজ, গুন্দোগান এবং মুসিয়ালার মত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের সামনে হাভার্টজ বা ফুলক্রুগ মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারে। গুন্দোগানকে বসিয়ে এই ফর্মেশনে উইর্টজকে প্লে মেকারের দায়িত্ব দিয়ে সানেকে উইঙ্গার হিসেবে নামাতে পারে।
  • ৪-৩-৩ ফরমেশন: উইঙ্গারদের ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকের মাঝ মাঠে ফাঁকা জায়গা তৈরি করতে এই কৌশল অবলম্বন করতে পারে। মিডফিল্ড পিভট পজিশনে খেলার জন্য কিমিচ ডিফেন্স ছেড়ে মাঝ মাঠে চলে আসবে।
  • ৩-৪-৩ ফরমেশন: সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে যে চারজন সাতাশ জনের প্রাথমিক দলে রয়েছে তাদের গড় উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চির বেশি। তিনজন দীর্ঘদেহি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এই ফর্মেশনে ডিফেন্স সামলাবেন বিধায় রাইট ও লেফট উইংব্যাকের খেলোয়াড়রা আক্রমণে উঠে আসবেন।
  • ৩-৫-২ ফরমেশন: মিডফিল্ড পজিশনে আধিপত্য বিস্তার জন্য দুইজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের সাথে তিনজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার খেলবে। আর সেই ক্ষেত্রে হাভার্টজ এবং ফুলক্রুগ একসাথে স্ট্রাইকার হিসেবে আক্রমণ শানাবে।

জার্মান দলের শক্তি:

তাদের দলের শক্তিমত্তার মধ্যে রয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রণ। দলের ষোল জন খেলোয়াড়ের গড় বয়স ২৬-৩৩ বছর। ৩০ বছর বয়সী খেলোয়াড় রয়েছে নয় জন আর চারজন রয়েছে ২০-২১ বছরের মধ্যে। সকল খেলোয়াড় মিলিয়ে তাদের গড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৩২টি ম্যাচে, পক্ষান্তরে প্রথম একাদশে যারা থাকবে তাদের ন্যূনতম গড়ে ৪৬টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এই দলের মূল শক্তি অনেক খেলোয়াড়ই একাধিক পজিশনে খেলতে পারে। জোশুয়া কিমিচ যেমন রাইট উইংব্যাকের পাশাপাশি রক্ষণাত্মক বা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ডেভিড রাউম লেফট ব্যাকের পাশাপাশি মিডফিল্ডে খেলেন। বেঞ্জামিন হেনরিকস ফুলব্যাক হিসেবে ডান এবং বাম উভয় প্রান্তেই পারদর্শী। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রবিন কোচ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড হিসেবেও খেলেন। সেন্টার-ব্যাক ওয়াল্ডেমার অ্যান্টন রাইট ব্যাকের দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এরপর আসবে, মিডফিল্ডারদের প্রসঙ্গ। যেখানে মাঠের রাজা হচ্ছেন টনি ক্রুস, যিনি রক্ষণাত্মক আক্রমণাত্মক যে কোন ভূমিকায় মাস্টার। জামাল মুসিয়ালা এবং ফ্লোরিয়ান উইর্টজ উইংগার হিসেবে খেলার পাশাপাশি‌ প্লে-মেকারের দায়িত্ব পালনে পারঙ্গম। আরেক উইংগার ক্রিস ফুহরিচ রক্ষণাত্মক কাজে ও ম্যাক্সিমিলিয়ান বেয়ার ফরওয়ার্ড হিসেবে কাজ চালাতে সক্ষম। আর ফরওয়ার্ড লাইনের টমাস মুলার এবং কাই হাভার্টজ সহসাই নিচে নেমে এসে মিডফিল্ডার বা উইংগার হিসেবে খেলতে পারেন

জার্মান দলটি তাদের ট্যাকটিক্যাল বহুমুখীতার জন্য পরিচিত। ফলে  বিভিন্ন দলের  বিরুদ্ধে তারা সবসময়ই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলে। দলটি প্রায়ই হাইপ্রেসিং করে খেলে বিধায় প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত বল পুনরুদ্ধার করতে পারে। এই পদ্ধতিতে তারা প্রতিপক্ষের খেলা নষ্ট করে দিয়ে নিজেরা গোল করার সুযোগ আদায় করে নেয়।

জার্মান দলের দুর্বলতা:

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দলটি ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকলে বড় টুর্নামেন্টে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে।

দলটিতে বাম পায়ের দক্ষ খেলোয়াড়ের অভাব রয়েছে। সার্জ জিনাব্রির মতো প্রধান একজন বাম পায়ের খেলোয়াড়ের ইনজুরি দলের এই জায়গাটিতে ভীষণভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। এছাড়া গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যয়ার এখনো ইনজুরি থেকে সুস্থ হতে পারেননি। তাই এমনও হতে পারে তিনি গ্রুপ পর্যায়ের কিছু ম্যাচে খেলতে নাও পারেন। তবে এই জায়গায় বার্সেলোনার গোলরক্ষক টের স্টেগান সামাল দিতে পারবেন।

প্রচুর স্কোরিং সুযোগ তৈরি করা সত্ত্বেও, গত কয়েক বছর যাবৎ জার্মানি কখনও কখনও গোলের সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। গোলের সামনে অদক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।

দলে শক্তিশালী ডিফেন্ডার থাকলেও তারা কখনো কখনো কাউন্টার আক্রমণ এবং সেটপিসের বিরুদ্ধে গোল খেয়েছে। প্রতিপক্ষের দ্রুত রূপান্তর এবং সংগঠিত সেট-পিস দলের বিরুদ্ধে তাদের ডিফেন্স সমস্যায় পড়তে পারে।

মনে রাখতে হবে জার্মানি স্বাগতিক দেশ হয়েও ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি। ভক্ত এবং মিডিয়ার উচ্চ প্রত্যাশা দলটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে ফোকাস এবং স্থিরতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দলটিতে যুব এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশ্রণে একটি রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছে। তরুণ প্রতিভাদের একত্রিত করা এবং সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে এবং সর্বোত্তম পারফরম্যান্স অর্জনে সময় লাগতে পারে। সুতরাং তারা এই টুর্নামেন্টটি জিততে নাও পারে।

আমার দেখা জার্মানির সেরা ৩০ ফুটবলার:

জার্মানি বিশ্বের সেরা দলের মধ্যে একটি এবং তাদের খেলোয়াড়রা খুবই উঁচুমানের। ফলে সেরা-এগারো বা সেরা- তেইশ দল গঠন করা খুবই কঠিন। তাই ৪৭ জন সেরা খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করেছি, যাদের খেলা আমি এ যাবৎ পর্যন্ত দেখেছি।

গোলরক্ষক:

১) ম্যানুয়েল ন্যয়ার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০১। তিনি ৩৮ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে খেলছেন)

২) অলিভার কান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৫৭)

৩) টনি শুমাখার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৪৮)

৪) জেনস লেহম্যান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৬২১, ক্লাব গোল: ২)

রক্ষণ-ভাগ:

রাইট উইং ব্যাক:

৫) ফিলিপ লাম (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৩, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৮৫, ক্লাব গোল: ১৪। তিনি ডান এবং বাম উভয় উইং ব্যাক পজিশনে খেলতে পারেন)

৬) জোশুয়া কিমিচ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮৪, আন্তর্জাতিক গোল: ৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩১৫, ক্লাব গোল: ২৯। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সী এবং সব ধরণের ফুটবলের সাথে জড়িত)

৭) স্টেফান রয়টার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬৯, আন্তর্জাতিক গোল: ২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫২০, ক্লাব গোল: ২৫)

৮) আর্নে ফ্রেডরিখ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮২, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩১৬, ক্লাব গোল: ১৫)

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার:

৯) জার্গেন কোহলার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০৫, আন্তর্জাতিক গোল: ২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০০, ক্লাব গোল: ৩৬)

১০) ম্যাটস হুমেলস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৬৯, ক্লাব গোল: ৫; (তিনি এখন ৩৫ বছর বয়সী কিন্তু ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অজানা কারণে কোচ তাকে জাতীয় দলে উপেক্ষা করেছিলেন)

১১) গুইডো বুচওয়াল্ড (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৬, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৬১, ক্লাব গোল: ৩৯)

১২) পার মার্টেসাকার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০৪, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৭৭, ক্লাব গোল: ২৫)

১৩) জেরোম বোয়াটেং (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৬, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৬৯, ক্লাব গোল: ৫; (কোচ জোয়াকিম লো ৩০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে তাকে আর জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করেননি তবে তিনি এখনও ৩৫ বছর বয়সে ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন)

১৪) টমাস হেলমার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২৭, ক্লাব গোল: ৪৬)

১৫) টমাস বার্থহোল্ড (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬২, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৫১, ক্লাব গোল: ২৭)

লেফট উইং ব্যাক: 

১৬) আন্দ্রেয়াস ব্রেহমে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮৬, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪১, ক্লাব গোল: ৬২)

১৭) ক্রিস্টিয়ান জিগে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭২, আন্তর্জাতিক গোল: ৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩২৯, ক্লাব গোল: ৫৬)

মধ্য-মাঠ:

রক্ষণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

১৮) লোথার ম্যাথাউস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৫০, আন্তর্জাতিক গোল: ২৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৯৫, ক্লাব গোল: ১৬১)

১৯) ম্যাথিয়াস সামার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫১, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৯১, ক্লাব গোল: ৮৪। চোটের কারণে তিনি মাত্র ৩০ বছর বয়সে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবসর নিতে বাধ্য হন),

২০) সামি খেদিরা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩০৮, ক্লাব গোল: ৪১। তিনি মাত্র ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন কিন্তু এখনো ক্লাব পর্যায়ে খেলছেন)

২১) টরস্টেন ফ্রিংস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৯, আন্তর্জাতিক গোল: ১০ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৩৫, ক্লাব গোল: ৪৮)

২২) স্টেফান এফেনবার্গ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৩৫, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২৬, ক্লাব গোল: ৮৩। মাত্র ৩০ বছর‌ বয়সে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে খারাপ আচরণের কারণে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়)

২৩) দিয়েতমার হামান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৯, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৭৩, ক্লাব গোল: ১৯)

২৪) জেনস জেরেমিস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৫, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৪৮, ক্লাব গোল: ৯)

আক্রমণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

২৫) মাইকেল ব্যালাক (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৪২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৭২, ক্লাব গোল: ৯৪)

২৬) বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২১, আন্তর্জাতিক গোল: ২৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪৫, ক্লাব গোল: ৫৪)

২৭) আন্দ্রেয়াস মোলার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮৫, আন্তর্জাতিক গোল: ২৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৮৫, ক্লাব গোল: ১২৯)

২৮) মেসুত ওজিল (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯২, আন্তর্জাতিক গোল: ২৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২৬, ক্লাব গোল: ৭৩। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন। তিনি একজন বাম পায়ের প্লেমেকার ছিলেন)

২৯) টনি ক্রুস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০৮, আন্তর্জাতিক গোল: ১৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৭৯, ক্লাব গোল: ৪৫। তার বয়স এখন ৩৪ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন)

৩০) টমাস হ্যাসলার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০১, আন্তর্জাতিক গোল: ১১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৩৯, ক্লাব গোল: ৮১; তিনি একজন ডান পায়ের উইঙ্গার ছিলেন)

৩১) বার্ন্ড স্নাইডার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮১, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৯৬, ক্লাব গোল: ৩৯)

৩২) মারিও গোটজে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬৬, আন্তর্জাতিক গোল: ১৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৪০, ক্লাব গোল: ৭২; তিনি একজন ডান পায়ের উইঙ্গার কিন্তু আধুনিক ফুটবল কৌশলের কারণে বাম পাশে খেলেন। তার বয়স মাত্র ৩১ বছর এবং সব ধরণের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন তবে কখনো কখনো স্বাস্থ্য সমস্যা এবং কৌশলগত কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন!)

৩৩) পিয়েরে লিটবারস্কি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৩, আন্তর্জাতিক গোল: ১৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৬৯, ক্লাব গোল: ১২৬; তিনি একজন ডান পায়ের উইঙ্গার ছিলেন কিন্তু তিনি দুই পায়েই খেলতে পারতেন)

৩৪) ইকাই গুন্দোগান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৫, আন্তর্জাতিক গোল: ১৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৭৬, ক্লাব গোল: ৬৫; তার বয়স ৩৩ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন)

৩৫) মার্কো রয়েস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৮, আন্তর্জাতিক গোল: ১৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৯১, ক্লাব গোল: ১৫৬। আঘাত প্রবণতার কারণে তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন কিন্তু ক্লাব পর্যায়ে এখনো খেলছেন। তিনি একজন বাম পায়ের উইঙ্গার)

৩৬) আন্দ্রে শুরলে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৭, আন্তর্জাতিক গোল: ২২ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৮৮, ক্লাব গোল: ৬৯। মানসিক অবসাদের কারণে তিনি ২৭ বছর বয়সে জাতীয় স্তর এবং ২৯ বছর বয়সে ক্লাব পর্যায় থেকে অবসর নেন। তিনি ও একজন বাম পায়ের উইঙ্গার)

৩৭) টমাস মুলার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৭৩, ক্লাব গোল: ১৪৯; তার বয়স এখন ৩৪ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল খেলে যাচ্ছেন)

৩৮) লেরয় সানে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৯, আন্তর্জাতিক গোল: ১৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৬০, ক্লাব গোল: ৬৫; তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সী খেলোয়াড় এবং বর্তমানে সব ধরণের ফুটবল খেলছেন। তিনি প্রধানত বাম পায়ের খেলোয়াড়)

৩৯) সার্জ জিনাব্রি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৫, আন্তর্জাতিক গোল: ২২ ও ক্লাব ম্যাচ: ২২৬, ক্লাব গোল: ৮৫। তিনিও মাত্র ২৮ বছর বয়সী এবং প্রধানত ডান পায়ের খেলোয়াড়। তিনি সব ধরণের ফুটবল খেলে যাচ্ছেন)

স্ট্রাইকার: 

৪০) কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯৫, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২৪, ক্লাব গোল: ২২০)

৪১) রুডি ভোলার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯০, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৩২, ক্লাব গোল: ২০১)

৪২) জার্গেন ক্লিনসম্যান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪৫, ক্লাব গোল: ২০৫)

৪৩) মিরোস্লাভ ক্লোজ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৩৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৭১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪৬, ক্লাব গোল: ১৭৫)

৪৪) অলিভার বিয়েরহফ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭০, আন্তর্জাতিক গোল: ৩৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৪৪, ক্লাব গোল: ১৩৯)

৪৫) মারিও গোমেজ  (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৩১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪১৩, ক্লাব গোল: ২১০)

৪৬) লুকাস পোডলস্কি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৩০, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫১১, ক্লাব গোল: ১৪৯)

৪৭) টিমো ওয়ার্নার (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৭, আন্তর্জাতিক গোল: ২৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩২৬, ক্লাব গোল: ১১৪। তার বয়স মাত্র ২৮ বছর এবং সব ধরণের ফুটবল খেলে যাচ্ছেন)

ইউরো ২০২৪ জার্মানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর