Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউরো ২০২৪: স্প্যানিশদের রাজত্ব উদ্ধারের লক্ষ্য

মোঃ সাইফুল আলম তালুকদার
৮ জুন ২০২৪ ২৩:২২

২০০৮ এবং ২০১২ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবার তাদের ইউরো-২০২৪ যাত্রায় মোকাবেলা করবে শক্তিশালী ইতালি, ক্রোয়েশিয়া এবং আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে। তারা রয়েছে গ্রুপ-‘বি’তে।

১৫ ই জুন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টুর্নামেন্ট শুরু করবার আগে তারা দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে দুর্বল অ্যান্ডোরা এবং নর্দান আয়ারল্যান্ডের সাথে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে স্পেন ইউরো-২০২০ এর দ্বিতীয় রাউন্ডে জয় তুলে নিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে আর গত বছর ন্যাশনস লিগ শিরোপা জিততে তাদের ক্রোয়েশিয়াকে পরাজিত করতে হয়েছিল টাই-ব্রেকারে।‌ অর্থাৎ দুটি দলের মধ্যে আবারও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ইতালির সঙ্গে তাদের ম্যাচটি হবে চরম উত্তেজনাকর। ইউরো-২০২০‌ জয়ী ইতালি সেবার স্পেনকে পরাজিত করেছিল সেমিফাইনালে যার বদলা স্পেন সর্বশেষ নেশনস লিগে সেই সেমিফাইনালে পরাজিত করবার মাধ্যমে নিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

স্প্যানিশ দলের বর্তমান হালচাল:

স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস মহিলা ফুটবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জেনি হারমোসোকে প্রকাশ্যে চুম্বন করায় তীব্র জনরোষের সম্মুখীন হন এবং পরবর্তীতে দুর্নীতিসহ আরও অভিযোগের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন।

রুবিয়ালেসের উত্তরসূরী‌ পেদ্রো রোচাও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন আছেন। তাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিখ্যাত কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু অভিযোগ এসেছে সরকার প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। ফলে এই নিয়ে স্প্যানিশ ফুটবল ফিফা এবং উয়েফার রোষানলে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

শোনা যাচ্ছে এবারের ইউরো ২০২৪-এ স্পেন দলকে ফেভারিট তিনটি দলের মধ্যে গণ্য করা হচ্ছে না। তাহলে কি ২০০৬ বিশ্বকাপের ইতালি দলের মত স্পেন জেগে ওঠে কিনা সেটা দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে?

স্পেন দল:

সম্প্রতি কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে ২৯ জনের একটি স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন যা ৭ই জুনের সময়সীমার আগে ২৬-এ নামিয়ে আনা হবে।

গোলরক্ষক: উনাই সাইমন (অ্যাথলেটিক বিলবাও)ডেভিড রায়া (আর্সেনাল) এবং অ্যালেক্স রেমিরো (রিয়াল সোসিয়েদাদ)।

রাইট ব্যাক: ড্যানিয়েল কারভায়াল (রিয়াল মাদ্রিদ), জেসুস নাভাস (সেভিয়া)।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: আইমেরিক লাপোর্তে (আল নাসর), রবিন লে নরম্যান্ড (রিয়াল সোসিয়েদাদ), নাচো ফার্নান্দেজ (রিয়াল মাদ্রিদ), পাউ কিউবারসি (বার্সেলোনা) এবং দানি ভিভিয়ান (অ্যাথলেটিক বিলবাও)।

লেফট ব্যাক: আলেজান্দ্রো গ্রিমাল্ডো (বেয়ার লেভারকুসেন) এবং মার্ক কুকুরেলা (চেলসি)।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: রদ্রিগো হার্নান্দেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), মার্টিন জুবিমেন্ডি (রিয়াল সোসিয়েদাদ) এবং আলেক্স গার্সিয়া (জিরোনা)

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: পেদ্রি গঞ্জালেজ (বার্সেলোনা), ফ্যাবিয়ান রুইজ (পিএসজি), ফারমিন লোপেজ (বার্সেলোনা) এবং মিকেল মেরিনো (রিয়াল সোসিয়েদাদ)।

উইঙ্গার: লামিন ইয়ামাল (বার্সেলোনা), নিকো উইলিয়ামস (অ্যাথলেটিক বিলবাও), ফেরান তোরেস (বার্সেলোনা), দানি ওলমো (আরবি লিপজিগ), অ্যালেক্স বায়েনা (ভিয়ারিয়াল) এবং আয়োজ পেরেজ (রিয়াল বেটিস)।

ফরোয়ার্ড: আলভারো মোরাতা (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), হোসেলু মাতো (রিয়াল মাদ্রিদ) এবং মিকেল ওয়ারজাবাল (রিয়াল সোসিয়েদাদ)।

উল্লেখযোগ্য কারা দলে নেই:

এই টুর্নামেন্টে চারজন মূল খেলোয়াড় ছাড়াই খেলতে হবে স্পেনকে। তারা হলেন গাভি পায়েজ, আলেজান্দ্রো বাল্ডে, পাউ টরেস এবং এরিক গার্সিয়া। গত বছরের অক্টোবরে এসিএল টিআর ইনজুরিতে পড়া গাভি এ বছর বার্সেলোনার হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাননি, কারণ ইনজুরির জন্য তিনি দশ মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান। আরেক লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট, আলেহান্দ্রো বাল্ডে, যিনি লেফট-ব্যাক পজিশনে ভালো করছিলেন তিনিও এবছরের জানুয়ারিতে পেশী ছিঁড়ে অস্ত্রোপচারের পরে বাইরে রয়েছেন।

তবে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল, দলে নেই পাউ টরেস, যিনি ২০২৩-২৪ সালে প্রিমিয়ার লিগের সেরা ডিফেন্ডারদের মধ্যে একজন ছিলেন। এমনকি শেষ কয়েকটি ম্যাচেও স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। তবে এরিক গার্সিয়ার কথা ভিন্ন, কেননা তিনি লুইস ডি লা ফুয়েন্তে লুইস এনরিকের পরিবর্তে কোচ হবার পর থেকেই দলে জায়গা পাননি। গত এক বছর তাকে স্পেন জাতীয় দলে দেখা যায়নি। জিরোনার হয়ে এ বছর ভাল খেলা এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার নিজে পাঁচটি গোল করার পাশাপাশি পাঁচটি গোলে সহায়তা করেও জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন না।

এছাড়াও পিএসজির অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মার্কো অ্যাসেনসিও বাদ পড়েছেন, যিনি এর আগে জাতীয় দলের সাথে ৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন।

 কেমন হল স্প্যানিশ দলটি?

গোলরক্ষক উনাই সিমন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করে যাচ্ছেন। অনঅভিজ্ঞ স্পেন দলের জন্য মাত্র ৩৯টি ম্যাচ খেলা সিমনই হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের মধ্যে একজন! সম্প্রতি আর্সেনালের হয়ে তাদের আরেক গোলরক্ষক ডেভিড রায়া দারুন পারফরমেন্স করেছেন এবং ভালো পাসিং খেলা তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হতে পারে।

স্পেনের জন্য উইং ব্যাক পজিশন একটি শক্তিশালী জায়গার নাম, যদিও এই দলে সুযোগ হয়নি পাঁচশোর উপরে ক্লাব ফুটবল ম্যাচ খেলা সিজার আজপিলিকুয়েতার, যিনি ডান বা লেফট ব্যাক পজিশনে খেলতে পারেন। লেফট উইং ব্যাক অ্যালেক্স গ্রিমাল্ডোর বায়ার লেভারকুসেনের হয়ে একটি অসামান্য মৌসুম কেটেছে আর রাইট উইং ব্যাকে অভিজ্ঞ দানি কারভায়াল সব সময়ই তৈরি আছেন। গ্রিমাল্ডোর বদলি হিসেবে শক্তি যোগাবেন ক্লাব ফুটবলে ১৮০টির উপর ম্যাচ খেলা মার্ক কুকুরেলা‌।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে মূল একাদশে খেলার জন্য সৌদি আরবে খেলা আইমেরিক লাপোর্তে এবং রিয়াল সোসিয়েদাদের রবিন লে নরম্যান্ড এগিয়ে থাকবেন কারণ অ্যাস্টন ভিলার পাউ টরেস এবং জিরোনার এরিক গার্সিয়া দলে সুযোগ পাননি। ফলে এই জায়গাটা দলের জন্য একটি দুর্বল জায়গায় বলে বিবেচিত হবে। বদলি হিসেবে তৈরি থাকবেন বার্সেলোনার ১৭ বছর বয়সী পাউ কিউবারসি।

আরেকটি শক্তিশালী জায়গা হচ্ছে তাদের রক্ষণাত্মক মিডফিল্ড পজিশন, কেননা সেখানে আছেন রদ্রি, যাকে বর্তমানে বিশ্বের সেরা রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে তাকে সাহায্যের জন্য নির্ভর করতে হবে মার্টিন জুবিমেন্ডির উপর যিনি কিনা এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫টি। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডের সফলতা নির্ভর করবে বার্সেলোনার পেদ্রির ফিটনেস কেমন থাকে তার উপর। তিনি সাহায্য পেতে পারেন, তার বার্সা সতীর্থ ফেরমিন লোপেজ থেকে যার কিনা এখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক ঘটেনি ও ২২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা পিএসজির ফ্যাবিয়ান রুইজের কাছ থেকে। এক রদ্রি ছাড়া মিডফিল্ড পজিশনে সকলেই বেশ তরুণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনভিজ্ঞ।

এই মৌসুমে ইউরোপের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত লামিন ইয়ামাল ফিট থাকলে আক্রমণভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন‌। আলভারো মোরাতা সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা নেবেন। উইং থেকে আক্রমণ যোগাবেন নিকো উইলিয়ামস, দানি ওলমো এবং ফেরান তরেস। তবে আশার কথা হচ্ছে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা অন্য পজিশনের খেলোয়াড়দের চাইতে খানিকটা বেশি রয়েছে বিশেষ করে উইঙ্গারদের অভিজ্ঞতা সহ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিশুদ্ধ স্ট্রাইকারদের তুলনায় তাদের উইঙ্গার সংখ্যা অনেক বেশি।

স্প্যানিশ দলটির অভিজ্ঞতা এবং বয়স সবমিলিয়ে কিছুটা কম। তাই আমার মতে এই দলটি ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে যাচ্ছে।

স্প্যানিশ দলের শক্তিমত্তা:

ইনজুরির কারণে মূল মিডফিল্ডার গাভির অনুপস্থিতিতে স্পেন কি ইউরো জিততে পারবে কিনা সে বিষয়ে বাজির দর নেমে এসেছে ৯/১-এ, তা সত্ত্বেও, কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের নির্দেশনায় স্পেন যে বিজয়ী হতে পারে তার কারণ হিসেবে তাদের দলের কিছু শক্তিশালী জায়গা নিয়ে আলোচনা করা গেল:

১) টেকনিক্যাল দক্ষতা: স্পেনের খেলোয়াড়রা টেকনিক্যালি খুবই দক্ষ। তাদের বল নিয়ন্ত্রণ, পাসিং এবং ড্রিবলিংয়ের দক্ষতা প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে অতিক্রম করতে সহজ করে তোলে।

২) কৌশলগত নমনীয়তা: অনেকেই ফুয়েন্তের অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে তার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি তিনি নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন দ্বারা নিয়োগ পেয়ে অবাক হয়েছিলেন। তবে তিনি স্পেনের গত এক দশক যাবৎ পজেশন নির্ভর ফুটবলের সাথে সাথে ফুটবলারদের সক্ষমতা অনুযায়ী কৌশল মিশ্রণ করে সর্বশেষ ন্যাশনস লিগ জয় করে নিয়েছিলেন। তার কৌশল অনেকটা রিয়েল মাদ্রিদের কার্লো আনচেলত্তির মত, অর্থাৎ পজেশন বজায় রাখার সাথে সাথে ডিরেক্ট ফুটবল খেলাতে পছন্দ করেন। ফুটবলারদের সক্ষমতা অনুযায়ী কৌশল অবলম্বনের একটি উদাহরণ হল তার দলের উইং ব্যাক পজিশন অন্যান্য দলের চাইতে কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় তিনি এই জায়গা থেকে আক্রমণ করাতে পছন্দ করেন। তাছাড়া স্পেনের আগের দলের মত ফলস নাইন ব্যবহার করার চাইতে ট্র্যাডিশনাল সেন্টার ফরওয়ার্ড ব্যবহারে সচেষ্ট থাকেন।

৩) স্কোয়াডের গভীরতা বৃদ্ধিতে রোটেশন পদ্ধতি ব্যবহার: স্কোয়াডের গভীরতা বাড়াতে লুইস এনরিকের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪০ জনের বেশি খেলোয়াড় ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে ১০ জনের বেশি খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটিয়েছেন। তার দেড় বছরের মেয়াদ কালে রিয়াল সোসিয়েদাদের ডিফেন্ডার রবিন লে নরম্যান্ড, প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনের ফ্যাবিয়ান রুইজ এবং রিয়াল মাদ্রিদের হোসেলু স্পেন দলে নিয়মিত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।‌ তবে তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল কখন কোন দলের বিপক্ষে কাকে খেলাবেন সেটা বিপক্ষ দল প্রায়শই ঠাহর করতে পারে না। ইউরোর বাছাই পর্বে তিনি আট ম্যাচে আটটি আলাদা একাদশ ব্যবহার করেছেন।

৪) দলের ট্রাম্প কার্ড: মূল একাদশে কখন কাকে খেলাবেন এ নিয়ে কেউ বলতে না পারলেও, দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়মিত খেলতে দেখা যায় বা যাদের প্রতি তার বিশ্বাস অনেকটা বেশি তারা হলেন: গোলরক্ষক উনাই সিমন, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার লে নরম্যান্ড,  ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রি এবং স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। অর্থাৎ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে একজন করে নেতা বাছাই করে রেখেছেন। মোরাতা তার ক্যারিয়ারে ফুয়েন্তের অধীনেই বেশ ভালো খেলছেন। তিনি ছয়টি বাছাই পর্বের ম্যাচে চারটি গোল করে প্রমাণ করেছেন স্পেন দলে আবার বেশ ভালোভাবে ফিরে এসেছেন।

৫) যুব ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ: সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেবার আগে তিনি স্পেনের অনূর্ধ্ব-১৯, ২১, ২৩ প্রতিটি দল সামলিয়ে ছিলেন। তাই তিনি ১৬ বছর বয়সী আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় লামিন ইয়ামাল, ১৭ বছরের ডিফেন্ডার পাউ কিউবারসি এবং ২১ ও ২২ বছরের উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস ও অ্যালেক্স বায়েনাদের নিতে কুন্ঠা বোধ করেননি। তবে এদের সাথেও দলে রেখেছেন অভিজ্ঞ ড্যানি কারভায়াল, নাচো ফার্নান্দেজ, মার্কোস লরেন্টে, আলভারো মোরাতা ও হোসেলুদের যারা এই তরুণদের পথপ্রদর্শক হবেন।

৬) বড় টুর্নামেন্ট জেতার অভ্যাস: স্পেনের বিশ্বকাপ, ইউরো ও ন্যাশনস লিগ জেতার অভ্যাস আছে। বেশিরভাগ সময় তারা বিশ্বকাপ বা ইউরো বাছাই পর্বে শীর্ষস্থান অর্জন করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।

স্প্যানিশদের দুর্বলতা:

নিঃসন্দেহে ইউরো-২০২৪ এ স্পেনের জাতীয় দল শক্তিশালী প্রতিযোগী, তবে তাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে যা তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে।

১. রক্ষণভাগের দুর্বলতা: স্পেন ঐতিহাসিকভাবে বল দখলে‌ রেখে খেলার জন্য পরিচিত, কিন্তু এটি প্রায়ই তাদেরকে প্রতিপক্ষের কাউন্টার-অ্যাটাক থেকে গোল হজম করার ঝুঁকি তৈরি করে।

২. অনিয়মিত গোল স্কোরিং: স্পেনের প্রতিভাবান মিডফিল্ডার রয়েছে, তবে তারা বিশেষ করে সুশৃঙ্খল রক্ষণের বিপক্ষে গোল করবার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। গত বিশ্বকাপে মরক্কোর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা ৭৭ শতাংশ বল দখলে রেখে এক হাজারের উপরে পাস খেলেও গোলে শট নিতে পেরেছিল মাত্র একটি। যার ফলাফল ছিল মরক্কোর সাথে ০-০ গোলে ড্র করে পরবর্তীতে টাইব্রেকারে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়া।

৩. ট্রানজিশনে দুর্বলতা: বল দখলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ রক্ষা করবার‌ সময় তারা দ্রুত গতিতে রক্ষণ কাজে মনোনিবেশ করতে ব্যর্থ হয়। ঠিক তেমনি ভাবে রক্ষণ থেকে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে যেতে তারা সমর্থ্য হয় না।

৪. তরুণ এবং বয়স্ক খেলোয়াড়দের আধিক্য: দলের সম্ভাব্য ৩০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে আটজনের বয়স হচ্ছে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আরো আটজন খেলোয়াড় রয়েছেন যাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৮ বছরের ভেতর। সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড় হচ্ছেন ১৬ বছর বয়সের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় লামিন ইয়ামাল। পক্ষান্তরে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সী রাইট উইং ব্যাক জেসুস নাভাস। নাভাসের জায়গায় টটেনহ্যাম খেলা২৪ বছরের রাইট উইং ব্যাক‌ পেড্রো পোরো দলে আসতে পারতেন। সবমিলিয়ে দলের অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড় হয় কম বয়স্ক অথবা বেশি বয়সী। তাই ভারসাম্য রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। যে কোন এক গ্রুপের উপর বেশি নির্ভরতা দলগত রসায়ন এবং চাপের মধ্যে পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে।

৫. চোট সমস্যা ও অনভিজ্ঞতা: মূল খেলোয়াড় গাভি ইনজুরির কারণে ইতিমধ্যে দল থেকে ছিটকে গেছেন। গাভির পরিবর্তে যার উপর আক্রমণ রচনা করার দায়িত্ব থাকবে সেই পেদ্রিও ইনজুরি সমস্যায় ভুগছেন। অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংখ্যা দলে বেশি থাকায় অল্প কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের উপর চাপ পড়বে। এছাড়া গত এক দেড় বছরে এই দলের মূল একাদশে কারা থাকবে সেটা নিশ্চিত হয়নি।

৬. সেট-পিস ডিফেন্ডিং: স্পেনের সেট-পিসে দুর্বলতা রয়েছে। রক্ষণ কাজে সংগঠন এবং শারীরিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী দলগুলো ফায়দা লুটতে পারে।

 কোন ফর্মেশনে স্পেন খেলতে পারে:

লা ফুয়েন্তে এখন পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকা বেশিরভাগ সময় জাতীয় দলকে ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে খেলিয়েছেন। অর্থাৎ এখানে একজন বেশি আক্রমাত্মক মিডফিল্ডার থাকবেন। আর তিনি হতে পারেন সোসিয়েদাদের মিকেল মেরিনো, যিনি ডানদিক দিয়ে আক্রমণ করবেন বা ফ্যাবিয়ান রুইজ যিনি বামদিক দিয়ে আক্রমণ করবেন। মেরিনো এবং রুইজ দুজনেই রক্ষণাত্মক ভূমিকায় খেলতে পারেন। এই ফর্মেশনটি লুইস আরাগোনেসের কোচ হওয়ার সময় থেকেই স্পেন ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে, ফুল ব্যাকরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের মতো একই লাইনে অবস্থান করে। মিডফিল্ডের মাধ্যমে আক্রমণের জন্য এই পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাদের নিজস্ব খেলোয়াড়দের মধ্যে ত্রিভুজ তৈরি করা, যা তারা প্রায়শই প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করে

তবে তিনি ৪-২-৩-১ পদ্ধতি ও ব্যবহার করতে পারেন কারণ তিনি যখন অনূর্ধ্ব-২১ দলে ছিলেন তখন এটি প্রায়ই ব্যবহার করতেন। এই পদ্ধতিতে দলে না থাকা গাভির পরিবর্তে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন পেদ্রি। ফুয়েন্তের অধীনে পেদ্রি অতীতে এই অবস্থানে খেলেছেন বিশেষ করে ২০২১ সালের অলিম্পিক গেমসে। ২১ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় বর্তমানে হ্যামস্ট্রিং সমস্যার সাথে লড়ছেন, তবে আশা করা হচ্ছে তিনি সময়মত ফিরে আসবেন। দুইজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এই পদ্ধতিতে থাকবেন। দলে থাকা রদ্রি এবং জুবিমেন্ডির সাথে বাম পায়ের খেলোয়াড় রুইজ দলের প্রয়োজনে আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণ কাজেও সহায়তা করবেন।

 আমার দেখা স্পেনের সেরা খেলোয়াড়রা:

স্পেনের সেরা ৩০ জন খেলোয়াড় নির্বাচন করেছি যাদের খেলা আমি এখন পর্যন্ত দেখেছি:

গোলরক্ষক :-

১) ইকার ক্যাসিয়াস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৬৭, ক্লাব ম্যাচ: ৬২৬),

২) আন্দোনি জুবিজাররেতা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২৬, ক্লাব ম্যাচ: ৬২২) এবং

৩) সান্তিয়াগো ক্যানিজারেস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৬, ক্লাব ম্যাচ: ৪৬৫)।

রক্ষণভাগ :

রাইট উইং ব্যাক:

৪) মিচেল সালগাদো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪০৯, ক্লাব গোল: ৭। তিনি ৩১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান) এবং

৫) ড্যানিয়েল কারভায়াল (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৩, ক্লাব ম্যাচ: ৩০৮, ক্লাব গোল: ১০। তার বয়স এখন ৩২ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল খেলছেন) ।

সেন্টার-ব্যাক:

৬) সার্জিও রামোস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৮০, আন্তর্জাতিক গোল: ২৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৭৮, ক্লাব গোল: ৮১। তার বয়স এখন ৩৮ বছর এব তিনি এখনও ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন),

৭) ফার্নান্দো হিয়েরো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮৯, আন্তর্জাতিক গোল: ২৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫২৪, ক্লাব গোল: ১০৬),

৮) কার্লেস পুয়োল (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০০, আন্তর্জাতিক গোল: ৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৯২, ক্লাব গোল: ১২) এবং

৯) জেরার্ড পিকে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০২, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৩১, ক্লাব গোল: ৩১। তিনিও ৩১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান)।

লেফট উইং ব্যাক: 

১০) জর্দি আলবা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯৩, আন্তর্জাতিক গোল: ৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪০৬, ক্লাব গোল: ২৪। তিনি এখন ৩৫ বছর বয়সী এবং কেবল ক্লাব স্তরে খেলে যাচ্ছেন),

১১) সিজার আজপিলিকুয়েতা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৪, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫১৬, ক্লাব গোল: ১১। তিনি ৩৪ বছর বয়সে সব ধরণের ফুটবল খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন) এবং

১২) সের্গি বারজুয়ান (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৬, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৫২, ক্লাব গোল: ৬। তিনি ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন)।

মধ্য-মাঠ :-

রক্ষণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

১৩) জাবি আলোনসো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৪, আন্তর্জাতিক গোল: ১৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৯৪, ক্লাব গোল: ৩৩)

১৪) সার্জিও বুস্কেটস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৪৩, আন্তর্জাতিক গোল: ২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০৪, ক্লাব গোল: ১২। তিনি আন্তর্জাতিক স্তর থেকে অবসর নিয়েছেন কিন্তু ৩৫ বছর বয়সে ক্লাব ফুটবল খেলে যাচ্ছেন) এবং

১৫) রদ্রি হার্নান্দেজ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৯, আন্তর্জাতিক গোল: ৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৬৭, ক্লাব গোল: ২৫। তিনি মাত্র ২৭ বছর বয়সী এবং সব ধরনের ফুটবলে সক্রিয়)।

আক্রমণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

১৬) জাভিয়ের হার্নান্দেজ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৩৩, আন্তর্জাতিক গোল: ১৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০৫, ক্লাব গোল: ৫৮)

১৭) আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৩১, আন্তর্জাতিক গোল: ১১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৫৬, ক্লাব গোল: ৭৬)

১৮) ডেভিড সিলভা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২৫, আন্তর্জাতিক গোল: ৩৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৩৪, ক্লাব গোল: ৯১। তিনি ৩২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়ে দেন)

১৯) লুইস এনরিকে (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬২, আন্তর্জাতিক গোল: ১২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪০০, ক্লাব গোল: ১০২ তিনিও ৩২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেন)

২০) সেস ফেব্রেগাস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১০, আন্তর্জাতিক গোল: ১৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০০, ক্লাব গোল: ৮১। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন)

২১) জুয়ান মাতা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪১, আন্তর্জাতিক গোল: ১০ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২৪, ক্লাব গোল: ৮৮। তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়ে দেন)

২২) পেড্রো রদ্রিগেজ (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬৫, আন্তর্জাতিক গোল: ১৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৬৭, ক্লাব গোল: ১০৮। তিনি ৩০ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন কিন্তু ৩৬ বছর বয়সেও ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন)

২৩) সান্তি কাজোরলা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮১, আন্তর্জাতিক গোল: ১৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৫২, ক্লাব গোল: ৭৯। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেও ৩৯ বছর বয়সে ক্লাব ফুটবল যাচ্ছেন)

২৪) ইসকো অ্যালারকন (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৩৮, আন্তর্জাতিক গোল: ১২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৫৯, ক্লাব গোল: ৫৯। তিনি এখন মাত্র ৩১ বছর বয়সী কিন্তু ২৭ বছর বয়সে জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়েছেন) এবং

২৫) গাইজকা মেন্দিয়েতা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪০, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৪৫, ক্লাব গোল: ৫২। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন)।

ফরোয়ার্ড:-  

২৬) ডেভিড ভিয়া (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৫৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫০১, ক্লাব গোল: ২৭৮)

২৭) রাউল গনজালেস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০২, আন্তর্জাতিক গোল: ৪৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৬৪৪, ক্লাব গোল: ২৬৪। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়ে দেন)

২৮) ফার্নান্দো টরেস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১০, আন্তর্জাতিক গোল: ৩৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৭৮, ক্লাব গোল: ২০০। তিনি ৩০ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেন)

২৯) ফার্নান্দো মরিয়েন্তেস (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৭, আন্তর্জাতিক গোল: ২৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪১৮, ক্লাব গোল: ১৪৩। তিনি ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণ করেন) এবং

৩০) আলভারো মোরাতা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭১, আন্তর্জাতিক গোল: ৩৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৫৫, ক্লাব গোল: ১২১। তার বয়স মাত্র ৩১ বছর এবং সব ধরনের ফুটবলে সক্রিয় আছেন)।

সারাবাংলা/এসএস

ইউরো ২০২৪ স্পেন

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর