Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউরো ২০২৪: চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা ধরে রাখার লড়াই

মোঃ সাইফুল আলম তালুকদার
৯ জুন ২০২৪ ২৩:০১

ইউরো ২০২০ দুর্দান্ত পারফরম করে শিরোপা জিতে নিয়েছিল ইতালি। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইউরোপ সেরা হয়েছে মাত্র দুবার। তারা কি পারবে স্পেনের মতো পরপর দুবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হতে?

ইতালির প্রস্তুতি কেমন?

আর্জেন্টিনার কাছে ফিনালিসিমাতে ০-৩ গোলে পরাজিত হবার পর থেকে ইতালির দিনকাল খুব বেশি ভালো যাচ্ছে না। ফিনালিসিমার পর থেকে এই পর্যন্ত ইতালি ২১টি ম্যাচ খেলে ৫টিতে পরাজয় আর ৫টিতে ড্র করেছে, অর্থাৎ জয় পেয়েছে মাত্র ৫২ শতাংশ ম্যাচে। প্রতি ম্যাচে ১.৭৫টি গোল করার পাশাপাশি ১.১৫টি গোল হজম করেছে। এই পরিসংখ্যানে উদ্বিগ্ন হবার কারণ ছিল না যেহেতু ইউরোপে অল্প কয়েকটি দল বাদে সবার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। তবে যখন আপনি জানবেন জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং স্পেনের মত বড় দলগুলোর সাথে খেলা সর্বশেষ ৬টি ম্যাচের মাত্র ১টিতে ইতালি জয় তুলে নিতে পেরেছিল। ২টিতে ড্র করতে পারলেও পরাজয় জুটে ছিল ৪টি ম্যাচে। জার্মানির সাথে একটি ম্যাচে হেরেছে ২-৫ গোলের ব্যবধানে আরেকটি হেরেছিল ১-৩ গোলে ইংল্যান্ডের কাছে। তবে শংকার ব্যাপার হলো ৯ মাস আগে নিয়োগ পাওয়া নতুন কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি এখনো দলের মূল একাদশ ঠিক করতে পারেননি।‌

৫৩ বছর বছর পর ইতালিকে ইউরো শিরোপা জেতানো কোচ রবার্তো ম্যানচিনি সৌদি পেট্রো ডলারের হাতছানিতে গত বছরের আগস্টে দল ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে ইতালি কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়েছে। ৫ বছর তার অধীনে থাকা ইতালি এক সময় ৩৭টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল। ২০২১ সালে ইউরো-২০২০ জেতার পথে সেরা গোলের পার্থক্য, সর্বাধিক শট এবং সর্বাধিক চেষ্টা করা দলে পরিণত করেছিলেন ইতালিকে। আবার ২০২২ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার ব্যর্থতাও ম্যানচিনির সঙ্গী হয়েছিল। তবে ইতালির ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠার ইতিহাস রয়েছে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছিল ক্যালসিওপলি কেলেঙ্কারিকে পেছনে ফেলে আর ১৯৮২ বিশ্বকাপ জয় করার আগে তাদের প্রথম রাউন্ডের ৩ ম্যাচে কোন‌ জয় ছিল না! তাই তারা যেকোন সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কোচ স্পালেত্তির রয়েছে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা, যেটা নিঃসন্দেহে কাজে লাগবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি রবার্তো ব্যাজিও, দেল পিয়েরো, জিয়ান্নি রিভেরা, ফ্রান্সেস্কো টট্টি এবং জিয়ানকালো আন্তোগনোনি একটি প্রশিক্ষণ সেশনের আগে ইতালির খেলোয়াড়দের সাথে দেখা করে ইতিবাচক এবং উত্সাহজনক বার্তা প্রদান করেন । রিভেরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার পরামর্শ দেন। ব্যাজিও বলেছেন খেলোয়াড়দের ইতালীয় শার্টের মূল্য দিতে হবে, না হলে তারা জায়গা হারাবে। ব্যাজিওর প্রাক্তন জুভেন্টাস সতীর্থ দেল পিয়েরো যোগ করেন: ‘এটা সত্য যে চাপ আছে, তবে আপনার কাছে এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ এবং আপনি যদি বড় হতে চান তখন হাসির সাথে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির ফর্মেশন ও ট্যাকটিকস কেমন হতে পারে?

ইতালির দায়িত্ব নেবার আগে স্পালেত্তি ৯টি ক্লাব দলকে কোচিং করিয়েছেন, যার মধ্যে তার সেরা সাফল্য হচ্ছে নেপোলিকে ৩৩ বছর পর ২০২২-২৩ মৌসুমে ইতালীয় লিগের শিরোপা জেতানো।‌ এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে উদিনিসিকে চোখ ধাঁধানো ফুটবলের মাধ্যমে ২০০৪-০৫ সালে ইতালিয়ান লিগে চতুর্থ স্থান অধিকার করে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ করে দেয়া। ১৯৯৭-৯৮ সালে তার অধীনে ইন্টারমিলান অল্পের জন্য লিগ শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। তিনি রাশিয়ার জেনিথ সেন্ট পিটার্সবার্গকে ২ বার রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতিয়ছেন। তার অধীনে এখন পর্যন্ত দলগুলো এক হাজারের উপরে ম্যাচ খেলেছে।

স্পালেত্তির পছন্দের ফর্মেশন ৪-২-৩-১ যা তিনি রোমার জন্য ব্যবহার করতেন ২০০৫-০৬ মৌসুমে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৬-০ তে রুপ লাভ করত। তার ফর্মেশনে স্ট্রাইকার না থাকলেও চলে! ইউরো- ২০২৪ এর জন্য নীচে দেয়া ২৮ জনের ইতালীয় সম্ভাব্য দলে স্বীকৃত স্ট্রাইকার মাত্র ২ জন (স্কামাক্বা ও রেতেগুই)।‌ গত ৪ঠা জুন তুরস্কের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে দলকে খেলাতে দেখা গিয়েছে।‌ অর্থাৎ যেখানে থাকবে ৪ জন ডিফেন্ডার, ২জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, ২ জন উইঙ্গার, ১ জন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবং ১ জন স্ট্রাইকার।

বিজ্ঞাপন

তবে নেপোলির হয়ে লিগ শিরোপা জয়ের পথে ২০২২-২৩ সালে তিনি ৪-৩-৩ ফর্মেশন ব্যবহার করেছেন। ইতালি ফুটবল দলের রক্ষণাত্মক খেলার‌ দুর্নাম থাকলেও স্পালেত্তি সাধারণত আক্রমণাত্মক দল সাজাতে পছন্দ করেন। যদিও তিনি নিজে তার কোচিং দর্শন বর্ণনা করতে বলেছেন, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা অনুযায়ী দল সাজানো হচ্ছে তার মূল কাজ‌ এবং দ্রুতগতিতে তার বাস্তবায়ন যার জন্য প্রয়োজন সাহস যতই আপনি চাপে থাকুন না কেন।

তিনি আরেকটি ফর্মেশন ৩-৫-২ ব্যবহার করতে পারেন কারণ তার সেন্ট্রাল-ডিফেন্ডার এবং কিছু ফুল-ব্যাকের গড় উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির কাছাকাছি। এই পদ্ধতিতে তারা আক্রমণাত্মক মানসিকতা থেকে অতি প্রতিরক্ষামূলক দলে রূপান্তরিত হবে। লম্বা ডিফেন্ডারদে কাজে লাগানোর জন্য, তিনি ৩-৪-২-১ ফর্মেশন বেছে নিতে পারেন যা তিনি মার্চ মাসে পরীক্ষা করেছিলেন

 

ইতালি দল

গোলরক্ষক: জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা (পিএসজি), অ্যালেক্স মেরেট (নাপোলি), গুগলিয়েলমো ভিকারিও (টটেনহ্যাম) এবং ইভান প্রোভেদেল (লাজিও)।

রাইট ব্যাক: জিওভানি ডি লরেঞ্জো (নাপোলি), মাত্তেও ডারমিয়ান (ইন্টারমিলান) এবং রাউল বেলানোভা (টোরিনো)।

সেন্ট্রাল-ডিফেন্ডার: আলেসান্দ্রো বাস্তোনি (ইন্টারমিলান), জিয়ানলুকা মানচিনি (রোমা), আলেসান্দ্রো বুওঙ্গিওরিনো (টোরিনো) এবং রিকার্ডো ক্যালাফিওরি (বোলোগনা)।

লেফট ব্যাক: ফেদেরিকো ডিমারকো (ইন্টারমিলান) এবং আন্দ্রেয়া ক্যাম্বিয়াসো (জুভেন্টাস)।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: জর্জিনহো ফিলহো (আর্সেনাল), ব্রায়ান ক্রিস্তান্তে (রোমা), নিকোলো ফাগিওলি (জুভেন্টাস) এবং স্যামুয়েল রিকি (টোরিনো)।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: নিকোলো বারেলা (ইন্টারমিলান), লরেঞ্জো পেলেগ্রিনি (রোমা), গিয়াকোমো রাসপাডোরি (নাপোলি), ডেভিড ফ্রাটেসি (ইন্টারমিলান) এবং মাইকেল ফোলোরুনশো (হেলাস ভেরোনা)।

উইঙ্গার: ফেদেরিকো চিয়েসা (জুভেন্টাস), স্টেফান এল শারাউই (রোমা), রিকার্ডো ওরসোলিনি (বোলোগনা) এবং মাতিয়া জাকাগনি (লাজিও)।

ফরোয়ার্ড: জিয়ানলুকা স্কামাক্কা (আটালান্টা) এবং মাতেও রেতেগুই (জেনোয়া)।

কারা কারা বাদ পড়েছেন:

উপরের সম্ভাব্য ২৮ জন দলে কেবল ৯ জন গত ইউরো জয়ী দলের সদস্য আছেন। ৩৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ  রাইট ব্যাক আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি ইতালির স্কোয়াডে নির্বাচিত হননি তার ফিটনেস সমস্যার জন্য ৩৬ বছরের ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ফ্রান্সেসকো অ্যাকারবি বাদ পড়েছেন বয়স এবং কুঁচকির আঘাত সমস্যায়, যদিও তিনি এখনো ফুটবল থেকে বিদায় নেননি। ২০ বছর বয়সী আরেক ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ইউরোপা লিগ জয়ী আটালান্টার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জর্জিও স্কালভিনি প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা পেলেও এসিএল ইনজুরির‌ তাকে দল থেকে ছিটকে ফেলেছে।

তরুণ নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত টটেনহামের ২১ বছর বয়সী ডেসটিনি উদোগিও বাদ পড়েছেন উরুর সমস্যা জনিত কারণে।‌ ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার উদোগি লেফট ব্যাক পজিশনে খেলেন।‌ তবে ডিফেন্স লাইনে উল্লেখযোগ্য বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন গত ইউরো জয়ী দ্রুতগতি সম্পন্ন ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার লেফট ব্যাক লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলা। ৩১ বছর বয়সের এই অভিজ্ঞ এই লেফট ব্যাক মাঠের দুই প্রান্তেই খেলতে পারেন। তিনি বাদ পড়েছেন মূলত তার ফিটনেস এবং ফর্ম নিয়ে চলমান সমস্যার কারণে। ইনজুরির কারণে গত মৌসুমে তিনি রোমার সাথে মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেলেন যা রোমার সাথে অমীমাংসিত চুক্তির পরিস্থিতির কারণে তার আত্মবিশ্বাস এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্সে পতন ঘটায়।।

তবে আমার কাছে অবাক লেগেছে ডিফেন্সিভ মিডিও ম্যানুয়াল লোকাটেলির বাদ পড়াটা। তিনি মার্চ মাসেও ইতালির হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন। ডিফেন্সের পাশাপাশি আক্রমণও করতে পারতেন ২৬ বছর বয়সী অভিজ্ঞ লোকাটেলি, যিনি গত ইউরো জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। কারণ বিশ্লেষণে জানা গেছে তিনি গত মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে ৪০টি ম্যাচ খেলে ১টি গোল ও ৬টি গোলে সহায়তা করলেও তার পারফরম্যান্স কোচের মন ভরেনি। আসলে ২৩ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে জুভেন্টাসের ইতালিয়ান লিগে তৃতীয় হওয়া হচ্ছে মূল কারণ। একটি অনুমিত বাদ পড়ার তালিকায় থাকা নিউক্যাসেলের ২৪ বছর বয়সী মেজ্জালা টাইপ খেলোয়াড় সান্দ্রো টোনালি ঠিকই বাদ পড়েছেন শৃঙ্খলা জনিত কারণে।‌ বেটিংয়ে অভিযুক্ত টোনালি বর্তমানে ১০ মাসের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন।

মধ্য মাঠের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হল সাসুলোর গত ইউরো জয়ী ২৯ বছরের বাম পায়ের (যিনি ডান প্রান্তে উইঙ্গার হিসেবে খেলেন) খেলোয়াড় ডোমেনিকো বেরার্দি, যিনি একিলিস টেন্ডন ইনজুরিতে আক্রান্ত। তার ইনজুরি এতটাই মারাত্মক যে তিনি আগামী বছরের আগে মাঠে ফিরতে পারবেন না। মাইক্রো ফ্র্যাকচারে জর্জরিত আরেক উইঙ্গার ২৪ বছরের নিকোলো জেনিওলো বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন যিনি খেলছেন অ্যাস্টনভিলাতে। কাতারি লিগে চলে যাওয়া ৩১ বছরের মার্কো ভেরাত্তি দলে জায়গা পাননি ফিটনেস সমস্যার কারণে। গত ইউরো জয়ী এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার গত বছর পর্যন্ত পিএসজির হয়ে খেলেছিলেন।

ফরোয়ার্ড লাইনে জায়গা হয়নি ২৪ বছরের ময়েস কিনের। জুভেন্টাসের এই খেলোয়াড় ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৯টি ক্লাব ম্যাচে কোন গোল পাননি। ইনজুরির তালিকায় রয়েছেন দলের এক নম্বর গোলকিপার জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা, ফলে কোচ বাধ্য হয়ে ২৮ জনের তালিকায় ৪ জন গোলরক্ষক রেখেছেন।‌

ইতালির শক্তি কেমন?

বড় দলের তকমা: ঐতিহ্যগতভাবে ইতালি একটি শক্তিশালী দল। ৪টি বিশ্বকাপ ও ২টি ইউরো জেতা দলের বিপক্ষে যারা লড়াই করবে তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। বিশ্বকাপ এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মিলিয়ে ইতালিল ১০টি ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কৌশলগতভাবে শক্তিশালী: কৌশলের দিক থেকে ইতালির সবসময় এগিয়ে থাকে বিশেষ করে ডিফেন্সকে শক্ত রেখে তারপর প্রতি আক্রমণে মনোযোগী হয়। ফলে যারা বল পজেশন বেশি রেখে বা আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করে তাদের পক্ষে অনেক সময় ইতালির ডিফেন্স ভাঙ্গা কঠিন হয়ে পড়ে।

দৃঢ় প্রতিরক্ষা ভিত্তি: যদিও বর্তমান ইতালির রক্ষণভাগে অভিজ্ঞতা কম, তবুও ঐতিহ্যের উপর ভর করে তাদের শক্তিশালী এবং দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডাররা এবারও রক্ষণ প্রাচীর গড়ে তুলতে পারে।‌ ৬ ফুটের উপর কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন যারা রাইট বা লেফট ফুলব্যাক হিসেবে খেলবেন তারা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতেও পারঙ্গম।

শক্তিশালী রক্ষণাত্মক ও সৃজনশীল মিডফিল্ডের সমন্বয়: এবারের দলটিতে তরুণ কিন্তু শক্তিশালী রক্ষণাত্মক ও সৃজনশীল মিডফিল্ডের সমন্বয় ঘটিয়েছে ইতালি। সম্ভাব্য ২৮ জনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী এই দলটির গড় বয়স ২৬.৩ বছর। জর্জিনহো, ক্রিস্তান্তে, ফাগিওলি, রিকি, বারেল্লা, পেলেগ্ৰিনিরা বর্তমান ফুটবলের সাথে তাল মিলিয়ে অলরাউন্ডারদের মত খেলতে পারেন, যাদের মেজ্জালা নামে ডাকা হয় এবং তারা কঠিন পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত।‌ মেজ্জালারা রক্ষণ এবং আক্রমণ দুটো কাজেই পারদর্শী। বারেল্লা এবং জর্জিনহো মিডফিল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং তারা ইতিমধ্যে সর্বমোট ১০৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।‌ এছাড়াও দলটিতে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ এবং প্রতিশ্রুতিশীল উইঙ্গার রয়েছেন। যেমন আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিজ্ঞ শারাউই ও চিয়েসা সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৭৭টি। অন্যদিকে দলে নবীন কিন্তু ক্লাব ফুটবলে অভিজ্ঞ ওরসোলিনি ও জ্যাকাগনি ইতিমধ্যে সর্বমোট ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন ৩৮৯টি।‌ এই দলটি প্রয়োজন পড়লে বল পজেশন বেশি রেখেও খেলতে পারবে।

ইতালির দুর্বলতা:

ধারাবাহিকতার অভাব: ইতালি ২০১৮ ও ২০২২ সালে পরপর দুটি বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অধুনা বড় দলগুলোর বিরুদ্ধেও তারা বেশ কয়েকটি ম্যাচ হেরেছে। তাই শুরুর দিকে তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকতে পারে।‌

গ্রুপ অফ ডেথ: ইতালিকে এবার গ্রুপ-বি তে শক্তিশালী স্পেন ও ক্রোয়েশিয়ার সাথে লড়তে হবে, যা গ্রুপ অফ ডেথ নামে পরিচিত। অর্থাৎ এই দুটি দলের সাথে ভালো খেলতে না পারলে তাদের গ্রুপ পর্যায় থেকে বিদায় নেবার সম্ভাবনা রয়েছে। স্পেনের বিরুদ্ধে ইতালি সর্বমোট ৩৮টি ম্যাচ খেলে ১৩টিতে হেরেছে আর জয় পেয়েছে ১১টিতে। গোল করার ক্ষেত্রেও স্পেন ইতালির চেয়ে এগিয়ে আছে। ক্রোয়েশিয়ার সাথে অবশ্য ইতালি ৯টি ম্যাচের ভেতরে জয় পেয়েছে ৩টিতে আর হেরেছে ২টিতে। গোল সংখ্যায় এগিয়ে ইতালি‌।

ইনজুরি, সাসপেনশন এবং অনভিজ্ঞতা: আমার দেয়া উপরের তালিকা অনুযায়ী ১১ জন খেলোয়াড় যারা ইনজুরি, সাসপেনশন এবং পারফরমেন্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগ বেশ প্রতিশ্রুতিশীল এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিলেন। সব মিলিয়ে তাদের সবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সংখ্যা ২৭৮টি, মানে তারা গড়ে ২৫টি ম্যাচ খেলেছে। অন্য দিকে, নির্বাচিত ২৮ সদস্যরা গড়ে ম্যাচ খেলেছে মাত্র ১৯টি। দলে ১৪ জন সদস্য রয়েছেন যারা ১০টির কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন

ফরোয়ার্ডদের দুর্বলতা: গোল লাইনের সামনে ইতালিয় ফরোয়ার্ডদের দুর্বলতা চিরায়িত সমস্যা। তাদের সেরা স্কোরার, লুইগি রিভা গোল করেছেন মাত্র ৩৫টি, যেখানে অন্য দলের ফরোয়ার্ডদের গোল সংখ্যা ৬০-৭০টি। আমাদের সময়কার ইতালির সেরা ফরোয়ার্ড ব্যাজিওর গোল মাত্র ২৭টি। এই সমস্যা থাকার পরেও কোচের ট্যাকটিকসের কারণে বর্তমান দলে প্রথাগত স্ট্রাইকার রয়েছে মাত্র ২-৩ জন। ইউরোপা লিগ বিজয়ী আটালান্টার স্কামাক্কা এই পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে গোল করেছেন মাত্র ১টি। আরেক স্ট্রাইকার রেতেগুই অবশ্য ৪ গোল করেছেন ৭ ম্যাচে, যিনি আর্জেন্টিনা দল ছেড়ে ইতালি দলে সুযোগ পেয়েছেন গত বছর।

আমার দেখা ইতালির সেরা খেলোয়াড়রা:

আমার দেখা ইতালির সেরা ৩৪ জন খেলোয়াড় নির্বাচন করেছি যাদের খেলা আমি এখন পর্যন্ত দেখেছি:

গোল-রক্ষক :

১) জিয়ানলুইজি বুফন (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৭৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৬৭৪),

২) ওয়াল্টার জেঙ্গা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৮, ক্লাব ম্যাচ: ৪১৬) এবং

৩) জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬১, ক্লাব ম্যাচ: ২৯৫। তার বর্তমান বয়স মাত্র ২৫ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন)।

রক্ষণ-ভাগ :

রাইট উইং ব্যাক:

৪) ক্রিশ্চিয়ান পানুচ্চি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৮১, ক্লাব গোল: ৪১),

৫) জিয়ানলুকা জামব্রোটা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১০০, আন্তর্জাতিক গোল: ২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪১৪, ক্লাব গোল: ১৮) এবং

৬) আন্তোনিও বেনাররিভো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ২৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৫৮ এবং ক্লাব গোল: ৫। তিনি ২৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন)।

সেন্টার-ব্যাক:

৭) ফ্রাঙ্কো বারেসি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮১, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৩২, ক্লাব গোল: ১৬),

৮) ফ্যাবিও ক্যানাভারো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৩৬, আন্তর্জাতিক গোল: ২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫১৫, ক্লাব গোল: ১৪),

৯) লিওনার্দো বোনুচ্চি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২১, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪৬, ক্লাব গোল: ৩৩),

১০) আলেসান্দ্রো নেস্তা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৪৮, ক্লাব গোল: ৮ । তিনি ৩০ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে বিদায় নেন),

১১) জর্জিও চিয়েলিনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৬৩, ক্লাব গোল: ২৮),

১২) আন্দ্রেয়া বারজাগলি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৭০, ক্লাব গোল: ১০) এবং

১৩) জিউসেপ বার্গোমি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৮১, আন্তর্জাতিক গোল: ৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫১৭, ক্লাব গোল: ২৪)।

লেফট উইং ব্যাক: 

১৪) পাওলো মালদিনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১২৬, আন্তর্জাতিক গোল: ৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৬৪৭, ক্লাব গোল: ২৯) এবং

১৫) ফ্যাবিও গ্রসো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৫৯, ক্লাব গোল: ১৪)।

মধ্য-মাঠ :

রক্ষণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

১৬) দিমিত্রিও আলবার্টিনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৯, আন্তর্জাতিক গোল: ৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৬৩, ক্লাব গোল: ২৬। তিনি ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন),

১৭) জেন্নারো গাত্তুসো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৭৩, আন্তর্জাতিক গোল: ১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪২০, ক্লাব গোল: ৫৭) এবং

১৮) দিনো ব্যাজিও (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬০, আন্তর্জাতিক গোল: ৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৩৯, ক্লাব গোল: ২৫। তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন)।

আক্রমণাত্মক মিড-ফিল্ডার:

১৯) আন্দ্রেয়া পিরলো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৬, আন্তর্জাতিক গোল: ১৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫৫৩, ক্লাব গোল: ৫৯),

২০) ড্যানিয়েল ডি রসি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৭, আন্তর্জাতিক গোল: ২১ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৬৪, ক্লাব গোল: ৪৩),

২১) ফ্রান্সেসকো টট্টি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৮, আন্তর্জাতিক গোল: ৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ৬১৯, ক্লাব গোল: ২৫০। তিনি ৩০ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেন),

২২) মাউরো ক্যামোরানেসি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৫, আন্তর্জাতিক গোল: ৪ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৬১, ক্লাব গোল: ২৬),

২৩) রবার্তো ডোনাডোনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৬৩, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৯৭, ক্লাব গোল: ২৬),

২৪) ক্লাউদিও মার্সিসিও (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৫, আন্তর্জাতিক গোল: ৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩০৪, ক্লাব গোল: ৩৫),

২৫) ফেদেরিকো বার্নার্ডেচি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৩৯, আন্তর্জাতিক গোল: ৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৬৩, ক্লাব গোল: ৪১। এই বাঁ পায়ের খেলোয়াড় ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন),

২৬) নিকোলো বারেলা (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৩, আন্তর্জাতিক গোল: ৯ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৭১, ক্লাব গোল: ২২। তার বর্তমান বয়স মাত্র ২৭ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন),

২৭) আন্দ্রেয়া বেলোত্তি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৪, আন্তর্জাতিক গোল: ১২ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৩০, ক্লাব গোল: ১১২। তার বর্তমান বয়স ৩০ বছর এবং সব ধরনের ফুটবল খেলে যাচ্ছেন),

২৮) ডোমেনিকো বেরার্দি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ২৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৮ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩১৪, ক্লাব গোল: ১২২। বাঁ পায়ের এই খেলোয়াড় মাত্র ২৯ বছরের এবং সব ধরনের খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন) এবং

২৯) জিউসেপ জিয়ানিনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৭, আন্তর্জাতিক গোল: ৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৩৮, ক্লাব গোল: ৫১। মাত্র ২৭ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন তিনি)।

রোয়ার্ড:

৩০) রবার্তো ব্যাজিও (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৬, আন্তর্জাতিক গোল: ২৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪৫২, ক্লাব গোল: ২০৫),

৩১) আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৯১, আন্তর্জাতিক গোল: ২৭ ও ক্লাব ম্যাচ: ৫২৬, ক্লাব গোল: ২১২),

৩২) ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৯, আন্তর্জাতিক গোল: ২৩ ও ক্লাব ম্যাচ: ২৯৫, ক্লাব গোল: ১৬৯),

৩৩) ফিলিপ্পো ইনজাঘি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৫৭, আন্তর্জাতিক গোল: ২৫ ও ক্লাব ম্যাচ: ৩৭০, ক্লাব গোল: ১৫৬) এবং

৩৪) লুকা টনি (আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ৪৭, আন্তর্জাতিক গোল: ১৬ ও ক্লাব ম্যাচ: ৪০২, ক্লাব গোল: ১৯৪)।

সারাবাংলা/এসএস

ইউরো ২০২৪ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব ইতালি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর