চেন্নাই টেস্ট: আমাদের বোলাররা পেরেছেন ব্যাটাররা পারেন নাই
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৬
চেন্নাই টেস্টের চতুর্থ ইনিংস নিয়েই বলছি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ম্যাচের তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন।
আমাদের দুই ওপেনার অতটা অভিজ্ঞ না। তিরিশের ঘরে গিয়ে কিভাবে নিজেকে ফিফটি প্লাস বড় ইনিংসে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় তা ভালোভাবে শিখতে হয়তো আরো সময় লাগবে তাদের। এর আগে তাদের করা দুয়েকটা বড় স্কোর “অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন” বলার জন্য যথেষ্ট না।
এবার আসেন মমিনুল, মুশফিকে। সিম্পলি ইরেসপন্সিবল ছিলেন তারা। মুমিনুল হয়তো খুব ভালো একটা বলে বোল্ড হয়ে গেছেন কিন্তু দুই ইনিংসেই ইন্ডিয়ান শার্প বোলিংয়ের বিপক্ষে তার টেকনিক ছিলো দুর্বল। বডি ল্যাংগুয়েজ তো পুরাই নেগেটিভ।
আর, টেস্ট ব্যাটিংয়ে আমাদের মূল স্তম্ভ মুশিকে এখনো চেনা-ই হলো না আমাদের। কখন, কোন পরিস্থিতিতে যে তার ব্যাটের মুড সুইং হয় তা বুঝতে পারি না আমরা। হাতে দুই দিন পেয়ে ৫০০ প্লাস রান ধাওয়া করতে নেমে শান্ত’র অ্যাটাকিং অ্যাপ্রোচ কাজে লেগে যাচ্ছিলো দেখে তিনি (মুশফিক) কেন ইন্সপায়ার্ড হয়ে যাবেন? বাংলাদেশের টেস্ট দলে শান্ত কি তার আগে ঢুকেছেন? শান্ত কি অনুকরণীয় ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন বাংলাদেশি “লিটল মাস্টার” এর জন্যও ?
মোট কথা, মুশফিকের কাছ থেকে ঠান্ডা মাথায় ধীর গতির একটা সংযমী ইনিংস প্রত্যাশা করেছিলাম আমরা যা তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
বলের লাইনে মাথার পজিশন ঠিক রাখতে কাঁধ থেকে টেনে আনা ফিতা কামড় দিয়ে ব্যাট করা সাকিব চেয়েছিলেন শান্তর সঙ্গে লম্বা একটা জুটি গড়তে। অনেকক্ষণ ক্রিজে থেকেও শেষমেশ পারেননি। সাকিবের স্কিল, টেকনিক পুরাপুরিই তার মুড আর টেম্পারামেন্ট নির্ভর। তিনি বিরল প্রজাতির ক্রিকেটার যাকে অন্যদের মতো করে ব্যাখ্যা করা যায় না ৷ দেশের প্রয়োজনে তাকে দলে এখনও অনেক দরকার তবে ইনজুরি আড়াল করে কাউকেই একাদশে রাখা ঠিক না সে যদি ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, রাহুল দ্রাবিড় বা শচিন টেন্ডুলকারও হয়।
লিটনের অ্যাপ্রোচ শুরু থেকেই ছিলো ভুল। যাকে নিয়ে হতাশা ঢেকে রাখতে পারেন নাই আমাদের কমেন্টেটর আতহার আলী খান। সমালোচনায় তার সাথে নীরব সমর্থন ছিলো কম-বক্স মেইট রবি শাস্ত্রী-দীনেশ কার্ত্তিকদেরও ৷ তবে, পাকিস্তানে খেলে আসা লিটনের সেই যুদ্ধ-সুদর্শন ইনিংস দিয়ে অন্য সব দিনের লিটন দাসকে মাপা-ও ঠিক না। তিনি যেভাবে খেলতে চেয়েছেন চেন্নাইতে বা যেভাবে আউট হয়েছেন..এটাই তার খেলার ধরণ। ন্যাচারাল। এভাবে, এই অ্যাপ্রোচে লিটন হয়তো দশ ইনিংসে সাতবার ডোবাবেন দলকে তিন দিন তার প্রশংসায় ভাসবে ক্রিকেট দুনিয়া।
এখন, এতদিন পরে হলেও লিটনকে বুঝতে হবে তার কাছ থেকে আমাদের প্রয়োজন দলের জন্য সাতটা কার্যকর ইনিংস তাতে বাহারী শট আর ক্লাসিক স্ট্রোকস খুব একটা থাকুক আর না থাকুক।
এলিভেটেড শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যাওয়া মিরাজকে নিয়ে নেগেটিভ কিছু বলতে পারবো না। কারন, তার সঙ্গে-পরে আর কোনো ব্যাটার অবশিষ্ট ছিলো না, বোলারদের ব্যাটিংয়ে আসা-যাওয়া শুরু হয়ে গেছে তখন। মিরাজ ফাইটার। পজিটিভ থাকা তার স্বভাবগত। ব্যাটিংয়ে অন্তত গত দুইটা বছর নিজেকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে এসেছেন তিনি।
চেন্নাই টেস্ট শুরুর দু’দিন আগেই লিখেছিলাম (একই মতামত অনেকেরই ছিলো) পাকিস্তানের সিরিজ সাফল্য দিয়ে ইন্ডিয়া সিরিজকে মাপা ভুল হবে। ইন্ডিয়ার বিপক্ষে জয় তো দূরে.. অন্তত একটা ড্রয়ের আশা করলেও হান্ড্রেড টেন পারসেন্ট বা তারও বেশি কন্ট্রিবিউট করতে হবে আমাদের প্লেয়ারদের।
হ্যাঁ, আমাদের বোলাররা পেরেছেন। ব্যাটসম্যানরা পারেন নাই। যে দেশেই খেলা হোক বেশিরভাগ দিন তারা তা পারেনও না। একদিন জ্বলে ওঠে চারদিন নিভে যাওয়া ব্যাটিংয়ে আমাদের স্টার-সুপারস্টাররা অভ্যস্ত সেই আদিকাল থেকে!
লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া বিশ্লেষক।
সারাবাংলা/এসএইচএস