কার হাতে সোনার বল?
৯ জুন ২০১৮ ১৬:৫৩ | আপডেট: ৯ জুন ২০১৮ ১৭:২৬
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
একটি বিশ্বকাপের সাথে মিশে থাকে অজস্র গল্প। একটি দল জিতে যায় বিশ্বকাপ। সেই সাথে রচিত হয় অংশগ্রহণকারী ফুটবলারদের জীবনের বিভিন্ন না ভোলা মুহূর্ত। ইতিহাসে জায়গা করে নেয় অনেকের নাম। সাধারণ কোন দলের কারো অসাধারণভাবে জ্বলে উঠা কিংবা অসাধারণ কারো আরও অসাধারণ হয়ে উঠার সাক্ষী হয়ে থাকে বিশ্বকাপ। সেই সব মানুষদের একটা তালিকা বানায় ফিফার টেকনিক্যাল কমিটি প্রতিবার বিশ্বকাপ শেষে। সেখান থেকে মিডিয়া কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে বিশ্ব বেছে নেয় সেই বিশ্বকাপের সেরা পারফর্মারকে। তার হাতে উঠে গোল্ডেন বল। সেই মানুষটির জায়গা হয় পেলে, গারিঞ্চা, ইয়োহান ক্রুইফ, ববি চার্ল্টন, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোমারিও, রোনালদো, জিদানদের পাশে।
লিওনেল মেসি
লিওনিল মেসির ওপর আর্জেন্টিনা যতটা নির্ভর করে, খুব সম্ভবত আর কোনো খেলোয়াড়ের ওপরেই কোনো নির্দিষ্ট দেশ এতোটা নির্ভরশীল নয়। ২০১৭-১৮ মৌসুমে বার্সার হয়ে ৫৪ ম্যাচে ৪৫ গোল করা মেসি এবারও গোল্ডেন বলের বড় দাবিদার। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ০-১ এ পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনাকে হ্যাট্রিক করে রাশিয়ায় যাওয়ার পথ গড়ে দেয় মেসি। গত বিশ্বকাপের পরে ২০১৫-১৭ এ তিন বছরে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির গোলসংখ্যা ৩৬ ম্যাচে ১৬।
নেইমার
চার বছর আগের বিশ্বকাপে অন্য কেউই বোধহয় এতটা চাপ নিয়ে খেলেনি, ২২ বছর বয়সে যেটা নেইমারকে করতে হয়েছিল। ইঞ্জুরির কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার আগে নেইমার দেখিয়েছিল কেন সে ব্রাজিলের বর্তমান প্রজন্মের সবার সেরা। মৌসুমে পিএসজির হয়ে ৩০ ম্যাচে এ ব্রাজিলিয়ানের গোলসংখ্যা ২৮। ২০১৫-১৭ এ তিন বছরে ব্রাজিলের জার্সি গায়েও উজ্জ্বল ছিল নেইমার (২৩ ম্যাচে ১১ গোল)।
কেভিন ডি ব্রুইন
গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটির তারার হাটে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম কেভিন ডি ব্রুইন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে সিটির হয়ে ৫১ বার মাঠে নেমে বল জালে জড়িয়েছেন ১২ বার। সিটির হয়ে গার্দিওলার তত্ত্বাবধানে তার যে মানোয়ন্নয়ন হয়েছে তা বিশ্বকাপের মত জায়গায় দেখাতে পারলে অন্য দল্গুলোর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়তেই থাকবে। ২০১৫-১৭ এ তিন বছরে দেশের হয়ে ২৭ ম্যাচে ৫ গোল করেছে এ ২৬ বছর বয়সী।
পল পগবা
ফ্রান্সের মধ্যমাঠের সবচেয়ে বড় ভরসা পল পগবা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে গেল মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে মাঠে নেমে গোল পেয়েছে ৬ বার। পরিপূর্ণ মিডফিল্ডার যদি ফ্রান্সের হয়ে রাশিয়ায় নিজের সেরাটা দিতে পারে তাহলে এমন অসাধারণ দল নিয়ে পেছনে আর ফিরে তাকাতে হবে না ফরাসিদের। ২০১৫-১৭ এ তিন বছরে দেশের প্রতিনিধিত্ব ২৭ ম্যাচে করে গোল পেয়েছেন ৩ বার। মূলত মাঝমাঠকে আগলে রেখে আক্রমণে দলকে বলের জোগান দেওয়াই পল পগবার ফ্রান্স দলের মূল কাজ।
টমাস মুলার
২০১০ বিশ্বকাপে ৫ গোল করে গোল্ডেন বুট আর সেরা তরুণ খেলোয়াড় এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে আবারো ৫ গোল করে বিশ্বকাপ আর সিল্ভার বুট জেতা টমাস মুলারের মত পরিপূর্ণ রডময়টার বর্তমান বিশ্বে কেউই নেই। জার্মানির হয়ে ফলস নাইন পজিশনে খেলা মুলার রাশিয়ায় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আর জার্মানদের নেতা নাম। বিগত মৌসুমগুলোর মত ২০১৭-১৮ মৌসুমেও বায়ার্নের হয়ে নিজের গোল করার সহজাত প্রতিভার জানান দিয়েছে ৪৫ ম্যাচে ১৫ গোল করে। আর ২০১৫-১৭ এ তিন বছরে জার্মানির হয়ে ২৭ ম্যাচে নেমে গোল পেয়েছে ১১ বার।
ইস্কো
মৌসুমের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদ দলে সুযোগ কম পেতে থাকা ইস্কো মৌসুমের শেষে এসে জিদানকে বাধ্য করেছে নিয়মিত তাকে মাঠে নামাতে। কথা নয়, কাজ দিয়ে মাঠে নিজেকে প্রমাণ করেছে ইস্কো। গেল মৌসুমে ৪৯ বার রিয়ালের হয়ে মাঠে নেমে গোল পেয়েছে ৯টি। মূলত স্পেন কোচ হুলেন লোপেতেগুই তার আস্থা রেখেছিলেন এ ২৫ বছর বয়সীর উপরে। জাতীয় দলের হয়ে ভরসার প্রতিদান ফিরিয়ে দিয়ে এখন মাদ্রিদ স্কোয়াডের নিয়মিত মুখ ইস্কো।
লুকা মদ্রিচ
খুব একটা আলোচনায় না থাকলেও ক্রোয়েশিয়াকে এবার বিশ্বকাপে একেবারে নিচের দিকে রাখার কোন কারণই নেই। সেই স্বপ্নের অনেকটুকুই নির্ভর করছে মদ্রিচের ওপর। রিয়ালের হয়ে ৪৩ ম্যাচে গেল মৌসুমে গোল সংখ্যা ২ আর ২০১৫-১৮ এ তিন মৌসুমে ২০ ম্যাচে দেশের হয়ে গোলসংখ্যা ২। তবে তার কাছে থেকে গোল নয় বরং দরকার আক্রমণভাগে বলে জোগান যা করতে পারলেই মাদ্রিদের মত সফল হতে পারবে ক্রোয়েশিয়া।
হামেস রদ্রিগেজ
গত বিশ্বকাপে ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতা কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগেজ এসেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে। সুযোগের অভাবে বেঞ্চে বসে থাকা হামেস তাই এই মৌসুমের শুরুতে পাড়ি জমান বায়ার্নে। সেখানে নিজেকে আবারো প্রমাণ করে নিয়মিত মাঠে উপস্থিত হয়ে কলম্বিয়ানদের জানান দিচ্ছেন গত বিশ্বকাপের মত এবারও নিজের সেরাটা দিতেই মাঠে নামবেন। বায়ার্নের হয়ে ৩৯ ম্যাচে গোলসংখ্যা ৮। গতবারের মত মাঠে নিজেকে মেলে ধরতে পারলে এবার গোল্ডেন বলের দৌড়ে থাকবে আরও পরিণত, আরো অভিজ্ঞ হামেস রদ্রিগেজ। দেশের হয়ে ২০১৫-১৭ এ তিন মৌসুমে ২৭ বার মাঠে নেমে গোল করেছেন ৯ টি।
এক নজরে এর আগের আসরের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা:
১৯৩০- হোসে নাসাজ্জি (উরুগুয়ে)
১৯৩৪- জিউসসেপে মিয়াজ্জা (ইতালি)
১৯৩৮ –লিওনিদাস (ব্রাজিল)
১৯৫০- জিজিনহো (ব্রাজিল)
১৯৫৪- ফেরেঙ্ক পুসকাস (হাঙ্গেরি)
১৯৫৮-দিদি (ব্রাজিল)
১৯৬২- গারিঞ্চা (ব্রাজিল)
১৯৬৬- ববি চার্লটন (ইংল্যান্ড)
১৯৭০- পেলে (ব্রাজিল)
১৯৭৪- ইয়োহান ক্রুইফ (নেদারল্যান্ডস)
১৯৭৮- মারিও কেম্পেস (আর্জেন্টিনা)
১৯৮২- পাওলো রসি (ইতালি)
১৯৮৬- ডিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা)
১৯৯০- সালভাতোরে শিলাচি (ইতালি)
১৯৯৪- রোমারিও (ব্রাজিল)
১৯৯৮- রোনালদো (ব্রাজিল)
২০০২- অলিভার কান (জার্মানি)
২০০৬- জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)
২০১০- ডিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে)
২০১৪- লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
সারাবাংলা/এএম/ এসএন