স্মৃতিতে প্রথম টেস্ট: সেদিন শুধু প্রতিপক্ষ নয় পরামর্শকও ছিলেন শচীন-সৌরভরা
১০ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৩
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সেদিন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মর্যাদার’ এক অধ্যায়ের। প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেছিল লাল-সবুজের দল। নতুন শুরুর সাক্ষী হতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সেজেছিল রঙিন সাজে। দেশের ক্রিকেটেও লেগেছিল সেই রং। বাংলাদেশের মাঠের ক্রিকেটও ছিল রঙিন।
অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তারপর ব্যাটিংটা যেমন হলো তা দেখে আন্দাজ করা মুশকিল ছিল দলটা প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে! ভারতীয় নামকরা বোলারদের চোখে চোখ রেখে চারে নেমে আমিনুল ইসলাম বুলবুল সেদিন ১৪৫ রানের কাব্যিক একটা ইনিংস খেলেছিলেন। তার আগে তিনে নেমে ৭১ রান করেন হাবিবুল বাশার সুমন। খালেদ মাসুদ পাইলট, আকরাম খানরাও হাল ধরলে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তুলে ফেলল ৪০০ রান!
ম্যাচের তৃতীয় দিন পর্যন্ত মনে হয়েছে, অভিষেক টেস্টে বুঝি ইতিহাসই গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের মতো তারকাবহুল দলের বিপক্ষে বুঝি ড্র’ই করে ফেলবে অভিষিক্ত বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে সেটা অবশ্য আর সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৯১ রানে। যাতে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারতে হয়েছে ৯ উইকেটে। তবুও ভারতের মতো দলের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশ যেভাবে তিন দিন চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল তা গর্ব করার মতোই।
ভারতের সেই দলটা ছিল তারকায় ঠাসা। ব্যাটিংয়ে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলীরা বোলিংয়ে অজিত আগারকার, জহির খানরা। শচীন-রাহুল-সৌরভরা তখন ক্রিকেট খেলাটা মহা-তারকা। তাদের বিপক্ষে লড়াইটা কেমন ছিল? মাঠের ক্রিকেট কেমন ছিল, মাঠের বাইরের পরিস্থিতিটাই বা কেমন ছিল? অভিষেক টেস্ট খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতিই বা কেমন ছিল? সেদিন থেকে বাংলাদেশ টেস্টে এগুলো কতটা?
আজ ১০ নভেম্বর ২০২৪, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পদার্পণের দুই যুগ পূর্তি। এই উপলক্ষ্যে সারাবাংলা ডটনেটে’র সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য মেহরাব হোসেন অপি। শোনা যাক সেই সব গল্প-
অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং নিলে আপনি আর শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ মাঠের খেলাটা শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের ওপেনার ছিলেন আপনারা। অনুভূতিটা কেমন ছিল?
মেহরাব হোসেন অপি: অসাধারণ মুহূর্ত ছিল। সেটা আসলে ভোলার মতো নয়। দেশের প্রথম টেস্টের একাদশে ছিলাম আমি, সে হিসেবে আমি গর্বিত। সত্য কথা, আমাদের ক্রিকেট ডিপ্লেমেসিটা সেই সময় অনেক ভালো ছিল বলে আমরা টেস্ট স্ট্যাটাসটা পেয়েছিলাম। যেখান থেকে শুরু করেছি তারপর দেখতে দেখতে ২৪টি বছর পেরিয়ে গেল।
সেই থেকে ২৪ বছরে টেস্টে বাংলাদেশ কতটা উন্নতি করল?
মেহরাব হোসেন অপি: টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির কথা যদি বলে, হ্যাঁ… কিছু ভালো প্লেয়ার কিন্তু আমরা তৈরি করতে পেরেছি। যেমন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি এমন ক্রিকেটার আমরা বের করতে পেরেছি। টেস্ট স্ট্যাটাসটা আমরা ধরে রেখেছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি। তারপরও আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম যে টেস্টে অনেক উন্নতি করার, সেটা হয়ত আমরা করতে পারিনি। উন্নতির জন্য আমাদের কাজ করার এখনো অনেক জায়গা আছে। ক্রিকেটাররা যদি মানসিক দিক দিয়ে উন্নতি করতে পারে তাহলে অবশ্যই টেস্টে আমরা ভালো করতে পারব।
কিভাবে বাংলাদেশ টেস্টে উন্নতি করতে পারে? আপনার পরামর্শ কি থাকবে-
মেহরাব হোসেন অপি: প্রথমত আমার মনে হয়, আমাদের প্লেয়ারগুলোকে যদি সমালোচনা না করে তাদের যদি আমরা ব্যাকআপ করি, ঠিক মতো সুযোগ দেই তাহলে সেটা একটা ভালো দিক হতে পারে। পাশাপাশি আমি যেটা মনে করি যে টেস্টে আপনাকে উন্নতি করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট আন্তর্জাতিক মানের হতেই হবে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট যেমন উইকেটে হয় এই উইকেটে খেলে বা এখানে প্রস্তুতি নিয়ে আপনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়েই ভালো কিছু করবেন, এমন প্রত্যাশা করাটাই আসলে বোকামি হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের যদি আমরা আন্তর্জাতিক মানের উইকেট দিতে পারি তাহলে ক্রিকেটারদের দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের অনুশীলন সুবিধা বিশ্বমানের আবার কোচও বিশ্বমানের। উইকেটটা নিয়ে কাজ করলে আমার মনে হয় ক্রিকেটারদের দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
বাংলাদেশের অভিষিক্ত টেস্ট যাদের বিপক্ষে সেই ভারতীয় দল ছিল তারকায় ঠাসা। শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড় বড় বড় সব নাম। কেমন ছিলেন তারা-
মেহরাব হোসেন অপি: ক্রিকেটাররা মাঠে অবশ্যই প্রফেশনাল ছিলেন। তবে তারা মাঠে খুবই ফ্রেন্ডলি ছিলেন। কারণ তারা নিজেরাও জানতেন যে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে। আমাদের ভুল-ত্রুটি অনেক ছিল। খেলা শেষে তারা আমাদের ক্রিকেটারদের অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। কিভাবে টেস্ট খেলতে হয় বা ভালো করতে হয় তারা সেই পরামর্শটা দিয়েছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকাররা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যাটারদের ব্যাটিং নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আবার পেসারদেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা পরামর্শকের ভূমিকাও পালন করেছেন। একটা বিষয় হলো, আমরা সেই সময় যারা খেলেছিলাম তাদের কেউই ক্যারিয়ারটাকে খুব বেশি লম্বা করতে পারিনি। পারলে হয়ত আরও ভালো কিছু করতে পারতাম আমরা।
ভারতের তারকাদের মধ্য থেকে আপনি কার পরামর্শ পেয়েছিলেন এবং সেটা কি ছিল?
মেহরাব হোসেন অপি: আমি রাহুল দ্রাবিড়ের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে, টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য কি কি করা দরকার। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, ব্যাটিংয়ের সময় বল নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তখন শুধু ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ওয়ানডে ক্রিকেটের বল সিলেকশন আর টেস্ট ক্রিকেটের বল সিলেকশন অনেক তফাত। কোন বলটা খেলব, কোনটা ছাড়ব এটা বড় বিষয়। এখানে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। এবং পার্টিকুলার কিছু শট খেলার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই সময়ে। আর বল সিলেকশনে বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিষয়টা আমার এখনো মনে আছে।
সারাবাংলা/এসএইচএস
নাঈমুর রহমান দুর্জয় বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট মেহরাব হোসেন অপি সৌরভ গাঙ্গুল