পেস আগুনে পুড়ে বড় পরাজয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৩:৫৭
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে একটা নতুন রেকর্ডই হয়ে গেল আজ। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলের পেসারদের আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রথমবারের মতো এই মাঠে কোনো টেস্টের এক দিন পড়ল সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট। ১৭ উইকেটের দশটা স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের, আর চতুর্থ ইনিংসে তাদের দেয়া ৩৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ হারিয়েছে সাত উইকেট। হাতে তিন উইকেট রেখে জয় থেকে আরো ২২৫ রান দূরে থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
‘শেষ করেছে’ বলার চেয়ে ‘শেষ হয়েছে’, বলাটাই শ্রেয়। আগের তিন দিনের মতো আজও আলোকস্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়েছে খেলা। দিনের বাকি থাকা ওভারগুলো খেলা হলে অ্যান্টিগা টেস্টের ফলাফল হয়তো চলে আসতে পারতো আজই। শেষ সেশনে ৩১ ওভার ব্যাট করে সাত উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ। কাল টেইলএন্ডার হাসান মাহমুদকে নিয়ে শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে দিন শুরু করবেন আগের ইনিংসে ফিফটি করা জাকের আলী। ক্যারিবিয়ান পেসাররা যে তোপ দাগানো বোলিং আজ করেছেন, ঠিক সেভাবে তেঁতে উঠলে সেশনের শুরুর দিকেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এই ম্যাচ জিততে হলে ইতিহাসই গড়তে হবে বাংলাদেশকে। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়ার সফল রেকর্ড অবশ্য উইন্ডিজের বিপক্ষেই। ২০০৯ সালে সালে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ২১৭ রান করে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে অলৌকিক কিছু না হলে এই টেস্টে এমন কিছু যে হচ্ছে না সেটা এই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
স্কোরকার্ডে ২৬৯/৯ নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা চমক হয়েই এসেছিল। কারণ তখনো উইন্ডিজের চেয়ে ১৮১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য কাজে এসেছে খুব দারুণভাবে। তাসকিন আহমেদের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার একাই নেন ৬ উইকেট, প্রথমবারের মতো টেস্টে ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।
ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে তাসকিন উইন্ডিজকে অল্পতে আটকে রাখলেও ব্যাটাররা করেছেন হতাশ। জাকির হাসান আজও বোল্ড ইনসাইড এজে। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও আগের ইনিংসে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেয়াটাই যেন পুনরাবৃত্তি করলেন। টেস্ট দলের দুই ওপেনারের বারবার এমন দৃষ্টিকটু আউটই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে তাদের টেকনিক নিয়ে।
আগের ইনিংসে ফিফটি করা মুমিনুল হক আজ দুইবার জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। শামার জোসেফের বলে একবার লেগ সাইডে গ্লান্স করতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে, পরের বলেই জীবন পেয়েছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। কিন্তু তৃতীয়বার আলতো স্ট্রেইট ড্রাইভে কেমার রোচকে ফিরতি ক্যাচ দিলে সেটা আর মিস করেননি তিনি। এর আগে শাহাদাত দীপুও রোচের বলে ক্যাচ দিয়েছেন রোচের অফ স্টাম্প করিডোরের বলে খোঁচা মেরে জশুয়া ডা সিলভার হাতে।
লিটন দাস এসে দ্রুত রান তোলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। জীবনও পেয়েছেন একটা, সেই শামার জোসেফের বলেই। শামার নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। কারণ মুমিনুলের দুটো, মিরাজ আর লিটনের একটা করে তার বলে মোট চারটা ক্যাচ ফেলেছেন ক্যারিবিয়ান ফিল্ডাররা। তবে শামারের সেই দূর্ভাগ্য বদলে দিলেন লিটনই। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন আরেক ‘জোসেফ’ আলজারির হাতে।
অধিনায়ক মিরাজ আজ জীবন পেলেও সাবলীল ব্যাটিংটাই করে যাচ্ছিলেন পুরোটা সময়। বাউন্সারে পুল, ফুল লেংথ বলে কভার ড্রাইভ, আরেকটূ সামনের লেংথের বলে ব্যাকফুট পাঞ্চ; মোদ্দা কথা ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামনে তাকে নড়বড়ে মনে হয়নি একেবারেই। কিন্তু জেইডেন সিলসের বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে ডা সিলভার হাতে। ডানে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন এই উইকেটরক্ষক। ওয়ানডে ছন্দের ব্যাটিংয়ে ৪৬ বলে ৪৫ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তিনটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছেন রোচ-সিলস। ফিল্ডাররা চারটা ক্যাচ না ফেললে হয়তো একটার বদলে আরো বেশ কয়টা উইকেট পেতেন শামার।
সারাবাংলা/জেটি