অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর সেঞ্চুরিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৩০ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৫০
আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা বলটা লং অন বাউন্ডারি পার হওয়ার আগেই হেলমেটটা খুলে ফেললেন আমির জাঙ্গু। কারণ জানেন ছক্কাই হতে যাচ্ছে। এই ছক্কাতে ম্যাচ জেতাননি, তবে অভিষেক ম্যাচেই ছুঁয়ে ফেলেছেন সেঞ্চুরি। মাত্র দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান ব্যাটার হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা এই বাঁহাতির ব্যাটে ভর করেই ৪ উইকেটে বাংলাদেশকে হারিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল উইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩২১ রানের রেকর্ড গড়েও জেতা হলো না বাংলাদেশের। বরং সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে দুই ম্যাচ আগে নিজেদের গড়া সর্বোচ্চ ২৯৪ রান তাড়ার রেকর্ডটাই নতুন করে লিখল ক্যারিবিয়ানরা। এই ম্যাচ হেরে ৩ বছর নয় মাস পর ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
৩২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্কোর বোর্ডে যখন ৪ উইকেটে ৮৬, তখনই উইকেটে যান আমির। কেসি কার্টির সঙ্গে অভিষিক্ত আমির জাঙ্গু চড়ে বসেন বাংলাদেশি বোলারদের ওপর। পঞ্চম উইকেটে দুজন মিলে গড়েন বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড ১৩২ রানের জুটি। দ্রুতগতির এই জুটি তারা গড়েছেন মাত্র ১১৫ বলে। সেঞ্চুরির পথে থাকা কেসি কার্টিকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। এই লেগির বলে সৌম্যের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৮৮ বলে ১০ চার ও দুই ছক্কায় ৯৫ রান করেন কার্টি।
সেঞ্চুরি থেকে পাঁচ রান দূরে থেকে কার্টি ফিরলেও সুযোগ হাতছাড়া করেননি জাঙ্গু। ৭৯ বলে ছুঁয়েছেন নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। এই কীর্তিটা এতদিন দখলে ছিল ডেসমন্ড হেইন্সের। ৪৬ বছর পর সেই রেকর্ডে ভাগ বসানো জাঙ্গু মাঠ ছেড়েছেন ৮৩ বলে ১০৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে। ছয় চারের সাথে চারটি ছক্কাও মারেন এই বাঁহাতি। সপ্তম উইকেটে জাঙ্গুর সাথে ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন গুদাকেশ মোতি। ছক্কা মেরে জয়ও নিশ্চিত করেন মোতি। তিনটি করা ছক্কা আর চারে ৩১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।
এর আগে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদের বলে স্কয়ার লেগ থেকে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে অ্যালিক অ্যাথানেজের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন ব্র্যান্ডন কিং। বাঁহাতি অ্যাথানেজ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন সেই নাসুমের বলেই। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক শেই হোপ স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন হাসান মাহমুদের বলে।
৩১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৫৫ রানের জুটিতে সেই চাপ সামাল দেন কেসি কার্ট-শারফেন রাদারফোর্ড। জমে ওঠা সেই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। গুড লেংথ বলে ফ্লিক করেন রাদারফোর্ড, স্কয়ার লেগে বেশ কিছু জায়গা দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরেন তানজিদ হাসান। বোলিং বাংলাদেশের সাফল্য সাকুল্যে এটুকুই।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ১৭১ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহ-জাকের আলী মিলে গড়েন রেকর্ড গড়া ১৫০* রানের জুটি। দুর্দান্ত সব স্ট্রোকপ্লেতে দুজন ঝড় বইয়ে দেন ক্যারিবিয়ান পেসারদের ওপর। পুল, হুকে দুজনই দেখিয়েছেন নিজেদের দক্ষতা। সিরিজে টানা তৃতীয় ফিফটি পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৮ বলে নিজের ৩২তম ফিফটি ছোঁয়ার পর ইনিংস শেষ করেছেন ৬৩ বলে ৮৪* রানে অপরাজিত থেকে। সাত চারের সাথে মেরেছেন চারটি ছক্কাও। প্রথম ওয়ানডে ফিফটি ছোঁয়া জাকের খেলেছেন ৫৭ বলে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ দারুণ সঙ্গ দেয়া এই ডানহাতি ইনিংস সাজান পাঁচ চার ও দুই ছক্কায়।
নেমে তৃতীয় ওভারেই আলজারি জোসেফকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা তানজিদ। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা লিটন এক বল পরেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তৃতীয় উইকেটে সৌম্যকে সাথে নিয়ে সেই ধাক্কা সামলে উঠেন মিরাজ। গড়েন ১৩৬ রানের জুটি। উইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে যেটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ও তাদের মাঠে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
মিরাজ উইকেটে গিয়েই শুরু করেন শট খেলা। রানের খাতা খুলেন অভিষিক্ত জেডিয়া ব্লেডসকে চার মেরে। এই বাঁহাতি পেসারের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে মিরাজের তোপ। তার সাথে সৌম্যও তাল মিলিয়ে শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। ক্যারিবিয়ান পেসারদের টানা বাউন্সারগুলোতে নিজের প্রিয় শট ‘পেরিস্কোপ’ খেলেছেন অনায়াসে। কভার ড্রাইভ কিংবা উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে তুলে মারা; সবকিছুতেই দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। তবে জীবন পেয়েছিলেন রানের খাতা খোলার আগেই। স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান এই বাঁহাতি ওপেনার। ব্যক্তিগত ৪২ রানে লং অনে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেও সেটা মিস করেন ক্যারিবিয়ান ফিল্ডার।
দুইবার জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগিয়ে পেয়েছেন ১৩তম ফিফটি। সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথেই। কিন্তু ইনিংসের ২৪তম ওভারে গুদাকেশ মোতির বলের টার্নে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি, রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। ৭৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে খেলেন তিনি ছয়টা চার আর চারটি ছক্কার মারে।
ষষ্ঠ ওয়ানডে ফিফটি করা মিরাজ ফিরেছেন শারফেন রাদারফোর্ডের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট হয়ে। রোমারিও শেফার্ডের বলে পয়েন্টে ঠেলে মিরাজের ডাকে সিংগেল নিতে চান আফিফ। কিন্তু দারুণ সেই থ্রোতে স্টাম্প ভাঙে, ফিরতে হয় মিরাজকে ৭৩ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে। আট চার আর দুই ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
সবচেয়ে বেশি ঝড় বয়ে গেছে অভিষিক্ত ব্লেডসের ওপর দিয়ে। বাংলাদেশি ব্যাটারদের কাছ থেকে দশ চার আর দুই ছক্কা হজম করে ছয় ওভারে দিয়েছেন ৭৩ রান। সফল বোলার বলা চলে আলজারি জোসেফকে। কোটার দশ ওভারে এক মেইডেনসহ ৪৩ রানে নেন দুই উইকেট।
সারাবাংলা/জেটি