ইতিহাস গড়া কনস্টাসের কোচ বাংলাদেশি, কে এই তাহমিদ?
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০৬ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮
ঐতিহ্যবাহী মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ (বৃহস্পতিবার) শুরু হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির বড় মঞ্চ, বিশাল উপলক্ষ্য, গ্যালারি ভর্তি ৮৭ হাজার দর্শকে। এমন উৎসবমুখর দিনে সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার হিসেবে টেস্ট অভিষেক ১৯ বছর বয়সী স্যাম কনস্টাসের। নিজের অভিষেকের সাথে অজিদের বক্সিং ডে রাঙালেন দুর্দান্ত, মারকুটে এক ইনিংসে। ৬৫ বলে ৬০- সংখ্যার বিচারে হয়তো তেমন আহামরি কিছু নয়। কিন্তু সদ্য কৈশোর পেরোনো, সবে দৃশ্যমান হালকা গোঁফের রেখা নিয়ে এই তরুণ যেভাবে, যে অ্যাপ্রোচে গোটা ইনিংসটা সাজিয়েছেন, আবহটা বোঝাতে তাই লম্বা একটা ভূমিকাই টানতে হলো। বড়দিনের ঠিক পরদিন উপহারের বক্স খুলে এমন চমক কোন অজি ভক্ত না পেতে চাইবে!
বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরাও খুশি হতে পারেন এবার। কারণ বক্সিং ডে’তে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে এমসিজি মাতিয়ে তোলা কনস্টাসের নেপথ্যের কারিগর, তার ব্যাটিং কোচ যে একজন বাংলাদেশি; তাহমিদ ইসলাম। এক ইনিংসে দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের খুশি করার নজিরই বটে! তাই তো এত কথা হচ্ছে তাহমিদ ইসলামকে নিয়ে। প্রশ্নও উঠছে, কে এই তাহমিদ ইসলাম? উত্তর দিচ্ছি, এর আগে চলুন স্মৃতি টাটকা থাকতেই কনস্টাসের ব্যাটিং হাইলাইটসটা একটু মনে করা যাক।
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে উসমান খাওয়াজার সাথে অস্ট্রেলিয়া ওপেনিংয়ে পাঠালো কনস্টাসকে। দুজনের বয়সের পার্থক্য ১৮ বছর। বয়স আর প্রজন্মের এত পার্থক্য নিয়ে আগে কখনো দুই ওপেনার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে নামেননি। ইনিংসের সপ্তম ওভারের ঘটনা। বোলিংয়ে টেস্টের এক নম্বর বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ, ফুল লেংথ বলে সরে এসে করলেন স্কুপ, পেলেন চার। আগের দুই ওভারের চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও সেই ওভারের পরের বলে ঔদ্ধত্য নিয়ে রিভার্স সুইপে ছয়! দুই বলে পরে আবারও সেই র্যাম্প শট; থার্ড ম্যান রিজিওনে চার। বুমরাহর মতো বোলারকে এভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে যেভাবে খুশি খেলা; কনস্টাস তরুণ বলেই হয়তো এই দুঃসাহস দেখাতে পেরেছেন।
অমন দুঃসাহসিক দুটো শটের পর সেই ওভারে ধারাভাষ্যকার ইশা গুহ জানালেন, কনস্টাসের ব্যক্তিগত ব্যাটিং কোচ তাহমিদ ইসলাম নামের সাবেক বাংলাদেশি প্রথম শ্রেণির এক ক্রিকেটার। যদিও তাহমিদের বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তবে ২০১৭ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলতে আসেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে, কিন্তু সে বছর কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। তাহমিদের ডিপিএলে আসার পেছনে আছে সাবেক বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রভাব। অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের নেটে বল করেছিলেন তাহমিদ। সেখানেই তার বোলিং দেখে বাংলাদেশে খেলতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তৎকালীন বাংলাদেশ কোচ হাথুরুসিংহে।
ডিপিএলের সেই মৌসুমে খেলা না হলেও সিডনি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ, যুক্তরাজ্যে এসেক্স এবং ইয়র্কশায়ারে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে ওঠা তাহমিদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেটাঙ্গনে ক্রিকেটার ছাপিয়ে কোচ হিসেবেই পরিচিতিটা হলো তার। স্যাম কনস্টাসের বদৌলতে। সিডনিতে বসবাসরত এই ক্রিকেটারের সাথে কনস্টাসের দেখা ক্র্যানব্রুক স্কুলে। শিষ্যর জন্য অস্ট্রেলিয়া দলের সাথে আছেন মেলবোর্ন টেস্টেও।
সাধারণত ব্যক্তিগত কোচের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাতীয় দলের সাথে থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার হেড কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড ও সহকারী কোচ মাইকেল ডি ভেনুতো আগে কনস্টাসের সাথে কাজ করেননি। কারণ নাথান ম্যাকসোয়েনির জায়গায় উড়িয়ে আনা হয়েছে মাত্র ১১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা কনস্টাসকে। এজন্য নিয়মের ব্যত্যয়; তাহমিদ-কনস্টাসের গুরু শিষ্যর জুটি জমে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। কনস্টাসের এই উত্থানের নেপথ্যে আছে আরেক অজি ক্রিকেটারের অবদানও; শেন ওয়াটসন। সাবেক এই অজি অধিনায়ক কাজ করছেন তার মেন্টর হিসেবে। বিশ্বকাপজয়ী ওয়াটসনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তাহমিদ। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেটেও দুজন মিলে কাজ করেছেন সানফ্রানসিসকো ইউনিকর্ন দলের সঙ্গে।
ওয়াটসনের সাথে মিলে কনস্টাসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এজ’-কে তাহমিদ বলেন, ‘আমি ওর টেকনিক্যাল দিকগুলোর দেখভাল করি। আর শেন ওর মানসিক জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করে। খুব ভালোভাবে চলছে সব। আমাদের তিনজনের পথচলাটাও চলছে দারুণ।’
ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি না পাওয়ার কোনো আক্ষেপ যদি থেকেও থাকে তাহমিদের, কনস্টাসের এই ইনিংসে সেটা হয়তো দূরই হয়ে গেছে তার। নিশ্চয়ই আরেকবার গর্বিত হয়েছেন, যখন ফিফটি ছোঁয়ার পর ড্রিংকস ব্রেকে স্পাই ক্যামে তার শিষ্যকে বলতে শুনেছেন, ‘বুমরাহকে টার্গেট করেই যাব আমি।’
সারাবাংলা/জেটি
জাসপ্রিত বুমরাহ তাহমিদ ইসলাম বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শেন ওয়াটসন স্যাম কনস্টাস