ইরান বনাম মরক্কো, স্পেন বনাম পর্তুগাল
১৬ জুন ২০১৮ ১২:৪০ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ১৩:৪৮
।আবদুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারি।
উরুগুয়ে বনাম মিশরের খেলার পরেই ছিল ইরান বনাম মরক্কোর খেলা। এই খেলাটি দেখার আগ্রহ কম ছিল তারপরেও যেহেতু কিছু লিখতে হবে তাই দেখতে বসেছিলাম। ইরান এবারের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে বেশ ভাল খেলেছিল। সিরিয়ার সাথে শেষ ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করা ছাড়া অন্য খেলাগুলোতে তাদের কেউ গোলই দিতে পারেনি। গতবার আর্জেন্টিনাকেও তারা প্রায় রুখে দিয়েছিল। মেসির শেষ মুহুর্তের ম্যাজিকে ১ গোলে হেরে যায়।
মরক্কোর কথা যদ্দুর মনে পরে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তাদের ২য় রাউন্ডে খেলার কথা ছিল। শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে যখন তারা ৩ গোল দেয়, শুধু অপেক্ষায় ছিল ব্রাজিল নরওয়ে খেলার ফলাফলের দিকে। নরওয়ে শেষ মুহুর্তে ব্রাজিলের বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল দিলে মরক্কোর ২য় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। মনে আছে মরক্কোর কোচ ডাগ আউটে বসে চেয়ার ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
ইরান বনাম মরক্কোর খেলা শুরু হওয়ার পর আমার কাছে মনে হয়েছিল মরক্কো জিতবে। তাদের গতি ইরানের চেয়ে বেশি, বল পজিশন বেশি, মধ্যমাঠ তারা দখলে নিয়েছে, কিন্তু মনে হয় ভুলে গেছে ফুটবল গোলের খেলা। মাঝখানে একবার ইরানের গোলমুখে যে জটলা লাগল, তখন বুঝতে পারলাম বিশ্বসেরা স্ট্রাইকার আর সাধারণ স্ট্রাইকারের পার্থক্য কি। এখানে মেসি, রোনাল্ডোরা থাকলে বল একটি চিপ করে গোলটা দিয়ে দিত। মরক্কোর দুইজন খেলোয়ার বলটা ডিফেন্ডার আর গোলকিপারের গায়ে মারল।
খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে, স্রোতের বিপরীতে। আত্মঘাতী গোলদাতা আমার নামও ডুবিয়েছে, তার আর আমার একই নাম- আজীজ। মনে আছে ১৯৯৮ সালেও নরওয়ের সাথে মরক্কো এই আত্মঘাতী গোল খেয়েই হেরেছিল। ডিফেন্ডার ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় যেখানে দাঁড়িয়েছে, অভিজ্ঞতা বলে তার আরেকটু সামনে দাড়ানোর কথা, তাহলে হেড করলেও বলটি কর্নার হত। সে এমন ভাবে আত্মঘাতি গোলটি দিল তাতে তাকে একটা ইরানের জার্সি পরিয়ে দিলে মনে হত টুর্নামেন্টের অন্যতম দারুণ গোল। বিশ্বকাপে আত্মঘাতি গোলের করুন ইতিহাস আছে। কলম্বিয়া আন্দ্রে এসকোবার এই আত্মঘাতির গোলের বিনিময়ে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল। আশা করি মরক্কোর আজিজের সাথে এমন কিছু হবে না। জীবনের চেয়ে বড় ফুটবল না।
রাত ১২ টায় খেলা ছিল স্পেন বনাম পর্তুগাল, প্রথম বড় দুই দলের খেলা। যে আগ্রহ আর প্রত্যাশা নিয়ে দেখতে বসেছিলাম তা পূরণ করার জন্য দুই দলকেই ধন্যবাদ। স্পেনের কোচ সাস্পেন্ড হওয়ার পর হিয়েরী দায়িত্ব নিয়েছেন, খেলোয়ার হিসেবেও তিনি ছিলেন বেশ উঁচু মানের।
খেলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পেনাল্টি পেল পর্তুগাল, আমার ধারণা তখনও অনেকেই এটাই বুঝে উঠেনাই যে সাদা জার্সিতে স্পেন আর লাল জার্সিতে পর্তুগাল খেলছে। ফাউলটার ব্যাপারে অবশ্য আমি নিশ্চিত না এটা কতটা জটিল ফাউল নাকি রোনাল্ডোর কোন চতুরতা এখানে আছে কি না। কয়েকবার দেখেও বুঝতে পারি নি। তবে সে যাই হোক, নিজ দেশের পক্ষে পেনাল্টি আদায় করে গোল দেওয়া, এটা সবাই করতে চাইবে। এই গোলের মাধ্যমে রোনাল্ডো টানা চারটি বিশ্বকাপে গোল দিল, টানা ৯ টি বড় টুর্নামেন্টে গোল দিল। এমনি এমনি তো আর কেউ বিশ্বের সেরা খেলোয়ারদের একজন হয় না।
স্পেনের গোলটিও দারুণ ছিল। দিয়েগো কস্তা যিনি ব্রাজিলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন এক সময়ে কিন্তু পরে স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়ে নেন। গোলটি দেখেও ব্রাজিলের রোনাল্ডোর কথা মনে পড়ে। কি দুর্দান্ত ফিনিশিং। পেপের কাছ থেকে বল দখলে নিয়ে দুইজন ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে জোড়ালো মনমুগ্ধকর শট। খেলা ততক্ষণে জমে উঠেছে। তবে স্পেনকেই বেশি গোছানো মনে হচ্ছিল।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে আবার গোল দিল রোনাল্ডো। গোলকিপারের ভাল ভুল ছিল এখানে, এই লেভেলের একজন গোলকিপারের এমন ভুল মানা যায় না যদিও। তিনি কেন এটা গ্রিপ করতে পারলেন না, নাকি রোনাল্ডো শট নিয়েছে এই ভয়ের জুজু কাটাতে পারে নি! তা কি আর হয়!
দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন খুব দ্রুত দুটি গোল দিয়ে প্রথমবারের মত লিড নিয়ে নিল। দুটি গোলই ভাল, দিয়েগো কস্তার গোলটি এসেছে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার কারণে। জাত স্ট্রাইকাররা এমনই হয়, তারা জানে কখন কোথায় থাকা লাগে। নাচোর গোলটি ছিল দুর্দান্ত, কেউ বুঝতেই পারে নি সে সেখানে থেকে শট নিবে, আর বলটি এত সুন্দর ভাবে সাইড বারে লেগে ঢুকে যাবে।
খেলার শেষ মুহুর্তে সমতা আনে রোনাল্ডো, নিজের হ্যাট্রিকও পূরণ করে। ফ্রি-কিক নেওয়ার সময়েই আমার মনে হচ্ছিল বল ঢুকে যাবে, কারণ রোনাল্ডোর এরকম ফ্রি-কিক সম্পর্কে আমার ধারণা আছে, এই জায়গায় গোলকিপারের খুব বেশি দোষ দেখি না।
রেফারি কার্ড সম্ভবত একটু বেশি দেখিয়ে ফেলেছে। কিছু কিছু ফাউল চার্জ করতে গিয়ে হয়ে যায়, সেখানে হয়ত কিছুটা উদারতা দেখানো যেত।
শ্রুতিলিখন- রাসয়াত রহমান জিকো
সারাবাংলা/ এসবি