মেসির আর্জেন্টিনাকে রুখে দিল আইসল্যান্ড
১৬ জুন ২০১৮ ১৯:২৪ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ১০:৪৮
সারাবাংলা ডেস্ক ।।
আরও একটি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু করে আর্জেন্টিনা। ২১তম এই বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবার অংশ নেওয়া আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ ‘ডি’তে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাতিস্তুতা, ম্যারাডোনার দেশটি। বিরতির আগে একটি করে গোল করে আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড। বিরতির পর পেনাল্টির সুযোগ থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি মেসি। ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচটি।
ম্যাচের নবম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়েছিলেন মার্কোস রোহো। তবে, প্রস্তুত ছিলেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হ্যালডোরসন। দুই মিনিট পর একেবারেই ফাঁকায় বল পেয়ে ব্রজানসান গোলবারের বাইরে শট নেন। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। জোড়ালো শটে গোল করেন সার্জিও আগুয়েরো (১-০)। বিশ্বকাপের মূল আসরে এটিই আগুয়েরোর প্রথম গোল।
সমতায় ফিরতে সময় নেয়নি আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ, ২৩ মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরে আইসল্যান্ড। নবাগত দেশটির হয়ে গোলটি করেন ফিনবোগাসন (১-১)। দ্বিতীয়বারের শটে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ায়।
এরপর ৩২ মিনিটের মাথায় আবারো গোলের সুযোগ পেয়েছিল দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। মাশ্চেরানোর লম্বা পাস নিজের বাগে নিতে পারেননি ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা। নয়তো আনমার্ক থাকা এই তারকা গোলের দেখা পেলেও পেতে পারতেন। ৩৮ মিনিটের মাথায় মেসির জোড়ালো শট রুখে দেয় আইসল্যান্ডের ডিফেন্ডার। ৪২ মিনিটে সালভিওর ক্রস আইসল্যান্ডের এক খেলোয়াড়ের হাতে লেগে মাঠের বাইরে চলে গেলেও রেফারি ফ্রি-কিকের কোনো বাঁশি বাজাননি। ৪৫ মিনিটে সিগার্ডসনের দুর্দান্ত শট রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ক্যাবালেরো।
বিরতির আগে ১-১ সমতায় থাকে দুই দল। বিরতির পর ম্যাচের ৫০তম মিনিটে সিগার্ডসনের আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন আর্জেন্টিনার তারকা অটামেন্ডি। ৫৩ মিনিটে লুকাস বিগলিয়ার বদলি হিসেবে নামেন এভার বানেগা। ৫৬ ও ৫৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুটি প্রচেষ্টা রুখে দেয় আইসল্যান্ডের ডিফেন্ডাররা। মেসি-আগুয়েরো জুটিও তাতে হতাশ হয়।
ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। শট নেন মেসি। আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হ্যালডোরসন মেসির শট ঝাপিয়ে রুখে দেন। ৭৪ মিনিটে ডি মারিয়াকে তুলে নেন আর্জেন্টাইন কোচ সাম্পাওলি। তার জায়গায় মাঠে নামেন ক্রিস্টিয়ান পাভোন। ৭৮ মিনিটে ফাঁকায় বল পেলেও ফাইনাল শট নিতে পারেননি মেসি, গোলবঞ্চিত হতে হয় আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে। ৮১ মিনিটে আবারো দুর্দান্ত শট নেন মেসি। তবে, গোলবারের বাইরে দিয়ে বল চলে গেলে হতাশা আরও বাড়ে। ৮৪ মিনিটে মেজার বদলি হিসেবে নামেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। ৮৭ মিনিটে মাশ্চেরানোর দুর্বল শট নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন আইসল্যান্ড গোলরক্ষক। অতিরিক্ত সময়েও মেসি শট নিয়েছিলেন। কিন্তু বল চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার আগে আর কোনো গোল না হলে ১-১ সমতায় ম্যাচটি শেষ হয়।
এর ফলে আরও একবার প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, এবার আর্জেন্টিনার হবে তো? ৩২ বছর হয়ে গেছে, ম্যারাডোনার সেই ট্রফিতে চুমু খাওয়ার পর আরেকটি বিশ্বকাপের জন্য অনন্ত আক্ষেপ আর শেষ হয়নি। মেসির সম্ভবত এবারই শেষ সুযোগ। সেই আক্ষেপ কি ঘুঁচবে? বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ১৬ বার অংশ নিয়ে পাঁচবার ফাইনাল, পাঁচবার সেমিফাইনাল খেলে দুইবার শিরোপা জিতেছে। আর্জেন্টিনার ঘরে বিশ্ব শিরোপা গেছে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে। প্রথমবার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৯৩০ সালে। সেবার তারা রানার্সআপ হয়েছিল আর শেষবার ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশ নিয়েও রানার্সআপ হয়েছিল আর্জেন্টাইনরা।
এদিকে, আইসল্যান্ডের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়াটাই তাদের জন্য একটা রূপকথা। যে দেশে সাকুল্যে মাত্র সাড়ে তিন লাখের বাস, তারা যে শুধু অংশ নেওয়ার জন্য অংশ নেয়নি সেই প্রমাণ দিয়েছিল গতবারের ইউরোতে। সবাইকে চমকে জায়গা করে নিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। তাদের অংশ নেওয়াটা যে শুধু চমক নয়, সেটা তারই প্রমাণ।
সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলা অবশ্য আইসল্যান্ডের অনেক দিনের পরিকল্পনার ফসল। দলের সব খেলোয়াড় নিজেদের খুব ভালোভাবে চেনেন, দাঁতের ডাক্তার থেকে কোচ বনে যাওয়া কোচ হ্যালগ্রিমসন দলের সবাইকে খুব ভালোভাবেই জানেন। রক্ষণই তাদের মূল শক্তি, ইউরোতে সেই প্রমাণও রেখেছিল। আক্রমণে মূল ভরসা এখনও গিলফি সিগুর্ডসন। বাছাইপর্বে ক্রোয়েশিয়া, তুরস্কের গ্রুপ থেকে সরাসরি জায়গা করে নেওয়াও চাট্টিখানি কথা নয়। বিশ্বকাপে হয়তো চমক দেখাতে পারবে আইসল্যান্ড।
সারাবাংলা/এমআরপি